Ajker Patrika

রংপুরের যে গাছ গড়েছে শতকোটি টাকার বাণিজ্য

শিপুল ইসলাম, রংপুর
রংপুরের যে গাছ গড়েছে শতকোটি টাকার বাণিজ্য

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার খোড়াগাছ ইউনিয়নের তেকানী গ্রাম। সেখানে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে ৭৩ বছর বয়সী একটি আমগাছ। এটিই রংপুরের ব্র্যান্ড হয়ে ওঠা হাঁড়িভাঙা আমের মাতৃগাছ হিসেবে পরিচিত সবার কাছে। একটি গাছ থেকে এখন রংপুর অঞ্চলে প্রায় দুই হাজার হেক্টর জমিতে ছড়িয়ে পড়েছে হাঁড়িভাঙা আমের চাষ। অতুলনীয় স্বাদ ও গন্ধের কারণে এ আম এখন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে গেছে বিদেশেও। হাঁড়িভাঙা আম রংপুরের অর্থনীতিতে জোগান দিচ্ছে শতকোটি টাকা। রংপুর কৃষি বিভাগ বলছে, মৌসুমের শেষ পর্যন্ত এবার প্রায় ৩০০ কোটি টাকার হাঁড়িভাঙা আমের বাণিজ্য হবে। ভালো উদ্যোগ নিলে হাঁড়িভাঙা আম দিয়ে বছরে হাজার কোটি টাকা আয় করা সম্ভব বলেও মনে করে কৃষি বিভাগ।

তেকানী গ্রামে যাওয়ার পথে দেখা যায়, রাস্তার দুই পাশে শুধু হাঁড়িভাঙা আমের বাগান। সেসব বাগানে কাজ করছেন অনেক মানুষ। কেউ বাগানের গাছ থেকে আম পাড়ছেন, কেউ তা ক্রেটবন্দী করছেন। কেউ আবার ট্রাক বা ভ্যানে করে দূরদূরান্তে নিয়ে যাচ্ছেন। তেকানী মোড়ে মাতৃগাছটির খোঁজ করতেই এলাকাবাসী দেখিয়ে দিলেন পুরোনো এক মসজিদ। সেখানে আম পাড়তে দেখা গেল এক দম্পতিকে। হাঁড়িভাঙা আম যিনি আবিষ্কার করেছিলেন, তাঁর নাম নফেল উদ্দিন পাইকার। তিনি বেঁচে নেই। বর্তমানে আমগাছটির দেখভাল করেন নফেল উদ্দিনের ছেলে আমজাদ হোসেন পাইকার ও নাতি ফিরোজ শাহ পাইকার। যে দম্পতি মাতৃগাছ থেকে আম পাড়ছিলেন, তাঁরা নফেল উদ্দিনের নাতি ফিরোজ শাহ ও তাঁর স্ত্রী আম্বিয়া খাতুন। আমজাদ হোসেন আম বিক্রির জন্য হাটে থাকায় ফিরোজের সঙ্গে কথা বলি।

‘১৯৫০ সালের কথা’ বলে ফিরোজ শুরু করলেন হাঁড়িভাঙা আমের গল্প। তখন উঁচা বালুয়া নামের গ্রামটি ছিল ঝোপজঙ্গলে ভরা। সেই জঙ্গলের একটি আমগাছ থেকে কলমের মাধ্যমে চারা করে বাড়ির পাশের জমিতে রোপণ করেছিলেন নফেল উদ্দিন। গাছটিতে সেচ দেওয়ার জন্য মাটির হাঁড়ি বেঁধে দেওয়া হয়। একদিন রাতে মাটির সেই হাঁড়ি কে বা কারা ভেঙে দেয়। এই হাঁড়ি ভাঙার ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় হয়। গাছটি বড় হলে প্রথমবারেই প্রচুর আম ধরে। নফেল উদ্দিন আম বিক্রির জন্য হাটে নেন। আমের আকৃতি ও স্বাদ দেখে অনেকেই তাঁর কাছে আমের নাম জানতে চান। নফেল উদ্দিন তো নাম জানেন না! আমগাছে পানি দেওয়ার হাঁড়ি ভেঙে ফেলার গল্প এলাকার সবাই জানত। নফেল উদ্দিন বুদ্ধি করে লোকজনকে জানান, এই আম সেই হাঁড়িভাঙা গাছের। তখন থেকেই এর নাম হয়ে যায় হাঁড়িভাঙা আম। আঁশহীন ও সুস্বাদু হওয়ায় সেই গাছ থেকে কলমের মাধ্যমে চারা করার হিড়িক পড়ে যায়। গড়ে উঠতে থাকে বাগান। এভাবেই হাঁড়িভাঙা আমের বিস্তার ঘটে।

মূলত রংপুরের মিঠাপুকুর ও বদরগঞ্জ উপজেলার লাল মাটিতে হাঁড়িভাঙা আমের চাষ হচ্ছে এখন। আশির দশকে আমটি বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু হলেও ২০০০ সালের পর থেকে ব্যাপকভাবে প্রচার পায়।

প্রায় ২০ বছর ধরে বাণিজ্যিকভাবে ৪ একরে আমের চাষ করছেন তেকানী গ্রামের লোকমান হোসেন। তিনি জানান, অর্থনৈতিকভাবে হাঁড়িভাঙা আম ভাগ্য বদলে দিয়েছে তাঁর। এই আমের বদৌলতে এখন বাড়ি ও জমির মালিক হয়েছেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গণপিটুনিতে নিহত জামায়াত কর্মী নেজাম ও তাঁর বাহিনী গুলি ছোড়ে, মিলেছে বিদেশি পিস্তল: পুলিশ

রাজধানীতে ছিনতাইকারী সন্দেহে ইরানের দুই নাগরিককে মারধর

বিএনপির দুই পেশাজীবী সংগঠনের কমিটি বিলুপ্ত

ফরিদপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ: ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা, নিষিদ্ধের দাবি শিক্ষার্থীদের

ভারত-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে পন্টিংয়ের আরেকটি রেকর্ড ভাঙলেন কোহলি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত