ড. আর এম দেবনাথ
২০২৪-২৫ অর্থবছরের নতুন বাজেট যথারীতি সংসদে উত্থাপিত হয়েছে। এখন তার ওপর সংসদে এবং সংসদের বাইরে পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা বা বিতর্ক চলছে। ইতিমধ্যে পালিত হয়েছে পবিত্র ঈদুল আজহা—কোরবানির ঈদ। এদিকে এই মুহূর্তে চলছে বন্যা—সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ইত্যাদি অঞ্চলে। ডান হাত, বাম হাত আর এখন বন্যার অজুহাতে বাড়ছে জিনিসপত্রের দাম। সরু চালের দাম বেড়েছে। দাম বেড়েছে আটা, ময়দা, কাঁচা মরিচ, মসলাপাতি এবং শাকসবজির। অথচ তা হওয়ার কথা ছিল না। অন্তত তা-ই বলেছিলেন সরকার এবং সাবেক মন্ত্রীরা। কিন্তু তাঁদের কথার কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই। এরই মধ্যে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। বাজেটের ওপর সমালোচনা পাঠ করে দেখলাম, যা বলা হতো ৫-৭-১০ বছর আগে, এখনো প্রায় তা-ই বলা হচ্ছে। সরকারের বয়ানও প্রায় একই রকম। অথচ বাজেটের মূল কথাটা অনেকেই বলছেন না। বাজেটের খরচের বিপুল পরিমাণ টাকা কোত্থেকে আসবে? আর ওই রাজস্ব আয়ের টাকা কোথায় খরচ করা হবে? আমার কাছে এই দুটো প্রশ্নের উত্তর খুবই জরুরি।
উল্লেখ্য, আমাদের বাজেটের আলোচনা শুরু হয় খরচ/ ব্যয় দিয়ে। আয়ের আলোচনা পরে। অথচ সাংসারিক জীবনে আমাদের হিসাব হচ্ছে: আগে আয়, তারপর ব্যয়। কিছু থাকলে তা সঞ্চয়। কিন্তু জাতীয় ক্ষেত্রে শুরু হয় ঠিক উল্টোভাবে—খরচ আগে, আয় পরে। এই হিসাবে দেখা যায়, বিশাল খরচ, অর্থাৎ ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা বাদে বাকি টাকার সিংহ ভাগই খরচ হবে প্রশাসনের জন্য, সুদের টাকা বাবদ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য, আর ভর্তুকির জন্য। সুদ ব্যয় বাড়ছে শনৈঃ শনৈঃ। কারণ, এক টাকার কাজ সরকারিভাবে দুই-তিন টাকায় করতে গিয়ে এবং প্রয়োজনীয় রাজস্ব আদায় করতে না পেরে সরকার ডান-বাম হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে সমানে ঋণ করে যাচ্ছে। অতএব সুদ খরচ বৃদ্ধি। শেষ বিচারে উন্নয়নের জন্য আর টাকা থাকে? বস্তুত উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় টাকার প্রায় সবটাই ঋণের টাকা। ‘বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির’ আকার হচ্ছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। আর বাজেট ঘাটতি হচ্ছে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। ৫০-৫২ বছর বাজেট করে চলার পর এই হচ্ছে পরিণতি। ঘাটতি আর ঘাটতি। ঋণ আর ঋণ। সুদ ব্যয় আর সুদ ব্যয়। এভাবেই চলছে ‘গরিবের সংসার’। ‘গরিব দেশ’ হচ্ছে ‘নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ’।
আবার বিপরীতে এ অবস্থার জন্যও সব বোঝা টানতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। কীভাবে? এটা বোঝা যায় বাজেটের রাজস্বের বিশ্লেষণ করলে। মোট খরচের সিংহ ভাগ, অর্থাৎ ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হিসাবে আদায় করবে ‘জাতীয় রাজস্ব বোর্ড’ (এনবিআর)। তারা ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় করবে পাঁচটি খাত থেকে। এক. মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট), দুই. আমদানি ও শুল্ক (ডিউটি), তিন. আয়কর (ইনকাম ট্যাক্স), চার. সম্পূরক শুল্ক (সাপ্লিমেন্টারি ডিউটি) এবং পাঁচ. ‘অন্যান্য’। এই পাঁচ খাতের মধ্যে সিংহ ভাগ আসবে মূল্য সংযোজন কর (৩৮ দশমিক ১ শতাংশ) এবং আয়কর (৩৬ দশমিক ৬ শতাংশ) হিসেবে। এর অর্থ কী? অর্থ হচ্ছে, বাজেটের সিংহ ভাগ টাকা দেবে সাধারণ মানুষ, সাধারণ করদাতা। ভ্যাট প্রায় সব পণ্য ও সেবার ওপরই আছে। এর বোঝা ধনী-গরিবনির্বিশেষে একই হারে সবার ওপর পড়ে। এখানে ধনাঢ্য ব্যক্তি, অতিধনী, শতকোটি টাকার মালিক যে হারে ভ্যাট দেবে, একজন শ্রমজীবীও সে-ই হারে দেবে। এটা অবিচার ছাড়া কিছু নয়। ভ্যাটকে বলা যায় ‘কনজাম্পশন ট্যাক্স’; অর্থাৎ ‘ভোগ কর’। কিছু কিনলে, ভোগ করলেই, ব্যবহার করলেই কর। মজা হচ্ছে ভোগ, অর্থাৎ খরচ করলেও ট্যাক্স দিতে হবে, আবার আয় করলেও ট্যাক্স দিতে হবে, যার নাম ‘ইনকাম ট্যাক্স’; অর্থাৎ ‘ইনকামেও’ ট্যাক্স, এক্সপেন্ডিচারেও ট্যাক্স।
এটা কি সুবিচার? সুবিচার নয় বলেই প্রতিবেশী দেশ ভারতে ইনকাম ট্যাক্স তুলে দেওয়ার দাবি উঠছে; বিশেষ করে এ কারণে ‘ইনকাম ট্যাক্স’ গরিব দেয় না, ‘ইনকাম ট্যাক্স’ ধনাঢ্য ব্যক্তি, কোম্পানিরা দেয় না/ দিতে চায় না/ কম দেয়; অর্থাৎ ফাঁকি দেয়। মাঝখানে বিপদে পড়ে মধ্যবিত্ত করদাতারা। তাদের টাকা, ট্যাক্সের টাকা উৎসেই কেটে রাখে নিয়োগদাতা। আবার বহু মধ্যবিত্ত আছে কোনো ট্যাক্সই দেয় না। ৫০০ টাকার জমি ‘পদ্মা সেতু’ হওয়ার ফলে দাম বেড়ে হয়েছে ১ লাখ টাকা। সেই দামে বিক্রি করে কেউ কর দেয় না। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন ‘ইনকাম ট্যাক্স’ এখন উৎসেই কেটে রাখা হয়। ১০ টাকার সুদ পেলে ১ টাকা/ দেড় টাকা উৎসেই কেটে রাখে ব্যাংক। দেখা যায়, ৮০-৮৫ শতাংশ আয়কর আসে উৎসেই। তাহলে আয়কর রিটার্ন কেন? কেন ‘ইনকাম ট্যাক্স’? ‘ভ্যাটই’ উত্তম ব্যবস্থা। সহজে আদায়। কাস্টমার দিতে বাধ্য। মোটকথা, এই প্যাঁচে পড়ে দেখা যাচ্ছে বাজেটের মোট খরচের সিংহ ভাগ বহন করে মধ্যবিত্ত, গরিব মানুষ, শ্রমজীবী মানুষ। আর তার উপকারভোগী প্রশাসন, মাথাভারী প্রশাসন, যারা সেবক হওয়ার চেয়ে শাসক হতেই ভালোবাসে।
রাজস্ব আয় এবং রাজস্ব ব্যয়ের ক্ষেত্রে এই যে অবিচার তা-ই শেষ নয়। রাজস্ব বা আয়করের ক্ষেত্রে আরও অবিচার আছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য আয়করের হার আগের হারকেই অব্যাহত রাখা হয়েছে। এমনকি করমুক্ত আয়সীমাও একই রয়েছে। বার্ষিক আয় সাড়ে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত করশূন্য। এর বেশি হলেই কর দিতে হবে। অথচ দেখা যাচ্ছে মূল্যস্ফীতিতে সাধারণ করদাতারা জেরবার। দেড়-দুই বছর যাবৎ মূল্যস্ফীতির হার প্রায় ১০ শতাংশ। প্রতিটি জিনিসের মূল্য আকাশছোঁয়া। সাধারণ মানুষ কেন, সাধারণ করদাতাদের নাগালের বাইরে। এ ক্ষেত্রে বিজ্ঞ অর্থমন্ত্রী সাধারণ করদাতাদের কিছুটা স্বস্তি দিতে পারতেন। করমুক্ত আয়ের সীমায় কিছুটা স্বস্তি দিতে পারতেন। কিন্তু কৃপণ অর্থমন্ত্রী তা করলেন না। এতে সাধারণ করদাতাদের করবোঝা একই রইল। অথচ তার জীবনধারণের ব্যয় অনেক বেড়েছে।
আরেকটা সমস্যা তিনি ঠেলে দিলেন সম্পদ করের ক্ষেত্রে, যাকে ‘সারচার্জ’ও বলা হয়। ৪ কোটি টাকা পর্যন্ত নিট সম্পদ হলে সম্পদ কর ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দিতে হবে না। এটাও আগেরই সীমারেখা। এখানে সমস্যা হলো, গুলশানের বাড়িগুলোর সম্পদ ধরা হচ্ছে ক্রয়মূল্যে। ক্রয়মূল্য সামান্য। সরকারের জমিতে অনেকেই বাড়ি করেছেন। এর বর্তমান বাজারমূল্য শত শত কোটি টাকা। অথচ তার কোনো সম্পদ কর নেই। কিন্তু যারা তাদের সম্পদ ‘ফিন্যান্সিয়াল অ্যাসেট’, অর্থাৎ ক্যাশ, ব্যাংক ডিপোজিট, সঞ্চয়পত্র অথবা শেয়ার বন্ডে রেখেছে, তাদের উচ্চহারে সম্পদ কর দিতে হচ্ছে। এতে বিরাট বৈষম্য হচ্ছে। প্রকৃত ধনীরা সম্পদ করের তালিকা থেকে বাদ পড়ছে, অথচ ‘আর্থিক সম্পদ’ওয়ালারা সম্পদ কর দিচ্ছে।
এ ছাড়া এবারের বাজেটে রয়েছে কম হারে টাকা ট্যাক্স রিটার্নে ঘোষণার সুযোগ। সমালোচকেরা বলছে, এটা ‘কালোটাকা’কে সাদা করার সুযোগ। অথচ বাজেট বক্তৃতায় ‘কালোটাকা’ বা ‘অপ্রদর্শিত টাকা’ এসব কিছুই বলা নেই। এটা পরিষ্কার করে বলা উচিত ছিল। একজন করদাতা যেকোনো কারণেই হোক ৫-১০-২০ লাখ টাকা রিটার্নে আগে দেখায়নি, এবার দেখাতে চায়। এ টাকা ‘আন-ট্যাক্সড’ টাকা, অপ্রদর্শিত টাকা। এটাও কি ‘কালোটাকা’? বোঝা যাচ্ছে না। অথচ ঘুষ-দুর্নীতির টাকার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা হয়েছে বলে মনে হয়।
পরিশেষে অর্থমন্ত্রীকে একটি বিষয়ে ধন্যবাদ দিতে হয়, তিনি করমুক্ত আয় এবং করহারকে দুই বছরের জন্য কার্যকর করেছেন। এতে করদাতারা ‘কর পরিকল্পনা’ করতে পারবে। এটা ভালো পদক্ষেপ, যার দাবি ছিল বহুদিন থেকে।
ড. আর এম দেবনাথ, সাবেক শিক্ষক, ঢাবি; অর্থনীতি বিশ্লেষক
