স্বপ্না রেজা
সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের ৩১৭ নম্বর রুমে স্বামীকে আটকে রেখে গৃহবধূকে হলের পাশের জঙ্গলে নিয়ে গণধর্ষণ করা হয়েছে। জাবিতে এমন ঘটনা নতুন নয়, এর আগেও নারী শিক্ষার্থীরা একাধারে শিক্ষক ও ছাত্রদের দ্বারা যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এমন নৃশংস, জঘন্যতম ঘটনার প্রতিবাদে ও অপরাধীদের বিচারের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা অসংখ্যবার জাবিতে বিক্ষোভ করেছেন। লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচি পালন করেছেন। কিন্তু অপরাধীদের তেমন উল্লেখযোগ্য বা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়েছে বলে জানা যায়নি। এর আগে ধর্ষক ও অন্যান্য অপরাধীর বিচার এবং শাস্তি না হওয়ায় জাবিতে পুনরায় ধর্ষণের মতো পাশবিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি বলেই অনেকে মনে করে।
যা-ই হোক, জাবির সাম্প্রতিক ঘটনার দুজন প্রধান আসামিকে ধরা হয়েছে বলে গণমাধ্যম সূত্রে আমরা জানতে পারি। যাঁদের পরিচয় হলো একজন জাবির সাবেক ছাত্র ও একজন বহিরাগত, যাঁদের রাজনৈতিক পরিচয় আছে, অর্থাৎ তাঁরা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের সদস্য। ছাত্রজীবন শেষ হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে থেকে তাঁরা ছাত্ররাজনীতি করেন। সেই সুবাদে তাঁদের আছে দাপট, প্রভাব ও প্রতাপ।
গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, প্রায় দুই হাজার সাবেক শিক্ষার্থী হলে অবস্থান করছেন, যেখানে চলমান শিক্ষাকার্যক্রমে যুক্ত থেকেও অনেক শিক্ষার্থী হলে অবস্থান করার সুযোগ পান না। ছাত্ররাজনীতিকে কতিপয় ব্যক্তি যে কলুষিত করে চলেছেন শৃঙ্খলাবর্জিত কার্যকলাপে, অনৈতিক আচরণে এবং তাঁদের কারণে যে শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশের পবিত্রতা ও নিরাপত্তা বিনষ্ট হচ্ছে, তা যেন দেখার কেউ নেই। একজন অভিভাবক আতঙ্কিত হয়ে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় তো এখন ধর্ষণের উত্তম জায়গা, যেখানে ধর্ষক নিরাপদে নারী শিক্ষার্থী কিংবা নারী শিক্ষাকর্মীকে নির্বিঘ্নে ধর্ষণ করতে পারে; বিশেষ কারণে অনেক ক্ষেত্রেই ধর্ষক শিক্ষক কিংবা ধর্ষক ছাত্ররা সব সময় থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে। সম্ভবত সে কারণেই অপরাধ করার প্রবণতা বাড়ে, কমে না।’ এটা বলাবাহুল্য যে একটা অন্যায় বা অনিয়ম হাজারটা অন্যায়ের কারণ হতে পারে। ছাত্রত্ব না থাকার পরও যাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে অবস্থান করতে পারেন, এই অন্যায় বা অনিয়মবোধই তাঁকে ধর্ষণ, মাদক কারবার বা চাঁদাবাজির মতো অপরাধ করতে সহায়তা করে থাকে।
নিয়মবহির্ভূতভাবে যাঁরা হলে অবস্থান করেন, তাঁরা কাদের প্রশ্রয়, মদদ পেয়ে অবস্থান করেন, ধর্ষণের বিচার না হওয়ার মতোই সেই প্রশ্নের জবাবও মেলে না।
জাবির ঘটনার পরপরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এক অধ্যাপকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও মানসিক নিপীড়নের অভিযোগ করেছেন একই বিভাগের একজন নারী শিক্ষার্থী। ওই শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মো. মাকসুদুর রহমানের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়ে বলেছেন, ২০২২ সালের বিভিন্ন সময়ে একাডেমিক বিষয় নিয়ে কথাবার্তার একপর্যায়ে অভিযুক্ত শিক্ষক তাঁকে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক করার প্রস্তাব দেন। তিনি শিক্ষার্থীর সঙ্গে অন্তরঙ্গ বিষয় নিয়ে কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং একপর্যায়ে তাঁর শারীরিক অবয়ব নিয়ে নোংরা মন্তব্য করতে শুরু করেন। এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষকের বিচার চেয়ে প্রতিবাদ সভা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়ন। জানা গেছে, অভিযুক্ত শিক্ষককে তিন মাসের বাধ্যতামূলক ছুটি দিয়ে তাঁর কক্ষে তালা মারা হয়েছে।
ঢাবিতে শিক্ষক কর্তৃক নারী শিক্ষার্থীর যৌন হয়রানির ঘটনাও এই প্রথম নয়। সব ঘটনা আবার প্রকাশও পায় না। অনেক ছাত্রী প্রকাশ করেন না, পরীক্ষার ফলাফলে এর বিরূপ প্রভাব ফেলার আশঙ্কায়। একজন ছাত্রী বলছিলেন, শিক্ষকের রোষানলে পড়লে ভবিষ্যৎ বরবাদ। বাবা-মা যে স্বপ্ন দেখে সন্তানকে পড়ালেখা করতে বড় বড় বিদ্যাপীঠে পাঠান, তা তাঁদের অনেক কষ্টের পয়সায়; বিশেষ করে যাঁরা মফস্বল শহর থেকে উচ্চশিক্ষার জন্য শহরে আসেন। পড়ালেখায় অকৃতকার্য হলে তাঁরা হতাশ হবেন। ফলে কোনো কোনো ছাত্রী যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েও মুখ বন্ধ রাখেন।
সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিশেষ বিষয় নিয়ে কথা বলার অজুহাতে শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রীদের যৌন নিপীড়ন করার ঘটনা অহরহ ঘটছে। এসব অপরাধে যেসব প্রতিবাদ দৃশ্যমান হয়, তার শাস্তি খুব একটা প্রকাশ্যে আসতে দেখা যায় না। ফলে শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রীদের যৌন নিপীড়ন করার বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সহজাত আচরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
উল্লিখিত ঘটনার রেশ না কাটতেই আরও একটি যৌন নিপীড়নের ঘটনার সংবাদ স্থানীয় একটি টিভি চ্যানেলে দেখা গেল। ঘটনাটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি মর্যাদাকর প্রতিষ্ঠানে ঘটেছে। সেই সংবাদে জানা যায়, একজন অধ্যাপক কর্তৃক একজন সহকারী নারী অধ্যাপক যৌন নিপীড়নের শিকার হন। সংবাদটি ছিল চমকে দেওয়ার মতো। যৌন নিপীড়নের বিষয়টি যে আজকাল শিক্ষা-দীক্ষা কিংবা নৈতিকতা বোঝে না, স্থান-কাল-পাত্র বোঝে না, তা খুবই পরিষ্কার। পথে-ঘাটে, পরিবহনে যে যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটতে দেখা যায়, তা ঘটায় স্বল্পশিক্ষিত, অশিক্ষিত পুরুষেরা। আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, হাসপাতালে যখন এমন ঘটনার অভিযোগ ওঠে, তখন তাঁদের শিক্ষার মানদণ্ড পরিবহনের যৌন নিপীড়কের শিক্ষার মানদণ্ডের চেয়ে কোনো অংশেই আর বড় হতে পারে না।
মাদ্রাসার মতো ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটে এবং তা সংখ্যায় কম নয়। ছেলে কিংবা মেয়ে উভয়ই মর্মান্তিক ও অমানবিকভাবে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়। যার সংবাদ প্রায়ই গণমাধ্যমে আসে। মূলধারার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কলেজও পিছিয়ে নেই। একটা সময়ে মনে করা হতো নাইট ক্লাব, হোটেল-রেস্তোরাঁ নারীর জন্য নিরাপদ জায়গা নয়। মনে করা হতো থার্টি ফার্স্ট নাইট নিরাপদ নয়। অথচ আমরা পয়লা বৈশাখেও নারীর প্রতি অশোভন আচরণ করার প্রবণতা দেখি। নৈতিক মূল্যবোধের মারাত্মক অবক্ষয় যেন স্থান-কাল-পাত্র বোঝে না, সর্বত্র ছড়িয়ে গেছে। নারী মানেই যেন কামনা আর ভোগের বস্তু, যেখানে শিক্ষা-দীক্ষা কিংবা সামাজিক মর্যাদার কোনো স্থান নেই, মূল্য নেই।
শিক্ষিত ও সামাজিক পদমর্যাদার কোনো ব্যক্তি যখন যৌন নিপীড়ক, ধর্ষক কিংবা লম্পটের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন, তখন সমাজের সুস্থ পরিবেশ কীভাবে আশা করা যায়? বাসে, ট্রেনে, স্টেশনে কিংবা ফুটপাতে যখন কোনো যৌন নিপীড়ক বা ধর্ষককে ধরা হয়, তখন তাঁকে কিল, চড়, ঘুষি, লাথি খেতে দেখি। কিন্তু কখনো কি একজন শিক্ষিত যৌন নিপীড়ক কিংবা ধর্ষককে আটকের পর কিল, ঘুষি কিংবা লাথি খেতে দেখা যায়? যায় না। যাঁরা অন্যায়, অপরাধ নির্মূলের দায়িত্বে থাকেন, সমাজকে নিরাপদ রাখতে তটস্থ থাকেন, তাঁরাও অপরাধীদের ভেতর বৈষম্যের রেখা টেনে দেন এবং সেটা ব্যক্তিস্বার্থপরতায়।
ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের মতো ঘৃণ্য অপরাধ তথাকথিত শিক্ষিত সমাজ থেকে নির্মূল করা সম্ভব না হলে সমাজ থেকে এ ধরনের ঘৃণ্য আচরণ দূর করা সম্ভব নয়। সমাজের উঁচু অবস্থানে যেসব নিপীড়ক ও ধর্ষক রয়েছেন, প্রথমে তাঁদের আনতে হবে কঠিন শাস্তির আওতায়। পাপ যে বাপকেও ছাড়ে না, এটা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। যৌন নিপীড়ন কিংবা ধর্ষণ একটা সামাজিক অপরাধ—এই বুলি আওড়িয়ে, সাময়িক বা স্থায়ীভাবে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করেই কেবল নয়, চরম শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। নতুবা যুব অবক্ষয় দূর হবে না। নিপীড়ক ও ধর্ষকের সংখ্যা বাড়বেই। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বলা যায়, দয়া করে বিশ্ববিদ্যালয় যেন যৌন নিপীড়কের আখড়া না হয়।
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক
সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হলের ৩১৭ নম্বর রুমে স্বামীকে আটকে রেখে গৃহবধূকে হলের পাশের জঙ্গলে নিয়ে গণধর্ষণ করা হয়েছে। জাবিতে এমন ঘটনা নতুন নয়, এর আগেও নারী শিক্ষার্থীরা একাধারে শিক্ষক ও ছাত্রদের দ্বারা যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এমন নৃশংস, জঘন্যতম ঘটনার প্রতিবাদে ও অপরাধীদের বিচারের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা অসংখ্যবার জাবিতে বিক্ষোভ করেছেন। লাগাতার আন্দোলন কর্মসূচি পালন করেছেন। কিন্তু অপরাধীদের তেমন উল্লেখযোগ্য বা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়েছে বলে জানা যায়নি। এর আগে ধর্ষক ও অন্যান্য অপরাধীর বিচার এবং শাস্তি না হওয়ায় জাবিতে পুনরায় ধর্ষণের মতো পাশবিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি বলেই অনেকে মনে করে।
