স্বাস্থ্যসেবার ভবন নিজেই রোগী

মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৫ অক্টোবর ২০২২, ১২: ১১

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার ১০টি কমিউনিটি ক্লিনিক ভবন সংস্কার এবং নজরদারির অভাবে জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এর মধ্যেই চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা রোগীদের সেবা দিচ্ছেন। এ ছাড়া অনেক ক্লিনিকে নেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও জনবল। কিছু ক্লিনিকে রয়েছে ওষুধের সংকট। কোথাও কোথাও বিদ্যুৎ সরবরাহও নেই।

তবে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলছেন, এসব ক্লিনিক পুনর্নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে তালিকা পাঠানো হয়েছে।

জানা গেছে, গ্রামের দরিদ্র মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে ১৯৯৮ সালে গ্রামে গ্রামে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করা হয়। তখন মির্জাপুর উপজেলার ১৪ ইউনিয়নে এবং একটি পৌরসভায় মোট ৫৪টি কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়। কিন্তু অযত্ন-অবহেলা ও নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করায় অনেক ক্লিনিকের ভবনের পলেস্তারা খসে পড়ে জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ১০টি হলো উপজেলার বাঁশতৈল ইউনিয়নের সোনালিয়া কমিউনিটি ক্লিনিক, একই ইউনিয়নের গায়রাবেতিল ও বংশীনগর ক্লিনিক, জামুর্কী ইউনিয়নের কড়াইল ও উফুল্কী কমিউনিটি ক্লিনিক, বহুরিয়া ইউনিয়নের আড়াইপাড়া ও পাইখার কমিউনিটি ক্লিনিক, মির্জাপুর উপজেলা সদরের বাওয়ার কুমারজানী, আজগানা ইউনিয়নের আজগানা কমিউনিটি ক্লিনিক, ফতেপুর ইউনিয়নের পারদিঘি কমিউনিটি ক্লিনিক। এগুলোর মধ্যে বাঁশতৈল ইউনিয়নের সোনালিয়া কমিউনিটি ক্লিনিকটি একেবারে অচল হয়ে পড়েছে।

আগাছা ও শেওলায় ছেয়ে গেছে ক্লিনিক ভবন। সামান্য বৃষ্টি হলেই ভবনের ছাদ চুইয়ে মেঝেতে পড়ে পানি। ভবনের অনেক জায়গার সিমেন্টের আস্তরণ খসে পড়েছে।

ভবনের দেয়াল ফেটে ও দেবে গেছে। যেকোনো সময় ছাদ ধসে দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে ক্লিনিকের সেবা দেওয়া হচ্ছে দোকানঘর ভাড়া নিয়ে।

শুধু সোনালিয়া কমিউনিটি ক্লিনিকই নয়, সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার ৫৪টি কমিউনিটি ক্লিনিকের ১০টি নানান সমস্যা ও সংকটে জর্জরিত হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে উপজেলা সদরের বাওয়ার কুমারজানি পূর্বপাড়া ও মহেড়া ইউনিয়নের ডুকলাহাটি গ্রামের ক্লিনিক দুটি নিচু স্থানে হওয়ায় বছরের অধিকাংশ সময় পানির নিচে থাকে। বর্ষায় কিংবা সামান্য বৃষ্টি হলেই কুমারজানী ও ডুকলাহাটি কমিউনিটি ক্লিনিকে পানি ওঠায় পাশের বাড়িতে বসে চিকিৎসাসেবা দিয়ে থাকেন সেখানকার স্বাস্থ্যকর্মীরা।

বাওয়ার কুমারজানি কমিউনিটি ক্লিনিক-সংলগ্ন বাসিন্দা হারুন অর রশিদ সরকার বলেন, ক্লিনিকের পাশেই তাঁর বাড়ি। তারপরও মানুষের বাড়িতে গিয়ে ভিড় করে সেবা নেওয়া অস্বস্তিকর। এ ছাড়া রোগীরা ঠিকমতো তাঁদের সমস্যার কথা বলতে পারেন না।

পাশের বাড়ির বাসিন্দা আর্শেদ সিকদার বলেন, বছরের চার মাসই ক্লিনিকটি পানির নিচে থাকে। এ সময় অন্যের বাড়িতে গিয়ে সেবা নিতে হয়। ওই জায়গার মাটি ভরাট করে নতুন করে ভবন নির্মাণ করা জরুরি।

ক্লিনিকের পাশের বাড়ির সুবর্ণা বেগম বলেন, ‘ক্লিনিকটি তলিয়ে গেলে আমাদের বাড়িতে বসে ওষুধ দেন চিকিৎসক। শুক্রবার বাদে সপ্তাহের প্রতিদিন বাড়িতে মানুষের ভিড় জমে। এতে আমাদের অনেক অসুবিধা হয়।’

অন্যদিকে কড়াইল কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি মিনা আক্তার জানান, তাঁর ক্লিনিকের ভবনের ছাদের পলেস্তারা খসে পড়ছে। এ ছাড়া বছরের চার মাস পানিতে ডুবে থাকে ক্লিনিকটি। পানির মধ্যে দাঁড়িয়েই সেবা দেন তিনি।

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম জানান, উপজেলার ৫৪টি ক্লিনিকের মধ্যে ১০টির বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কমিউনিটি বেজড হেলথ কেয়ার ও হেলথ ইঞ্জিনিয়ারিং শাখায় চিঠি পাঠানো হয়েছে। তিনি আশা করছেন খুব দ্রুত এসব এলাকার উঁচু জমিতে নতুন ভবন নির্মাণ করা হবে।

সিভিল সার্জন মো. মিনহাজ উদ্দিন মিয়া বলেন, খোঁজ নিয়ে সমস্যা সমাধানে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত