মহিউদ্দিন খান মোহন
‘যে শিশু ভূমিষ্ঠ হল আজ রাত্রে/ তার মুখে খবর পেলুম;/ সে পেয়েছে ছাড়পত্র এক,/ নতুন বিশ্বের দ্বারে তাই ব্যক্ত করে অধিকার/ জন্মসূত্রে সুতীব্র চিৎকারে।/ খর্বদেহ নিঃসহায়, তবু তার মুষ্টিবদ্ধ হাত/ উত্তোলিত, উদ্ভাসিত/ কী এক দুর্বোধ্য প্রতিজ্ঞায়।’ কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তাঁর কালজয়ী কবিতা ‘ছাড়পত্রে’ যে শিশুটির জন্মকথা বলেছেন, তা যেন প্রতিফলিত হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মধ্যে। ১৯২০ সালে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার এক কুটিরে নবজাত এক শিশু সুতীব্র চিৎকারে এই আলো-বাতাসের পৃথিবীতে তার আগমনবার্তা ঘোষণা করেছিল। সেদিন ওই শিশুর চিৎকারের ভাষা সেখানে উপস্থিত কেউ বুঝতে পারেনি। শিশুটি যেন সুকান্তের সেই শিশুর মতো তীব্র চিৎকারে সব অন্যায়-অবিচার, শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের কথা ব্যক্ত করেছিল। সেদিন কি কেউ কল্পনা করতে পেরেছিল, ওই শিশুটি একদিন বাংলাদেশের শোষিত-বঞ্চিত মানুষের ত্রাণকর্তারূপে আবির্ভূত হবে?
মানুষ একসময় যা কল্পনা করতে পারে না, অনেক সময় সেটাই পরিণত হয় রূঢ় বাস্তবে। বঙ্গবন্ধুর ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে। আজীবন সংগ্রামী বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবনের প্রতিটি দিন, প্রতিটি মুহূর্ত ব্যয় করেছেন এ দেশ ও জাতির অধিকার আদায়ের সংগ্রামে। জন্মের সময় তিনি যে ছাড়পত্র নিয়ে এসেছিলেন, তা বাস্তবায়িত হয়েছিল তাঁর পঞ্চাশ বছর বয়সে। তিনি অধিকারহারা বাঙালিকে নেতৃত্ব দিয়ে নিজস্ব স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। বাংলাদেশ নামের যে জাতি-রাষ্ট্র আজ প্রতিষ্ঠিত, এর মূল স্থপতি তিনি। এ জন্য তাঁকে পাকিস্তানি শাসকচক্রের রোষানলে পড়ে জীবনের প্রায় তেরো বছর কাটাতে হয়েছে কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে। এমনকি বিচারের নামে প্রহসন করে তাঁকে ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থাও চূড়ান্ত করে ফেলেছিল পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। কিন্তু তারা প্রতিবারই ব্যর্থ হয়েছে।
আমাদের এই স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় অনেক দেশবরেণ্য নেতার অবদান রয়েছে। ব্রিটিশ শাসনমুক্ত পাকিস্তানের পূর্বাংশ হিসেবে আমরা যে স্বাধীনতা পেয়েছিলাম, তা পূর্ণ স্বাধীনতা ছিল না। প্রভু বদল হয়েছিল মাত্র। তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানি শাসক-শোষকচক্র পূর্ব বাংলাকে তাদের উপনিবেশ বানিয়ে স্বার্থ হাসিলে তৎপর ছিল। এ দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারকে খর্ব করে ওরা কায়েম করেছিল স্বৈরতান্ত্রিক শাসন। সেই ঔপনিবেশিক শাসন থেকে জাতিকে মুক্ত করতে প্রাতঃস্মরণীয় যে কজন নেতা যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করেছিলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁদের মধ্যে অনন্য। তাঁর চেয়ে অভিজ্ঞ, বয়োজ্যেষ্ঠ অনেক নেতাই পূর্ব বাংলার মানুষের মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছেন, কিন্তু সময়োচিত সঠিক সিদ্ধান্ত ও ভূমিকার জন্য তিনি তাঁদের সবাইকে টপকে গেছেন। সময়ের বরপুত্র ছিলেন তিনি। সময় তাঁকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়। বাংলাদেশ নামের জাতি-রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তিনি হয়েছেন ইতিহাসের কিংবদন্তি।
একটি জাতির ইতিহাস বিনির্মাণের বাঁকে বাঁকে একেকজন মহান নেতার অবদান থাকে। তাঁরা একেক পর্যায়ে জাতিকে নেতৃত্ব দিয়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে এগিয়ে নিয়ে যান। আমাদের ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে। শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁরা একেক পর্যায়ে এই ভূখণ্ডের নির্যাতিত মানুষের কণ্ঠস্বর হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন, নেতৃত্ব দিয়েছেন। তবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার কথা সরাসরি বলেছেন দুজন। এক. মওলানা ভাসানী, দুই. শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৫৭ সালে কাগমারী সম্মেলনে মওলানা ভাসানী পশ্চিম পাকিস্তানিদের উদ্দেশে ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলে যে সংগ্রামের সূচনা করেছিলেন, ১৯৭১-এ এসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হাতে তা পূর্ণতা লাভ করে।
আজকাল কাউকে কাউকে আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে কুটতর্কে লিপ্ত হতে দেখা যায়। এসব তর্কে জাতীয় অনেক বরেণ্য নেতাকে হেয়প্রতিপন্ন করার প্রয়াস লক্ষণীয়। কেউ কেউ নিজ দলীয় নেতাকে সর্বোচ্চে স্থান দিতে অপরাপর নেতাদের অপাঙ্ক্তেয় করে রাখতে চান। এটা তাঁরা করেন দলীয় সংকীর্ণতা এবং ইতিহাসকে কুক্ষিগত করার দুরভিসন্ধি থেকে। তারা হয়তো বিস্মৃত হন যে ইতিহাসে কাউকে কলমের খোঁচায় নায়ক বা ভিলেন বানানো যায় না। যার যার ভূমিকাই তাকে ইতিহাসে অমর করে রাখে। সেখানে চাইলেই কাউকে স্থানচ্যুত করা সম্ভব নয়। জাতির পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস রচনা করতে গেলে যার যতটুকু ভূমিকা, যতটুকু অবদান তা স্বীকার করতেই হবে। বাংলাদেশের ইতিহাস লিখতে গেলে ‘শেখ মুজিব’ ছাড়া তা কখনোই পূর্ণতা পাবে না।
তাই বলে কি বঙ্গবন্ধু সমালোচনার ঊর্ধ্বে? অবশ্যই নয়। কারণ তিনি তো রক্ত-মাংসেরই মানুষ ছিলেন। মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি ভুল করা। বঙ্গবন্ধু তাঁর নাতিদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে হয়তো কখনো কখনো ভুল করেছেন। তাঁর অবর্তমানে আমরা সেসব নিয়ে পর্যালোচনা করতেই পারি। তা থেকে আগামী দিনে এগিয়ে যাওয়ার দিকনির্দেশনা পাওয়া যেতে পারে। তবে তা হতে হবে যৌক্তিক এবং সশ্রদ্ধ চিত্তে। বঙ্গবন্ধু তাঁর সীমাবদ্ধতার কথা জানতেন এবং তিনি নিজেই তা স্বীকার করেছেন তাঁর শিক্ষকের কাছে। প্রিন্সিপাল সাইদুর রহমান (সম্পাদক শফিক রেহমানের বাবা) ছিলেন কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে বঙ্গবন্ধুর সরাসরি শিক্ষক। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু যখন প্রধানমন্ত্রী, প্রায়ই গাড়ি পাঠিয়ে প্রিয় শিক্ষককে তিনি গণভবনে নিয়ে যেতেন। শিক্ষাগুরুর সঙ্গে দেশের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতেন, পরামর্শ চাইতেন। সাইদুর রহমান তাঁর ‘শতাব্দীর স্মৃতি’ গ্রন্থে সেসবের অনেক বিবরণ তুলে ধরেছেন। একদিন ছাত্র শেখ মুজিব শিক্ষক সাইদুর রহমানের কাছে ভালোভাবে দেশ পরিচালনার জন্য ১০০ জন ভালোমানুষের একটি তালিকা চাইলেন। উদ্দেশ্য, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তোলা। কিন্তু শিক্ষক সেই তালিকা তাঁর প্রিয় ছাত্রকে দিতে পারেননি। ১৯৭৪ সালে ভয়াবহ বন্যাসহ নানা কারণে দেশে দুর্ভিক্ষ নেমে আসে। এমনিই সময়ে একদিন ছাত্র তাঁর শিক্ষককে ডেকে নিলেন গণভবনে। দেশের সমস্যা ও ক্রমবর্ধমান দুর্নীতি নিয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে ছাত্র তাঁর প্রিয় শিক্ষককে অনুযোগসহকারে বললেন, ‘স্যার, মনে আছে একবার আপনার কাছে এক শটি ভালো মানুষের তালিকা চেয়েছিলাম। আপনি আমাকে ভালো মানুষের তালিকাটা কিন্তু আজও দিতে পারেননি।’ এরপর সাইদুর রহমান স্বগতোক্তি করেছেন, ‘সত্যিই সেদিন মুজিবের কথায় আমিও স্বীকার করেছিলাম, দেশে ভালো মানুষের বড় অভাব।’ (পৃষ্ঠা: ৮৫)
ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণ থেকে এ দেশকে মুক্ত করার ছাড়পত্র হাতেই পৃথিবীতে এসেছিলেন বঙ্গবন্ধু। মুক্তও করেছিলেন। কিন্তু মধ্য আগস্টের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড তাঁর গতিপথ রুদ্ধ করে দিয়েছিল। ফলে তিনি তাঁর আজীবন লালিত স্বপ্ন সোনার বাংলা গড়ে যেতে পারেননি। কেন পারেননি, তার কিছুটা বিধৃত হয়েছে প্রিন্সিপাল সাইদুর রহমানের লেখায়। তারপরও এ দেশের ইতিহাসে তাঁর নাম স্বর্ণাক্ষরেই লেখা থাকবে।
লেখক: সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
‘যে শিশু ভূমিষ্ঠ হল আজ রাত্রে/ তার মুখে খবর পেলুম;/ সে পেয়েছে ছাড়পত্র এক,/ নতুন বিশ্বের দ্বারে তাই ব্যক্ত করে অধিকার/ জন্মসূত্রে সুতীব্র চিৎকারে।/ খর্বদেহ নিঃসহায়, তবু তার মুষ্টিবদ্ধ হাত/ উত্তোলিত, উদ্ভাসিত/ কী এক দুর্বোধ্য প্রতিজ্ঞায়।’ কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য তাঁর কালজয়ী কবিতা ‘ছাড়পত্রে’ যে শিশুটির জন্মকথা বলেছেন, তা যেন প্রতিফলিত হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মধ্যে। ১৯২০ সালে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার এক কুটিরে নবজাত এক শিশু সুতীব্র চিৎকারে এই আলো-বাতাসের পৃথিবীতে তার আগমনবার্তা ঘোষণা করেছিল। সেদিন ওই শিশুর চিৎকারের ভাষা সেখানে উপস্থিত কেউ বুঝতে পারেনি। শিশুটি যেন সুকান্তের সেই শিশুর মতো তীব্র চিৎকারে সব অন্যায়-অবিচার, শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের কথা ব্যক্ত করেছিল। সেদিন কি কেউ কল্পনা করতে পেরেছিল, ওই শিশুটি একদিন বাংলাদেশের শোষিত-বঞ্চিত মানুষের ত্রাণকর্তারূপে আবির্ভূত হবে?
মানুষ একসময় যা কল্পনা করতে পারে না, অনেক সময় সেটাই পরিণত হয় রূঢ় বাস্তবে। বঙ্গবন্ধুর ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে। আজীবন সংগ্রামী বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবনের প্রতিটি দিন, প্রতিটি মুহূর্ত ব্যয় করেছেন এ দেশ ও জাতির অধিকার আদায়ের সংগ্রামে। জন্মের সময় তিনি যে ছাড়পত্র নিয়ে এসেছিলেন, তা বাস্তবায়িত হয়েছিল তাঁর পঞ্চাশ বছর বয়সে। তিনি অধিকারহারা বাঙালিকে নেতৃত্ব দিয়ে নিজস্ব স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। বাংলাদেশ নামের যে জাতি-রাষ্ট্র আজ প্রতিষ্ঠিত, এর মূল স্থপতি তিনি। এ জন্য তাঁকে পাকিস্তানি শাসকচক্রের রোষানলে পড়ে জীবনের প্রায় তেরো বছর কাটাতে হয়েছে কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে। এমনকি বিচারের নামে প্রহসন করে তাঁকে ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থাও চূড়ান্ত করে ফেলেছিল পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। কিন্তু তারা প্রতিবারই ব্যর্থ হয়েছে।
আমাদের এই স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় অনেক দেশবরেণ্য নেতার অবদান রয়েছে। ব্রিটিশ শাসনমুক্ত পাকিস্তানের পূর্বাংশ হিসেবে আমরা যে স্বাধীনতা পেয়েছিলাম, তা পূর্ণ স্বাধীনতা ছিল না। প্রভু বদল হয়েছিল মাত্র। তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানি শাসক-শোষকচক্র পূর্ব বাংলাকে তাদের উপনিবেশ বানিয়ে স্বার্থ হাসিলে তৎপর ছিল। এ দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারকে খর্ব করে ওরা কায়েম করেছিল স্বৈরতান্ত্রিক শাসন। সেই ঔপনিবেশিক শাসন থেকে জাতিকে মুক্ত করতে প্রাতঃস্মরণীয় যে কজন নেতা যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করেছিলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁদের মধ্যে অনন্য। তাঁর চেয়ে অভিজ্ঞ, বয়োজ্যেষ্ঠ অনেক নেতাই পূর্ব বাংলার মানুষের মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছেন, কিন্তু সময়োচিত সঠিক সিদ্ধান্ত ও ভূমিকার জন্য তিনি তাঁদের সবাইকে টপকে গেছেন। সময়ের বরপুত্র ছিলেন তিনি। সময় তাঁকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়। বাংলাদেশ নামের জাতি-রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তিনি হয়েছেন ইতিহাসের কিংবদন্তি।
একটি জাতির ইতিহাস বিনির্মাণের বাঁকে বাঁকে একেকজন মহান নেতার অবদান থাকে। তাঁরা একেক পর্যায়ে জাতিকে নেতৃত্ব দিয়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে এগিয়ে নিয়ে যান। আমাদের ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে। শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁরা একেক পর্যায়ে এই ভূখণ্ডের নির্যাতিত মানুষের কণ্ঠস্বর হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন, নেতৃত্ব দিয়েছেন। তবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার কথা সরাসরি বলেছেন দুজন। এক. মওলানা ভাসানী, দুই. শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৫৭ সালে কাগমারী সম্মেলনে মওলানা ভাসানী পশ্চিম পাকিস্তানিদের উদ্দেশে ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলে যে সংগ্রামের সূচনা করেছিলেন, ১৯৭১-এ এসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হাতে তা পূর্ণতা লাভ করে।
আজকাল কাউকে কাউকে আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে কুটতর্কে লিপ্ত হতে দেখা যায়। এসব তর্কে জাতীয় অনেক বরেণ্য নেতাকে হেয়প্রতিপন্ন করার প্রয়াস লক্ষণীয়। কেউ কেউ নিজ দলীয় নেতাকে সর্বোচ্চে স্থান দিতে অপরাপর নেতাদের অপাঙ্ক্তেয় করে রাখতে চান। এটা তাঁরা করেন দলীয় সংকীর্ণতা এবং ইতিহাসকে কুক্ষিগত করার দুরভিসন্ধি থেকে। তারা হয়তো বিস্মৃত হন যে ইতিহাসে কাউকে কলমের খোঁচায় নায়ক বা ভিলেন বানানো যায় না। যার যার ভূমিকাই তাকে ইতিহাসে অমর করে রাখে। সেখানে চাইলেই কাউকে স্থানচ্যুত করা সম্ভব নয়। জাতির পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস রচনা করতে গেলে যার যতটুকু ভূমিকা, যতটুকু অবদান তা স্বীকার করতেই হবে। বাংলাদেশের ইতিহাস লিখতে গেলে ‘শেখ মুজিব’ ছাড়া তা কখনোই পূর্ণতা পাবে না।
তাই বলে কি বঙ্গবন্ধু সমালোচনার ঊর্ধ্বে? অবশ্যই নয়। কারণ তিনি তো রক্ত-মাংসেরই মানুষ ছিলেন। মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি ভুল করা। বঙ্গবন্ধু তাঁর নাতিদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে হয়তো কখনো কখনো ভুল করেছেন। তাঁর অবর্তমানে আমরা সেসব নিয়ে পর্যালোচনা করতেই পারি। তা থেকে আগামী দিনে এগিয়ে যাওয়ার দিকনির্দেশনা পাওয়া যেতে পারে। তবে তা হতে হবে যৌক্তিক এবং সশ্রদ্ধ চিত্তে। বঙ্গবন্ধু তাঁর সীমাবদ্ধতার কথা জানতেন এবং তিনি নিজেই তা স্বীকার করেছেন তাঁর শিক্ষকের কাছে। প্রিন্সিপাল সাইদুর রহমান (সম্পাদক শফিক রেহমানের বাবা) ছিলেন কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে বঙ্গবন্ধুর সরাসরি শিক্ষক। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু যখন প্রধানমন্ত্রী, প্রায়ই গাড়ি পাঠিয়ে প্রিয় শিক্ষককে তিনি গণভবনে নিয়ে যেতেন। শিক্ষাগুরুর সঙ্গে দেশের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতেন, পরামর্শ চাইতেন। সাইদুর রহমান তাঁর ‘শতাব্দীর স্মৃতি’ গ্রন্থে সেসবের অনেক বিবরণ তুলে ধরেছেন। একদিন ছাত্র শেখ মুজিব শিক্ষক সাইদুর রহমানের কাছে ভালোভাবে দেশ পরিচালনার জন্য ১০০ জন ভালোমানুষের একটি তালিকা চাইলেন। উদ্দেশ্য, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তোলা। কিন্তু শিক্ষক সেই তালিকা তাঁর প্রিয় ছাত্রকে দিতে পারেননি। ১৯৭৪ সালে ভয়াবহ বন্যাসহ নানা কারণে দেশে দুর্ভিক্ষ নেমে আসে। এমনিই সময়ে একদিন ছাত্র তাঁর শিক্ষককে ডেকে নিলেন গণভবনে। দেশের সমস্যা ও ক্রমবর্ধমান দুর্নীতি নিয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে ছাত্র তাঁর প্রিয় শিক্ষককে অনুযোগসহকারে বললেন, ‘স্যার, মনে আছে একবার আপনার কাছে এক শটি ভালো মানুষের তালিকা চেয়েছিলাম। আপনি আমাকে ভালো মানুষের তালিকাটা কিন্তু আজও দিতে পারেননি।’ এরপর সাইদুর রহমান স্বগতোক্তি করেছেন, ‘সত্যিই সেদিন মুজিবের কথায় আমিও স্বীকার করেছিলাম, দেশে ভালো মানুষের বড় অভাব।’ (পৃষ্ঠা: ৮৫)
ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণ থেকে এ দেশকে মুক্ত করার ছাড়পত্র হাতেই পৃথিবীতে এসেছিলেন বঙ্গবন্ধু। মুক্তও করেছিলেন। কিন্তু মধ্য আগস্টের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড তাঁর গতিপথ রুদ্ধ করে দিয়েছিল। ফলে তিনি তাঁর আজীবন লালিত স্বপ্ন সোনার বাংলা গড়ে যেতে পারেননি। কেন পারেননি, তার কিছুটা বিধৃত হয়েছে প্রিন্সিপাল সাইদুর রহমানের লেখায়। তারপরও এ দেশের ইতিহাসে তাঁর নাম স্বর্ণাক্ষরেই লেখা থাকবে।
লেখক: সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
৯ ঘণ্টা আগেঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৪ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৪ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৪ দিন আগে