এ কে এম শামসুদ্দিন
বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রাম থেকে শুরু করে স্বাধীনতা-উত্তর প্রতিটি ঐতিহাসিক আন্দোলনে যে সংগঠনের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা গর্বের সঙ্গে উচ্চারিত হয়, প্রায় এক যুগ ধরে সেই সংগঠনের বর্তমান নেতা-কর্মীরা বেপরোয়া কর্মকাণ্ড, ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ ও নানাবিধ অপরাধমূলক ঘটনার জন্ম দিয়ে সবকিছু যেন ধূলিসাৎ করে দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগ কোনো অবস্থাতেই যেন তাঁদের নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না। গত এক সপ্তাহে জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্ম দিয়েছেন, তা নিয়ে গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এসব ঘটনায় ছাত্রলীগের নেতা-নেত্রীদের আচরণ সব ধৃষ্টতা ছাড়িয়ে গেছে। তাঁরা এতই ঔদ্ধত্যপূর্ণ যে যাকে খুশি তাকেই ধরে নিয়ে গিয়ে মারতে পারেন, হাতুড়িপেটা করে শরীরের অস্থিমজ্জা গুঁড়িয়ে দিতে পারেন। গুলি করে হত্যা করেও প্রশাসনের সহায়তায় আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে যেতেও পারেন। তাঁরা এতটাই সাহস সঞ্চয় করেছেন যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে ভুল বলতেও দ্বিধা করেন না। কারণ, তাঁরা জানেন, তাঁদের অনেক অপকর্মই দলের বিভিন্ন মহলে ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখা হয়। অতীতে এমন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য দলের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে ক্ষমা করে দেওয়ার অনেক উদাহরণও আছে।
ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের এসব অপকর্ম নিয়ে মাঝেমধ্যে অবশ্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরক্ত প্রকাশ করতে দেখা গেছে। প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং একাধিকবার তাঁদের সতর্ক করেও দিয়েছেন। তারপরও বেপরোয়া আচরণ বেড়েই চলেছে। সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তা ছাত্রলীগের বেপরোয়া আচরণের অন্যতম উদাহরণ। গত ২৪ সেপ্টেম্বর রসায়ন বিভাগে ছাত্রলীগ নেত্রীকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ না দেওয়ায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব রিমোট সেন সিং অ্যান্ড জিআইএসের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডে ছাত্রলীগের বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। শুধু তা-ই নয়, নিয়োগ বোর্ড বন্ধের দাবিতে তাঁরা প্রার্থীদের বের করে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে দুই ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন। ছাত্রলীগ নেতারা বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বাইরে কাউকে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে চাই না।’
জানা গেছে, ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় রসায়ন বিভাগের তিন প্রভাষককে নিয়োগ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। নবনিযুক্ত প্রভাষকেরা ইতিমধ্যে বিভাগে চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাদিয়া আফরিন পাপড়িকে নিয়োগ না দেওয়ায় উপাচার্য অফিস অবরোধ করেছেন নেতা-কর্মীরা। অথচ নিয়োগপ্রাপ্ত তিনজনের সবাই নিজ নিজ বর্ষে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে প্রথম কিংবা দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারী ছিলেন। অপরদিকে ছাত্রলীগের সাদিয়া আফরিন পাপড়ি স্নাতকে চতুর্থ ও স্নাতকোত্তরে তৃতীয় স্থান অর্জন করেছিলেন। শুধু পরীক্ষার ফলাফলেই পাপড়ি পিছিয়ে নেই, পাপড়ির বিরুদ্ধে পরীক্ষায় নকল করে বহিষ্কৃত ও প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগও আছে। এরপরও ছাত্রলীগ তাঁকেই শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ওপর অব্যাহতভাবে চাপ প্রয়োগ করে যাচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, ছাত্রলীগের নেতারা এ বিষয়ে উপাচার্যসহ শিক্ষকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগও এনেছেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ শাখার নেতা আশরাফুল ‘উপাচার্য বঙ্গবন্ধুর আদর্শের লোকদের নিয়োগ দিতে চান, কিন্তু অনেকের চাপে তা সম্ভব হয় না’ বলে জানালে, উপাচার্য তা অস্বীকার করেন। তিনি স্পষ্ট করে জানান, ‘যাঁরা বিভাগে ভালো শিক্ষার্থী, তাঁদেরই নিয়োগ দেওয়া হবে।’ অথচ শেষ পর্যন্ত তিনি ছাত্রলীগের বাধার মুখে শিক্ষক নিয়োগ স্থগিত করতে বাধ্য হলেন। এটি শুধু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃশ্য নয়। দেশের প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে এ দৃশ্য দেখা যায়। ছাত্রলীগ প্রতিটি ক্ষেত্রে এভাবেই প্রভাব খাটিয়ে শুধু রাজনৈতিক আনুগত্য আছে—এমন পেছনের সারির ব্যক্তিদের শিক্ষক নিয়োগে কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করছে। ফলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মেধাবী শিক্ষক পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
২৫ সেপ্টেম্বর আজকের পত্রিকার তৃতীয় পৃষ্ঠায় প্রকাশিত একটি শিরোনামের কথা এখানে উল্লেখ করা যায়। শিরোনামটি হলো, ‘প্রথম শ্রেণিতে প্রথম, তবু ডাক পাননি পরীক্ষায়’। এই শিরোনামের ঠিক নিচে একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মেধাবী শিক্ষার্থী জোবেদা আক্তার একটি প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে আছেন। প্ল্যাকার্ডে বড় বড় অক্ষরে লেখা, ‘নিয়োগের ক্ষেত্রে আমার প্রতি অনিয়মের বিচার চাই’। জোবেদা আক্তার ২০১৭ সালে স্নাতক (সম্মান) সিজিপিএ ৪ স্কোরের মধ্যে ৩.৬২ এবং ২০১৮ সালে স্নাতকোত্তর সিজিপিএ ৩.৫৫ পেয়ে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন। এ জন্য একই বছরে তিনি প্রধানমন্ত্রীর স্বর্ণপদক পান। গত বছরের ডিসেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে একজন প্রভাষক (স্থায়ী) পদের জন্য বিজ্ঞপ্তি দিলে জোবেদা আক্তার আবেদন করেন। শিক্ষক নিয়োগের জন্য প্রথমে এ বছরের ৯ সেপ্টেম্বর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার তারিখ নির্ধারিত হলেও পরে স্থগিত হয়। পরে ওই পদের জন্য ২১ সেপ্টেম্বর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষাসহ নিয়োগ-প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। কী এক অজানা কারণে চিঠি ও মোবাইল ফোনে মেসেজের মাধ্যমে ২১ সেপ্টেম্বরের পরীক্ষার বিষয়ে অন্য প্রার্থীদের ডাকা হলেও জোবেদা আক্তারকে ডাকা হয়নি। ফলে তিনি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ-প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারেননি। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে কোনো সদুত্তরও পাওয়া যায়নি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নৈরাজ্যের কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ধারালো অস্ত্র হাতে বারবার নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন। গত পাঁচ বছরে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা প্রকাশ্যে হলের কক্ষ দখল, কর্মকর্তাদের মারধর, যৌন হয়রানি, ভাঙচুর, শিক্ষক-ঠিকাদারদের হুমকি, চাঁদার ভাগ-বাঁটোয়ারাসহ নানা কারণে ১৬২ বার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটিয়েছেন। সর্বশেষ প্রথম আলোর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মোশাররফ শাহকে মারধর করে গুরুতর জখম করেন। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এসব সংঘর্ষে প্রতিবারই ধারালো অস্ত্রের মহড়া দিয়েছে ছাত্রলীগ। ক্যাম্পাসের সড়কে লাগানো ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা, এসব সংঘর্ষে ছাত্রলীগের অন্তত ১০০ নেতা-কর্মী হাতে ধারালো অস্ত্রের মহড়া ধারণ করে। ছাত্রলীগের অস্ত্রধারী নেতা-কর্মীদের পরিচয় শনাক্ত করে তাঁদের ছবি পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ করার পরও এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি। ছাত্রলীগের
এসব ‘লাগামহীন কর্মকাণ্ডে’ উপাচার্যের ভূমিকা নিয়ে বারবার বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকেই মনে করেন, শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগে উপাচার্যের বিরুদ্ধে যে সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ আছে, সেই অনিয়ম মসৃণভাবে চালিয়ে যেতে ছাত্রলীগকে তিনি এভাবে প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছেন। ফলে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের দৌরাত্ম্য দিন দিন আরও বেড়েছে।
পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর ওপর যখন-তখন চড়াও হওয়া যেন ছাত্রলীগের নিয়মিত কর্মসূচি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এত কিছুর পরও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের আশীর্বাদে ছাত্রলীগের অভিযুক্ত নেতা-কর্মীরা বারবার ছাড়া পেয়ে যান।
এ কারণেই ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের একচেটিয়া মাস্তানি ও স্বৈরাচারী পরিবেশ তৈরির পেছনে উপাচার্যের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ওদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মন্নুজান হল ছাত্রলীগ শাখার সাধারণ সম্পাদক ফারজানা শশীর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে দেওয়া একটি উক্তি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে রীতিমতো তোলপাড় শুরু হয়েছে। শশী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ শিক্ষকদের নিয়োগ প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে ভুল বলে অভিহিত করেছেন। ফেসবুক লাইভে এসে শশী বলেছেন, ‘ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ছোট করে প্রতিনিয়ত নিউজ করছে সাংবাদিকেরা। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো কথা বলছে না। আপনারা যদি ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের পাশে না থাকেন, তাহলে আমি বলব, ভিসি-প্রোভিসি, প্রক্টর এবং ছাত্র উপদেষ্টাকে আওয়ামী পরিষদ থেকে নিয়োগ দেওয়াই শেখ হাসিনার ভুল সিদ্ধান্ত।’ শশীর এই বক্তব্য দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ দেশের সর্বত্র সমালোচনা শুরু হয়। যদিও কিছুক্ষণ পরই শশী তাঁর প্রোফাইল থেকে বক্তব্যটি সরিয়ে নেন। প্রধানমন্ত্রীকে উল্লেখ করে শশীর ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্যে সবাই হতবাক হয়েছেন। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য সুলতান-উল-ইসলাম ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া
প্রকাশ করে শশীর বক্তব্যকে ‘সীমা লঙ্ঘনের শামিল’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘ছাত্রলীগের ওই নেত্রী আমাদের নিয়োগ নিয়ে কথা বলেছেন, আমরা যখন সংগঠন (রাজনৈতিক দল) করেছি, তখন তাঁর জন্মই হয়নি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের নিয়োগ দিয়ে ভুল করেছেন, এত বড় স্পর্ধা তাঁর দেখানো উচিত হয়নি। এটা তাঁর সীমা লঙ্ঘনকারী বক্তব্য।’ উপাচার্য অবশ্য এ ব্যাপারে একটু কৌশলী বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমি দলীয় পরিচয়ে হাইলাইটেড হতে চাই না।’ তিনি শশীর শিক্ষাগত জ্ঞান, বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে তাঁর ধারণা ও শিক্ষকদের প্রতি সম্মানবোধ কতটুকু আছে, সে বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।
ছাত্রলীগের এসব কর্মকাণ্ডে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গত এক বছরে ৪৫টির বেশি লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দেওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে ১৩টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে ৬টির। এসব ঘটনায় ছাত্রলীগের কাউকে শাস্তির আওতায় আনতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকেরা মনে করছেন, এসব ঘটনায় শাস্তি না হওয়ায় ছাত্রলীগের দৌরাত্ম্য কমছে না।
এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, বর্তমানে বাংলাদেশের প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা ক্ষমতাসীন দলের আশীর্বাদপুষ্ট। রাজনৈতিক আনুগত্যই যে তাঁদের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার অন্যতম যোগ্যতা, তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। তাঁদের আচার-আচরণই প্রমাণ করে যে তাঁরা দলীয় পরিচয়ে পরিচিত। প্রায় প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করলেও যখন ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে তাঁরা কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেন না বা নিতে পারেন না, তখন তাঁদের অক্ষমতা বা আসল উদ্দেশ্য বুঝতে সমস্যা হয় না। এখন যদি তাঁরা বলেন, ‘আমি দলীয় পরিচয়ে হাইলাইটেড হতে চাই না’, শুনতে কেমন হাস্যকর মনে হয় না? এ কথা সবাই বোঝেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারজানা শশী বক্তব্য দিতে গিয়ে বেফাঁস প্রধানমন্ত্রীর কথা বলে ফেলাতেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া আমরা দেখতে পাচ্ছি। তা না হলে বরাবরের মতোই, তাদের আগের ভূমিকাতেই দেখতে পেতাম।
এ কে এম শামসুদ্দিন, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ও কলাম লেখক
বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রাম থেকে শুরু করে স্বাধীনতা-উত্তর প্রতিটি ঐতিহাসিক আন্দোলনে যে সংগঠনের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা গর্বের সঙ্গে উচ্চারিত হয়, প্রায় এক যুগ ধরে সেই সংগঠনের বর্তমান নেতা-কর্মীরা বেপরোয়া কর্মকাণ্ড, ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ ও নানাবিধ অপরাধমূলক ঘটনার জন্ম দিয়ে সবকিছু যেন ধূলিসাৎ করে দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগ কোনো অবস্থাতেই যেন তাঁদের নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না। গত এক সপ্তাহে জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্ম দিয়েছেন, তা নিয়ে গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এসব ঘটনায় ছাত্রলীগের নেতা-নেত্রীদের আচরণ সব ধৃষ্টতা ছাড়িয়ে গেছে। তাঁরা এতই ঔদ্ধত্যপূর্ণ যে যাকে খুশি তাকেই ধরে নিয়ে গিয়ে মারতে পারেন, হাতুড়িপেটা করে শরীরের অস্থিমজ্জা গুঁড়িয়ে দিতে পারেন। গুলি করে হত্যা করেও প্রশাসনের সহায়তায় আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে যেতেও পারেন। তাঁরা এতটাই সাহস সঞ্চয় করেছেন যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে ভুল বলতেও দ্বিধা করেন না। কারণ, তাঁরা জানেন, তাঁদের অনেক অপকর্মই দলের বিভিন্ন মহলে ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখা হয়। অতীতে এমন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য দলের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে ক্ষমা করে দেওয়ার অনেক উদাহরণও আছে।
ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের এসব অপকর্ম নিয়ে মাঝেমধ্যে অবশ্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরক্ত প্রকাশ করতে দেখা গেছে। প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং একাধিকবার তাঁদের সতর্ক করেও দিয়েছেন। তারপরও বেপরোয়া আচরণ বেড়েই চলেছে। সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তা ছাত্রলীগের বেপরোয়া আচরণের অন্যতম উদাহরণ। গত ২৪ সেপ্টেম্বর রসায়ন বিভাগে ছাত্রলীগ নেত্রীকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ না দেওয়ায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব রিমোট সেন সিং অ্যান্ড জিআইএসের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডে ছাত্রলীগের বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। শুধু তা-ই নয়, নিয়োগ বোর্ড বন্ধের দাবিতে তাঁরা প্রার্থীদের বের করে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে দুই ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখেন। ছাত্রলীগ নেতারা বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বাইরে কাউকে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে চাই না।’
জানা গেছে, ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় রসায়ন বিভাগের তিন প্রভাষককে নিয়োগ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। নবনিযুক্ত প্রভাষকেরা ইতিমধ্যে বিভাগে চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাদিয়া আফরিন পাপড়িকে নিয়োগ না দেওয়ায় উপাচার্য অফিস অবরোধ করেছেন নেতা-কর্মীরা। অথচ নিয়োগপ্রাপ্ত তিনজনের সবাই নিজ নিজ বর্ষে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে প্রথম কিংবা দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারী ছিলেন। অপরদিকে ছাত্রলীগের সাদিয়া আফরিন পাপড়ি স্নাতকে চতুর্থ ও স্নাতকোত্তরে তৃতীয় স্থান অর্জন করেছিলেন। শুধু পরীক্ষার ফলাফলেই পাপড়ি পিছিয়ে নেই, পাপড়ির বিরুদ্ধে পরীক্ষায় নকল করে বহিষ্কৃত ও প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগও আছে। এরপরও ছাত্রলীগ তাঁকেই শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ওপর অব্যাহতভাবে চাপ প্রয়োগ করে যাচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, ছাত্রলীগের নেতারা এ বিষয়ে উপাচার্যসহ শিক্ষকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগও এনেছেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ শাখার নেতা আশরাফুল ‘উপাচার্য বঙ্গবন্ধুর আদর্শের লোকদের নিয়োগ দিতে চান, কিন্তু অনেকের চাপে তা সম্ভব হয় না’ বলে জানালে, উপাচার্য তা অস্বীকার করেন। তিনি স্পষ্ট করে জানান, ‘যাঁরা বিভাগে ভালো শিক্ষার্থী, তাঁদেরই নিয়োগ দেওয়া হবে।’ অথচ শেষ পর্যন্ত তিনি ছাত্রলীগের বাধার মুখে শিক্ষক নিয়োগ স্থগিত করতে বাধ্য হলেন। এটি শুধু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃশ্য নয়। দেশের প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে এ দৃশ্য দেখা যায়। ছাত্রলীগ প্রতিটি ক্ষেত্রে এভাবেই প্রভাব খাটিয়ে শুধু রাজনৈতিক আনুগত্য আছে—এমন পেছনের সারির ব্যক্তিদের শিক্ষক নিয়োগে কর্তৃপক্ষকে বাধ্য করছে। ফলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মেধাবী শিক্ষক পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
২৫ সেপ্টেম্বর আজকের পত্রিকার তৃতীয় পৃষ্ঠায় প্রকাশিত একটি শিরোনামের কথা এখানে উল্লেখ করা যায়। শিরোনামটি হলো, ‘প্রথম শ্রেণিতে প্রথম, তবু ডাক পাননি পরীক্ষায়’। এই শিরোনামের ঠিক নিচে একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মেধাবী শিক্ষার্থী জোবেদা আক্তার একটি প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে আছেন। প্ল্যাকার্ডে বড় বড় অক্ষরে লেখা, ‘নিয়োগের ক্ষেত্রে আমার প্রতি অনিয়মের বিচার চাই’। জোবেদা আক্তার ২০১৭ সালে স্নাতক (সম্মান) সিজিপিএ ৪ স্কোরের মধ্যে ৩.৬২ এবং ২০১৮ সালে স্নাতকোত্তর সিজিপিএ ৩.৫৫ পেয়ে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন। এ জন্য একই বছরে তিনি প্রধানমন্ত্রীর স্বর্ণপদক পান। গত বছরের ডিসেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে একজন প্রভাষক (স্থায়ী) পদের জন্য বিজ্ঞপ্তি দিলে জোবেদা আক্তার আবেদন করেন। শিক্ষক নিয়োগের জন্য প্রথমে এ বছরের ৯ সেপ্টেম্বর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার তারিখ নির্ধারিত হলেও পরে স্থগিত হয়। পরে ওই পদের জন্য ২১ সেপ্টেম্বর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষাসহ নিয়োগ-প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। কী এক অজানা কারণে চিঠি ও মোবাইল ফোনে মেসেজের মাধ্যমে ২১ সেপ্টেম্বরের পরীক্ষার বিষয়ে অন্য প্রার্থীদের ডাকা হলেও জোবেদা আক্তারকে ডাকা হয়নি। ফলে তিনি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ-প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারেননি। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে কোনো সদুত্তরও পাওয়া যায়নি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নৈরাজ্যের কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ধারালো অস্ত্র হাতে বারবার নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন। গত পাঁচ বছরে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা প্রকাশ্যে হলের কক্ষ দখল, কর্মকর্তাদের মারধর, যৌন হয়রানি, ভাঙচুর, শিক্ষক-ঠিকাদারদের হুমকি, চাঁদার ভাগ-বাঁটোয়ারাসহ নানা কারণে ১৬২ বার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটিয়েছেন। সর্বশেষ প্রথম আলোর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মোশাররফ শাহকে মারধর করে গুরুতর জখম করেন। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এসব সংঘর্ষে প্রতিবারই ধারালো অস্ত্রের মহড়া দিয়েছে ছাত্রলীগ। ক্যাম্পাসের সড়কে লাগানো ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা, এসব সংঘর্ষে ছাত্রলীগের অন্তত ১০০ নেতা-কর্মী হাতে ধারালো অস্ত্রের মহড়া ধারণ করে। ছাত্রলীগের অস্ত্রধারী নেতা-কর্মীদের পরিচয় শনাক্ত করে তাঁদের ছবি পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ করার পরও এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি। ছাত্রলীগের
এসব ‘লাগামহীন কর্মকাণ্ডে’ উপাচার্যের ভূমিকা নিয়ে বারবার বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকেই মনে করেন, শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগে উপাচার্যের বিরুদ্ধে যে সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ আছে, সেই অনিয়ম মসৃণভাবে চালিয়ে যেতে ছাত্রলীগকে তিনি এভাবে প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছেন। ফলে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের দৌরাত্ম্য দিন দিন আরও বেড়েছে।
পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর ওপর যখন-তখন চড়াও হওয়া যেন ছাত্রলীগের নিয়মিত কর্মসূচি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এত কিছুর পরও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের আশীর্বাদে ছাত্রলীগের অভিযুক্ত নেতা-কর্মীরা বারবার ছাড়া পেয়ে যান।
এ কারণেই ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের একচেটিয়া মাস্তানি ও স্বৈরাচারী পরিবেশ তৈরির পেছনে উপাচার্যের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ওদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মন্নুজান হল ছাত্রলীগ শাখার সাধারণ সম্পাদক ফারজানা শশীর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক লাইভে দেওয়া একটি উক্তি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে রীতিমতো তোলপাড় শুরু হয়েছে। শশী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ শিক্ষকদের নিয়োগ প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে ভুল বলে অভিহিত করেছেন। ফেসবুক লাইভে এসে শশী বলেছেন, ‘ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ছোট করে প্রতিনিয়ত নিউজ করছে সাংবাদিকেরা। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো কথা বলছে না। আপনারা যদি ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের পাশে না থাকেন, তাহলে আমি বলব, ভিসি-প্রোভিসি, প্রক্টর এবং ছাত্র উপদেষ্টাকে আওয়ামী পরিষদ থেকে নিয়োগ দেওয়াই শেখ হাসিনার ভুল সিদ্ধান্ত।’ শশীর এই বক্তব্য দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ দেশের সর্বত্র সমালোচনা শুরু হয়। যদিও কিছুক্ষণ পরই শশী তাঁর প্রোফাইল থেকে বক্তব্যটি সরিয়ে নেন। প্রধানমন্ত্রীকে উল্লেখ করে শশীর ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্যে সবাই হতবাক হয়েছেন। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য সুলতান-উল-ইসলাম ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া
প্রকাশ করে শশীর বক্তব্যকে ‘সীমা লঙ্ঘনের শামিল’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘ছাত্রলীগের ওই নেত্রী আমাদের নিয়োগ নিয়ে কথা বলেছেন, আমরা যখন সংগঠন (রাজনৈতিক দল) করেছি, তখন তাঁর জন্মই হয়নি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের নিয়োগ দিয়ে ভুল করেছেন, এত বড় স্পর্ধা তাঁর দেখানো উচিত হয়নি। এটা তাঁর সীমা লঙ্ঘনকারী বক্তব্য।’ উপাচার্য অবশ্য এ ব্যাপারে একটু কৌশলী বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমি দলীয় পরিচয়ে হাইলাইটেড হতে চাই না।’ তিনি শশীর শিক্ষাগত জ্ঞান, বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে তাঁর ধারণা ও শিক্ষকদের প্রতি সম্মানবোধ কতটুকু আছে, সে বিষয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।
ছাত্রলীগের এসব কর্মকাণ্ডে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গত এক বছরে ৪৫টির বেশি লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দেওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে ১৩টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে ৬টির। এসব ঘটনায় ছাত্রলীগের কাউকে শাস্তির আওতায় আনতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকেরা মনে করছেন, এসব ঘটনায় শাস্তি না হওয়ায় ছাত্রলীগের দৌরাত্ম্য কমছে না।
এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, বর্তমানে বাংলাদেশের প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা ক্ষমতাসীন দলের আশীর্বাদপুষ্ট। রাজনৈতিক আনুগত্যই যে তাঁদের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার অন্যতম যোগ্যতা, তা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। তাঁদের আচার-আচরণই প্রমাণ করে যে তাঁরা দলীয় পরিচয়ে পরিচিত। প্রায় প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করলেও যখন ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে তাঁরা কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেন না বা নিতে পারেন না, তখন তাঁদের অক্ষমতা বা আসল উদ্দেশ্য বুঝতে সমস্যা হয় না। এখন যদি তাঁরা বলেন, ‘আমি দলীয় পরিচয়ে হাইলাইটেড হতে চাই না’, শুনতে কেমন হাস্যকর মনে হয় না? এ কথা সবাই বোঝেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফারজানা শশী বক্তব্য দিতে গিয়ে বেফাঁস প্রধানমন্ত্রীর কথা বলে ফেলাতেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া আমরা দেখতে পাচ্ছি। তা না হলে বরাবরের মতোই, তাদের আগের ভূমিকাতেই দেখতে পেতাম।
এ কে এম শামসুদ্দিন, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ও কলাম লেখক
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
১ দিন আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৫ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৫ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৫ দিন আগে