অরুণ কর্মকার, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি কার্যত ওয়াকওভারই দিয়ে দিল! প্রথম শুরু করল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করার দাবিতে আন্দোলন দিয়ে। সেই আন্দোলন পৌঁছাল সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে। তারপর যখন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলো, তখন বিএনপি এবং তাদের সমমনা দলগুলো ঘোষণা করল নির্বাচন প্রতিহত করার কথা। নির্বাচন হতে না দেওয়ার কথা।
এই ঘোষণা মাত্র দুই-একবারই উচ্চারণ করেছিল তারা। যদিও আন্দোলনের কোনো কর্মসূচিই এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের ফল বয়ে আনেনি। অথচ নির্বাচনী প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এ অবস্থায় বিএনপি ভাবছে, যদি নির্বাচন হয়েও যায় তাহলে নির্বাচনের পরও আন্দোলনের কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার কথা। তার মানে নির্বাচন হয়ে যাওয়া পর্যন্তও তারা মেনে নিচ্ছে বা একধরনের ওয়াকওভার দিচ্ছে।
প্রথম কথা হলো, নির্বাচন হয়ে যাওয়া নিয়ে এখন আর কিছু করার আছে বলে মনে হয় না। কোনো কর্মসূচিই এখন আর নির্বাচন প্রতিহত করতে পারবে বলে সরকারবিরোধী অতি বড় আশাবাদীরাও মনে করেন না। নির্বাচন হয়ে যাওয়ার মতো সব আয়োজন যথাযথভাবেই চলমান রয়েছে। তবে মাঝেমধ্যে বিএনপির মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের কাছে এখনো কিছু তারিখের কথা শোনা যায়।
আন্দোলনের শুরু থেকেই এ রকম শুনে আসছি। সর্বশেষ শুনেছি, ২৮ ডিসেম্বরের কথা। সেদিন নাকি কী একটা হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। এর আগে ২৫ ডিসেম্বরের কথাও শুনেছিলাম। এসব তারিখ নিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মী-সমর্থকদের বেশ আশাবাদী এবং উচ্ছ্বসিতও হতে দেখেছি। জানি না নির্বাচনের আগে এ রকম আরও কোনো তারিখের কথা শুনব কি না। এটাও বুঝি না যে কার কাছ থেকে কী শুনে এবং কিসের ভিত্তিতে তাঁরা এগুলো নিয়ে মাতামাতি করেন!
দ্বিতীয় কথা হলো, নির্বাচনের পরেও আন্দোলন অব্যাহত রাখা। সে তো রাখাই যায়। কিন্তু প্রায় এক বছর ধরে যেভাবে আন্দোলন কর্মসূচি চলে এসেছে, নির্বাচনের পরেও যদি সেভাবেই চলতে থাকে তাতে তো বিশেষ কিছু ফল হবে বলে মনে হয় না। ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু তা আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে প্রত্যাহার করা হয়নি। আর তা অব্যাহত রয়েছে বলে বিএনপির রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ কিছুটা বিদ্রূপ করেই বলে থাকে, এবারের নির্বাচন-পরবর্তী আন্দোলনের কর্মসূচিও যদি সেভাবে মুখ থুবড়ে পড়ে যায়, তাহলে কী হবে? সরকার নিজের পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশ পরিচালনা করতে পারে, তাহলে সেই কর্মসূচি তো কোনো অর্থ বহন করবে না। আর যদি নির্বাচনের পরে বিএনপির আন্দোলন ডালপালা ছড়িয়ে দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করতে পারে, সে ক্ষেত্রে পরিস্থিতি অন্য রকম হতে পারে। তবে তেমন সম্ভাবনা অন্তত আজকের অবস্থায় দাঁড়িয়ে দেখা যাচ্ছে না।
তাহলে বিএনপির কী হবে? কী করবে বিএনপি? বিএনপির কী হবে, সে কথা সময়ই বলে দেবে। কিন্তু তারা কী করবে, সেই প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়, আপাতত ‘মার্ক টাইম’ করা ছাড়া তাদের আর কিছু করার সামর্থ্য নেই; অর্থাৎ এক জায়গায় দাঁড়িয়ে লেফট-রাইট করতে থাকা ছাড়া। যদি এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে সক্ষম হয়, পেছনে সরে যেতে না হয়, সেটাও হবে তাদের জন্য মন্দের ভালো। তবে নির্বাচনের পরে বিএনপি যেমন আন্দোলন অব্যাহত রাখার চ্যালেঞ্জ ঘোষণার কথা ভাবছে, তেমনি সরকারও কিছু পরিকল্পিত পদক্ষেপ নিয়ে অগ্রসর হবে। সেটাকে মোকাবিলা করেই বিএনপিকে তার অবস্থান ধরে রাখতে হবে। তারপর ভাবতে হবে অগ্রসর হওয়ার পন্থা।
এর বাইরে আরও একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে। যদিও আগেও সেই আলোচনা হয়েছে এবং সে আলোচনায় এখন আর কোনো ফায়দা নেই। তবুও এই আলোচনা দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতির জন্য একটি শিক্ষণীয় বিষয় হতে পারে। বিষয়টি হলো, বিএনপি কী করতে পারত বা তার কী করা উচিত ছিল। অনেকের সঙ্গে আলোচনা করে দেখেছি, তাঁরা শেষ পর্যন্ত বিএনপির নির্বাচনে অংশ নেওয়া উচিত ছিল বলে মনে করেন। কী তাঁদের যুক্তি?
প্রথমত, আমরা সবাই জানি যে দেশে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির ভোটসংখ্যা প্রায় সমান সমান। তার ওপর আওয়ামী লীগের সঙ্গে রয়েছে ১৪-দলীয় জোটভুক্ত কয়েকটি বাম এবং মধ্যপন্থী দল। এই দলগুলো মূলত কিছু নেতাকেন্দ্রিক। ভোটের বাজারে তাদের তেমন কোনো প্রভাব নেই। তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকায় জোট হিসেবে দলটির ভোট যে খুব একটা বাড়ে তেমন কিন্তু নয়। জাতীয় পার্টি আলাদাভাবে নির্বাচন করছে। আলাদাভাবে নির্বাচন করাই ছিল তাদের সিদ্ধান্ত। কাজেই বিএনপি নির্বাচনে এলেই যে জাতীয় পার্টি তল্পিতল্পা গুটিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হতো তা তো নয়।
অন্যদিকে, বিএনপির সঙ্গে জোটভুক্ত হতো জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলনসহ ধর্মভিত্তিক প্রধান দলগুলো।
ভোটের মাঠে এদের সমর্থন ১৪-দলীয় জোটভুক্তদের তুলনায় বেশি। সরকারের জনপ্রিয়তার কথা না হয় বিবেচনায় না-ই নেওয়া হলো। সুতরাং নির্বাচনে গেলে ভোটসংখ্যার হিসাবে বিএনপি আওয়ামী লীগের চেয়ে পিছিয়ে থাকত না। আর দেশের পরিস্থিতি মোটেই তেমন ছিল না বা নেই যে সরকারি দল প্রশাসনের সহায়তায় ভোট কারচুপি করে বিএনপিকে একেবারে ছুড়ে ফেলে দিতে পারত। অনেকে ২০১৮ সালের উদাহরণ দেন। কিন্তু আমাদের জানা উচিত, এটা ২০২৩ সাল। রাজনীতিতে, আর্থসামাজিক অবস্থায়, জনসমর্থনে, বিদেশি বন্ধুদের পর্যবেক্ষণে ২০১৮ সালের তুলনায় এবারের পরিস্থিতি ভিন্নতর। কাজেই বিএনপি নির্বাচনে এলে জনসমর্থনের পাশাপাশি জাতীয় সংসদে এবং প্রশাসনে তার একটা শক্ত অবস্থান নিশ্চিত করতে পারত।
কিন্তু বিএনপির বর্তমান নেতৃত্ব সেই সিদ্ধান্ত না নিয়ে বিদেশনির্ভরতার ওপর ভরসা করে আন্দোলনের ভুল পথে দলকে নিয়ে গেছেন।
অবশ্য বিএনপি বোধ হয় চেয়েছে আওয়ামী লীগকে একেবারে নিঃশেষ করে দিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করতে, যা বিএনপি অনেক আগে থেকেই করতে চেয়েছে। একইভাবে সমমনা বুদ্ধিজীবীরাও ভুল পথে যাওয়ার জন্যই বিএনপিকে প্রেরণা জুগিয়েছেন। তাঁরাও একেবারে মুক্তকণ্ঠে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, তত্ত্বাবধায়ক সরকার করে বিএনপিকে বিভ্রান্ত করেছেন। বিএনপিপন্থী অথবা তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য গলদঘর্ম এই বুদ্ধিজীবীশ্রেণির কথাবার্তা অনেক সময়ই ইউটোপীয় ধাঁচের। তাঁরা আগাপাছতলা একটি দুর্নীতিগ্রস্ত আর্থসামাজিক ব্যবস্থার মধ্যে বসে, সার্বিকভাবে কলুষিত একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থার মধ্য থেকে এমন এক আদর্শ রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক পদ্ধতির বুলি আওড়ান, যা প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রকেও হার মানায়।
আচ্ছা তাঁরা যে তত্ত্বাধায়ক সরকারের জন্য এত চিৎকার-চেঁচামেচি করেন, তাঁরা কি বলতে পারবেন যে সবগুলো তত্ত্বাধায়ক সরকার ‘কারও প্রতি অনুরাগ-বিরাগের বশবর্তী হয়ে, কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করার’ শপথ রক্ষা করতে পেরেছে? পারেনি তো। ভবিষ্যতে আবার যদি কখনো তেমন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়, সেই সরকারও পারবে কি না, সন্দেহ আছে। সবচেয়ে বড় কথা, সর্ব অর্থে ঘুণে ধরা একটি রাষ্ট্রব্যবস্থাকে একলাফে, শুধু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে একেবারে আদর্শস্থানীয় রাষ্ট্রে পরিণত করবেন—এ ধারণাটাই ইউটোপীয়। এই ধারণার বশবর্তী হয়ে ওই শ্রেণির বুদ্ধিজীবীরা নিজেরা ডুবেছেন এবং বিএনপিকেও ডুবিয়েছেন।
অবশ্য ওই বুদ্ধিজীবীদের প্রত্যেকের গায়ে বিদেশি লাইফ জ্যাকেট আছে। তাই তাঁরা আসলে কখনোই ডোবেন না বা ডুববেন না। কিন্তু বিএনপি কোনোমতে নাকটা পানির ওপর রেখে ভেসে থাকতে পারবে কি না, তা দেখা যাবে আগামী সরকারের মেয়াদকালে। বিএনপি যেমন আগামী সরকারের জন্য আন্দোলনের আগাম চ্যালেঞ্জ ঘোষণার কৌশল নিতে যাচ্ছে, তেমনি বিএনপির জন্য চ্যালেঞ্জ হবে ডুবন্ত অবস্থায় ভেসে থাকা। ডুবন্ত জাহাজকে ভাসিয়ে রাখা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি কার্যত ওয়াকওভারই দিয়ে দিল! প্রথম শুরু করল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করার দাবিতে আন্দোলন দিয়ে। সেই আন্দোলন পৌঁছাল সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে। তারপর যখন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলো, তখন বিএনপি এবং তাদের সমমনা দলগুলো ঘোষণা করল নির্বাচন প্রতিহত করার কথা। নির্বাচন হতে না দেওয়ার কথা।
এই ঘোষণা মাত্র দুই-একবারই উচ্চারণ করেছিল তারা। যদিও আন্দোলনের কোনো কর্মসূচিই এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের ফল বয়ে আনেনি। অথচ নির্বাচনী প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এ অবস্থায় বিএনপি ভাবছে, যদি নির্বাচন হয়েও যায় তাহলে নির্বাচনের পরও আন্দোলনের কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার কথা। তার মানে নির্বাচন হয়ে যাওয়া পর্যন্তও তারা মেনে নিচ্ছে বা একধরনের ওয়াকওভার দিচ্ছে।
প্রথম কথা হলো, নির্বাচন হয়ে যাওয়া নিয়ে এখন আর কিছু করার আছে বলে মনে হয় না। কোনো কর্মসূচিই এখন আর নির্বাচন প্রতিহত করতে পারবে বলে সরকারবিরোধী অতি বড় আশাবাদীরাও মনে করেন না। নির্বাচন হয়ে যাওয়ার মতো সব আয়োজন যথাযথভাবেই চলমান রয়েছে। তবে মাঝেমধ্যে বিএনপির মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের কাছে এখনো কিছু তারিখের কথা শোনা যায়।
আন্দোলনের শুরু থেকেই এ রকম শুনে আসছি। সর্বশেষ শুনেছি, ২৮ ডিসেম্বরের কথা। সেদিন নাকি কী একটা হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। এর আগে ২৫ ডিসেম্বরের কথাও শুনেছিলাম। এসব তারিখ নিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মী-সমর্থকদের বেশ আশাবাদী এবং উচ্ছ্বসিতও হতে দেখেছি। জানি না নির্বাচনের আগে এ রকম আরও কোনো তারিখের কথা শুনব কি না। এটাও বুঝি না যে কার কাছ থেকে কী শুনে এবং কিসের ভিত্তিতে তাঁরা এগুলো নিয়ে মাতামাতি করেন!
দ্বিতীয় কথা হলো, নির্বাচনের পরেও আন্দোলন অব্যাহত রাখা। সে তো রাখাই যায়। কিন্তু প্রায় এক বছর ধরে যেভাবে আন্দোলন কর্মসূচি চলে এসেছে, নির্বাচনের পরেও যদি সেভাবেই চলতে থাকে তাতে তো বিশেষ কিছু ফল হবে বলে মনে হয় না। ২০১৮ সালের নির্বাচনের সময় অনির্দিষ্টকালের অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু তা আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে প্রত্যাহার করা হয়নি। আর তা অব্যাহত রয়েছে বলে বিএনপির রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ কিছুটা বিদ্রূপ করেই বলে থাকে, এবারের নির্বাচন-পরবর্তী আন্দোলনের কর্মসূচিও যদি সেভাবে মুখ থুবড়ে পড়ে যায়, তাহলে কী হবে? সরকার নিজের পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশ পরিচালনা করতে পারে, তাহলে সেই কর্মসূচি তো কোনো অর্থ বহন করবে না। আর যদি নির্বাচনের পরে বিএনপির আন্দোলন ডালপালা ছড়িয়ে দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করতে পারে, সে ক্ষেত্রে পরিস্থিতি অন্য রকম হতে পারে। তবে তেমন সম্ভাবনা অন্তত আজকের অবস্থায় দাঁড়িয়ে দেখা যাচ্ছে না।
তাহলে বিএনপির কী হবে? কী করবে বিএনপি? বিএনপির কী হবে, সে কথা সময়ই বলে দেবে। কিন্তু তারা কী করবে, সেই প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়, আপাতত ‘মার্ক টাইম’ করা ছাড়া তাদের আর কিছু করার সামর্থ্য নেই; অর্থাৎ এক জায়গায় দাঁড়িয়ে লেফট-রাইট করতে থাকা ছাড়া। যদি এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকতে সক্ষম হয়, পেছনে সরে যেতে না হয়, সেটাও হবে তাদের জন্য মন্দের ভালো। তবে নির্বাচনের পরে বিএনপি যেমন আন্দোলন অব্যাহত রাখার চ্যালেঞ্জ ঘোষণার কথা ভাবছে, তেমনি সরকারও কিছু পরিকল্পিত পদক্ষেপ নিয়ে অগ্রসর হবে। সেটাকে মোকাবিলা করেই বিএনপিকে তার অবস্থান ধরে রাখতে হবে। তারপর ভাবতে হবে অগ্রসর হওয়ার পন্থা।
এর বাইরে আরও একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে। যদিও আগেও সেই আলোচনা হয়েছে এবং সে আলোচনায় এখন আর কোনো ফায়দা নেই। তবুও এই আলোচনা দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতির জন্য একটি শিক্ষণীয় বিষয় হতে পারে। বিষয়টি হলো, বিএনপি কী করতে পারত বা তার কী করা উচিত ছিল। অনেকের সঙ্গে আলোচনা করে দেখেছি, তাঁরা শেষ পর্যন্ত বিএনপির নির্বাচনে অংশ নেওয়া উচিত ছিল বলে মনে করেন। কী তাঁদের যুক্তি?
প্রথমত, আমরা সবাই জানি যে দেশে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির ভোটসংখ্যা প্রায় সমান সমান। তার ওপর আওয়ামী লীগের সঙ্গে রয়েছে ১৪-দলীয় জোটভুক্ত কয়েকটি বাম এবং মধ্যপন্থী দল। এই দলগুলো মূলত কিছু নেতাকেন্দ্রিক। ভোটের বাজারে তাদের তেমন কোনো প্রভাব নেই। তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকায় জোট হিসেবে দলটির ভোট যে খুব একটা বাড়ে তেমন কিন্তু নয়। জাতীয় পার্টি আলাদাভাবে নির্বাচন করছে। আলাদাভাবে নির্বাচন করাই ছিল তাদের সিদ্ধান্ত। কাজেই বিএনপি নির্বাচনে এলেই যে জাতীয় পার্টি তল্পিতল্পা গুটিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হতো তা তো নয়।
অন্যদিকে, বিএনপির সঙ্গে জোটভুক্ত হতো জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলনসহ ধর্মভিত্তিক প্রধান দলগুলো।
ভোটের মাঠে এদের সমর্থন ১৪-দলীয় জোটভুক্তদের তুলনায় বেশি। সরকারের জনপ্রিয়তার কথা না হয় বিবেচনায় না-ই নেওয়া হলো। সুতরাং নির্বাচনে গেলে ভোটসংখ্যার হিসাবে বিএনপি আওয়ামী লীগের চেয়ে পিছিয়ে থাকত না। আর দেশের পরিস্থিতি মোটেই তেমন ছিল না বা নেই যে সরকারি দল প্রশাসনের সহায়তায় ভোট কারচুপি করে বিএনপিকে একেবারে ছুড়ে ফেলে দিতে পারত। অনেকে ২০১৮ সালের উদাহরণ দেন। কিন্তু আমাদের জানা উচিত, এটা ২০২৩ সাল। রাজনীতিতে, আর্থসামাজিক অবস্থায়, জনসমর্থনে, বিদেশি বন্ধুদের পর্যবেক্ষণে ২০১৮ সালের তুলনায় এবারের পরিস্থিতি ভিন্নতর। কাজেই বিএনপি নির্বাচনে এলে জনসমর্থনের পাশাপাশি জাতীয় সংসদে এবং প্রশাসনে তার একটা শক্ত অবস্থান নিশ্চিত করতে পারত।
কিন্তু বিএনপির বর্তমান নেতৃত্ব সেই সিদ্ধান্ত না নিয়ে বিদেশনির্ভরতার ওপর ভরসা করে আন্দোলনের ভুল পথে দলকে নিয়ে গেছেন।
অবশ্য বিএনপি বোধ হয় চেয়েছে আওয়ামী লীগকে একেবারে নিঃশেষ করে দিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করতে, যা বিএনপি অনেক আগে থেকেই করতে চেয়েছে। একইভাবে সমমনা বুদ্ধিজীবীরাও ভুল পথে যাওয়ার জন্যই বিএনপিকে প্রেরণা জুগিয়েছেন। তাঁরাও একেবারে মুক্তকণ্ঠে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, তত্ত্বাবধায়ক সরকার করে বিএনপিকে বিভ্রান্ত করেছেন। বিএনপিপন্থী অথবা তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য গলদঘর্ম এই বুদ্ধিজীবীশ্রেণির কথাবার্তা অনেক সময়ই ইউটোপীয় ধাঁচের। তাঁরা আগাপাছতলা একটি দুর্নীতিগ্রস্ত আর্থসামাজিক ব্যবস্থার মধ্যে বসে, সার্বিকভাবে কলুষিত একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থার মধ্য থেকে এমন এক আদর্শ রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক পদ্ধতির বুলি আওড়ান, যা প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রকেও হার মানায়।
আচ্ছা তাঁরা যে তত্ত্বাধায়ক সরকারের জন্য এত চিৎকার-চেঁচামেচি করেন, তাঁরা কি বলতে পারবেন যে সবগুলো তত্ত্বাধায়ক সরকার ‘কারও প্রতি অনুরাগ-বিরাগের বশবর্তী হয়ে, কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করার’ শপথ রক্ষা করতে পেরেছে? পারেনি তো। ভবিষ্যতে আবার যদি কখনো তেমন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়, সেই সরকারও পারবে কি না, সন্দেহ আছে। সবচেয়ে বড় কথা, সর্ব অর্থে ঘুণে ধরা একটি রাষ্ট্রব্যবস্থাকে একলাফে, শুধু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে একেবারে আদর্শস্থানীয় রাষ্ট্রে পরিণত করবেন—এ ধারণাটাই ইউটোপীয়। এই ধারণার বশবর্তী হয়ে ওই শ্রেণির বুদ্ধিজীবীরা নিজেরা ডুবেছেন এবং বিএনপিকেও ডুবিয়েছেন।
অবশ্য ওই বুদ্ধিজীবীদের প্রত্যেকের গায়ে বিদেশি লাইফ জ্যাকেট আছে। তাই তাঁরা আসলে কখনোই ডোবেন না বা ডুববেন না। কিন্তু বিএনপি কোনোমতে নাকটা পানির ওপর রেখে ভেসে থাকতে পারবে কি না, তা দেখা যাবে আগামী সরকারের মেয়াদকালে। বিএনপি যেমন আগামী সরকারের জন্য আন্দোলনের আগাম চ্যালেঞ্জ ঘোষণার কৌশল নিতে যাচ্ছে, তেমনি বিএনপির জন্য চ্যালেঞ্জ হবে ডুবন্ত অবস্থায় ভেসে থাকা। ডুবন্ত জাহাজকে ভাসিয়ে রাখা।
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
২ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
২ দিন আগে