মাসুদ রানা
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলার ভয়াবহ ঘটনা আমাদের দেশের রাজনীতির ইতিহাসে বড় কলঙ্কিত অধ্যায় হয়ে আছে। ওই দিনের হামলায় অনেকেই ঘটনাস্থলে নিহত হয়েছেন, গুরুতর আহতও হয়েছেন কয়েক শ মানুষ। ২১ আগস্ট গুরুতর আহত আইভি রহমান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন ২৪ আগস্ট।
সারা জীবন মাঠের রাজনীতি করেছেন আইভি রহমান। রাজনৈতিক সভার মঞ্চে উঠে ভাষণ খুব কম দিয়েছেন। সহকর্মীদের সঙ্গে মঞ্চের নিচে বসে শুনতে এবং স্লোগান দিতেই বেশি পছন্দ করতেন। ২১ আগস্টেও তিনি সেই মাঠের মানুষদের সঙ্গেই বসে ছিলেন মঞ্চের নিচে। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা তাঁকে মঞ্চে ডেকেছিলেন, তবে তিনি স্লোগানমুখর মানুষের মাঝেই থেকেছেন। কিন্তু কে জানত, কী ভয়াবহ পরিণতি অপেক্ষা করছে তাঁর জন্য!
আইভি রহমান ছিলেন রাজনীতির মানুষ। স্বামী মো. জিল্লুর রহমান ছিলেন বঙ্গবন্ধুর একজন বিশ্বস্ত সহকর্মী। বঙ্গবন্ধুর সময়ে এবং শেখ হাসিনার সময়েও তিনি একাধিকবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির পদও তিনি অলংকৃত করেছিলেন। আইভি রহমানকে স্কুলের অনুষ্ঠানে নাচতে দেখে জিল্লুর রহমান জীবনসঙ্গিনী হিসেবে পছন্দ করেছিলেন। একা গিয়ে আইভি রহমানের বাবার কাছে ভয়ে ভয়ে বিয়ের প্রস্তাব দেন। আইভি রহমানের বাবা রাজি হলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গাড়িতে খান আতাউর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে তিনি বিয়ে করতে যান। গ্রেনেড হামলায় আহত হয়ে আইভি রহমানের মৃত্যুর পর বিষাদভরা কণ্ঠে মো. জিল্লুর রহমান বলেছিলেন, ‘আইভিকে ছাড়া আমি জীবন্মৃত।’
ছাত্রী হিসেবে তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এমএ করেছেন। ছাত্রজীবনে সরাসরি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার মধ্য দিয়েই আইভি রহমানের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়। মুক্তিযুদ্ধেও অংশ নিয়েছিলেন তিনি। উনসত্তরের গণ-আন্দোলন, ছয় দফা আন্দোলনে তাঁর বিশেষ ভূমিকা ছিল। তিনি বাংলাদেশ মহিলা সমিতির সভানেত্রী ছিলেন। আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব তিনি উনসত্তরের গণ-আন্দোলনের পর থেকেই দক্ষতার সঙ্গে পালন করে এসেছেন। তিনি দুই দফায় ছিলেন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী।
পোশাকে-আশাকে অত্যন্ত রুচিশীল ও গোছানো আইভি রহমান ছিলেন ব্যক্তিত্ববান এক নারী। যেকোনো আসর জমিয়ে তুলতে তাঁর জুড়ি ছিল না। আর সেই প্রাণবন্ত মানুষটি কিনা গ্রেনেড হামলায় আহত হয়ে তাঁর প্রিয় প্রাঙ্গণ আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে খোলা ট্রাকের পাশে কিছুক্ষণ একা পড়ে ছিলেন। আতঙ্কগ্রস্ত সবাই যখন চারদিকে প্রাণভয়ে ছোটাছুটি করছিল, তখন স্থির হয়ে ছিল তাঁর দুই চোখ। পরনের সাদা শাড়ির বেশির ভাগ অংশই ছিল রক্তে ভেজা। ডান পায়ের মাংসপিণ্ড দলা হয়েছিল। প্রচণ্ড রক্তক্ষরণের জন্য ৫২ ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয় তাঁকে। কিন্তু কিছুতেই রক্তক্ষরণ ঠেকানো যায়নি। প্রায় তিন দিন অচেতন অবস্থায় মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
ব্যক্তিত্ব, গাম্ভীর্যপূর্ণ স্বভাবের জন্য তাঁকে বাইরে থেকে খুব কঠিন মনে হলেও, আদতে তিনি ছিলেন খুবই দরদি মনের মানুষ। যাঁরা তাঁর সঙ্গে মিশেছেন, তাঁরাই পেয়েছেন অপরিসীম ভালোবাসা, আদর, মমতা আর সহযোগিতা।
একজন আলোকিত মানুষ ছিলেন আইভি রহমান। দেশ ও দেশের মানুষকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসতেন তিনি। মাটি ও মানুষের সঙ্গে ছিল তাঁর গভীর সখ্য। ঘাতকের গ্রেনেড সেই মাটিতেই তাঁকে লুটিয়ে দিল, মিশিয়ে দিল মাটির সঙ্গে। কিন্তু তবু বেঁচে থাকবে তাঁর কর্ম ও প্রেরণা, যা এগিয়ে নিয়ে যাবে আমাদের তরুণ সমাজকে সূর্য সম্ভাবনার দিকে।
তাঁর মতো নির্লোভ মানুষ এ দেশের রাজনীতিতে নারীদের সচেতন করে তোলার ব্রত নিয়েছিলেন বলেই আজ এ ক্ষেত্রে নারীরা এগিয়ে এসেছেন। আইভি রহমান নিজের জীবন দিয়ে প্রমাণ করে গেলেন, তিনি একজন নির্ভীক সৈনিক। তাঁর এই মহান আত্মত্যাগ বাংলাদেশের নারী আন্দোলনের মশাল হয়ে জ্বলবে চিরকাল।
আজ ২৪ আগস্ট তাঁর ১৯তম মৃত্যুবার্ষিকী; রাজনীতির মাঠে শহীদ এই সৈনিককে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করার দিন।
লেখক: সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলার ভয়াবহ ঘটনা আমাদের দেশের রাজনীতির ইতিহাসে বড় কলঙ্কিত অধ্যায় হয়ে আছে। ওই দিনের হামলায় অনেকেই ঘটনাস্থলে নিহত হয়েছেন, গুরুতর আহতও হয়েছেন কয়েক শ মানুষ। ২১ আগস্ট গুরুতর আহত আইভি রহমান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন ২৪ আগস্ট।
সারা জীবন মাঠের রাজনীতি করেছেন আইভি রহমান। রাজনৈতিক সভার মঞ্চে উঠে ভাষণ খুব কম দিয়েছেন। সহকর্মীদের সঙ্গে মঞ্চের নিচে বসে শুনতে এবং স্লোগান দিতেই বেশি পছন্দ করতেন। ২১ আগস্টেও তিনি সেই মাঠের মানুষদের সঙ্গেই বসে ছিলেন মঞ্চের নিচে। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা তাঁকে মঞ্চে ডেকেছিলেন, তবে তিনি স্লোগানমুখর মানুষের মাঝেই থেকেছেন। কিন্তু কে জানত, কী ভয়াবহ পরিণতি অপেক্ষা করছে তাঁর জন্য!
আইভি রহমান ছিলেন রাজনীতির মানুষ। স্বামী মো. জিল্লুর রহমান ছিলেন বঙ্গবন্ধুর একজন বিশ্বস্ত সহকর্মী। বঙ্গবন্ধুর সময়ে এবং শেখ হাসিনার সময়েও তিনি একাধিকবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির পদও তিনি অলংকৃত করেছিলেন। আইভি রহমানকে স্কুলের অনুষ্ঠানে নাচতে দেখে জিল্লুর রহমান জীবনসঙ্গিনী হিসেবে পছন্দ করেছিলেন। একা গিয়ে আইভি রহমানের বাবার কাছে ভয়ে ভয়ে বিয়ের প্রস্তাব দেন। আইভি রহমানের বাবা রাজি হলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গাড়িতে খান আতাউর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে তিনি বিয়ে করতে যান। গ্রেনেড হামলায় আহত হয়ে আইভি রহমানের মৃত্যুর পর বিষাদভরা কণ্ঠে মো. জিল্লুর রহমান বলেছিলেন, ‘আইভিকে ছাড়া আমি জীবন্মৃত।’
ছাত্রী হিসেবে তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এমএ করেছেন। ছাত্রজীবনে সরাসরি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার মধ্য দিয়েই আইভি রহমানের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়। মুক্তিযুদ্ধেও অংশ নিয়েছিলেন তিনি। উনসত্তরের গণ-আন্দোলন, ছয় দফা আন্দোলনে তাঁর বিশেষ ভূমিকা ছিল। তিনি বাংলাদেশ মহিলা সমিতির সভানেত্রী ছিলেন। আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব তিনি উনসত্তরের গণ-আন্দোলনের পর থেকেই দক্ষতার সঙ্গে পালন করে এসেছেন। তিনি দুই দফায় ছিলেন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী।
পোশাকে-আশাকে অত্যন্ত রুচিশীল ও গোছানো আইভি রহমান ছিলেন ব্যক্তিত্ববান এক নারী। যেকোনো আসর জমিয়ে তুলতে তাঁর জুড়ি ছিল না। আর সেই প্রাণবন্ত মানুষটি কিনা গ্রেনেড হামলায় আহত হয়ে তাঁর প্রিয় প্রাঙ্গণ আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সামনে খোলা ট্রাকের পাশে কিছুক্ষণ একা পড়ে ছিলেন। আতঙ্কগ্রস্ত সবাই যখন চারদিকে প্রাণভয়ে ছোটাছুটি করছিল, তখন স্থির হয়ে ছিল তাঁর দুই চোখ। পরনের সাদা শাড়ির বেশির ভাগ অংশই ছিল রক্তে ভেজা। ডান পায়ের মাংসপিণ্ড দলা হয়েছিল। প্রচণ্ড রক্তক্ষরণের জন্য ৫২ ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয় তাঁকে। কিন্তু কিছুতেই রক্তক্ষরণ ঠেকানো যায়নি। প্রায় তিন দিন অচেতন অবস্থায় মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
ব্যক্তিত্ব, গাম্ভীর্যপূর্ণ স্বভাবের জন্য তাঁকে বাইরে থেকে খুব কঠিন মনে হলেও, আদতে তিনি ছিলেন খুবই দরদি মনের মানুষ। যাঁরা তাঁর সঙ্গে মিশেছেন, তাঁরাই পেয়েছেন অপরিসীম ভালোবাসা, আদর, মমতা আর সহযোগিতা।
একজন আলোকিত মানুষ ছিলেন আইভি রহমান। দেশ ও দেশের মানুষকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসতেন তিনি। মাটি ও মানুষের সঙ্গে ছিল তাঁর গভীর সখ্য। ঘাতকের গ্রেনেড সেই মাটিতেই তাঁকে লুটিয়ে দিল, মিশিয়ে দিল মাটির সঙ্গে। কিন্তু তবু বেঁচে থাকবে তাঁর কর্ম ও প্রেরণা, যা এগিয়ে নিয়ে যাবে আমাদের তরুণ সমাজকে সূর্য সম্ভাবনার দিকে।
তাঁর মতো নির্লোভ মানুষ এ দেশের রাজনীতিতে নারীদের সচেতন করে তোলার ব্রত নিয়েছিলেন বলেই আজ এ ক্ষেত্রে নারীরা এগিয়ে এসেছেন। আইভি রহমান নিজের জীবন দিয়ে প্রমাণ করে গেলেন, তিনি একজন নির্ভীক সৈনিক। তাঁর এই মহান আত্মত্যাগ বাংলাদেশের নারী আন্দোলনের মশাল হয়ে জ্বলবে চিরকাল।
আজ ২৪ আগস্ট তাঁর ১৯তম মৃত্যুবার্ষিকী; রাজনীতির মাঠে শহীদ এই সৈনিককে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করার দিন।
লেখক: সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
বিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
২ দিন আগেগাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪দেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২০ নভেম্বর ২০২৪