ফকিরহাটে প্রথম কালো চাল উৎপাদন, চাষে আগ্রহ বাড়ছে

আবুল আহসান টিটু, ফকিরহাট (বাগেরহাট)
আপডেট : ০৫ মার্চ ২০২২, ১৭: ০৬
Thumbnail image

বাগেরহাটের ফকিরহাটে প্রথম ইন্দোনেশিয়ান ব্ল্যাক রাইস বা কালো চালের চাষ করা হয়েছে। উপজেলার মানসা-বাহিরদিয়া ইউনিয়নে শৌখিন চাষি এস এম মোস্তফা হাসান এই চালের ধান চাষ করেছেন। এই ধানের আশানুরূপ উৎপাদন দেখে এলাকার অন্যান্য চাষিও উৎসাহিত হয়েছেন। পুষ্টিবিদদের মতে, বাজারের সাধারণ চালের চেয়ে এ চাল তিন গুণ বেশি পুষ্টিসমৃদ্ধ।

উপজেলার মানসা-বাহিরদিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা ও পরিত্রাণ ক্লিনিকের মালিক এস এম মোস্তফা হাসান বলেন, ব্যতিক্রমী এ ধানের বিষয়টি তিনি ইন্টারনেটে দেখে বগুড়া থেকে দুই কেজি বীজ ধান সংগ্রহ করেন। অন্যান্য ধানের মতোই তিনি ১৫ শতক জমিতে রোপা আমন মৌসুমে এর চারা রোপণ করেন। রোগবালাইসহিষ্ণু জাত হওয়ায় কম খরচে প্রায় পাঁচ মণ ধান উৎপাদন হয়েছে। সম্পূর্ণ ব্যক্তি উদ্যোগে তিনি এ ধানের চাষ করেছেন।

কুচকুচে কালো ওই চাল ফুটিয়ে যে ভাত হয়, আপাতদৃষ্টিতে তা-ও কালো বর্ণের। তবে ভালোভাবে দেখলে বোঝা যাবে, ভাত ঠিক কালো নয়। বরং গাঢ় বেগুনি। যা কি না সাদা ভাতের তুলনায় পুষ্টিগুণ ও রোগ প্রতিরোধে অনেক বেশি সমৃদ্ধ। বিশেষত, ক্যানসার প্রতিরোধে কালো ভাত যথেষ্ট সহায়ক বলে পুষ্টিবিদদের দাবি। তাই সরকারি উদ্যোগে কালো চালকে খরিফ মৌসুমে বেশি জমিতে চাষ করার পরিকল্পনা নেওয়ার আহ্বান জানান চাষি মোস্তফা হাসান।

তিনি আরও বলেন, ১৫ শতক জমিতে কালো চাল উৎপাদনে তাঁর খরচ হয়েছে ৪ হাজার টাকা। আর বিক্রি করেছেন ২৭ হাজার ৫০০ টাকা। ব্যতিক্রমী, পুষ্টিগুণ ও স্বাদের হওয়ায় এ চালের বেশ চাহিদা ছিল। ৫০০ টাকা কেজি দরে তিনি এই চাল বিক্রি করেছেন। চলতি বোরো মৌসুমে আরও ৫২ শতক জমিতে এ ধান রোপণ করেছেন।

উপজেলার শিল্পীর মোড় এলাকার চাষি শেখ আহম্মদ আলী বলেন, মোস্তফা হাসানের জমিতে কালো ধান দেখে অবাক হন। ধান খুঁটলে কালো চাল বেরিয়ে আসে। কম সার ও কীটনাশক ব্যবহার করে শতকপ্রতি ভালো উৎপাদন দেখে তিনিও মোস্তফা হাসানের কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করে রোপণ করেছেন।

মানসা-বাহিরদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম ফকির বলেন, কালো চাল দেখে তিনিও কৃষক মোস্তফার কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করেছেন। চালটি খেতে মিষ্টি লাগে। ভাত রান্না করলে ঘন, খয়েরি রং হয়। এ চাল নিয়ে এলাকায় ব্যাপক সাড়া জেগেছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. অসীম কুমার সমাদ্দার বলেন, কালো চালে উপস্থিত পুষ্টি উপাদানগুলো—চর্বি ১ দশমিক ৫ গ্রাম (৩ শতাংশ), কার্বোহাইড্রেট ১১, আঁশ ৫, ভিটামিন-এ এবং আয়রন ৬ শতাংশ। উপকারিতার জন্য কালো চালের চাষ বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন তিনি। এই চাল খেলে দেহে প্রাকৃতিকভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে পারে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নাছরুল মিল্লাত বলেন, ব্ল্যাক রাইস বা কালো চাল উচ্চআঁশযুক্ত একটি পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ। এটি দেহে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ব্ল্যাক রাইসে ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামের দুটি জাত আছে। দুটি ধানই বাংলাদেশে চাষ উপযোগী।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান স্বপন দাশ বলেন, ব্ল্যাক রাইস ধানের আবাদ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য তিনি কৃষকদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবেন। বিশেষ করে বিষমুক্ত ফসল চাষের জন্য যেসব প্লট রয়েছে, সেখানে এ ধানের চাষ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শপথ নিয়েই বাইডেনের নীতি বাতিল ও ১০০ নির্বাহী আদেশের ঘোষণা ট্রাম্পের

শাহজালাল বিমানবন্দরে চাকরি নেননি মনোজ কুমার, বিজ্ঞাপনচিত্র নিয়ে বিভ্রান্তি

বিপিএলে আতশি কাচের নিচে চল্লিশের বেশি ক্রিকেটার

নতুন ভোটার যাচাই: জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব পাচ্ছেন শিক্ষকেরা

বিদ্যালয়ে একই পরিবারের ১৬ জনের চাকরি, তদন্তের নির্দেশ হাইকোর্টের

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত