শাইখ সিরাজ
চল্লিশ বছরে বাংলাদেশে কৃষির যে পটপরিবর্তন আমার দেখার সুযোগ হয়েছে, আর বছর বিশ ধরে বিশ্ব কৃষির যে রূপরেখা দেখে এসেছি, তাতে ভবিষ্যৎ ভাবনার জায়গাটিতে বারবার মনে হয়েছে—কেমন হবে আগামী প্রজন্মের কৃষি?
গত শতাব্দীর আশির দশকেও আমাদের দেশে কৃষি বলতেই ছিল ফসল কৃষি; যা ছিল ধান, পাট আর সরিষার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। দুঃখজনক হলেও সত্যি, পোশাকশিল্পসহ অন্যান্য শিল্প নিয়ে আমরা যতটা অগ্রসর হওয়ার কথা চিন্তা করেছি, কৃষিশিল্প নিয়ে ততটা ভাবিনি। আমরা ভেবেছি, কৃষক তাঁর মতো করেই তাঁর নিজের খাদ্যের পাশাপাশি আমাদের খাদ্য উৎপাদন করবেন। আমরা নামমাত্র মূল্যে তা কিনে নেব, যদি উৎপাদন না-ও করতে পারেন, তবে আমদানি করে আনব। কিন্তু উন্নত বিশ্ব সব সময়ই বুঝেছে, নিজের খাদ্য নিজেদেরই উৎপাদন করতে হবে। তাই তারা কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি কৃষিশিল্প নিয়ে ভেবেছে।
আমি ২০০৪-০৫ সালে চীন ও জাপানে গিয়ে দেখেছি কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে রাষ্ট্র তাদের কীভাবে তৈরি করেছে, সুযোগ দিয়েছে, সব ধরনের পরিবর্তনের সঙ্গে তাদের খাপ খাইয়ে নিয়ে আধুনিক করে তুলেছে।
কৃষিকে একটা সমন্বিত খাত হিসেবে সাজিয়ে নিয়েছে তারা। কৃষকের সঙ্গে বীজ উৎপাদনকারী, সার উৎপাদনকারী, আবহাওয়ার বার্তা প্রদানকারী, ফসলবিমা ও ঋণের জন্য ব্যাংককে যুক্ত করে দিয়েছে। কৃষকের বাজার নিয়ে তাঁকে ভাবতে হয়নি। সব দিক থেকেই সেবা নিশ্চিত করেছে। ফলে কৃষক তাঁর সম্পূর্ণ মনোযোগ ফসল উৎপাদনে দিতে পেরেছেন। নিজের উন্নয়নের কথা ভাবতে পেরেছেন।আমাদের কৃষক এখন পর্যন্ত নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে জানেন না। জানেন না, বৃষ্টি কখন হবে, কী পরিমাণ সার বা কীটনাশক দিতে হবে।
ফসলবিমার সুযোগ সেভাবে পাচ্ছেন না তাঁরা। এমনকি আমার কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট অনুষ্ঠানে কৃষকেরা লাগাতার অভিযোগ করে গেছেন, ব্যাংকে গেলে কৃষক ঋণ পান না। তাঁরা সাধারণত এনজিও কিংবা মহাজন থেকে উচ্চসুদে ঋণ নেন। আমাদের কৃষককে যতক্ষণ পর্যন্ত বীজ-সার-কীটনাশক, তথ্যসেবা, ব্যাংকের ঋণ, আবহাওয়া বার্তা, বিমা ইত্যাদির সেবা নিশ্চিত না করতে পারব, ততক্ষণ অবধি প্রকৃত কৃষির উন্নয়ন সম্ভব নয়।
বলছিলাম, পরিবর্তিত সময়ে কে হবেন আগামী প্রজন্মের কৃষক। আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত প্রযুক্তির কৃষির সঙ্গে বরাবরই যুক্ত হয়েছেন তরুণেরা।
মনে পড়ে সেই আশির দশকের কথা, হাকিম আলী মৎস্য খামার থেকে আজ মাছ চাষের যে বিপ্লব, তা শুরু হয়েছিল সেই সময়কার তরুণদের হাত ধরে। শুধু মাছ চাষ নয়, পোলট্রি, ডেইরি, সবজি কিংবা বর্তমানে উচ্চমূল্যের ফল-ফসল চাষের যে বিস্তার তা মূলত তরুণদের হাত ধরেই।
শিক্ষিত তরুণেরা এখন কৃষির প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এর কারণ স্মার্ট কৃষি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে নেদারল্যান্ডসের রয়্যাল আইকোলকাম্পের কথা মনে পড়ছে। রয়্যাল আইকোলকাম্প মূলত কৃষি প্রযুক্তি ও অরগানিক কৃষি নিয়ে গবেষণা করে।
আইকোলকাম্পের বিজনেস ইনোভেশন স্ট্র্যাটেজি বিভাগের ড. ইয়োখেন ফরুবিখ বলছিলেন, এখনকার কৃষি হচ্ছে ‘সেক্সি কৃষি’, যার কারণে তরুণেরা এখানে যুক্ত হচ্ছেন এবং তাঁদের হাত ধরেই ক্রমাগত পাল্টে চলেছে কৃষিচিত্র।
করোনা-পরবর্তী বিশ্বে মানুষের চিন্তার পরিবর্তন এসেছে। মানুষ বুঝতে পেরেছে খাদ্য উৎপাদনই উন্নয়নের মূল উপকরণ। বেঁচে থাকতে হলে খাদ্য খেতে হবে। সারা পৃথিবীই খাদ্যশিল্প নিয়ে নতুন করে ভাবছে। একদিকে যান্ত্রিক কৃষির সুনিশ্চিত উৎপাদন, অন্যদিকে কৃষি বাণিজ্যের প্রসার। ফলে ব্যবসায়ীরা কৃষি খাতে বিনিয়োগ করতে শুরু করেছেন। আমাদের দেশের ক্ষুদ্র কৃষকের পক্ষে এত বিনিয়োগ সম্ভব নয়। এ কারণে কৃষি উৎপাদন থেকে কৃষি বাণিজ্য চলে যাবে ব্যবসায়ীদের হাতে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষকেরা এই প্রযুক্তির কৃষি থেকে ছিটকে পড়বেন।
প্রযুক্তি সম্পর্কে জানা-বোঝা হবে কৃষিতে দক্ষ হওয়ার মূল জ্ঞান। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সব তথ্যই কৃষকের কাছে তুলে ধরবে। প্রযুক্তি নিজেই সব কাজ সম্পন্ন করতে পারবে। যে কৃষক স্মার্ট ফার্মিংয়ে ড্রোন, স্যাটেলাইট ইমেজ, সেন্সর ও জিপিএসের মতো প্রযুক্তিকে আরও দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করবেন, তিনি হয়ে উঠবেন সফল।
ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং আবহাওয়া অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রা এবং আলোসহ ইনডোর ফার্মিং উন্নত দেশগুলোতে প্রাধান্য পাচ্ছে। আমাদের কৃষি এখনো আবহাওয়ানির্ভর। কিছু ফসলের অঙ্কুরোদ্গম এবং বিকাশের জন্য উচ্চ বা নিম্ন তাপমাত্রার প্রয়োজন হয়। উপরন্তু আর্দ্রতা, কীটপতঙ্গের উপদ্রব এবং রোগের সঙ্গে তাপমাত্রা একত্র করে পূর্বাভাসের প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি।
ওয়েদার মনিটরিং প্রযুক্তির মাধ্যমে পূর্বাভাস দিয়ে ফসল সুরক্ষা, বপন, ফসল কাটার পাশাপাশি অন্যান্য কৃষি কার্যক্রমের পরিকল্পনায় সহায়তা পাবেন কৃষক। আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষকেরা বায়ু এবং মাটির তাপমাত্রা, মাটির আর্দ্রতা, সামগ্রিক আর্দ্রতা, বাতাসের গতি, দিক এবং বৃষ্টিপাতের মতো বিষয় সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকতে পারেন। এমনকি নানান তথ্যের পাশাপাশি বৃষ্টি পরিমাপের একটি তথ্য পেতে পারেন। এমন প্রযুক্তি সেবা কৃষকের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।
আন্তর্জাতিকভাবে কয়েক দশকের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কৃষি উদ্ভাবন হচ্ছে ‘প্রিসিশন অ্যাগ্রিকালচার’। প্রিসিশন অ্যাগ্রিকালচার প্রযুক্তি আজকের কৃষিতে একটি বড় গেম-চেঞ্জার হতে পারে। এর মাধ্যমে অধিক পরিমাণ কৃষি উৎপাদনের জন্য সঠিক সময়ে, সঠিক পরিমাণ পানি, সার, কীটনাশক ইত্যাদি প্রয়োগ করা হয়, যাতে সঠিক পরিমাণ ফসল, মাটি সঠিক সময়ে ও স্থানে স্বাস্থ্য এবং উৎপাদনশীলতার জন্য যা প্রয়োজন তা পায়।
আমাদের দেশে প্যারামাউন্ট গ্রুপ, প্যারাগন ও সৌরভ গ্রুপ গ্রিন হাউস কৃষিচর্চা করে আসছে। নাহার ডেইরি, আমেরিকান ডেইরি, ডাচ ডেইরি বা ডায়মন্ড এগের মতো বহু প্রতিষ্ঠান প্রযুক্তির কৃষিতে বিনিয়োগ করে কৃষিশিল্পের বিকাশে ভূমিকা রেখে চলেছে। তবে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রযুক্তি ব্যবহার নিশ্চিত করতে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রস্তুতি আমাদের এখনই নেওয়া উচিত। সেগুলো হলো:
১. প্রশিক্ষিত জনবলের অভাব
২. নলেজ গ্যাপ
৩. ধীরগতির ইন্টারনেট
৪. দেশীয় হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের অভাব
৫. কৃষক পর্যায়ে ট্যাব বা স্মার্টফোনের অভাব
৬. সরকারের নীতিমালাসংক্রান্ত জটিলতা
৭. মোটিভেশনের অভাব ইত্যাদি।
জলবায়ু পরিবর্তনের এই সময়ে খাদ্যনিরাপত্তা ও নিরাপদ খাদ্যের তাগিদ থেকে স্বল্প শ্রমে অধিক উৎপাদনে স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচারের বিকল্প নেই। আগামীর পৃথিবীতে কৃষি খাতে এগিয়ে থাকতে কৃষককে স্মার্ট প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে। আর স্মার্ট কৃষি বাস্তবায়নে সরকারের সুনির্দিষ্ট সুপরিকল্পিত নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের কৌশল থাকা প্রয়োজন।
লেখাটি শেষ করার আগে আগামীর সম্ভাবনাময় কৃষি বাণিজ্যের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য খাতের কথা উল্লেখ করতে চাই:
এক.জলবায়ুসহিষ্ণু কৃষি প্রযুক্তি।
দুই.আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্টস অ্যান্ড প্রিসিশন ফার্মিং।
তিন.মৎস্য ও গবাদি প্রাণীর ওষুধ।
চার.অ্যাগ্রো সল্যুশন।
পাঁচ.অরগানিক খামার ব্যবস্থাপনা ও কৃষিপণ্যের বাজার।
এই পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ খাত সামনে রেখে আগামীর কৃষিকে চিন্তা করতে পারলেই নতুন কৃষির সূচনা হবে। আমরা প্রবেশ করতে পারব আগামী প্রজন্মের কৃষিতে।
লেখক: পরিচালক ও বার্তাপ্রধান, চ্যানেল আই
চল্লিশ বছরে বাংলাদেশে কৃষির যে পটপরিবর্তন আমার দেখার সুযোগ হয়েছে, আর বছর বিশ ধরে বিশ্ব কৃষির যে রূপরেখা দেখে এসেছি, তাতে ভবিষ্যৎ ভাবনার জায়গাটিতে বারবার মনে হয়েছে—কেমন হবে আগামী প্রজন্মের কৃষি?
গত শতাব্দীর আশির দশকেও আমাদের দেশে কৃষি বলতেই ছিল ফসল কৃষি; যা ছিল ধান, পাট আর সরিষার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। দুঃখজনক হলেও সত্যি, পোশাকশিল্পসহ অন্যান্য শিল্প নিয়ে আমরা যতটা অগ্রসর হওয়ার কথা চিন্তা করেছি, কৃষিশিল্প নিয়ে ততটা ভাবিনি। আমরা ভেবেছি, কৃষক তাঁর মতো করেই তাঁর নিজের খাদ্যের পাশাপাশি আমাদের খাদ্য উৎপাদন করবেন। আমরা নামমাত্র মূল্যে তা কিনে নেব, যদি উৎপাদন না-ও করতে পারেন, তবে আমদানি করে আনব। কিন্তু উন্নত বিশ্ব সব সময়ই বুঝেছে, নিজের খাদ্য নিজেদেরই উৎপাদন করতে হবে। তাই তারা কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি কৃষিশিল্প নিয়ে ভেবেছে।
আমি ২০০৪-০৫ সালে চীন ও জাপানে গিয়ে দেখেছি কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে রাষ্ট্র তাদের কীভাবে তৈরি করেছে, সুযোগ দিয়েছে, সব ধরনের পরিবর্তনের সঙ্গে তাদের খাপ খাইয়ে নিয়ে আধুনিক করে তুলেছে।
কৃষিকে একটা সমন্বিত খাত হিসেবে সাজিয়ে নিয়েছে তারা। কৃষকের সঙ্গে বীজ উৎপাদনকারী, সার উৎপাদনকারী, আবহাওয়ার বার্তা প্রদানকারী, ফসলবিমা ও ঋণের জন্য ব্যাংককে যুক্ত করে দিয়েছে। কৃষকের বাজার নিয়ে তাঁকে ভাবতে হয়নি। সব দিক থেকেই সেবা নিশ্চিত করেছে। ফলে কৃষক তাঁর সম্পূর্ণ মনোযোগ ফসল উৎপাদনে দিতে পেরেছেন। নিজের উন্নয়নের কথা ভাবতে পেরেছেন।আমাদের কৃষক এখন পর্যন্ত নতুন প্রযুক্তি সম্পর্কে জানেন না। জানেন না, বৃষ্টি কখন হবে, কী পরিমাণ সার বা কীটনাশক দিতে হবে।
ফসলবিমার সুযোগ সেভাবে পাচ্ছেন না তাঁরা। এমনকি আমার কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট অনুষ্ঠানে কৃষকেরা লাগাতার অভিযোগ করে গেছেন, ব্যাংকে গেলে কৃষক ঋণ পান না। তাঁরা সাধারণত এনজিও কিংবা মহাজন থেকে উচ্চসুদে ঋণ নেন। আমাদের কৃষককে যতক্ষণ পর্যন্ত বীজ-সার-কীটনাশক, তথ্যসেবা, ব্যাংকের ঋণ, আবহাওয়া বার্তা, বিমা ইত্যাদির সেবা নিশ্চিত না করতে পারব, ততক্ষণ অবধি প্রকৃত কৃষির উন্নয়ন সম্ভব নয়।
বলছিলাম, পরিবর্তিত সময়ে কে হবেন আগামী প্রজন্মের কৃষক। আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত প্রযুক্তির কৃষির সঙ্গে বরাবরই যুক্ত হয়েছেন তরুণেরা।
মনে পড়ে সেই আশির দশকের কথা, হাকিম আলী মৎস্য খামার থেকে আজ মাছ চাষের যে বিপ্লব, তা শুরু হয়েছিল সেই সময়কার তরুণদের হাত ধরে। শুধু মাছ চাষ নয়, পোলট্রি, ডেইরি, সবজি কিংবা বর্তমানে উচ্চমূল্যের ফল-ফসল চাষের যে বিস্তার তা মূলত তরুণদের হাত ধরেই।
শিক্ষিত তরুণেরা এখন কৃষির প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এর কারণ স্মার্ট কৃষি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে নেদারল্যান্ডসের রয়্যাল আইকোলকাম্পের কথা মনে পড়ছে। রয়্যাল আইকোলকাম্প মূলত কৃষি প্রযুক্তি ও অরগানিক কৃষি নিয়ে গবেষণা করে।
আইকোলকাম্পের বিজনেস ইনোভেশন স্ট্র্যাটেজি বিভাগের ড. ইয়োখেন ফরুবিখ বলছিলেন, এখনকার কৃষি হচ্ছে ‘সেক্সি কৃষি’, যার কারণে তরুণেরা এখানে যুক্ত হচ্ছেন এবং তাঁদের হাত ধরেই ক্রমাগত পাল্টে চলেছে কৃষিচিত্র।
করোনা-পরবর্তী বিশ্বে মানুষের চিন্তার পরিবর্তন এসেছে। মানুষ বুঝতে পেরেছে খাদ্য উৎপাদনই উন্নয়নের মূল উপকরণ। বেঁচে থাকতে হলে খাদ্য খেতে হবে। সারা পৃথিবীই খাদ্যশিল্প নিয়ে নতুন করে ভাবছে। একদিকে যান্ত্রিক কৃষির সুনিশ্চিত উৎপাদন, অন্যদিকে কৃষি বাণিজ্যের প্রসার। ফলে ব্যবসায়ীরা কৃষি খাতে বিনিয়োগ করতে শুরু করেছেন। আমাদের দেশের ক্ষুদ্র কৃষকের পক্ষে এত বিনিয়োগ সম্ভব নয়। এ কারণে কৃষি উৎপাদন থেকে কৃষি বাণিজ্য চলে যাবে ব্যবসায়ীদের হাতে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষকেরা এই প্রযুক্তির কৃষি থেকে ছিটকে পড়বেন।
প্রযুক্তি সম্পর্কে জানা-বোঝা হবে কৃষিতে দক্ষ হওয়ার মূল জ্ঞান। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সব তথ্যই কৃষকের কাছে তুলে ধরবে। প্রযুক্তি নিজেই সব কাজ সম্পন্ন করতে পারবে। যে কৃষক স্মার্ট ফার্মিংয়ে ড্রোন, স্যাটেলাইট ইমেজ, সেন্সর ও জিপিএসের মতো প্রযুক্তিকে আরও দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করবেন, তিনি হয়ে উঠবেন সফল।
ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং আবহাওয়া অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রা এবং আলোসহ ইনডোর ফার্মিং উন্নত দেশগুলোতে প্রাধান্য পাচ্ছে। আমাদের কৃষি এখনো আবহাওয়ানির্ভর। কিছু ফসলের অঙ্কুরোদ্গম এবং বিকাশের জন্য উচ্চ বা নিম্ন তাপমাত্রার প্রয়োজন হয়। উপরন্তু আর্দ্রতা, কীটপতঙ্গের উপদ্রব এবং রোগের সঙ্গে তাপমাত্রা একত্র করে পূর্বাভাসের প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি।
ওয়েদার মনিটরিং প্রযুক্তির মাধ্যমে পূর্বাভাস দিয়ে ফসল সুরক্ষা, বপন, ফসল কাটার পাশাপাশি অন্যান্য কৃষি কার্যক্রমের পরিকল্পনায় সহায়তা পাবেন কৃষক। আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষকেরা বায়ু এবং মাটির তাপমাত্রা, মাটির আর্দ্রতা, সামগ্রিক আর্দ্রতা, বাতাসের গতি, দিক এবং বৃষ্টিপাতের মতো বিষয় সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকতে পারেন। এমনকি নানান তথ্যের পাশাপাশি বৃষ্টি পরিমাপের একটি তথ্য পেতে পারেন। এমন প্রযুক্তি সেবা কৃষকের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।
আন্তর্জাতিকভাবে কয়েক দশকের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কৃষি উদ্ভাবন হচ্ছে ‘প্রিসিশন অ্যাগ্রিকালচার’। প্রিসিশন অ্যাগ্রিকালচার প্রযুক্তি আজকের কৃষিতে একটি বড় গেম-চেঞ্জার হতে পারে। এর মাধ্যমে অধিক পরিমাণ কৃষি উৎপাদনের জন্য সঠিক সময়ে, সঠিক পরিমাণ পানি, সার, কীটনাশক ইত্যাদি প্রয়োগ করা হয়, যাতে সঠিক পরিমাণ ফসল, মাটি সঠিক সময়ে ও স্থানে স্বাস্থ্য এবং উৎপাদনশীলতার জন্য যা প্রয়োজন তা পায়।
আমাদের দেশে প্যারামাউন্ট গ্রুপ, প্যারাগন ও সৌরভ গ্রুপ গ্রিন হাউস কৃষিচর্চা করে আসছে। নাহার ডেইরি, আমেরিকান ডেইরি, ডাচ ডেইরি বা ডায়মন্ড এগের মতো বহু প্রতিষ্ঠান প্রযুক্তির কৃষিতে বিনিয়োগ করে কৃষিশিল্পের বিকাশে ভূমিকা রেখে চলেছে। তবে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রযুক্তি ব্যবহার নিশ্চিত করতে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার প্রস্তুতি আমাদের এখনই নেওয়া উচিত। সেগুলো হলো:
১. প্রশিক্ষিত জনবলের অভাব
২. নলেজ গ্যাপ
৩. ধীরগতির ইন্টারনেট
৪. দেশীয় হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যারের অভাব
৫. কৃষক পর্যায়ে ট্যাব বা স্মার্টফোনের অভাব
৬. সরকারের নীতিমালাসংক্রান্ত জটিলতা
৭. মোটিভেশনের অভাব ইত্যাদি।
জলবায়ু পরিবর্তনের এই সময়ে খাদ্যনিরাপত্তা ও নিরাপদ খাদ্যের তাগিদ থেকে স্বল্প শ্রমে অধিক উৎপাদনে স্মার্ট অ্যাগ্রিকালচারের বিকল্প নেই। আগামীর পৃথিবীতে কৃষি খাতে এগিয়ে থাকতে কৃষককে স্মার্ট প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে। আর স্মার্ট কৃষি বাস্তবায়নে সরকারের সুনির্দিষ্ট সুপরিকল্পিত নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের কৌশল থাকা প্রয়োজন।
লেখাটি শেষ করার আগে আগামীর সম্ভাবনাময় কৃষি বাণিজ্যের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য খাতের কথা উল্লেখ করতে চাই:
এক.জলবায়ুসহিষ্ণু কৃষি প্রযুক্তি।
দুই.আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্টস অ্যান্ড প্রিসিশন ফার্মিং।
তিন.মৎস্য ও গবাদি প্রাণীর ওষুধ।
চার.অ্যাগ্রো সল্যুশন।
পাঁচ.অরগানিক খামার ব্যবস্থাপনা ও কৃষিপণ্যের বাজার।
এই পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ খাত সামনে রেখে আগামীর কৃষিকে চিন্তা করতে পারলেই নতুন কৃষির সূচনা হবে। আমরা প্রবেশ করতে পারব আগামী প্রজন্মের কৃষিতে।
লেখক: পরিচালক ও বার্তাপ্রধান, চ্যানেল আই
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
২ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
২ দিন আগে