টিকা উৎপাদনে যেতে পাঁচ বছর লাগবে

আজাদুল আদনান, ঢাকা
আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২২, ১২: ৪৮
Thumbnail image

করোনার ভয়াবহ সংক্রমণের মুখে কোভ্যাক্সসহ বৈশ্বিক সূত্রগুলো থেকে টিকা পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় সরকার দেশেই টিকা উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নেয় গত বছর। জাতীয় সংসদে গত ১৬ জুন দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে আন্তর্জাতিক মানের ভ্যাকসিন ইনস্টিটিউট গড়ে তোলার ঘোষণা দেন। এ ক্ষেত্রে একমাত্র রাষ্ট্রীয় ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের (ইডিসিএল) গোপালগঞ্জের কারখানাটির সক্ষমতা বিশেষ বিবেচনায় রাখা হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি এখন বলছে, পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে তাতে টিকা উৎপাদনে যেতে অন্তত পাঁচ বছর লাগবে।

ইডিসিএল বলছে, সরকারিভাবে টিকা উৎপাদনের জন্য আগে ভূমি দরকার। সেটি পেতে নানা জটিলতার মুখে পড়তে হয়েছে, যা কাটিয়ে উঠতে আরও কয়েক মাস লেগে যেতে পারে। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি দুই পরিকল্পনায় এগোচ্ছে সরকার। প্রথম পর্যায়ে বিদেশ থেকে বড় পরিমাণ (বাল্ক) টিকা এনে ছোট বোতলে ভরা হবে। সে ক্ষেত্রেও সময় লাগবে অন্তত দুই বছর। অন্যদিকে নিজস্ব প্রযুক্তিতে টিকা তৈরিতে অন্তত তিন বছর লাগবে। প্রস্তুতি হিসেবে করোনার টিকা তৈরি শিখতে মাইক্রোবায়োলজিস্ট, ফার্মাসিস্ট, টেকনিশিয়ানসহ ১৫ জন বিশেষজ্ঞকে বিদেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আগামী ২৩ মে থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত এই প্রশিক্ষণ চলবে। সব মিলিয়ে টিকা উৎপাদনে যেতে অন্তত পাঁচ বছর লাগবে বলে জানিয়েছে ইডিসিএল।

সরকারিভাবে টিকা তৈরির অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অধ্যাপক এহসানুল কবির আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জমি নিয়ে দীর্ঘসূত্রতার কারণে আমরা পিছিয়ে পড়েছি। এ সমস্যা এখন মোটামুটি শেষের পথে। এই সমস্যা কাটলেই এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের অর্থায়নে মূল কাজ শুরু হবে। এরপর যন্ত্রপাতি কেনা, টেন্ডার ও কনসালট্যান্ট নিয়োগ এবং তাঁদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনার প্রক্রিয়া শুরু হবে।’

কবে নাগাদ টিকা উৎপাদন শুরু হতে পারে—এমন প্রশ্নের জবাবে এহসানুল কবির বলেন, টিকা উৎপাদনে আসলে অনেক সময়ের প্রয়োজন। তবে সরকার তিন পদ্ধতিতে এগোচ্ছে। জমি অধিগ্রহণ হলে ল্যাবরেটরি নির্মাণ শেষ করে বিদেশ থেকে যন্ত্রপাতি আনা হবে। এরপর বৈদেশিক প্রযুক্তিতে পুরোপুরি টিকা তৈরি ও গবেষণার বিষয়টি আসবে। এতে প্রথম পর্যায়ে অন্তত দুই বছর লাগবে। আর স্থায়ীভাবে নিজস্ব প্রযুক্তিতে টিকা তৈরিতে সময় লাগবে অন্তত তিন বছর। সব মিলিয়ে পাঁচ বছর তো লাগবেই। তিনি বলেন, করোনাসহ দেশের নাগরিকদের যেসব টিকা প্রয়োগ করতে হয়, তার কোনোটির সরকারিভাবে পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। বেশির ভাগই বিদেশি পরীক্ষাগারের ওপর নির্ভরশীল। তবে এই সংকট কাটাতে চলেছে সরকার।

করোনার বিস্তারের মুখে দেশে তিন মাসের মধ্যে টিকা বোতলজাত করার সুবিধার গড়ে তুলতে সরকার ও চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন দুটি প্রতিষ্ঠান চায়না ন্যাশনাল বায়োটেক গ্রুপ অব কোম্পানিজ ও চায়না সিনোফার্ম ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশনের সঙ্গে গত বছরের ১৬ আগস্ট একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি করে দেশের বেসরকারি শীর্ষ ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ইন্‌সেপটা। কিন্তু টিকার স্থানীয় চাহিদার বড় অংশ কোভ্যাক্সের আওতায় বিভিন্ন দেশ থেকে অনুদান হিসেবে আসায় চুক্তি অনুযায়ী টিকা উৎপাদন প্রয়োজন হবে কি না, তা নিয়েও সংশয় দেখা যায়। এখন সরকার বলছে, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী দেশের ৮০ শতাংশ মানুষ এখন টিকার আওতায় এসেছে। ফলে নতুন করে টিকার প্রয়োজন হবে কি না তাও নিশ্চিত নয়।

ইন্‌সেপটা ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আব্দুল মুক্তাদির আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নতুন করে ভ্যাকসিন সরকারের প্রয়োজন হবে কি না আমরা জানি না। সেটি বোঝার ওপর উৎপাদনের সিদ্ধান্তে আসতে হবে। এ ছাড়া কেউ কিনছেও না। তাহলে ভ্যাকসিন উৎপাদন করে কী করব?’

ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক মো. সালাউদ্দিন বলেন, ‘কেউ ভ্যাকসিন বিক্রি করে যদি বেশি অর্থ পায়, তাহলে কেন কাঁচামাল দেবে? আগে নিজেদের স্বার্থ দেখেন তাঁরা। তাই, সরকার যখন টিকা কেনার চুক্তি করেছে, তখন তারা (চীন) কাঁচামাল দেয়নি। তাই, সংকট মুহূর্তেও টিকা উৎপাদন করতে পারেনি ইন্‌সেপটা।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত