জাহীদ রেজা নূর, ঢাকা
দেশ স্বাধীন হলে মুক্তিযোদ্ধারা কোনো পুরস্কারের অপেক্ষা না করে ফিরে গিয়েছিলেন যে যাঁর কাজে। তাঁদের কাছে দেশ স্বাধীন করাটাই ছিল সবচেয়ে জরুরি কাজ। সরকারের কাছ থেকে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য তাঁরা উদ্গ্রীব ছিলেন না। মুক্তিযুদ্ধের অধিকাংশ খেতাবই পেয়েছেন নিয়মিত বাহিনীর সদস্যরা। সাধারণ কৃষক, শ্রমিক, খেটে খাওয়া পরিবার থেকে উঠে আসা মুক্তিযোদ্ধারাও অসম সাহস ও বীরত্ব দেখালেও খেতাব দেওয়ার সময় তাঁদের কথা কেউ মনে রাখেনি।
সংকট আরও ছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের একটি অংশ অস্ত্র সমর্পণ করেননি। গণতান্ত্রিক সংসদের প্রতি অনেকেরই আস্থা ছিল না। আমরা তো এটা জানি যে সুখেন্দু দস্তিদারের পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী-লেনিনবাদী) পাকিস্তানি বাহিনী এবং মুক্তিবাহিনীর বিরুদ্ধে একই সঙ্গে লড়েছে। আবার তোয়াহা-আবদুল হকের কমিউনিস্ট পার্টি পাকিস্তানিদের কাছ থেকে অস্ত্র নিয়ে লড়াই করেছে মুক্তিবাহিনীর বিরুদ্ধে।
মুক্তিযোদ্ধাদের একটা অংশ মুক্তিযুদ্ধে ভারতের হস্তক্ষেপ চায়নি, ভেবেছে যুদ্ধ প্রলম্বিত হলে বিপ্লবের মাধ্যমে বাংলার অধিকার অর্জন করা যাবে। প্রথম বাংলাদেশ সরকারের প্রতি (যাকে প্রবাসী সরকার বলা হয়) আনুগত্য ছিল না কারও কারও। সবকিছু মিলে একটা অস্থিতিশীলতা কাজ করছিল।
যুদ্ধ শেষে দেশের পুনর্গঠন কাজে যুবশক্তিকে ঠিকভাবে কাজে লাগানো গেলে দেশ পরিচালনা অনেক সহজ হতো। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস ছিলেন পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী। তাঁর কাছে যুদ্ধের খবর পৌঁছাত না তখন। তাঁকে যখন মুক্তি দেওয়া হলো, তখন জুলফিকার আলী ভুট্টোর সঙ্গে কথা বলতে গিয়েই বঙ্গবন্ধু বুঝেছিলেন, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। তাই তিনি ভুট্টোর প্রস্তাবগুলো নাকচ করে বলেছিলেন, দেশে ফিরে তিনি কর্তব্য স্থির করবেন।
১০ জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করলেন বঙ্গবন্ধু। সে সময় নিত্যসহচর তাজউদ্দীন আহমদের কাছ থেকে যদি তিনি এই ৯ মাসের ঘটনাবলি শুনে নিতেন, তাহলে হয়তো এ দেশের ইতিহাস অন্য পথে চালিত হতো। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে শুরুতেই সম্ভবত তাজউদ্দীন আহমদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা দেওয়া হয়েছিল। এর ফলে প্রথম বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর কার্যাবলি বঙ্গবন্ধুর কাছে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এ কথা ভুললে চলবে না, মুজিব-তাজউদ্দীন জুটি স্বাধিকার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে। দলের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তাঁরা দীর্ঘদিন একসঙ্গে কাজ করেছেন। বঙ্গবন্ধুর প্রতি তাজউদ্দীন আহমদের ছিল অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা। কিন্তু এই দুই নেতার মধ্যে দূরত্বের ফোকর দিয়ে এমন অনেকেই বঙ্গবন্ধুর পাশে ভিড়েছিল, যারা হয়তো দেশের স্বার্থের চেয়ে নিজের স্বার্থ বড় করে দেখেছে। নইলে আওয়ামী লীগে এ রকম অস্থিরতা দেখা যেত না।
স্বাধীনতার পরপর চরম ডান ও চরম বামদের ক্রিয়াকলাপ সামাল দেওয়া ছিল কঠিন কাজ। মওলানা ভাসানীর কার্যকলাপ ছিল চরম রহস্যঘেরা। স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি ‘হক কথা’ নামে যে সাপ্তাহিক পত্রিকাটি বের করেন, তা মূলত ছিল ভারত ও আওয়ামী লীগের সমালোচনায় ভরা। তিনি বাংলাদেশে রুশ-ভারত চক্রান্ত আবিষ্কার করতে শুরু করেছিলেন সর্বত্র। ফলে মুক্তিযুদ্ধে যারা আমাদের সবচেয়ে বেশি সহায়তা করল, তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যে প্রচারণা চালিয়ে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে এই পত্রিকা। চীনপন্থীদের সঙ্গেই ছিল ভাসানীর আঁতাত।
সেই সঙ্গে এ কথাও ভুললে চলবে না, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের বিরোধিতা করে যখন জাসদের জন্ম হলো, তখন দেশে বিশৃঙ্খলা তৈরিতে তাদের ছিল অনেক বড় ভূমিকা। একটি সদ্য জন্ম নেওয়া দেশে বিভাজন সৃষ্টিকারীদের সংখ্যা এত বেশি ছিল যে তা ষড়যন্ত্রকারীদের ঐক্যবদ্ধ করতে সাহায্যও করেছিল। আওয়ামী লীগের মধ্যেও ছিল নানা স্বার্থের সংঘাত। এই সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে একরকম অসহায় হয়ে পড়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। কাছের লোকজন বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে, এমন ধারণা তিনি করতে পারেননি। কিন্তু দেখা গেল, সে রকম একটি পরিস্থিতিই সৃষ্টি হচ্ছিল তখন।
দেশ স্বাধীন হলে মুক্তিযোদ্ধারা কোনো পুরস্কারের অপেক্ষা না করে ফিরে গিয়েছিলেন যে যাঁর কাজে। তাঁদের কাছে দেশ স্বাধীন করাটাই ছিল সবচেয়ে জরুরি কাজ। সরকারের কাছ থেকে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য তাঁরা উদ্গ্রীব ছিলেন না। মুক্তিযুদ্ধের অধিকাংশ খেতাবই পেয়েছেন নিয়মিত বাহিনীর সদস্যরা। সাধারণ কৃষক, শ্রমিক, খেটে খাওয়া পরিবার থেকে উঠে আসা মুক্তিযোদ্ধারাও অসম সাহস ও বীরত্ব দেখালেও খেতাব দেওয়ার সময় তাঁদের কথা কেউ মনে রাখেনি।
সংকট আরও ছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের একটি অংশ অস্ত্র সমর্পণ করেননি। গণতান্ত্রিক সংসদের প্রতি অনেকেরই আস্থা ছিল না। আমরা তো এটা জানি যে সুখেন্দু দস্তিদারের পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী-লেনিনবাদী) পাকিস্তানি বাহিনী এবং মুক্তিবাহিনীর বিরুদ্ধে একই সঙ্গে লড়েছে। আবার তোয়াহা-আবদুল হকের কমিউনিস্ট পার্টি পাকিস্তানিদের কাছ থেকে অস্ত্র নিয়ে লড়াই করেছে মুক্তিবাহিনীর বিরুদ্ধে।
মুক্তিযোদ্ধাদের একটা অংশ মুক্তিযুদ্ধে ভারতের হস্তক্ষেপ চায়নি, ভেবেছে যুদ্ধ প্রলম্বিত হলে বিপ্লবের মাধ্যমে বাংলার অধিকার অর্জন করা যাবে। প্রথম বাংলাদেশ সরকারের প্রতি (যাকে প্রবাসী সরকার বলা হয়) আনুগত্য ছিল না কারও কারও। সবকিছু মিলে একটা অস্থিতিশীলতা কাজ করছিল।
যুদ্ধ শেষে দেশের পুনর্গঠন কাজে যুবশক্তিকে ঠিকভাবে কাজে লাগানো গেলে দেশ পরিচালনা অনেক সহজ হতো। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস ছিলেন পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী। তাঁর কাছে যুদ্ধের খবর পৌঁছাত না তখন। তাঁকে যখন মুক্তি দেওয়া হলো, তখন জুলফিকার আলী ভুট্টোর সঙ্গে কথা বলতে গিয়েই বঙ্গবন্ধু বুঝেছিলেন, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। তাই তিনি ভুট্টোর প্রস্তাবগুলো নাকচ করে বলেছিলেন, দেশে ফিরে তিনি কর্তব্য স্থির করবেন।
১০ জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করলেন বঙ্গবন্ধু। সে সময় নিত্যসহচর তাজউদ্দীন আহমদের কাছ থেকে যদি তিনি এই ৯ মাসের ঘটনাবলি শুনে নিতেন, তাহলে হয়তো এ দেশের ইতিহাস অন্য পথে চালিত হতো। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে শুরুতেই সম্ভবত তাজউদ্দীন আহমদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা দেওয়া হয়েছিল। এর ফলে প্রথম বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর কার্যাবলি বঙ্গবন্ধুর কাছে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এ কথা ভুললে চলবে না, মুজিব-তাজউদ্দীন জুটি স্বাধিকার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে। দলের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তাঁরা দীর্ঘদিন একসঙ্গে কাজ করেছেন। বঙ্গবন্ধুর প্রতি তাজউদ্দীন আহমদের ছিল অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা। কিন্তু এই দুই নেতার মধ্যে দূরত্বের ফোকর দিয়ে এমন অনেকেই বঙ্গবন্ধুর পাশে ভিড়েছিল, যারা হয়তো দেশের স্বার্থের চেয়ে নিজের স্বার্থ বড় করে দেখেছে। নইলে আওয়ামী লীগে এ রকম অস্থিরতা দেখা যেত না।
স্বাধীনতার পরপর চরম ডান ও চরম বামদের ক্রিয়াকলাপ সামাল দেওয়া ছিল কঠিন কাজ। মওলানা ভাসানীর কার্যকলাপ ছিল চরম রহস্যঘেরা। স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি ‘হক কথা’ নামে যে সাপ্তাহিক পত্রিকাটি বের করেন, তা মূলত ছিল ভারত ও আওয়ামী লীগের সমালোচনায় ভরা। তিনি বাংলাদেশে রুশ-ভারত চক্রান্ত আবিষ্কার করতে শুরু করেছিলেন সর্বত্র। ফলে মুক্তিযুদ্ধে যারা আমাদের সবচেয়ে বেশি সহায়তা করল, তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যে প্রচারণা চালিয়ে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে এই পত্রিকা। চীনপন্থীদের সঙ্গেই ছিল ভাসানীর আঁতাত।
সেই সঙ্গে এ কথাও ভুললে চলবে না, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের বিরোধিতা করে যখন জাসদের জন্ম হলো, তখন দেশে বিশৃঙ্খলা তৈরিতে তাদের ছিল অনেক বড় ভূমিকা। একটি সদ্য জন্ম নেওয়া দেশে বিভাজন সৃষ্টিকারীদের সংখ্যা এত বেশি ছিল যে তা ষড়যন্ত্রকারীদের ঐক্যবদ্ধ করতে সাহায্যও করেছিল। আওয়ামী লীগের মধ্যেও ছিল নানা স্বার্থের সংঘাত। এই সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে একরকম অসহায় হয়ে পড়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। কাছের লোকজন বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে, এমন ধারণা তিনি করতে পারেননি। কিন্তু দেখা গেল, সে রকম একটি পরিস্থিতিই সৃষ্টি হচ্ছিল তখন।
বিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
৩ দিন আগেগাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪দেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২০ নভেম্বর ২০২৪