গ্রন্থাগার

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৭: ৫২

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘লাইব্রেরি’ প্রবন্ধে লিখেছিলেন, ‘মহাসমুদ্রের শত বৎসরের কল্লোল কেউ যদি এমন করিয়া বাঁধিয়া রাখিতে পারিত যে, সে ঘুমাইয়া পড়া শিশুটির মতো চুপ করিয়া থাকিত, তবে সেই নীরব মহাশব্দের সহিত এই পাঠাগারের তুলনা হইত। এখানে ভাষা চুপ করিয়া আছে, প্রবাহ স্থির হইয়া আছে। মানবাত্মার অমর আলোক কাল অক্ষরের শৃঙ্খলে কাগজের কারাগারে বাঁধা পড়িয়া আছে।’ তাঁর এই বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, একটি গ্রন্থাগার আমাদের সামাজিক জীবনে কত গুরুত্বপূর্ণ। সমাজ-সভ্যতাকে এগিয়ে নিতে বইয়ের ভূমিকা অন্য কোনো কিছুর সঙ্গে তুলনা করা যায় না। একটি সমাজকাঠামো বদলে দিতে পারে একটি সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার।

কোনো একটি এলাকার গ্রন্থাগারের ভূমিকার কথা বলে শেষ করা যাবে না। তবে টাঙ্গাইলের মধুপুরের গণগ্রন্থাগার যে ২৯ বছর ধরে বন্ধ পড়ে আছে, তা দুঃখজনক। এ নিয়ে আজকের পত্রিকায় মঙ্গলবার সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

সংবাদ সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৫ সালে মধুপুর গণগ্রন্থাগারের যাত্রা শুরু হয়, তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উদ্যোগে। কিন্তু তিনি বদলি হওয়ার পরেই এর ওপর যেন শনির দশা পড়ে! ২৯ বছরে তিনবার স্থান বদল হলেও এটি কাঙ্ক্ষিত গ্রন্থাগারের মর্যাদা পায়নি। আশ্চর্যের বিষয় হলো, গ্রন্থাগারটি উপজেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত এবং সরকারি বরাদ্দ পেলেও পাঠকদের জন্য এর দরজা এখনো বন্ধ রয়েছে!

ইন্টারনেটের এই সময়ে মানুষ অবসরের বেশির ভাগটাই ব্যয় করছে সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যমে। বিশেষ করে উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েরা এই মাধ্যমে নিমগ্ন হয়ে থাকছে। শুধু সময় ব্যয়ই নয়, ক্ষতিকর অনেক সাইট বা অ্যাপে যুক্ত হয়ে বিপথগামী হয়ে উঠছে অনেকে। এ সময়টাতে তারা যদি গ্রন্থাগারের মাধ্যমে বই পড়ায় মনোনিবেশ করত, তাহলে তাদের বিপথগামী না হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। পাঠাভ্যাসের মাধ্যমে খারাপ নেশা থেকে তাদের বের করে এনে উন্নত মনের মানুষে পরিণত করা সম্ভব ছিল।

দেশের প্রায় অনেক জায়গায় সরকারি গ্রন্থাগার রয়েছে। কিন্তু এগুলো ভালোভাবে চলার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগের ঘাটতি রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিবছর এসব গ্রন্থাগারে বই ও অর্থ অনুদান দেওয়া হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, তার পরেও দেশের অনেক জায়গায় এই সরকারি গ্রন্থাগারগুলো ভালোভাবে চলছে না। প্রশাসনিক অবহেলা এর অন্যতম কারণ।

৫ ফেব্রুয়ারি ছিল জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস। জাতীয়ভাবে ২০১৭ সাল থেকে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। জনগণের মধ্যে পাঠাভ্যাস গড়ে তোলার পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি গ্রন্থাগারগুলোর কার্যক্রম আরও গতিশীল করতে দেশব্যাপী দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে। কিন্তু দিবসটি এলে আমরা বরং দেশের বিভিন্ন গ্রন্থাগারের জীর্ণ দশাই দেখতে পাই।

মধুপুর গণগ্রন্থাগারটি এত বছর ধরে বন্ধ থাকার অন্যতম কারণ হলো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অবহেলা। তাই বন্ধ গ্রন্থাগার চালু করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ত্বরিত পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন, সেটাই আমাদের একান্ত চাওয়া।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত