মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী
তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান মন্ত্রিত্ব হারিয়েছেন। কেন হারিয়েছেন, তার বিশদ বিবরণ দেওয়ার আর বেশি প্রয়োজন নেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমসমূহে ডা. মুরাদ হাসানের অপকীর্তি ব্যাপক প্রচার ও ভাইরাল হয়েছে। মুরাদ হাসান রুচিবোধ, সৌজন্যতাবোধ, প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নেওয়া শপথের অঙ্গীকার এবং স্বাভাবিক শিষ্টাচার চরমভাবে ভঙ্গ করেছেন। একজন উচ্চশিক্ষিত ডাক্তার হওয়া সত্ত্বেও তাঁর আচরণ, চিন্তার মান ও ব্যক্তিগত কর্মকাণ্ডের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে কোনো ধারণা না থাকা কিংবা পাত্তা না দেওয়ার বিষয়টি যেকোনো সাধারণ মানের একজন মানুষের কাছেও বেশ হতবাক হওয়ার মতো মনে হতে পারে। অথচ মুরাদ হাসান সেটিও পাত্তা দেননি। তিনি একজন প্রতিমন্ত্রী, এটিও ভুলে গেছেন। ঔদ্ধত্য ও সীমালঙ্ঘন সম্পর্কে তাঁর কোনো ধারণা নিজের মধ্যে ছিল না। সে কারণে তিনি একের পর এক অঘটন ঘটিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁর এসব ঘটনা ও কথাবার্তা ভাইরাল হতে পারে, বড় ধরনের সমালোচনার জন্ম দিতে পারে, সেই বোধও মনে হয় তিনি হারিয়ে ফেলেছিলেন। এটি যদি কোনো কম শিক্ষিত মানুষের দ্বারা সংঘটিত হতো, তাহলে একধরনের প্রবোধ দেওয়া যেত। কিন্তু উচ্চশিক্ষিত একজন ডাক্তার, রাজনৈতিক কর্মী ও নেতা থেকে প্রতিমন্ত্রীর পদে উত্তরণের পথ অতিক্রম করা মানুষ কীভাবে নিজেকে এতটা কুরুচিপূর্ণ মানুষের জায়গায় নিয়ে যেতে পেরেছে, সেটি ভাবতেও বেশ অবাক হতে হয়। সাধারণত মেধাবী ছেলেমেয়েরাই তো ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পান। তিনিও নিশ্চয়ই মেধাগুণে ডাক্তার হয়েছিলেন। রাজনীতিতেও তিনি দুই দশকের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন পদ-পদবি পেয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর পিতাও আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেছেন। তবে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে পড়াকালে তিনি ছাত্রদলে যোগ দিলেন, পদ-পদবিও লাভ করেছিলেন। সেখান থেকে ছাত্রলীগে যোগদান এবং সভাপতির পদ অলংকৃত করার পর তাঁর রাজনীতির বাঁক পরিবর্তন হলো। ২০০৮ সালে তিনি আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হিসেবে মনোনীত হয়েছিলেন। ২০১৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে, পরে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে ‘বদলি’ হলেন। এখন জানা যাচ্ছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে তাঁকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের কারণে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে নেওয়া হয়েছিল। নীতিনির্ধারকেরা যদি তখনই তাঁর কর্মের অগ্রপশ্চাৎ ভেবে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন, তাহলে ডা. মুরাদ হাসানের ব্যক্তিগত এমন আচরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটার কিংবা প্রচার হওয়ার সুযোগ পেত না। ডা. মুরাদ হাসান নৈতিক স্খলনের যেসব ঘটনা ঘটিয়েছেন, সেগুলোও হয়তো ঘটানোর সাহস পেতেন না, যদি তিনি প্রতিমন্ত্রীর পদে আসীন না থাকতেন। ব্যক্তিগত পর্যায়ে তিনি যদি কিছু ঘটিয়েও থাকতেন, তাহলে সেটির প্রচার ও দায় সরকার ও আওয়ামী লীগের ওপর এভাবে বর্তাত না। কিন্তু প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় বসে তিনি পদের মর্যাদাবোধ সম্পর্কে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলেন। সে কারণে তিনি একের পর এক কাণ্ড ঘটিয়েছিলেন, যেগুলো ক্ষমতার অপব্যবহার, সীমালঙ্ঘন এবং নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধ হিসেবে দুনিয়াজোড়া বিবেচিত।
প্রশ্ন হচ্ছে, তাঁর এমন উচ্ছৃঙ্খল আচরণ, রুচিবোধহীন কথাবার্তা, অশালীন ভাষার প্রয়োগ, নারীর প্রতি বিদ্বেষ ও বিকৃত দৃষ্টিভঙ্গি পোষণকারী ‘পুরুষত্বের’ প্রকাশ ঘটানোর পর তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হলো কেন? লক্ষণ দেখামাত্রই তো সংগঠন ও মন্ত্রিপরিষদ থেকে হয় তাঁকে সতর্ক করে দেওয়া, নতুবা মাত্রা বিবেচনায় তখনই সিদ্ধান্ত নেওয়া যেত। তাহলে ডা. মুরাদ হাসানের ব্যক্তিগত অপকর্মের দায় সরকার কিংবা আওয়ামী লীগের ওপর পড়ার সুযোগ পেত না। প্রায় তিন বছর যাবৎ তিনি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে আছেন। চলচ্চিত্র জগতের একজন নায়িকার সঙ্গে তাঁর কুরুচিপূর্ণ ফোনালাপ ঘটেছে দুই বছর আগে। ফোনালাপটি এত দিন পরে কেন ভাইরাল হলো? তখনই তো নীতিনির্ধারণী মহলের দৃষ্টিতে নেওয়া যেত। কেন নেওয়া হলো না, কারা নিল না, না নেওয়ার পরিণতিটা আরও কত ভয়ংকর হলো, সেটি এখন বুঝেও তো তেমন কোনো লাভ নেই, ক্ষতি যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে। ডা. মুরাদ হাসান অপকর্মের রাশ বৃদ্ধি ঘটিয়েছিলেন, নিজেকে তিনি বেসামাল পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর এই বেসামাল হওয়াটা কি স্বাভাবিক নিয়মে ঘটেছে, নাকি সরকার ও আওয়ামী লীগকে সমালোচিত করার কোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে করা হয়েছিল, সেটি আমাদের কাছে বোধগম্য নয়। তবে নীতিনির্ধারকেরা মুরাদ হাসানের সবকিছু রাজনৈতিক ডায়াগনোসিস করে সত্যটা যাচাই করে দেখতে পারেন। ভাগ্য ভালো, মুরাদ হাসানের বিষয়টি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে মন্ত্রিপরিষদ থেকে পদত্যাগ করতে নির্দেশ দেন। মুরাদ হাসান মুহূর্তের মধ্যেই পর্বতের শিখর থেকে মাটিতে কুপোকাত হলেন। তাঁর আর মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়ানোর শারীরিক ক্ষমতা থাকবে বলে মনে হয় না। ইতিমধ্যে তাঁকে জামালপুর আওয়ামী লীগের জেলা কমিটির স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটিতে এটি উত্থাপিত হবে, সেখান থেকে আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যপদ বাতিল হলে সংসদ সদস্যপদও তাঁকে হারাতে হবে। এখন তাঁর বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটনের মামলা হলে তাঁকে জেলেও যেতে হতে পারে। মাত্র তিন-চার দিনের ব্যবধানে একজন দাম্ভিক অবিমৃশ্যকারী ব্যক্তির জীবনে কত বড় ধস নামতে পারে, সেটির সর্বশেষ উদাহরণ হচ্ছেন ডা. মুরাদ হাসান। এর অল্প কিছুদিন আগেই গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের ব্যাপারেও তা-ই ঘটেছে। রাজশাহীর কাটাখালীর পৌর মেয়র আব্বাস আলীর জীবনেও তা-ই হয়েছে। রাজনীতির উচ্চশিখরে ওঠা মানে সবকিছুকে অবজ্ঞা ও অবহেলা করে পথচলা নয়, বরং যত উচ্চে ওঠা, তত পিচ্ছিল পথ অতিক্রমের সচেতনতা থাকতে হয়। এতে সামান্যতম অসচেতনতাই যে পদস্খলনের দুর্ঘটনা ঘটায়। তাতে অপমৃত্যু অবধারিতভাবেই ঘটে।
সব সময় বলতে শুনি যে, নীতিনির্ধারণী মহলের কাছে সব নেতা-কর্মীরই রাজনৈতিক আমলনামা জমা আছে। এই আমলনামা কতটা সঠিক তথ্যের ওপর ভিত্তি করে দেওয়া হয়, সেটি নিয়ে বোধ হয় এখন যাচাই-বাছাই করা দরকার হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগ যেহেতু টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় রয়েছে, তাই দলের অভ্যন্তরে অনেকেই রাজনীতির অনুশীলন না নিয়েই পদ-পদবি লাভ করেছেন। অনেকেই ব্যক্তিস্বার্থে পদ-পদবির অপব্যবহার করছেন। এটি গণমাধ্যমে নানাভাবে প্রচারিত হচ্ছে। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে দলীয় রাজনীতিচর্চার চেয়ে ব্যক্তিগত ক্ষমতা, পদ-পদবি, অর্থ ও বিত্তে লাভবান হওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রবল হয়ে উঠেছে। সে কারণে বেশির ভাগ উপজেলা ও জেলা কমিটিতে চলছে বিভিন্ন প্রভাবশালী নেতার গ্রুপিং। অভিযোগ আছে, নানা ধরনের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার, পদ-পদবি লাভের বাণিজ্যও এখন বেশ আলোচিত বিষয়। যে ইউপি নির্বাচন এখন চলছে, তার চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের আমলনামা নিয়েও পত্রপত্রিকায় অনেক অভিযোগ, দুর্নীতি এমনকি মামলার আসামির মনোনয়ন লাভের সংবাদও প্রচারিত হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, অর্থ ও চাল আত্মসাৎ, চাঁদাবাজি, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, দুস্থ ভাতার কার্ড নিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতি, বিস্ফোরক দ্রব্য আইন, মারপিট, হুমকি, জখম ইত্যাদির মামলা ও অভিযোগ গণমাধ্যমে প্রচারিত হওয়ার পর তাঁরা কীভাবে দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন লাভ করেন? উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের নেতারা কীভাবে এসব নাম কেন্দ্রে পাঠান? কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলী প্রেরিত এসব প্রার্থীর রাজনৈতিক আমলনামা কতটা যাচাই-বাছাই করেন, খোঁজখবর রাখেন, সেটি এখন মস্ত বড় প্রশ্ন। তাহলে বোঝা যাচ্ছে, আমলনামার যে ডেটাবেইস, তাতে বোধ হয় বড় ধরনের ফাঁকফোকর রয়ে গেছে। কারা এসব তথ্য দিচ্ছেন, কীভাবে দিচ্ছেন, সেটিও বোধ হয় যাচাই-বাছাই করার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। এখনো গণমাধ্যমে বেশ কয়েকজন এমপি নানা ধরনের দুর্নীতির খবরে আলোচিত হচ্ছেন। সেগুলো সম্পর্কে বোধ হয় নীরবতা পালন নয়, বরং দল ও সরকারি বিভিন্ন সংস্থার অনুসন্ধান সম্পন্ন করে সিদ্ধান্ত দেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।
কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য শুধু আওয়ামী লীগের মুরাদ হাসান দিয়েছেন তা নয়, বিএনপির নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা মুরাদের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। বিএনপি মুরাদকে সমালোচনা করে থেমে থাকলে আলালের অপরাধের দায় মুছে যাবে না, বরং প্রমাণিত হবে তাদের কুরুচিপূর্ণ নারীবিদ্বেষী মনোভাব। বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বেও এসব আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। আওয়ামী লীগ মুরাদকে শাস্তির মুখোমুখি করেছে। বিএনপি কী করবে?
তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান মন্ত্রিত্ব হারিয়েছেন। কেন হারিয়েছেন, তার বিশদ বিবরণ দেওয়ার আর বেশি প্রয়োজন নেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমসমূহে ডা. মুরাদ হাসানের অপকীর্তি ব্যাপক প্রচার ও ভাইরাল হয়েছে। মুরাদ হাসান রুচিবোধ, সৌজন্যতাবোধ, প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নেওয়া শপথের অঙ্গীকার এবং স্বাভাবিক শিষ্টাচার চরমভাবে ভঙ্গ করেছেন। একজন উচ্চশিক্ষিত ডাক্তার হওয়া সত্ত্বেও তাঁর আচরণ, চিন্তার মান ও ব্যক্তিগত কর্মকাণ্ডের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে কোনো ধারণা না থাকা কিংবা পাত্তা না দেওয়ার বিষয়টি যেকোনো সাধারণ মানের একজন মানুষের কাছেও বেশ হতবাক হওয়ার মতো মনে হতে পারে। অথচ মুরাদ হাসান সেটিও পাত্তা দেননি। তিনি একজন প্রতিমন্ত্রী, এটিও ভুলে গেছেন। ঔদ্ধত্য ও সীমালঙ্ঘন সম্পর্কে তাঁর কোনো ধারণা নিজের মধ্যে ছিল না। সে কারণে তিনি একের পর এক অঘটন ঘটিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁর এসব ঘটনা ও কথাবার্তা ভাইরাল হতে পারে, বড় ধরনের সমালোচনার জন্ম দিতে পারে, সেই বোধও মনে হয় তিনি হারিয়ে ফেলেছিলেন। এটি যদি কোনো কম শিক্ষিত মানুষের দ্বারা সংঘটিত হতো, তাহলে একধরনের প্রবোধ দেওয়া যেত। কিন্তু উচ্চশিক্ষিত একজন ডাক্তার, রাজনৈতিক কর্মী ও নেতা থেকে প্রতিমন্ত্রীর পদে উত্তরণের পথ অতিক্রম করা মানুষ কীভাবে নিজেকে এতটা কুরুচিপূর্ণ মানুষের জায়গায় নিয়ে যেতে পেরেছে, সেটি ভাবতেও বেশ অবাক হতে হয়। সাধারণত মেধাবী ছেলেমেয়েরাই তো ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পান। তিনিও নিশ্চয়ই মেধাগুণে ডাক্তার হয়েছিলেন। রাজনীতিতেও তিনি দুই দশকের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন পদ-পদবি পেয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর পিতাও আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেছেন। তবে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে পড়াকালে তিনি ছাত্রদলে যোগ দিলেন, পদ-পদবিও লাভ করেছিলেন। সেখান থেকে ছাত্রলীগে যোগদান এবং সভাপতির পদ অলংকৃত করার পর তাঁর রাজনীতির বাঁক পরিবর্তন হলো। ২০০৮ সালে তিনি আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হিসেবে মনোনীত হয়েছিলেন। ২০১৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে, পরে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে ‘বদলি’ হলেন। এখন জানা যাচ্ছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে তাঁকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের কারণে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে নেওয়া হয়েছিল। নীতিনির্ধারকেরা যদি তখনই তাঁর কর্মের অগ্রপশ্চাৎ ভেবে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন, তাহলে ডা. মুরাদ হাসানের ব্যক্তিগত এমন আচরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটার কিংবা প্রচার হওয়ার সুযোগ পেত না। ডা. মুরাদ হাসান নৈতিক স্খলনের যেসব ঘটনা ঘটিয়েছেন, সেগুলোও হয়তো ঘটানোর সাহস পেতেন না, যদি তিনি প্রতিমন্ত্রীর পদে আসীন না থাকতেন। ব্যক্তিগত পর্যায়ে তিনি যদি কিছু ঘটিয়েও থাকতেন, তাহলে সেটির প্রচার ও দায় সরকার ও আওয়ামী লীগের ওপর এভাবে বর্তাত না। কিন্তু প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় বসে তিনি পদের মর্যাদাবোধ সম্পর্কে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলেন। সে কারণে তিনি একের পর এক কাণ্ড ঘটিয়েছিলেন, যেগুলো ক্ষমতার অপব্যবহার, সীমালঙ্ঘন এবং নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধ হিসেবে দুনিয়াজোড়া বিবেচিত।
প্রশ্ন হচ্ছে, তাঁর এমন উচ্ছৃঙ্খল আচরণ, রুচিবোধহীন কথাবার্তা, অশালীন ভাষার প্রয়োগ, নারীর প্রতি বিদ্বেষ ও বিকৃত দৃষ্টিভঙ্গি পোষণকারী ‘পুরুষত্বের’ প্রকাশ ঘটানোর পর তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হলো কেন? লক্ষণ দেখামাত্রই তো সংগঠন ও মন্ত্রিপরিষদ থেকে হয় তাঁকে সতর্ক করে দেওয়া, নতুবা মাত্রা বিবেচনায় তখনই সিদ্ধান্ত নেওয়া যেত। তাহলে ডা. মুরাদ হাসানের ব্যক্তিগত অপকর্মের দায় সরকার কিংবা আওয়ামী লীগের ওপর পড়ার সুযোগ পেত না। প্রায় তিন বছর যাবৎ তিনি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে আছেন। চলচ্চিত্র জগতের একজন নায়িকার সঙ্গে তাঁর কুরুচিপূর্ণ ফোনালাপ ঘটেছে দুই বছর আগে। ফোনালাপটি এত দিন পরে কেন ভাইরাল হলো? তখনই তো নীতিনির্ধারণী মহলের দৃষ্টিতে নেওয়া যেত। কেন নেওয়া হলো না, কারা নিল না, না নেওয়ার পরিণতিটা আরও কত ভয়ংকর হলো, সেটি এখন বুঝেও তো তেমন কোনো লাভ নেই, ক্ষতি যা হওয়ার তা তো হয়েই গেছে। ডা. মুরাদ হাসান অপকর্মের রাশ বৃদ্ধি ঘটিয়েছিলেন, নিজেকে তিনি বেসামাল পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর এই বেসামাল হওয়াটা কি স্বাভাবিক নিয়মে ঘটেছে, নাকি সরকার ও আওয়ামী লীগকে সমালোচিত করার কোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে করা হয়েছিল, সেটি আমাদের কাছে বোধগম্য নয়। তবে নীতিনির্ধারকেরা মুরাদ হাসানের সবকিছু রাজনৈতিক ডায়াগনোসিস করে সত্যটা যাচাই করে দেখতে পারেন। ভাগ্য ভালো, মুরাদ হাসানের বিষয়টি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে মন্ত্রিপরিষদ থেকে পদত্যাগ করতে নির্দেশ দেন। মুরাদ হাসান মুহূর্তের মধ্যেই পর্বতের শিখর থেকে মাটিতে কুপোকাত হলেন। তাঁর আর মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়ানোর শারীরিক ক্ষমতা থাকবে বলে মনে হয় না। ইতিমধ্যে তাঁকে জামালপুর আওয়ামী লীগের জেলা কমিটির স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটিতে এটি উত্থাপিত হবে, সেখান থেকে আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যপদ বাতিল হলে সংসদ সদস্যপদও তাঁকে হারাতে হবে। এখন তাঁর বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটনের মামলা হলে তাঁকে জেলেও যেতে হতে পারে। মাত্র তিন-চার দিনের ব্যবধানে একজন দাম্ভিক অবিমৃশ্যকারী ব্যক্তির জীবনে কত বড় ধস নামতে পারে, সেটির সর্বশেষ উদাহরণ হচ্ছেন ডা. মুরাদ হাসান। এর অল্প কিছুদিন আগেই গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের ব্যাপারেও তা-ই ঘটেছে। রাজশাহীর কাটাখালীর পৌর মেয়র আব্বাস আলীর জীবনেও তা-ই হয়েছে। রাজনীতির উচ্চশিখরে ওঠা মানে সবকিছুকে অবজ্ঞা ও অবহেলা করে পথচলা নয়, বরং যত উচ্চে ওঠা, তত পিচ্ছিল পথ অতিক্রমের সচেতনতা থাকতে হয়। এতে সামান্যতম অসচেতনতাই যে পদস্খলনের দুর্ঘটনা ঘটায়। তাতে অপমৃত্যু অবধারিতভাবেই ঘটে।
সব সময় বলতে শুনি যে, নীতিনির্ধারণী মহলের কাছে সব নেতা-কর্মীরই রাজনৈতিক আমলনামা জমা আছে। এই আমলনামা কতটা সঠিক তথ্যের ওপর ভিত্তি করে দেওয়া হয়, সেটি নিয়ে বোধ হয় এখন যাচাই-বাছাই করা দরকার হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগ যেহেতু টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় রয়েছে, তাই দলের অভ্যন্তরে অনেকেই রাজনীতির অনুশীলন না নিয়েই পদ-পদবি লাভ করেছেন। অনেকেই ব্যক্তিস্বার্থে পদ-পদবির অপব্যবহার করছেন। এটি গণমাধ্যমে নানাভাবে প্রচারিত হচ্ছে। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে দলীয় রাজনীতিচর্চার চেয়ে ব্যক্তিগত ক্ষমতা, পদ-পদবি, অর্থ ও বিত্তে লাভবান হওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রবল হয়ে উঠেছে। সে কারণে বেশির ভাগ উপজেলা ও জেলা কমিটিতে চলছে বিভিন্ন প্রভাবশালী নেতার গ্রুপিং। অভিযোগ আছে, নানা ধরনের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার, পদ-পদবি লাভের বাণিজ্যও এখন বেশ আলোচিত বিষয়। যে ইউপি নির্বাচন এখন চলছে, তার চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের আমলনামা নিয়েও পত্রপত্রিকায় অনেক অভিযোগ, দুর্নীতি এমনকি মামলার আসামির মনোনয়ন লাভের সংবাদও প্রচারিত হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, অর্থ ও চাল আত্মসাৎ, চাঁদাবাজি, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, দুস্থ ভাতার কার্ড নিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতি, বিস্ফোরক দ্রব্য আইন, মারপিট, হুমকি, জখম ইত্যাদির মামলা ও অভিযোগ গণমাধ্যমে প্রচারিত হওয়ার পর তাঁরা কীভাবে দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন লাভ করেন? উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের নেতারা কীভাবে এসব নাম কেন্দ্রে পাঠান? কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলী প্রেরিত এসব প্রার্থীর রাজনৈতিক আমলনামা কতটা যাচাই-বাছাই করেন, খোঁজখবর রাখেন, সেটি এখন মস্ত বড় প্রশ্ন। তাহলে বোঝা যাচ্ছে, আমলনামার যে ডেটাবেইস, তাতে বোধ হয় বড় ধরনের ফাঁকফোকর রয়ে গেছে। কারা এসব তথ্য দিচ্ছেন, কীভাবে দিচ্ছেন, সেটিও বোধ হয় যাচাই-বাছাই করার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। এখনো গণমাধ্যমে বেশ কয়েকজন এমপি নানা ধরনের দুর্নীতির খবরে আলোচিত হচ্ছেন। সেগুলো সম্পর্কে বোধ হয় নীরবতা পালন নয়, বরং দল ও সরকারি বিভিন্ন সংস্থার অনুসন্ধান সম্পন্ন করে সিদ্ধান্ত দেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।
কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য শুধু আওয়ামী লীগের মুরাদ হাসান দিয়েছেন তা নয়, বিএনপির নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা মুরাদের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। বিএনপি মুরাদকে সমালোচনা করে থেমে থাকলে আলালের অপরাধের দায় মুছে যাবে না, বরং প্রমাণিত হবে তাদের কুরুচিপূর্ণ নারীবিদ্বেষী মনোভাব। বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বেও এসব আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। আওয়ামী লীগ মুরাদকে শাস্তির মুখোমুখি করেছে। বিএনপি কী করবে?
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
২ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
২ দিন আগে