২০২৪-২৫ অর্থবছরের নতুন বাজেট যথারীতি সংসদে উত্থাপিত হয়েছে। এখন তার ওপর সংসদে এবং সংসদের বাইরে পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা বা বিতর্ক চলছে। ইতিমধ্যে পালিত হয়েছে পবিত্র ঈদুল আজহা—কোরবানির ঈদ। এদিকে এই মুহূর্তে চলছে বন্যা—সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ইত্যাদি অঞ্চলে। ডান হাত, বাম হাত আর এখন বন্যার অজুহাতে বাড়ছে জিনিসপত্রের দাম। সরু চালের দাম বেড়েছে। দাম বেড়েছে আটা, ময়দা, কাঁচা মরিচ, মসলাপাতি এবং শাকসবজির। অথচ তা হওয়ার কথা ছিল না। অন্তত তা-ই বলেছিলেন সরকার এবং সাবেক মন্ত্রীরা। কিন্তু তাঁদের কথার কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই। এরই মধ্যে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। বাজেটের ওপর সমালোচনা পাঠ করে দেখলাম, যা বলা হতো ৫-৭-১০ বছর আগে, এখনো প্রায় তা-ই বলা হচ্ছে। সরকারের বয়ানও প্রায় একই রকম। অথচ বাজেটের মূল কথাটা অনেকেই বলছেন না। বাজেটের খরচের বিপুল পরিমাণ টাকা কোত্থেকে আসবে? আর ওই রাজস্ব আয়ের টাকা কোথায় খরচ করা হবে? আমার কাছে এই দুটো প্রশ্নের উত্তর খুবই জরুরি।
উল্লেখ্য, আমাদের বাজেটের আলোচনা শুরু হয় খরচ/ ব্যয় দিয়ে। আয়ের আলোচনা পরে। অথচ সাংসারিক জীবনে আমাদের হিসাব হচ্ছে: আগে আয়, তারপর ব্যয়। কিছু থাকলে তা সঞ্চয়। কিন্তু জাতীয় ক্ষেত্রে শুরু হয় ঠিক উল্টোভাবে—খরচ আগে, আয় পরে। এই হিসাবে দেখা যায়, বিশাল খরচ, অর্থাৎ ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা বাদে বাকি টাকার সিংহ ভাগই খরচ হবে প্রশাসনের জন্য, সুদের টাকা বাবদ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য, আর ভর্তুকির জন্য। সুদ ব্যয় বাড়ছে শনৈঃ শনৈঃ। কারণ, এক টাকার কাজ সরকারিভাবে দুই-তিন টাকায় করতে গিয়ে এবং প্রয়োজনীয় রাজস্ব আদায় করতে না পেরে সরকার ডান-বাম হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে সমানে ঋণ করে যাচ্ছে। অতএব সুদ খরচ বৃদ্ধি। শেষ বিচারে উন্নয়নের জন্য আর টাকা থাকে? বস্তুত উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় টাকার প্রায় সবটাই ঋণের টাকা। ‘বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির’ আকার হচ্ছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। আর বাজেট ঘাটতি হচ্ছে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। ৫০-৫২ বছর বাজেট করে চলার পর এই হচ্ছে পরিণতি। ঘাটতি আর ঘাটতি। ঋণ আর ঋণ। সুদ ব্যয় আর সুদ ব্যয়। এভাবেই চলছে ‘গরিবের সংসার’। ‘গরিব দেশ’ হচ্ছে ‘নিম্নমধ্যম আয়ের দেশ’।
