মৃত্যুঞ্জয় রায়
খবরটা পুরোনো। সেই খবরই আমাদের ঘুম কেড়ে নিচ্ছে। কতটা বিপদে আছি আমরা, সে খবরটা থেকে কিছুটা হলেও বুঝতে পারছি। জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও) তাদের ‘২০২১ সালে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিস্থিতি’ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের চারটি প্রধান সূচক ২০২১ সালে রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। এ চারটি সূচক হলো গ্রিনহাউস গ্যাসের ঘনত্ব, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা, সামুদ্রিক তাপমাত্রা ও মহাসাগরের অম্লতা বৃদ্ধি। এর প্রতিটি সূচকই আগের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। আর এর কারণ হিসেবে সবচেয়ে বেশি দায়ী করা হয়েছে বৈশ্বিক জ্বালানি-প্রক্রিয়াকে। জাতিসংঘ মহাসচিব এই প্রতিবেদনের পর বলেছিলেন, ‘বৈশ্বিক জ্বালানি-প্রক্রিয়া সঠিক পথে নেই এবং তা আমাদের জলবায়ু বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের অবশ্যই জীবাশ্ম জ্বালানি দূষণের ইতি টানতে হবে। একমাত্র আবাসস্থলটিকে নিঃশেষিত করে ফেলতে না চাইলে পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তিতে স্থানান্তরের গতি বাড়াতে হবে।’
বৈশ্বিক জ্বালানি-প্রক্রিয়া ও ব্যবহারের ক্রমাগত বৃদ্ধি সমগ্র মানবজাতিকে এখন বিপর্যয়ের মুখে দাঁড় করিয়েছে। আমরা এখন সর্বকালের মধ্যে উষ্ণতম বছরগুলো পার করছি। সাগরে এখন ‘লা নিনা’ ও ‘এল নিনো’ হতে দেখা যাচ্ছে, যার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে পুরো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে। ডব্লিউএমওপ্রধান পেট্টেরি টালাস বলেছেন, ‘আমাদের জলবায়ু আমাদের চোখের সামনেই বদলে যাচ্ছে।’ আমরা এখন স্পষ্ট খোলা চোখেই দেখতে পারছি, যখন বৃষ্টি হওয়ার কথা না, সে সময়েও কতটা বেশি বৃষ্টি হচ্ছে, চরম শীত আর চরম গরম কীভাবে আমাদের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলছে। এত ঘন ঘন ঝড় আর দাবানল অতীতে আর কখনো দেখা যায়নি।
জলবায়ুর এরূপ পরিবর্তনে কতটা বিপদে আছে বাংলাদেশ? সেটি বুঝতে পাতা ওলটাতে হলো আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা জার্মান ওয়াচের একই বছরে প্রকাশিত ‘বৈশ্বিক জলবায়ুঝুঁকি সূচক ২০২১’ প্রতিবেদনের। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দীর্ঘমেয়াদি বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। অথচ এর জন্য বাংলাদেশ কতটা দায়ী? বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, পৃথিবীর মোট গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের মাত্র শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ নিঃসরিত হয় বাংলাদেশ থেকে। উন্নত দেশগুলো থেকে নিঃসরিত হয় ৮৬ শতাংশ। বাকি ১৪ শতাংশ নিঃসরণের জন্য দায়ী উন্নত দেশগুলো ছাড়া বাংলাদেশের মতো অন্যান্য দেশ। এতে ক্ষতির শিকার আমরা সবাই হব। কেননা গ্রিনহাউস গ্যাস বা নিঃসরিত কার্বনের চলাচলের জন্য কোনো নির্দিষ্ট সীমানা নেই, এক দেশ থেকে অন্য দেশে যেতে ওদের কোনো ভিসা লাগে না। কিন্তু উন্নত দেশগুলোর করা কর্মকাণ্ডের পরিণতি ভোগ করছি আমরা সবাই মিলে। এখানে সৃষ্টিকর্তা কোনো সুবিচার করতে পারেননি। যত পাপ, তত শাস্তি সে আইনও উন্নত দেশগুলোর জন্য প্রযোজ্য নয়।
তবে তারাও যে এসব বুঝছে না তা নয়। এসবে তাদের অনুতাপ যে একেবারে নেই তা নয়, তারা পৃথিবীর জলবায়ুতে গ্রিনহাউস গ্যাস কমানোর জন্য পদক্ষেপ নিতে জলবায়ু তহবিল গঠন করে সেখানে অর্থ দিচ্ছে, নানা রকম কার্যক্রম হাতে নিতে উৎসাহিত করছে। কিন্তু উন্নত দেশগুলো নিজেরা কী করছে গ্রিনহাউস গ্যাস কমানোর জন্য, সেটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কেননা বাকি দেশগুলো সবাই মিলে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিয়ে শতভাগ গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমালেও তাতে কমবে বড়জোর ১৪ শতাংশ, যারা ৮৬ শতাংশ গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের জন্য দায়ী, কার্যক্রমগুলো নিতে হবে তাদেরই সবচেয়ে বেশি। এগুলো বৈশ্বিক বিবেচনা ও পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়।
কিন্তু বাংলাদেশ যে এতে চরম বিপদের ঝুঁকিতে রয়েছে, সে কথা আজ অস্বীকার করার উপায় নেই। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে তাপমাত্রা, লবণাক্ততা ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে আগামী দিনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে কৃষির। এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া না হলে, ২০৫০ সালের মধ্যে শুধু জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণেই এ দেশ জিডিপি হারাবে ২ শতাংশ। বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ২১০০ সাল নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠ সর্বোচ্চ ১ মিটার উঁচু হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, এ কারণে বাংলাদেশের মোট আয়তনের প্রায় ১৮ দশমিক ৩ শতাংশ এলাকা সাগরের পানিতে তলিয়ে যেতে পারে, বাড়বে লবণাক্ততা। ২০০০ সালে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যায়, কক্সবাজার উপকূলে বছরে ৭ দশমিক ৮ মিলিমিটার হারে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে। আশির দশকে ওই কক্সবাজার সৈকতের যেখান দিয়ে আমরা জিপ চালিয়ে ও হেঁটে শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত গিয়েছি, সেসব জায়গা এখন সাগরের গর্ভে চলে গেছে। এখন নতুন রাস্তা মেরিন ড্রাইভ দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। চার দশকে ভোলা দ্বীপের প্রায় ৩ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা সমুদ্রের পানিতে তলিয়ে গেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৬৭ সেন্টিমিটার বাড়লে পুরো সুন্দরবনই নিমজ্জিত হয়ে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। অথচ এই সুন্দরবনই আমাদের প্রাকৃতিক প্রহরী হয়ে অনেক ঝড়-জলোচ্ছ্বাসকে সামাল দিচ্ছে।
একদিকে বাংলাদেশের দক্ষিণে সাগরের পানি বাড়ছে, অন্যদিকে উত্তরে পানি কমছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সূত্রমতে, রাজশাহীর উঁচু বরেন্দ্র এলাকাগুলোয় ১৯৯১ সালে যেখানে মাটির নিচে পানির স্তর ছিল ৪৮ ফুট, সেখানে ২০০০ ও ২০০৭ সালে তা নেমে গেছে ৬২ ও ৯৩ দশমিক ৩৪ ফুট নিচে। বর্তমানে তা আরও নেমেছে। এই যদি অবস্থা হয়, তাহলে মানুষ পানের আর সেচের জন্য পানি পাবে কোথা থেকে? নদী-নালাও তো খরা মৌসুমে শুকিয়ে যায়, পুকুরেও পানি থাকে না। চাঁপাইনবাবগঞ্জে খরার মৌসুমে হেঁটেই এখন কোনো কোনো জায়গায় প্রমত্তা মহানন্দা নদী পার হওয়া যায়। মহানন্দার পাড়ে বসানো সেচযন্ত্রগুলো এখন ধুঁকছে পানির অভাবে। তাহলে চাষাবাদ কী করে হবে? খাদ্য আসবে কোথা থেকে? পানির যেখানে এত সংকট, সেখানে অনেক কৃষকই সেচের জন্য পানির অপচয় করে পরিস্থিতিকে আরও সংকটাপন্ন করে তুলছেন। বাংলাদেশে মোট সেচের পানির মাত্র ৩ শতাংশ সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়।
বাংলাদেশে গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণও আগের চেয়ে বেড়েছে। গড়ে প্রতিবছর এখন ২ হাজার ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হচ্ছে, অঞ্চলভেদে এর পরিমাণ ১ হাজার ২০০ থেকে ৫ হাজার মিলিমিটার। দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ জমি বন্যাপ্রবণ। আশঙ্কা করা হচ্ছে হিমালয়ের বরফ গলনের ফলে এ দেশে ২১০০ সালের মধ্যে নদীপ্রবাহ ১৬ থেকে ৩৬ শতাংশ বাড়তে পারে। ফলে বন্যার ঝুঁকিও বাড়বে। দেশে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ১৫ লাখ হেক্টর জমি বন্যাকবলিত হয়। আগের চেয়ে এখন বেড়েছে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস, অনাবৃষ্টিও। এসব থেকে নিশ্চয়ই আমরা বুঝতে পারছি, এ শতকেই বাংলাদেশ কতটা বিপদের ঝুঁকিতে রয়েছে। এসব গবেষণা তথ্য ও পূর্বাভাস সত্য হলে আমাদের খাদ্য উৎপাদন, খাদ্যনিরাপত্তা, জীবন ও জীবিকা মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়বে। সরকার এই বিপদের ঝুঁকি কমাতে ইতিমধ্যে ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা ২০২২-২০৪১’ গ্রহণ করেছে। দরকার সে অনুযায়ী প্রত্যাশিত অর্জন, তাতে যদি বিপদের ঝুঁকি কিছুটা কমে। তবে সবচেয়ে আগে দরকার এ বিষয়ে আমাদের সবার সচেতনতা।
লেখক: কৃষিবিদ ও প্রকৃতিবিষয়ক লেখক
খবরটা পুরোনো। সেই খবরই আমাদের ঘুম কেড়ে নিচ্ছে। কতটা বিপদে আছি আমরা, সে খবরটা থেকে কিছুটা হলেও বুঝতে পারছি। জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও) তাদের ‘২০২১ সালে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিস্থিতি’ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের চারটি প্রধান সূচক ২০২১ সালে রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। এ চারটি সূচক হলো গ্রিনহাউস গ্যাসের ঘনত্ব, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা, সামুদ্রিক তাপমাত্রা ও মহাসাগরের অম্লতা বৃদ্ধি। এর প্রতিটি সূচকই আগের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। আর এর কারণ হিসেবে সবচেয়ে বেশি দায়ী করা হয়েছে বৈশ্বিক জ্বালানি-প্রক্রিয়াকে। জাতিসংঘ মহাসচিব এই প্রতিবেদনের পর বলেছিলেন, ‘বৈশ্বিক জ্বালানি-প্রক্রিয়া সঠিক পথে নেই এবং তা আমাদের জলবায়ু বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের অবশ্যই জীবাশ্ম জ্বালানি দূষণের ইতি টানতে হবে। একমাত্র আবাসস্থলটিকে নিঃশেষিত করে ফেলতে না চাইলে পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তিতে স্থানান্তরের গতি বাড়াতে হবে।’
বৈশ্বিক জ্বালানি-প্রক্রিয়া ও ব্যবহারের ক্রমাগত বৃদ্ধি সমগ্র মানবজাতিকে এখন বিপর্যয়ের মুখে দাঁড় করিয়েছে। আমরা এখন সর্বকালের মধ্যে উষ্ণতম বছরগুলো পার করছি। সাগরে এখন ‘লা নিনা’ ও ‘এল নিনো’ হতে দেখা যাচ্ছে, যার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে পুরো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে। ডব্লিউএমওপ্রধান পেট্টেরি টালাস বলেছেন, ‘আমাদের জলবায়ু আমাদের চোখের সামনেই বদলে যাচ্ছে।’ আমরা এখন স্পষ্ট খোলা চোখেই দেখতে পারছি, যখন বৃষ্টি হওয়ার কথা না, সে সময়েও কতটা বেশি বৃষ্টি হচ্ছে, চরম শীত আর চরম গরম কীভাবে আমাদের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলছে। এত ঘন ঘন ঝড় আর দাবানল অতীতে আর কখনো দেখা যায়নি।
জলবায়ুর এরূপ পরিবর্তনে কতটা বিপদে আছে বাংলাদেশ? সেটি বুঝতে পাতা ওলটাতে হলো আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা জার্মান ওয়াচের একই বছরে প্রকাশিত ‘বৈশ্বিক জলবায়ুঝুঁকি সূচক ২০২১’ প্রতিবেদনের। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দীর্ঘমেয়াদি বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। অথচ এর জন্য বাংলাদেশ কতটা দায়ী? বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, পৃথিবীর মোট গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের মাত্র শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ নিঃসরিত হয় বাংলাদেশ থেকে। উন্নত দেশগুলো থেকে নিঃসরিত হয় ৮৬ শতাংশ। বাকি ১৪ শতাংশ নিঃসরণের জন্য দায়ী উন্নত দেশগুলো ছাড়া বাংলাদেশের মতো অন্যান্য দেশ। এতে ক্ষতির শিকার আমরা সবাই হব। কেননা গ্রিনহাউস গ্যাস বা নিঃসরিত কার্বনের চলাচলের জন্য কোনো নির্দিষ্ট সীমানা নেই, এক দেশ থেকে অন্য দেশে যেতে ওদের কোনো ভিসা লাগে না। কিন্তু উন্নত দেশগুলোর করা কর্মকাণ্ডের পরিণতি ভোগ করছি আমরা সবাই মিলে। এখানে সৃষ্টিকর্তা কোনো সুবিচার করতে পারেননি। যত পাপ, তত শাস্তি সে আইনও উন্নত দেশগুলোর জন্য প্রযোজ্য নয়।
তবে তারাও যে এসব বুঝছে না তা নয়। এসবে তাদের অনুতাপ যে একেবারে নেই তা নয়, তারা পৃথিবীর জলবায়ুতে গ্রিনহাউস গ্যাস কমানোর জন্য পদক্ষেপ নিতে জলবায়ু তহবিল গঠন করে সেখানে অর্থ দিচ্ছে, নানা রকম কার্যক্রম হাতে নিতে উৎসাহিত করছে। কিন্তু উন্নত দেশগুলো নিজেরা কী করছে গ্রিনহাউস গ্যাস কমানোর জন্য, সেটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কেননা বাকি দেশগুলো সবাই মিলে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিয়ে শতভাগ গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমালেও তাতে কমবে বড়জোর ১৪ শতাংশ, যারা ৮৬ শতাংশ গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের জন্য দায়ী, কার্যক্রমগুলো নিতে হবে তাদেরই সবচেয়ে বেশি। এগুলো বৈশ্বিক বিবেচনা ও পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়।
কিন্তু বাংলাদেশ যে এতে চরম বিপদের ঝুঁকিতে রয়েছে, সে কথা আজ অস্বীকার করার উপায় নেই। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে তাপমাত্রা, লবণাক্ততা ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে আগামী দিনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে কৃষির। এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া না হলে, ২০৫০ সালের মধ্যে শুধু জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণেই এ দেশ জিডিপি হারাবে ২ শতাংশ। বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ২১০০ সাল নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠ সর্বোচ্চ ১ মিটার উঁচু হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, এ কারণে বাংলাদেশের মোট আয়তনের প্রায় ১৮ দশমিক ৩ শতাংশ এলাকা সাগরের পানিতে তলিয়ে যেতে পারে, বাড়বে লবণাক্ততা। ২০০০ সালে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যায়, কক্সবাজার উপকূলে বছরে ৭ দশমিক ৮ মিলিমিটার হারে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে। আশির দশকে ওই কক্সবাজার সৈকতের যেখান দিয়ে আমরা জিপ চালিয়ে ও হেঁটে শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত গিয়েছি, সেসব জায়গা এখন সাগরের গর্ভে চলে গেছে। এখন নতুন রাস্তা মেরিন ড্রাইভ দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। চার দশকে ভোলা দ্বীপের প্রায় ৩ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা সমুদ্রের পানিতে তলিয়ে গেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৬৭ সেন্টিমিটার বাড়লে পুরো সুন্দরবনই নিমজ্জিত হয়ে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। অথচ এই সুন্দরবনই আমাদের প্রাকৃতিক প্রহরী হয়ে অনেক ঝড়-জলোচ্ছ্বাসকে সামাল দিচ্ছে।
একদিকে বাংলাদেশের দক্ষিণে সাগরের পানি বাড়ছে, অন্যদিকে উত্তরে পানি কমছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সূত্রমতে, রাজশাহীর উঁচু বরেন্দ্র এলাকাগুলোয় ১৯৯১ সালে যেখানে মাটির নিচে পানির স্তর ছিল ৪৮ ফুট, সেখানে ২০০০ ও ২০০৭ সালে তা নেমে গেছে ৬২ ও ৯৩ দশমিক ৩৪ ফুট নিচে। বর্তমানে তা আরও নেমেছে। এই যদি অবস্থা হয়, তাহলে মানুষ পানের আর সেচের জন্য পানি পাবে কোথা থেকে? নদী-নালাও তো খরা মৌসুমে শুকিয়ে যায়, পুকুরেও পানি থাকে না। চাঁপাইনবাবগঞ্জে খরার মৌসুমে হেঁটেই এখন কোনো কোনো জায়গায় প্রমত্তা মহানন্দা নদী পার হওয়া যায়। মহানন্দার পাড়ে বসানো সেচযন্ত্রগুলো এখন ধুঁকছে পানির অভাবে। তাহলে চাষাবাদ কী করে হবে? খাদ্য আসবে কোথা থেকে? পানির যেখানে এত সংকট, সেখানে অনেক কৃষকই সেচের জন্য পানির অপচয় করে পরিস্থিতিকে আরও সংকটাপন্ন করে তুলছেন। বাংলাদেশে মোট সেচের পানির মাত্র ৩ শতাংশ সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়।
বাংলাদেশে গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণও আগের চেয়ে বেড়েছে। গড়ে প্রতিবছর এখন ২ হাজার ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হচ্ছে, অঞ্চলভেদে এর পরিমাণ ১ হাজার ২০০ থেকে ৫ হাজার মিলিমিটার। দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ জমি বন্যাপ্রবণ। আশঙ্কা করা হচ্ছে হিমালয়ের বরফ গলনের ফলে এ দেশে ২১০০ সালের মধ্যে নদীপ্রবাহ ১৬ থেকে ৩৬ শতাংশ বাড়তে পারে। ফলে বন্যার ঝুঁকিও বাড়বে। দেশে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ১৫ লাখ হেক্টর জমি বন্যাকবলিত হয়। আগের চেয়ে এখন বেড়েছে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস, অনাবৃষ্টিও। এসব থেকে নিশ্চয়ই আমরা বুঝতে পারছি, এ শতকেই বাংলাদেশ কতটা বিপদের ঝুঁকিতে রয়েছে। এসব গবেষণা তথ্য ও পূর্বাভাস সত্য হলে আমাদের খাদ্য উৎপাদন, খাদ্যনিরাপত্তা, জীবন ও জীবিকা মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়বে। সরকার এই বিপদের ঝুঁকি কমাতে ইতিমধ্যে ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা ২০২২-২০৪১’ গ্রহণ করেছে। দরকার সে অনুযায়ী প্রত্যাশিত অর্জন, তাতে যদি বিপদের ঝুঁকি কিছুটা কমে। তবে সবচেয়ে আগে দরকার এ বিষয়ে আমাদের সবার সচেতনতা।
লেখক: কৃষিবিদ ও প্রকৃতিবিষয়ক লেখক
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে