অরুণ কর্মকার
কাজের পরিধি, গুরুত্ব ও বিপুল রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যয়ের দায়িত্ব বিবেচনায় দেশের শীর্ষস্থানীয় অল্প কটি সরকারি সংস্থার একটি বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। গত ২৩ আগস্ট জাতীয় সংসদের সরকারি প্রতিষ্ঠান-সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভায় আলোচ্য বিষয় ছিল এই বিপিসি। সংস্থা হিসেবে বিপিসির কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি সেই আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল এর আর্থিক ব্যবস্থাপনা।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, সভা শেষে সংসদীয় কমিটির সভাপতি আ স ম ফিরোজ সংবাদকর্মীদের বলেছেন, বিপিসির কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নেই বললেই চলে। সংস্থাটির অনিয়মের বহর দেখে তাঁরা স্তম্ভিত। ওই সভার আলোচনার সূত্র ধরে অনিয়মের যেসব তথ্য সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, তাতে পুরো জাতিও বিস্মিত। শুরুতে বলে রাখি, বিপিসি কখন কোন উৎস থেকে কত দামে কোন ধরনের জ্বালানি তেল কেনে, সেই তথ্য জানা যায় না। একইভাবে বিপিসির সিস্টেম লসের বিষয়টিও রহস্যঘেরা। তবে এই দুটি বিষয় সেদিনের সংসদীয় কমিটির সভায় আলোচিত হয়নি। আলোচিত হয়েছে নিচেরগুলো:
১. গত ১০ বছর বিপিসির আয়-ব্যয়ের হিসাবের (অ্যাকাউন্টস) ‘এক্সটার্নাল অডিট’ হয়নি। তাহলে প্রশ্ন ওঠে, সরকার এই ১০ বছর বিপিসির হিসাব কীভাবে চূড়ান্ত করেছে? এসব হিসাব সরকারি নথিভুক্তই বা করা হয়েছে কীভাবে?
অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষায় প্রকাশিত বিপিসির আয়-ব্যয়, লাভ-লোকসানের অঙ্ক আর সংবাদকর্মীদের সামনে উপস্থাপিত বিপিসির চেয়ারম্যানের তথ্যে গরমিলের কারণ কি এগুলোই? এর দায় কি শুধু বিপিসির? বিপিসি ইচ্ছা করলেই কি এক্সটার্নাল অডিট ছাড়াই বছরের পর বছর রাষ্ট্রীয় অর্থের হিসাব ফেলে রাখতে পারে? এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া জরুরি এবং দেশের মানুষের অধিকারের মধ্যে পড়ে।
২. গত ১০ বছর বিপিসি তার হিসাব-নিকাশের সমন্বয় সাধন (রিকনসিলিয়েশন অব অ্যাকাউন্টস) করেনি। অথচ এটি আর্থিক ব্যবস্থাপনার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এর মাধ্যমে একটি অর্থবছরে কোনো প্রতিষ্ঠান তার অ্যাকাউন্টস থেকে যে পরিমাণ অর্থছাড় করেছে, সেই পরিমাণ অর্থই ব্যয় হয়েছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখা হয়। এ জন্য একটি অর্থবছরের মোট অর্থছাড় ও মোট অর্থ ব্যয়ের কাগজপত্র মিলিয়ে দেখা হয়।
বিপিসির মতো একটি বড় সরকারি সংস্থা যাদের মাধ্যমে প্রতিবছর দেশের কয়েক শ কোটি ডলার ব্যয় ও তার চেয়েও বেশি টাকা আয় হয়, তারা দীর্ঘ ১০ বছর আর্থিক ব্যবস্থাপনার মৌলিক পদ্ধতি অনুসরণ না করে কীভাবে চলতে পারে? এতে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হয় যে বিপিসির কাজের কোনো স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নেই।
৩. ওই ১০ বছর আগের দুই বছর, অর্থাৎ ২০১০-১১ এবং ২০১১-১২ সালে বিপিসির উপস্থাপন করা হিসাব নিরীক্ষা করে মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের (সিএজি) দপ্তর ৯ হাজার ২৯৫ কোটি ৪ লাখ টাকার অডিট আপত্তি তুলেছিল। সেই আপত্তির এখনো ফয়সালা হয়নি। কারণ, ওই আপত্তির বিষয়ে বিপিসি যেসব ব্যাখ্যা দিয়েছিল, সিএজি অফিসের কাছে তা গ্রহণযোগ্য হয়নি।
এ বছরের ২২ মে এ বিষয়টি যায় জাতীয় সংসদের সরকারি হিসাব-সংক্রান্ত কমিটির কাছে। তারা অডিট আপত্তি সম্পর্কে বিপিসির ব্যাখ্যাসংক্রান্ত সব কাগজপত্র চায়। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিপিসি তা সংসদীয় কমিটির কাছে পাঠায়নি। এসব তথ্য ২৩ আগস্টের সভায় উপস্থিত উপমহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক খান মো. ফেরদাউসুর রহমান জানিয়েছেন বলে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ।
প্রশ্ন হলো, তিন মাসেও বিপিসি সেই অডিট আপত্তির ব্যাখ্যা সরকারি হিসাব-সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির কাছে উপস্থাপন না করার কারণ কী? সংসদীয় কমিটি যে কাগজপত্র চেয়েছে, সেগুলো তো বিপিসির কাছে প্রস্তুত থাকারই কথা। কেননা, ওই সব ব্যাখ্যা তো তারা সিএজি অফিসকে আগে দিয়েছে। তারপরও এই বিলম্ব কেন? এমনিতেই বিষয়টি ১০ বছর আগের। তার ওপর এটি আরও বিলম্বিত করে তামাদি করে ফেলার কৌশল হতে পারে কি?
৪. গত ২৩ আগস্টের সভায় বিপিসি-সংক্রান্ত আলোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে আরও আছে—বিপিসি তিনটি তেল বিপণনকারী কোম্পানি পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার কাছে ২০১০-১১ ও ২০১১-১২ সালে তেল বিক্রি বাবদ ৫ হাজার ৯৫২ কোটি টাকা আদায় না করে সংস্থাটির ৭০৮ কোটি টাকার ক্ষতি করেছে। এই টাকা আদায় করা হলে বিপিসির ৭০৮ কোটি টাকা আয় হতো ব্যাংকের সুদ বাবদ। কিন্তু পাওনা আদায়ের কোনো চেষ্টা বিপিসি করেনি।
যদিও সিএজি অফিসের আপত্তির জবাবে বিপিসি ওই পাওনা টাকা আদায়ের অনেক চেষ্টা করেছে, কিন্তু এর সমর্থনে কোনো প্রমাণ তারা দেখাতে পারেনি। আমরা সবাই বুঝি যে এগুলো নিশ্চয়ই মৌখিক আলাপ-আলোচনার বিষয় নয়।
সিএজি অফিসের অডিট আপত্তিতে বলা হয়েছে, বিপিসি ওই তিনটি বিপণন কোম্পানিকে ভর্তুকি মূল্যে তেল দিয়েছে। সেই তেল বিক্রি করে কোম্পানি তিনটি মুনাফাসহ ব্যাংকে রেখেছে। সেখান থেকে পাওয়া মুনাফা তারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রণোদনা বোনাস দিয়েছে। ওয়ার্কার্স প্রফিট পার্টিসিপেশন ফান্ডে টাকা রেখেছে। আর বিপিসি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটা কি অনিচ্ছাকৃত হতে পারে? নাকি উদ্দেশ্যমূলক? এসব বিষয় তদন্ত করে দেখার দাবি রাখে।
৫. বিপিসির বিরুদ্ধে আরও অনেকগুলো অভিযোগ ও আপত্তি তুলেছে সিএজি অফিস। যেমন জ্বালানি তেলের মজুত ক্ষমতা না বাড়িয়ে বিপিসি বিদেশি জাহাজ এনে ভাড়া দিয়ে ‘ফ্লোটিং স্টোরেজ’ হিসেবে ব্যবহার করেছে। বিপিসির সামর্থ্য হচ্ছে একসঙ্গে ৫-৬টি জাহাজ এনে তেল খালাসের। কিন্তু এনেছে ৮-১০টি করে। এটা করে তারা ৬ মিলিয়ন ডলার গচ্চা দিয়েছে।
জাতীয় জ্বালানি নীতি ১৯৯৬-এর নির্দেশনা হচ্ছে দেশে ন্যূনপক্ষে ৬০ দিনের ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি তেলের মজুত রাখতে হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এই মজুত ক্ষমতা ৩০-৩৫ দিনের। অথচ স্টোরেজ ট্যাংক করার মতো জায়গা বিপিসির আছে। বিশেষজ্ঞ জনবল আছে। আছে প্রয়োজনীয় অর্থও।
বিপিসির জন্য তেল নিয়ে রপ্তানিকারকদের যেসব বড় জাহাজ বন্দরের বহির্নোঙরে আসে, সেই জাহাজগুলো থেকে ছোট ছোট জাহাজে (লাইটারেজ) করে তেল খালাস করা হয়। এই লাইটারেজের খরচ রপ্তানিকারকদের দেওয়ার কথা। কিন্তু গত ২০১০-১১ ও ২০১১-১২ অর্থবছরে বিপিসি লাইটারেজ বাবদ ৯ কোটি ১৫ লাখ টাকা খরচ করলেও রপ্তানিকারকদের কাছে সেই অর্থ দাবিই করেনি। অন্তত তেমন কোনো প্রমাণ সিএজি অফিসকে সরবরাহ করতে পারনি বিপিসি।
বিপিসি বন্ধ থাকা (নন-অপারেশনাল) বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাছে ফার্নেস তেল বিক্রি করেছে। ব্যাংকে নিজেদের বিপুল অর্থ থাকা সত্ত্বেও সরকারের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছে। আদায় করা বিপুল অঙ্কের মূল্য সংযোজন কর সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে নিজেদের কাছে রেখেছে। এ রকম আরও অনেক আছে।
৬. বিপিসি হলো সরকারের সোনার ডিম পাড়া হাঁস। যেখানে প্রায় সবগুলো করপোরেশন লোকসানি, সেখানে বিপিসি হচ্ছে সরকারের বিপুল অঙ্কের শুল্ক-কর রাজস্বের উৎস। সরকার এই হাঁসকে এন্তার অনিয়ম-অস্বচ্ছতা নিয়েই চলতে দেবে, নাকি নিয়ম-নীতি ও জবাবদিহির মধ্যে এনে জনগণের অর্থের সঠিক হিসাব-নিকাশ নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নেবে—সেটাই দেখার বিষয়।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
কাজের পরিধি, গুরুত্ব ও বিপুল রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যয়ের দায়িত্ব বিবেচনায় দেশের শীর্ষস্থানীয় অল্প কটি সরকারি সংস্থার একটি বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। গত ২৩ আগস্ট জাতীয় সংসদের সরকারি প্রতিষ্ঠান-সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভায় আলোচ্য বিষয় ছিল এই বিপিসি। সংস্থা হিসেবে বিপিসির কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি সেই আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল এর আর্থিক ব্যবস্থাপনা।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, সভা শেষে সংসদীয় কমিটির সভাপতি আ স ম ফিরোজ সংবাদকর্মীদের বলেছেন, বিপিসির কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নেই বললেই চলে। সংস্থাটির অনিয়মের বহর দেখে তাঁরা স্তম্ভিত। ওই সভার আলোচনার সূত্র ধরে অনিয়মের যেসব তথ্য সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, তাতে পুরো জাতিও বিস্মিত। শুরুতে বলে রাখি, বিপিসি কখন কোন উৎস থেকে কত দামে কোন ধরনের জ্বালানি তেল কেনে, সেই তথ্য জানা যায় না। একইভাবে বিপিসির সিস্টেম লসের বিষয়টিও রহস্যঘেরা। তবে এই দুটি বিষয় সেদিনের সংসদীয় কমিটির সভায় আলোচিত হয়নি। আলোচিত হয়েছে নিচেরগুলো:
১. গত ১০ বছর বিপিসির আয়-ব্যয়ের হিসাবের (অ্যাকাউন্টস) ‘এক্সটার্নাল অডিট’ হয়নি। তাহলে প্রশ্ন ওঠে, সরকার এই ১০ বছর বিপিসির হিসাব কীভাবে চূড়ান্ত করেছে? এসব হিসাব সরকারি নথিভুক্তই বা করা হয়েছে কীভাবে?
অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষায় প্রকাশিত বিপিসির আয়-ব্যয়, লাভ-লোকসানের অঙ্ক আর সংবাদকর্মীদের সামনে উপস্থাপিত বিপিসির চেয়ারম্যানের তথ্যে গরমিলের কারণ কি এগুলোই? এর দায় কি শুধু বিপিসির? বিপিসি ইচ্ছা করলেই কি এক্সটার্নাল অডিট ছাড়াই বছরের পর বছর রাষ্ট্রীয় অর্থের হিসাব ফেলে রাখতে পারে? এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া জরুরি এবং দেশের মানুষের অধিকারের মধ্যে পড়ে।
২. গত ১০ বছর বিপিসি তার হিসাব-নিকাশের সমন্বয় সাধন (রিকনসিলিয়েশন অব অ্যাকাউন্টস) করেনি। অথচ এটি আর্থিক ব্যবস্থাপনার গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এর মাধ্যমে একটি অর্থবছরে কোনো প্রতিষ্ঠান তার অ্যাকাউন্টস থেকে যে পরিমাণ অর্থছাড় করেছে, সেই পরিমাণ অর্থই ব্যয় হয়েছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখা হয়। এ জন্য একটি অর্থবছরের মোট অর্থছাড় ও মোট অর্থ ব্যয়ের কাগজপত্র মিলিয়ে দেখা হয়।
বিপিসির মতো একটি বড় সরকারি সংস্থা যাদের মাধ্যমে প্রতিবছর দেশের কয়েক শ কোটি ডলার ব্যয় ও তার চেয়েও বেশি টাকা আয় হয়, তারা দীর্ঘ ১০ বছর আর্থিক ব্যবস্থাপনার মৌলিক পদ্ধতি অনুসরণ না করে কীভাবে চলতে পারে? এতে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হয় যে বিপিসির কাজের কোনো স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নেই।
৩. ওই ১০ বছর আগের দুই বছর, অর্থাৎ ২০১০-১১ এবং ২০১১-১২ সালে বিপিসির উপস্থাপন করা হিসাব নিরীক্ষা করে মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের (সিএজি) দপ্তর ৯ হাজার ২৯৫ কোটি ৪ লাখ টাকার অডিট আপত্তি তুলেছিল। সেই আপত্তির এখনো ফয়সালা হয়নি। কারণ, ওই আপত্তির বিষয়ে বিপিসি যেসব ব্যাখ্যা দিয়েছিল, সিএজি অফিসের কাছে তা গ্রহণযোগ্য হয়নি।
এ বছরের ২২ মে এ বিষয়টি যায় জাতীয় সংসদের সরকারি হিসাব-সংক্রান্ত কমিটির কাছে। তারা অডিট আপত্তি সম্পর্কে বিপিসির ব্যাখ্যাসংক্রান্ত সব কাগজপত্র চায়। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিপিসি তা সংসদীয় কমিটির কাছে পাঠায়নি। এসব তথ্য ২৩ আগস্টের সভায় উপস্থিত উপমহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক খান মো. ফেরদাউসুর রহমান জানিয়েছেন বলে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ।
প্রশ্ন হলো, তিন মাসেও বিপিসি সেই অডিট আপত্তির ব্যাখ্যা সরকারি হিসাব-সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির কাছে উপস্থাপন না করার কারণ কী? সংসদীয় কমিটি যে কাগজপত্র চেয়েছে, সেগুলো তো বিপিসির কাছে প্রস্তুত থাকারই কথা। কেননা, ওই সব ব্যাখ্যা তো তারা সিএজি অফিসকে আগে দিয়েছে। তারপরও এই বিলম্ব কেন? এমনিতেই বিষয়টি ১০ বছর আগের। তার ওপর এটি আরও বিলম্বিত করে তামাদি করে ফেলার কৌশল হতে পারে কি?
৪. গত ২৩ আগস্টের সভায় বিপিসি-সংক্রান্ত আলোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে আরও আছে—বিপিসি তিনটি তেল বিপণনকারী কোম্পানি পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার কাছে ২০১০-১১ ও ২০১১-১২ সালে তেল বিক্রি বাবদ ৫ হাজার ৯৫২ কোটি টাকা আদায় না করে সংস্থাটির ৭০৮ কোটি টাকার ক্ষতি করেছে। এই টাকা আদায় করা হলে বিপিসির ৭০৮ কোটি টাকা আয় হতো ব্যাংকের সুদ বাবদ। কিন্তু পাওনা আদায়ের কোনো চেষ্টা বিপিসি করেনি।
যদিও সিএজি অফিসের আপত্তির জবাবে বিপিসি ওই পাওনা টাকা আদায়ের অনেক চেষ্টা করেছে, কিন্তু এর সমর্থনে কোনো প্রমাণ তারা দেখাতে পারেনি। আমরা সবাই বুঝি যে এগুলো নিশ্চয়ই মৌখিক আলাপ-আলোচনার বিষয় নয়।
সিএজি অফিসের অডিট আপত্তিতে বলা হয়েছে, বিপিসি ওই তিনটি বিপণন কোম্পানিকে ভর্তুকি মূল্যে তেল দিয়েছে। সেই তেল বিক্রি করে কোম্পানি তিনটি মুনাফাসহ ব্যাংকে রেখেছে। সেখান থেকে পাওয়া মুনাফা তারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রণোদনা বোনাস দিয়েছে। ওয়ার্কার্স প্রফিট পার্টিসিপেশন ফান্ডে টাকা রেখেছে। আর বিপিসি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এটা কি অনিচ্ছাকৃত হতে পারে? নাকি উদ্দেশ্যমূলক? এসব বিষয় তদন্ত করে দেখার দাবি রাখে।
৫. বিপিসির বিরুদ্ধে আরও অনেকগুলো অভিযোগ ও আপত্তি তুলেছে সিএজি অফিস। যেমন জ্বালানি তেলের মজুত ক্ষমতা না বাড়িয়ে বিপিসি বিদেশি জাহাজ এনে ভাড়া দিয়ে ‘ফ্লোটিং স্টোরেজ’ হিসেবে ব্যবহার করেছে। বিপিসির সামর্থ্য হচ্ছে একসঙ্গে ৫-৬টি জাহাজ এনে তেল খালাসের। কিন্তু এনেছে ৮-১০টি করে। এটা করে তারা ৬ মিলিয়ন ডলার গচ্চা দিয়েছে।
জাতীয় জ্বালানি নীতি ১৯৯৬-এর নির্দেশনা হচ্ছে দেশে ন্যূনপক্ষে ৬০ দিনের ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি তেলের মজুত রাখতে হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এই মজুত ক্ষমতা ৩০-৩৫ দিনের। অথচ স্টোরেজ ট্যাংক করার মতো জায়গা বিপিসির আছে। বিশেষজ্ঞ জনবল আছে। আছে প্রয়োজনীয় অর্থও।
বিপিসির জন্য তেল নিয়ে রপ্তানিকারকদের যেসব বড় জাহাজ বন্দরের বহির্নোঙরে আসে, সেই জাহাজগুলো থেকে ছোট ছোট জাহাজে (লাইটারেজ) করে তেল খালাস করা হয়। এই লাইটারেজের খরচ রপ্তানিকারকদের দেওয়ার কথা। কিন্তু গত ২০১০-১১ ও ২০১১-১২ অর্থবছরে বিপিসি লাইটারেজ বাবদ ৯ কোটি ১৫ লাখ টাকা খরচ করলেও রপ্তানিকারকদের কাছে সেই অর্থ দাবিই করেনি। অন্তত তেমন কোনো প্রমাণ সিএজি অফিসকে সরবরাহ করতে পারনি বিপিসি।
বিপিসি বন্ধ থাকা (নন-অপারেশনাল) বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাছে ফার্নেস তেল বিক্রি করেছে। ব্যাংকে নিজেদের বিপুল অর্থ থাকা সত্ত্বেও সরকারের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছে। আদায় করা বিপুল অঙ্কের মূল্য সংযোজন কর সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে নিজেদের কাছে রেখেছে। এ রকম আরও অনেক আছে।
৬. বিপিসি হলো সরকারের সোনার ডিম পাড়া হাঁস। যেখানে প্রায় সবগুলো করপোরেশন লোকসানি, সেখানে বিপিসি হচ্ছে সরকারের বিপুল অঙ্কের শুল্ক-কর রাজস্বের উৎস। সরকার এই হাঁসকে এন্তার অনিয়ম-অস্বচ্ছতা নিয়েই চলতে দেবে, নাকি নিয়ম-নীতি ও জবাবদিহির মধ্যে এনে জনগণের অর্থের সঠিক হিসাব-নিকাশ নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নেবে—সেটাই দেখার বিষয়।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
১ দিন আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৫ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৫ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৫ দিন আগে