Ajker Patrika

নির্মম হত্যাযজ্ঞের সাক্ষী ফয়জাবাদ বধ্যভূমি

মনিরুল ইসলাম শামিম, বাহুবল (হবিগঞ্জ)
আপডেট : ০৭ মার্চ ২০২২, ১৩: ৪২
নির্মম হত্যাযজ্ঞের সাক্ষী ফয়জাবাদ বধ্যভূমি

মহান মুক্তিযুদ্ধে বাহুবলবাসীর অবদানের সাক্ষী ‘ফয়জাবাদ বধ্যভূমি’। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে নিহতদের যেখানে দেওয়া হয়েছিল গণকবর। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা পাহাড়ের বুকে এ স্থানটি কেবল অযত্নে পড়ে থাকা একখণ্ড ইতিহাস।

প্রতিবছর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে এই স্মৃতিস্তম্ভে স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে শ্রদ্ধা জানানো হয়। তবে বছরের অন্য দিনগুলোতে বধ্যভূমি থাকে অযত্ন আর অবহেলায়। এতে বর্তমান প্রজন্ম এ স্থানটির গুরুত্ব ও ইতিহাস নিয়ে রয়েছে অন্ধকারে।

মুক্তিযুদ্ধের তথ্যে জানা যায়, ১৯৭১ সালে উপজেলার ফয়েজাবাদ হিলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী দেড় শতাধিক মুক্তিযোদ্ধাকে নৃশংসভাবে হত্যা করে গণকবর দেয়। হবিগঞ্জের চুনারুঘাট, মাধবপুর ও পাশের জেলা মৌলভীবাজার থেকে মুক্তিবাহিনী ও স্থানীয়দের ধরে এনে এ বধ্যভূমিতে হত্যা করত।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের মতে, এখানে ১৫০-এর অধিক মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করা হয়েছিল। এ ছাড়া এই ফয়েজাবাদ হিলে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে পাকিস্তানি বাহিনীর কয়েকবার সম্মুখযুদ্ধ হয়।

উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে এ বধ্যভূমির অবস্থান। এ বধ্যভূমিকে স্মরণীয় করে রাখতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে গণপূর্ত অধিদপ্তর স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়।

২০০৫ সালে ১ একর ভূমির ওপর বধ্যভূমির নির্মাণকাজ শুরু করে গণপূর্ত অধিদপ্তর। ২০০৬ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর এটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়।

এদিকে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের অনুরোধে ২০১৯ সালে প্রশাসন বয়স্ক দর্শনার্থীদের বধ্যভূমির উঁচু টিলায় ওঠার জন্য সিঁড়ির একপাশে রেলিং নির্মাণ করে। সেই রেলিংটির অধিকাংশ জায়গা ভেঙে মাটিতে পড়ে আছে।

বিশেষ করে শহীদদের স্মরণে এ স্মৃতিস্তম্ভের আধুনিকায়নের কাজ এখনো সম্পন্ন হয়নি। হবিগঞ্জ থেকে মৌলভীবাজার সড়কপথে যেতে এ বধ্যভূমির ফলকটি সবার নজর কাড়ে। ফয়েজাবাদের গা ছমছম করা পাহাড়ের নির্জনতা কারণেই হয়তো পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এ স্থানকে হত্যাযজ্ঞের নিরাপদ হিসেবে বেছে নিয়েছিল।

বাহুবল উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার মো. নূর মিয়া বলেন, একসময় ফয়েজাবাদ পাহাড় ছিল গহিন অরণ্যে ঘেরা নীরব এলাকা। এ পাহাড়ের বেশির ভাগ স্থানে বাঘের ভয়ে মানুষ প্রবেশ করত না।

ফলে জনশূন্য এ পাহাড়ি স্থানটিকেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী হত্যাকাণ্ডের পর গণকবর দেওয়ার স্থান হিসেবে বেছে নেয়।

কমান্ডার মো. নূর মিয়া আরও বলেন, এ বধ্যভূমিটি উপজেলার ঐতিহাসিক স্থান। অথচ বধ্যভূমিটি বছরব্যাপী অযত্ন ও অবহেলায় পড়ে থাকে। এ স্থানটিকে ঘিরে পার্ক নির্মাণ করা হলে দর্শনার্থীদের আনাগোনা বাড়বে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মহুয়া শারমিন ফাতেমা বলেন, ‘বধ্যভূমিতে ইতিমধ্যে রেলিং ও সোলার স্থাপনসহ একাধিক উন্নয়নকাজ করা হয়েছে। এ ছাড়া এই মুহূর্তে নতুন কোনো পরিকল্পনা আমাদের হাতে নেই। পরবর্তীকালে মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ পেলে আমরা দ্রুত সেই কাজগুলোও শেষ করব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত