মিটফোর্ড হাসপাতালে এক্স-রে ফিল্মের সংকট দুর্ভোগে রোগীরা

আয়নাল হোসেন, ঢাকা
Thumbnail image

ঢাকার দোহার উপজেলার হাজারবিঘা এলাকার চঞ্চল খন্দকার শ্বাসকষ্টের চিকিৎসা করাতে গত বৃহস্পতিবার আসেন মিটফোর্ড হাসপাতালে। বহির্বিভাগে চিকিৎসককে দেখালে তাঁর বুকের এক্স-রে, ইসিজি এবং মূত্র ও রক্তের কয়েকটি পরীক্ষা দেওয়া হয়।

দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে মূত্র ও রক্তের পরীক্ষাগুলো করাতে পারলেও এক্স-রে করাতে গিয়ে তিনি মারাত্মক দুর্ভোগে পড়েন। ওই সময় আরও অনেক রোগীকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। চঞ্চল খন্দকার দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর এক আত্মীয়ের সহায়তায় এক্স-রেটি করাতে পারলেও লাইনের পেছনের দিকে থাকা অন্যদের পক্ষে তা সম্ভব হয়নি।

গত শনিবার সকালে গিয়েও হাসপাতালের এক্স-রে কক্ষের সামনে অর্ধশতাধিক রোগীকে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। একাধিক রোগী ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, মিটফোর্ড হাসপাতালে এক্স-রে করাতে না পেরে প্রতিদিন অনেক রোগী আশপাশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে দ্বিগুণ টাকা দিয়ে তা করাতে বাধ্য হন।

জানা গেছে, মিটফোর্ড হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগে আগে প্রতিদিন পাঁচ শতাধিক রোগীর এক্স-রে করা হতো। এক্স-রে ফিল্ম সরবরাহে সংকট দেখা দেওয়ায় এখন তিন শর বেশি রোগীর এক্স-রে করা সম্ভব হচ্ছে না। তা-ও আবার সময় লাগছে অনেক বেশি। ফিল্মের সংকটে হাসপাতালের আটটি এক্স-রে যন্ত্রের ছয়টিই কাজে লাগছে না।

মিটফোর্ড হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই বিভাগে বছরে ১ লাখ ৫০ হাজারের মতো এক্স-রে ফিল্ম লাগে।দৈনিক চাহিদা পাঁচ শতাধিক। প্রতিবছর জুলাই-আগস্টে ফিল্ম কেনা হয়ে যায়। ফিল্ম কেনার জন্য নির্ধারিত একটি দরও আছে, যাকে বলা হয় এসআর। কিন্তু এ বছর ফিল্ম কেনার আগে বাজারদর যাচাই করার সিদ্ধান্ত নেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ফলে দরপত্র কেনার পরও অনেক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ফিল্ম সরবরাহ করেনি। এতে ফিল্মের সংকট দেখা দেয়। পরে ওই দরপত্র বাতিল করে নতুন করে দরপত্র ডাকার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

এক্স-রে ফিল্মের সংকট থাকার কথা স্বীকার করেন হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আলী হাবীব। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ফুজি ফিল্মের সংকট থাকলেও অন্যান্য ফিল্ম দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। হাসপাতালের সেবা বন্ধ হয়নি।

হাসপাতালের একাধিক কর্মকর্তা জানান, ওই বিভাগে ছোট-বড় আটটি এক্স-রে মেশিন আছে। এসব যন্ত্রের মধ্যে ছয়টি চলে ফুজি ফিল্মের মাধ্যমে। আর দুটি চলে আগফা ও লাখি ফিল্ম দিয়ে। হাসপাতালে ব্যবহৃত মোট এক্স-রে ফিল্মের ৫০ শতাংশই লাগে ফুজি ফিল্ম। কিন্তু নির্ধারিত দর না পাওয়ায় খোদ ফুজি কোম্পানিই ফিল্ম সরবরাহ থেকে সরে যায়। এতে হাসপাতালে ফিল্মের তীব্র সংকট তৈরি হয়। অথচ পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর মিটফোর্ড হাসপাতালে রোগীর ভিড় বেড়েছে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে অনেক রোগী এখন মিটফোর্ড হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসছেন।

বাবুবাজারের বাসিন্দা ও চাল ব্যবসায়ী মনির হোসেন জমাদার জানান, মিটফোর্ড হাসপাতালে এক্স-রে করাতে না পেরে প্রতিদিন অনেক রোগী তাঁর দোকানের সামনে দিয়ে নয়াবাজারে যান মেডিপ্যাথ নামের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এক্স-রে করাতে। বিভিন্ন বয়সের অনেক নারী-পুরুষ তাঁদের কাছে মেডিপ্যাথের ঠিকানা জানতে চান।

জানা গেছে, সরকারি হাসপাতালে ছোট আকারের একটি এক্স-রে করাতে লাগে ১৫০ টাকা। বাইরে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ৪০০-৫০০ টাকা লাগে। মাঝারি মানের একটি ফিল্মে এক্স-রের জন্য ২০০ টাকা লাগে। বেসরকারিতে লাগে ৫০০-৬০০ টাকা। দাঁতের এক্স-রে করানোর সরকারি ফি ২৫০ টাকা এবং বেসরকারি ৪০০-৬০০ টাকা। লাম্বার স্পাইন এক্স-রে করানোর সরকারি ফি ৪০০ টাকা, বেসরকারিতে ৭০০-৯০০ টাকা।

মিটফোর্ড হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. বিবেকানন্দ হালদার বলেন, বছরে এই বিভাগের জন্য যত ফিল্ম দরকার, তার একটি তালিকা অর্থবছরের শুরুতেই পাঠানো হয়। এই অর্থবছরে তিন দফায় ফিল্মের চাহিদাপত্র দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এবার যথাসময়ে তা কেনা হয়নি। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত