অজয় দাশগুপ্ত
জাতীয় নির্বাচনের পর হয়ে গেল মেয়র পদে নির্বাচন। হয়ে গেল আইনজীবী সমিতির নির্বাচন। আদৌ কি আগ্রহ ছিল মানুষের, না আছে? কেউ কি আসলেই এসব নিয়ে ভাবে? আজকাল কেউ এসব রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামায় না। আমরা যারা দীর্ঘ সময় ধরে কলাম লিখি, বিশেষ করে রাজনৈতিক বিষয়ে লেখালেখি করি বলে সবাই মনে করেন আমাদের ভাবনার জগতেও পরিবর্তন এসেছে। অন্তত আমার মনে হয় পাঠককে এমন কিছু নিয়ে বলা দরকার বা লেখা উপহার দেওয়া দরকার, যা প্রচলিত ও নোংরা রাজনীতির বাইরের কিছু।
এই যে মানুষের নির্বাচন উদাসীনতা, আগুনে পোড়া মানুষের ব্যাপারে নির্বিকার বা ভাবলেশহীন; এর কারণ কী? আজকাল কোনো বিষয়ই কয়েক দিনের বেশি প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। যত কঠিন বা নির্মমই হোক, মানুষ তা হজম করতে শিখে গেছে। আসলে কি শিখে গেছে, না শিখতে বাধ্য হয়েছে? প্রতিকারহীন প্রতিবাদ টেকে না। উচ্চকিত কণ্ঠ কখনোই দীর্ঘমেয়াদি হয় না। তাতে গলা ফেটে যাতে পারে। অসুস্থতা হতে পারে। ফলে কণ্ঠস্বর উঁচু থাকতেই তার প্রতি মনোযোগ দরকার। যেহেতু সেই সম্ভাবনা থাকে না, মানুষ তাই কণ্ঠ ছাড়তেও ভুলে গেছে।
এই সব মিলিয়ে যা বাস্তবতা তার সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের যোগ নিবিড়। আমাদের ধারণা, অসুখ মানে সর্দি-কাশি-জ্বর-ডেঙ্গু বা সাম্প্রতিক সময়ের মহামারি কোভিড। এগুলো মারাত্মক অসুখ। এর নিরাময়ও করতে জানে মানুষ। করোনা মহামারিতে আতঙ্কিত পৃথিবী ঠিকই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এসব অসুস্থতা প্রতিকারে জান বাঁচাতে উদ্বিগ্ন মানুষ তার মনোজগৎ নিয়ে অতটা ভাবে না। অথচ এই মনোজগৎ বা মানসিক সুস্থতা না থাকলে মানুষের আর কোনো কিছুই কিছু না। সবকিছু ধীরে ধীরে মূল্যহীন হয়ে পড়লেও আমরা বাঙালিরা পৃথিবীর কোথাও এ নিয়ে তেমন ভাবি না।
কেমন আছে দেশের মানুষের মন? কতটা সুস্থ ও সবল মানসিকতা নিয়ে বাঁচছে মানুষ? বাংলাদেশের অন্তত ২৬ শতাংশ মানুষ মানসিকভাবে সুস্থ নেই কিংবা সংকটাপন্ন। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেপিয়েন ল্যাবস প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। সেপিয়েন ল্যাবস প্রকাশিত ‘মেন্টাল স্টেট অব দ্য ওয়ার্ল্ড ইন-২০২৩’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুসারে, বিশ্বের ৭১টি দেশের মধ্যে ৫৩তম অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। এই গবেষণা অনুসারে, বাংলাদেশের মেন্টাল হেলথ কোশেন্ট বা এমএইচকিউ স্কোর ৬২; যা আগের বছর, অর্থাৎ ২০২২ সালের চেয়ে ২ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি। সেই বিবেচনায় বাংলাদেশের ২৬ শতাংশ মানুষ মানসিকভাবে পীড়িত বা সংকটাপন্ন অবস্থায় আছে।
বিশ্বের ৭১টি দেশের ১৩টি ভাষার মোট ৫ লাখ লোকের ওপর গবেষণার ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে সেপিয়েন ল্যাব। প্রতিবেদন অনুসারে, জরিপে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যে মানসিকভাবে সবচেয়ে বেশি সুস্থ দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কা। দেশটির মাত্র ১৪ শতাংশ লোক মানসিকভাবে পীড়িত বা সংকটাপন্ন অবস্থায় আছে। শ্রীলঙ্কা ছাড়া এই তালিকার শীর্ষের কয়েকটি দেশ হলো ইতালি, জর্জিয়া, নাইজেরিয়া ও আর্মেনিয়া। আর তলানিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে আছে উজবেকিস্তান। এর পরপরই আছে যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল ও তাজিকিস্তান। দক্ষিণ এশিয়ার অপর দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তানের অবস্থান বাংলাদেশের চেয়েও নিচে। দেশ দুটির অবস্থান যথাক্রমে ৬০ ও ৫৫। এই দুটি দেশে যথাক্রমে ৩০ ও ২৮ শতাংশ মানুষ মানসিকভাবে পীড়িত কিংবা সুস্থ থাকার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
আমাদের সমাজে মায়া-মমতা আর পাশাপাশি থাকার রেওয়াজ উঠে যায়নি। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনার মতো বড় বড় কয়েকটি শহর বাদ দিলে সমাজ ও জীবনে মানুষ মানুষের কাছাকাছি মায়ার এক জগতেই বসবাস করে। আমরা যারা প্রবাসী, আমরা জানি একাকিত্ব কাকে বলে; বিশেষ করে মধ্য বয়সে যাঁরা দেশ ছেড়ে আসেন তাঁদের অবস্থা ‘না ঘরকা না ঘাটকা’। আমরা না পেরেছি ‘ক্লাব কালচার’ নৈশ জীবনে মিশতে, না পারছি পরিপূর্ণ বাঙালি জগতে বাস করতে। আমার ধারণা, অভিবাসী দেশগুলোর বাংলাদেশিদের নিয়ে জরিপ চালালে তার ফলাফল হবে শোচনীয়। সেদিক থেকে অভাব-অনটন, রাজনৈতিক অচলায়তনের পরও দেশের মানুষ ভালো আছে বলে ধরে নেওয়া যায়। জরিপের যে ফলাফল আমরা দেখছি তাতে এটা স্পষ্ট—দেশ ধনী হলেই মানুষ সুস্থ থাকে না। তার মানসিক স্বাস্থ্য নির্ভর করে মন ও মেজাজের ওপর। সঙ্গ, বিনোদন, আড্ডা, সময় কাটানো—সব মিলিয়েই তার ভালো থাকা। সেদিক থেকে বাংলাদেশ খারাপ নেই। জরিপে তলানিতে থাকা আমেরিকা, ব্রাজিল আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে। আমাদের দুই প্রতিবেশী ভারত, পাকিস্তানের চেয়েও এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। ভারত একটি আর্থিক উন্নতির দেশ নামে পরিচিত, নব্য শক্তি হওয়ার পরও তাদের মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের হাল জটিল। যার মানে আত্মকেন্দ্রিক আর অর্থ নির্ভর সমাজে আর যা-ই থাক, মানসিক শান্তি থাকে না। থাকার কথাও না। সম্প্রতি ধনকুবের আম্বানি পরিবারের বিয়ে নিয়ে যে তুমুল হইচই আর বিলাসিতার প্রচার, সেদিকে তাকালেও জবাব মিলবে। এভাবে বিলাসিতা ‘এক্সপোজড’ করার নামও দরিদ্রতা। কেউ একবারের জন্যও ভাবেনি এর ফলে সমাজে কী নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে! মানসিক সুস্থতার জন্য দরকার সুস্থ জ্ঞানসম্পন্ন এক সমাজ। এসব বিয়েশাদি দেখার পর কোনো বালক-বালিকা বা তরুণ-তরুণী গবেষক কিংবা বিজ্ঞানী হতে চাইবে? সমাজে বিত্তের প্রয়োজন সর্বাধিক হলেও তার নিয়ন্ত্রিত ব্যবহারই সভ্যতা। ভারতের ফলাফল তাই আমাকে অবাক করেনি। আর পাকিস্তানের কথা তো বলাই বাহুল্য। আমজনতা যে সেখানে এখনো সুস্থ আছে, এটাই যথেষ্ট!
অথচ জরিপ বলছে বিধ্বস্ত অর্থনীতির দেশ মাত্র ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তাদের মানুষজন আবারও দেশ গঠনে কাজ শুরু করেছে। ওরাই কিনা সুস্থতার শীর্ষে থাকা অন্যতম দেশ। কীভাবে সম্ভব? শান্তি উন্নয়ন আর নিয়ন্ত্রণ যদি সমার্থক না হয়, এমনটা হতে পারে না। বিধ্বস্ত দেশটিতে জনগণ রাজপ্রাসাদে পর্যন্ত ঢুকে পড়েছিল, অথচ আজ তারাই মানসিকভাবে সুস্থতায় এগিয়ে। আমাদের দেশের কথায় ফিরি। উন্নয়নের ছোঁয়া গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছেছে। মানুষের অবস্থা আগের চেয়ে ভালো। সিন্ডিকেট রাজনীতি আর হঠাৎ ফুলেফেঁপে বড় হয়ে ওঠাদের দৌরাত্ম্য না থাকলে মানসিক শান্তির স্তর আরও অনেক ওপরে হতে পারত। আমার ধারণা, মানসিক সুস্থতার প্রধান প্রতিবন্ধক মানুষের লালসা। যার জন্য দায়ী অতিরিক্ত তথ্য প্রবাহ; যা তার দরকার নেই তা-ও জানছে, যা দরকার তা পাচ্ছে না। ডিজিটালের এই বায়বীয় জগৎ মানুষের মনের অসুখ বাড়িয়ে তুলেছে; বিশেষ করে তরুণেরা এর শিকার।
অনেক পথ যেতে হবে আমাদের। দেশের ২৬ শতাংশ মানুষকে মানসিক অবসাদ বা অসুস্থ রেখে জাতি ভালো থাকতে পারবে না। এ দিকটির দিকে নজর দেওয়ার সময় এসেছে। শুধু সরকার বা প্রতিষ্ঠান নয়, ব্যক্তি-পরিবার-সমাজ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। জানতে হবে তাদের ঘরের মানুষ, পরিবারের মানুষ, প্রতিবেশী—সমাজের সবাই কেমন আছে, কেমন চলছে তাদের দিনকাল। এই জানা আগে বেশি ছিল বলে সুস্থতাও ছিল অধিক। মানুষে-মানুষে যোগাযোগ যন্ত্রহীনতায় এর সুফল পাওয়া সম্ভব। মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য আমাদের মনোযোগ এখন সময়ের অন্যতম চাহিদা।
লেখক: অজয় দাশগুপ্ত, অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী কলামিস্ট
জাতীয় নির্বাচনের পর হয়ে গেল মেয়র পদে নির্বাচন। হয়ে গেল আইনজীবী সমিতির নির্বাচন। আদৌ কি আগ্রহ ছিল মানুষের, না আছে? কেউ কি আসলেই এসব নিয়ে ভাবে? আজকাল কেউ এসব রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামায় না। আমরা যারা দীর্ঘ সময় ধরে কলাম লিখি, বিশেষ করে রাজনৈতিক বিষয়ে লেখালেখি করি বলে সবাই মনে করেন আমাদের ভাবনার জগতেও পরিবর্তন এসেছে। অন্তত আমার মনে হয় পাঠককে এমন কিছু নিয়ে বলা দরকার বা লেখা উপহার দেওয়া দরকার, যা প্রচলিত ও নোংরা রাজনীতির বাইরের কিছু।
এই যে মানুষের নির্বাচন উদাসীনতা, আগুনে পোড়া মানুষের ব্যাপারে নির্বিকার বা ভাবলেশহীন; এর কারণ কী? আজকাল কোনো বিষয়ই কয়েক দিনের বেশি প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। যত কঠিন বা নির্মমই হোক, মানুষ তা হজম করতে শিখে গেছে। আসলে কি শিখে গেছে, না শিখতে বাধ্য হয়েছে? প্রতিকারহীন প্রতিবাদ টেকে না। উচ্চকিত কণ্ঠ কখনোই দীর্ঘমেয়াদি হয় না। তাতে গলা ফেটে যাতে পারে। অসুস্থতা হতে পারে। ফলে কণ্ঠস্বর উঁচু থাকতেই তার প্রতি মনোযোগ দরকার। যেহেতু সেই সম্ভাবনা থাকে না, মানুষ তাই কণ্ঠ ছাড়তেও ভুলে গেছে।
এই সব মিলিয়ে যা বাস্তবতা তার সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের যোগ নিবিড়। আমাদের ধারণা, অসুখ মানে সর্দি-কাশি-জ্বর-ডেঙ্গু বা সাম্প্রতিক সময়ের মহামারি কোভিড। এগুলো মারাত্মক অসুখ। এর নিরাময়ও করতে জানে মানুষ। করোনা মহামারিতে আতঙ্কিত পৃথিবী ঠিকই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এসব অসুস্থতা প্রতিকারে জান বাঁচাতে উদ্বিগ্ন মানুষ তার মনোজগৎ নিয়ে অতটা ভাবে না। অথচ এই মনোজগৎ বা মানসিক সুস্থতা না থাকলে মানুষের আর কোনো কিছুই কিছু না। সবকিছু ধীরে ধীরে মূল্যহীন হয়ে পড়লেও আমরা বাঙালিরা পৃথিবীর কোথাও এ নিয়ে তেমন ভাবি না।
কেমন আছে দেশের মানুষের মন? কতটা সুস্থ ও সবল মানসিকতা নিয়ে বাঁচছে মানুষ? বাংলাদেশের অন্তত ২৬ শতাংশ মানুষ মানসিকভাবে সুস্থ নেই কিংবা সংকটাপন্ন। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেপিয়েন ল্যাবস প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। সেপিয়েন ল্যাবস প্রকাশিত ‘মেন্টাল স্টেট অব দ্য ওয়ার্ল্ড ইন-২০২৩’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুসারে, বিশ্বের ৭১টি দেশের মধ্যে ৫৩তম অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। এই গবেষণা অনুসারে, বাংলাদেশের মেন্টাল হেলথ কোশেন্ট বা এমএইচকিউ স্কোর ৬২; যা আগের বছর, অর্থাৎ ২০২২ সালের চেয়ে ২ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি। সেই বিবেচনায় বাংলাদেশের ২৬ শতাংশ মানুষ মানসিকভাবে পীড়িত বা সংকটাপন্ন অবস্থায় আছে।
বিশ্বের ৭১টি দেশের ১৩টি ভাষার মোট ৫ লাখ লোকের ওপর গবেষণার ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে সেপিয়েন ল্যাব। প্রতিবেদন অনুসারে, জরিপে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যে মানসিকভাবে সবচেয়ে বেশি সুস্থ দক্ষিণ এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কা। দেশটির মাত্র ১৪ শতাংশ লোক মানসিকভাবে পীড়িত বা সংকটাপন্ন অবস্থায় আছে। শ্রীলঙ্কা ছাড়া এই তালিকার শীর্ষের কয়েকটি দেশ হলো ইতালি, জর্জিয়া, নাইজেরিয়া ও আর্মেনিয়া। আর তলানিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে আছে উজবেকিস্তান। এর পরপরই আছে যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল ও তাজিকিস্তান। দক্ষিণ এশিয়ার অপর দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তানের অবস্থান বাংলাদেশের চেয়েও নিচে। দেশ দুটির অবস্থান যথাক্রমে ৬০ ও ৫৫। এই দুটি দেশে যথাক্রমে ৩০ ও ২৮ শতাংশ মানুষ মানসিকভাবে পীড়িত কিংবা সুস্থ থাকার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
আমাদের সমাজে মায়া-মমতা আর পাশাপাশি থাকার রেওয়াজ উঠে যায়নি। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনার মতো বড় বড় কয়েকটি শহর বাদ দিলে সমাজ ও জীবনে মানুষ মানুষের কাছাকাছি মায়ার এক জগতেই বসবাস করে। আমরা যারা প্রবাসী, আমরা জানি একাকিত্ব কাকে বলে; বিশেষ করে মধ্য বয়সে যাঁরা দেশ ছেড়ে আসেন তাঁদের অবস্থা ‘না ঘরকা না ঘাটকা’। আমরা না পেরেছি ‘ক্লাব কালচার’ নৈশ জীবনে মিশতে, না পারছি পরিপূর্ণ বাঙালি জগতে বাস করতে। আমার ধারণা, অভিবাসী দেশগুলোর বাংলাদেশিদের নিয়ে জরিপ চালালে তার ফলাফল হবে শোচনীয়। সেদিক থেকে অভাব-অনটন, রাজনৈতিক অচলায়তনের পরও দেশের মানুষ ভালো আছে বলে ধরে নেওয়া যায়। জরিপের যে ফলাফল আমরা দেখছি তাতে এটা স্পষ্ট—দেশ ধনী হলেই মানুষ সুস্থ থাকে না। তার মানসিক স্বাস্থ্য নির্ভর করে মন ও মেজাজের ওপর। সঙ্গ, বিনোদন, আড্ডা, সময় কাটানো—সব মিলিয়েই তার ভালো থাকা। সেদিক থেকে বাংলাদেশ খারাপ নেই। জরিপে তলানিতে থাকা আমেরিকা, ব্রাজিল আমাদের চেয়ে অনেক এগিয়ে। আমাদের দুই প্রতিবেশী ভারত, পাকিস্তানের চেয়েও এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। ভারত একটি আর্থিক উন্নতির দেশ নামে পরিচিত, নব্য শক্তি হওয়ার পরও তাদের মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের হাল জটিল। যার মানে আত্মকেন্দ্রিক আর অর্থ নির্ভর সমাজে আর যা-ই থাক, মানসিক শান্তি থাকে না। থাকার কথাও না। সম্প্রতি ধনকুবের আম্বানি পরিবারের বিয়ে নিয়ে যে তুমুল হইচই আর বিলাসিতার প্রচার, সেদিকে তাকালেও জবাব মিলবে। এভাবে বিলাসিতা ‘এক্সপোজড’ করার নামও দরিদ্রতা। কেউ একবারের জন্যও ভাবেনি এর ফলে সমাজে কী নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে! মানসিক সুস্থতার জন্য দরকার সুস্থ জ্ঞানসম্পন্ন এক সমাজ। এসব বিয়েশাদি দেখার পর কোনো বালক-বালিকা বা তরুণ-তরুণী গবেষক কিংবা বিজ্ঞানী হতে চাইবে? সমাজে বিত্তের প্রয়োজন সর্বাধিক হলেও তার নিয়ন্ত্রিত ব্যবহারই সভ্যতা। ভারতের ফলাফল তাই আমাকে অবাক করেনি। আর পাকিস্তানের কথা তো বলাই বাহুল্য। আমজনতা যে সেখানে এখনো সুস্থ আছে, এটাই যথেষ্ট!
অথচ জরিপ বলছে বিধ্বস্ত অর্থনীতির দেশ মাত্র ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তাদের মানুষজন আবারও দেশ গঠনে কাজ শুরু করেছে। ওরাই কিনা সুস্থতার শীর্ষে থাকা অন্যতম দেশ। কীভাবে সম্ভব? শান্তি উন্নয়ন আর নিয়ন্ত্রণ যদি সমার্থক না হয়, এমনটা হতে পারে না। বিধ্বস্ত দেশটিতে জনগণ রাজপ্রাসাদে পর্যন্ত ঢুকে পড়েছিল, অথচ আজ তারাই মানসিকভাবে সুস্থতায় এগিয়ে। আমাদের দেশের কথায় ফিরি। উন্নয়নের ছোঁয়া গ্রাম পর্যন্ত পৌঁছেছে। মানুষের অবস্থা আগের চেয়ে ভালো। সিন্ডিকেট রাজনীতি আর হঠাৎ ফুলেফেঁপে বড় হয়ে ওঠাদের দৌরাত্ম্য না থাকলে মানসিক শান্তির স্তর আরও অনেক ওপরে হতে পারত। আমার ধারণা, মানসিক সুস্থতার প্রধান প্রতিবন্ধক মানুষের লালসা। যার জন্য দায়ী অতিরিক্ত তথ্য প্রবাহ; যা তার দরকার নেই তা-ও জানছে, যা দরকার তা পাচ্ছে না। ডিজিটালের এই বায়বীয় জগৎ মানুষের মনের অসুখ বাড়িয়ে তুলেছে; বিশেষ করে তরুণেরা এর শিকার।
অনেক পথ যেতে হবে আমাদের। দেশের ২৬ শতাংশ মানুষকে মানসিক অবসাদ বা অসুস্থ রেখে জাতি ভালো থাকতে পারবে না। এ দিকটির দিকে নজর দেওয়ার সময় এসেছে। শুধু সরকার বা প্রতিষ্ঠান নয়, ব্যক্তি-পরিবার-সমাজ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। জানতে হবে তাদের ঘরের মানুষ, পরিবারের মানুষ, প্রতিবেশী—সমাজের সবাই কেমন আছে, কেমন চলছে তাদের দিনকাল। এই জানা আগে বেশি ছিল বলে সুস্থতাও ছিল অধিক। মানুষে-মানুষে যোগাযোগ যন্ত্রহীনতায় এর সুফল পাওয়া সম্ভব। মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য আমাদের মনোযোগ এখন সময়ের অন্যতম চাহিদা।
লেখক: অজয় দাশগুপ্ত, অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী কলামিস্ট
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
১ দিন আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৫ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৫ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৫ দিন আগে