আবার বিপরীতে এ অবস্থার জন্যও সব বোঝা টানতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। কীভাবে? এটা বোঝা যায় বাজেটের রাজস্বের বিশ্লেষণ করলে। মোট খরচের সিংহ ভাগ, অর্থাৎ ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হিসাবে আদায় করবে ‘জাতীয় রাজস্ব বোর্ড’ (এনবিআর)। তারা ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় করবে পাঁচটি খাত থেকে। এক. মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট), দুই. আমদানি ও শুল্ক (ডিউটি), তিন. আয়কর (ইনকাম ট্যাক্স), চার. সম্পূরক শুল্ক (সাপ্লিমেন্টারি ডিউটি) এবং পাঁচ. ‘অন্যান্য’। এই পাঁচ খাতের মধ্যে সিংহ ভাগ আসবে মূল্য সংযোজন কর (৩৮ দশমিক ১ শতাংশ) এবং আয়কর (৩৬ দশমিক ৬ শতাংশ) হিসেবে। এর অর্থ কী? অর্থ হচ্ছে, বাজেটের সিংহ ভাগ টাকা দেবে সাধারণ মানুষ, সাধারণ করদাতা। ভ্যাট প্রায় সব পণ্য ও সেবার ওপরই আছে। এর বোঝা ধনী-গরিবনির্বিশেষে একই হারে সবার ওপর পড়ে। এখানে ধনাঢ্য ব্যক্তি, অতিধনী, শতকোটি টাকার মালিক যে হারে ভ্যাট দেবে, একজন শ্রমজীবীও সে-ই হারে দেবে। এটা অবিচার ছাড়া কিছু নয়। ভ্যাটকে বলা যায় ‘কনজাম্পশন ট্যাক্স’; অর্থাৎ ‘ভোগ কর’। কিছু কিনলে, ভোগ করলেই, ব্যবহার করলেই কর। মজা হচ্ছে ভোগ, অর্থাৎ খরচ করলেও ট্যাক্স দিতে হবে, আবার আয় করলেও ট্যাক্স দিতে হবে, যার নাম ‘ইনকাম ট্যাক্স’; অর্থাৎ ‘ইনকামেও’ ট্যাক্স, এক্সপেন্ডিচারেও ট্যাক্স।
এটা কি সুবিচার? সুবিচার নয় বলেই প্রতিবেশী দেশ ভারতে ইনকাম ট্যাক্স তুলে দেওয়ার দাবি উঠছে; বিশেষ করে এ কারণে ‘ইনকাম ট্যাক্স’ গরিব দেয় না, ‘ইনকাম ট্যাক্স’ ধনাঢ্য ব্যক্তি, কোম্পানিরা দেয় না/ দিতে চায় না/ কম দেয়; অর্থাৎ ফাঁকি দেয়। মাঝখানে বিপদে পড়ে মধ্যবিত্ত করদাতারা। তাদের টাকা, ট্যাক্সের টাকা উৎসেই কেটে রাখে নিয়োগদাতা। আবার বহু মধ্যবিত্ত আছে কোনো ট্যাক্সই দেয় না। ৫০০ টাকার জমি ‘পদ্মা সেতু’ হওয়ার ফলে দাম বেড়ে হয়েছে ১ লাখ টাকা। সেই দামে বিক্রি করে কেউ কর দেয় না। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন ‘ইনকাম ট্যাক্স’ এখন উৎসেই কেটে রাখা হয়। ১০ টাকার সুদ পেলে ১ টাকা/ দেড় টাকা উৎসেই কেটে রাখে ব্যাংক। দেখা যায়, ৮০-৮৫ শতাংশ আয়কর আসে উৎসেই। তাহলে আয়কর রিটার্ন কেন? কেন ‘ইনকাম ট্যাক্স’? ‘ভ্যাটই’ উত্তম ব্যবস্থা। সহজে আদায়। কাস্টমার দিতে বাধ্য। মোটকথা, এই প্যাঁচে পড়ে দেখা যাচ্ছে বাজেটের মোট খরচের সিংহ ভাগ বহন করে মধ্যবিত্ত, গরিব মানুষ, শ্রমজীবী মানুষ। আর তার উপকারভোগী প্রশাসন, মাথাভারী প্রশাসন, যারা সেবক হওয়ার চেয়ে শাসক হতেই ভালোবাসে।
রাজস্ব আয় এবং রাজস্ব ব্যয়ের ক্ষেত্রে এই যে অবিচার তা-ই শেষ নয়। রাজস্ব বা আয়করের ক্ষেত্রে আরও অবিচার আছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য আয়করের হার আগের হারকেই অব্যাহত রাখা হয়েছে। এমনকি করমুক্ত আয়সীমাও একই রয়েছে। বার্ষিক আয় সাড়ে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত করশূন্য। এর বেশি হলেই কর দিতে হবে। অথচ দেখা যাচ্ছে মূল্যস্ফীতিতে সাধারণ করদাতারা জেরবার। দেড়-দুই বছর যাবৎ মূল্যস্ফীতির হার প্রায় ১০ শতাংশ। প্রতিটি জিনিসের মূল্য আকাশছোঁয়া। সাধারণ মানুষ কেন, সাধারণ করদাতাদের নাগালের বাইরে। এ ক্ষেত্রে বিজ্ঞ অর্থমন্ত্রী সাধারণ করদাতাদের কিছুটা স্বস্তি দিতে পারতেন। করমুক্ত আয়ের সীমায় কিছুটা স্বস্তি দিতে পারতেন। কিন্তু কৃপণ অর্থমন্ত্রী তা করলেন না। এতে সাধারণ করদাতাদের করবোঝা একই রইল। অথচ তার জীবনধারণের ব্যয় অনেক বেড়েছে।
আরেকটা সমস্যা তিনি ঠেলে দিলেন সম্পদ করের ক্ষেত্রে, যাকে ‘সারচার্জ’ও বলা হয়। ৪ কোটি টাকা পর্যন্ত নিট সম্পদ হলে সম্পদ কর ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দিতে হবে না। এটাও আগেরই সীমারেখা। এখানে সমস্যা হলো, গুলশানের বাড়িগুলোর সম্পদ ধরা হচ্ছে ক্রয়মূল্যে। ক্রয়মূল্য সামান্য। সরকারের জমিতে অনেকেই বাড়ি করেছেন। এর বর্তমান বাজারমূল্য শত শত কোটি টাকা। অথচ তার কোনো সম্পদ কর নেই। কিন্তু যারা তাদের সম্পদ ‘ফিন্যান্সিয়াল অ্যাসেট’, অর্থাৎ ক্যাশ, ব্যাংক ডিপোজিট, সঞ্চয়পত্র অথবা শেয়ার বন্ডে রেখেছে, তাদের উচ্চহারে সম্পদ কর দিতে হচ্ছে। এতে বিরাট বৈষম্য হচ্ছে। প্রকৃত ধনীরা সম্পদ করের তালিকা থেকে বাদ পড়ছে, অথচ ‘আর্থিক সম্পদ’ওয়ালারা সম্পদ কর দিচ্ছে।
এ ছাড়া এবারের বাজেটে রয়েছে কম হারে টাকা ট্যাক্স রিটার্নে ঘোষণার সুযোগ। সমালোচকেরা বলছে, এটা ‘কালোটাকা’কে সাদা করার সুযোগ। অথচ বাজেট বক্তৃতায় ‘কালোটাকা’ বা ‘অপ্রদর্শিত টাকা’ এসব কিছুই বলা নেই। এটা পরিষ্কার করে বলা উচিত ছিল। একজন করদাতা যেকোনো কারণেই হোক ৫-১০-২০ লাখ টাকা রিটার্নে আগে দেখায়নি, এবার দেখাতে চায়। এ টাকা ‘আন-ট্যাক্সড’ টাকা, অপ্রদর্শিত টাকা। এটাও কি ‘কালোটাকা’? বোঝা যাচ্ছে না। অথচ ঘুষ-দুর্নীতির টাকার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা হয়েছে বলে মনে হয়।
পরিশেষে অর্থমন্ত্রীকে একটি বিষয়ে ধন্যবাদ দিতে হয়, তিনি করমুক্ত আয় এবং করহারকে দুই বছরের জন্য কার্যকর করেছেন। এতে করদাতারা ‘কর পরিকল্পনা’ করতে পারবে। এটা ভালো পদক্ষেপ, যার দাবি ছিল বহুদিন থেকে।
ড. আর এম দেবনাথ, সাবেক শিক্ষক, ঢাবি; অর্থনীতি বিশ্লেষক
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
২ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
২ দিন আগে