যা-ই হোক, জাবির সাম্প্রতিক ঘটনার দুজন প্রধান আসামিকে ধরা হয়েছে বলে গণমাধ্যম সূত্রে আমরা জানতে পারি। যাঁদের পরিচয় হলো একজন জাবির সাবেক ছাত্র ও একজন বহিরাগত, যাঁদের রাজনৈতিক পরিচয় আছে, অর্থাৎ তাঁরা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের সদস্য। ছাত্রজীবন শেষ হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে থেকে তাঁরা ছাত্ররাজনীতি করেন। সেই সুবাদে তাঁদের আছে দাপট, প্রভাব ও প্রতাপ।
গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, প্রায় দুই হাজার সাবেক শিক্ষার্থী হলে অবস্থান করছেন, যেখানে চলমান শিক্ষাকার্যক্রমে যুক্ত থেকেও অনেক শিক্ষার্থী হলে অবস্থান করার সুযোগ পান না। ছাত্ররাজনীতিকে কতিপয় ব্যক্তি যে কলুষিত করে চলেছেন শৃঙ্খলাবর্জিত কার্যকলাপে, অনৈতিক আচরণে এবং তাঁদের কারণে যে শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশের পবিত্রতা ও নিরাপত্তা বিনষ্ট হচ্ছে, তা যেন দেখার কেউ নেই। একজন অভিভাবক আতঙ্কিত হয়ে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় তো এখন ধর্ষণের উত্তম জায়গা, যেখানে ধর্ষক নিরাপদে নারী শিক্ষার্থী কিংবা নারী শিক্ষাকর্মীকে নির্বিঘ্নে ধর্ষণ করতে পারে; বিশেষ কারণে অনেক ক্ষেত্রেই ধর্ষক শিক্ষক কিংবা ধর্ষক ছাত্ররা সব সময় থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে। সম্ভবত সে কারণেই অপরাধ করার প্রবণতা বাড়ে, কমে না।’ এটা বলাবাহুল্য যে একটা অন্যায় বা অনিয়ম হাজারটা অন্যায়ের কারণ হতে পারে। ছাত্রত্ব না থাকার পরও যাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে অবস্থান করতে পারেন, এই অন্যায় বা অনিয়মবোধই তাঁকে ধর্ষণ, মাদক কারবার বা চাঁদাবাজির মতো অপরাধ করতে সহায়তা করে থাকে।
নিয়মবহির্ভূতভাবে যাঁরা হলে অবস্থান করেন, তাঁরা কাদের প্রশ্রয়, মদদ পেয়ে অবস্থান করেন, ধর্ষণের বিচার না হওয়ার মতোই সেই প্রশ্নের জবাবও মেলে না।
জাবির ঘটনার পরপরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এক অধ্যাপকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও মানসিক নিপীড়নের অভিযোগ করেছেন একই বিভাগের একজন নারী শিক্ষার্থী। ওই শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মো. মাকসুদুর রহমানের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়ে বলেছেন, ২০২২ সালের বিভিন্ন সময়ে একাডেমিক বিষয় নিয়ে কথাবার্তার একপর্যায়ে অভিযুক্ত শিক্ষক তাঁকে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক করার প্রস্তাব দেন। তিনি শিক্ষার্থীর সঙ্গে অন্তরঙ্গ বিষয় নিয়ে কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং একপর্যায়ে তাঁর শারীরিক অবয়ব নিয়ে নোংরা মন্তব্য করতে শুরু করেন। এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষকের বিচার চেয়ে প্রতিবাদ সভা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়ন। জানা গেছে, অভিযুক্ত শিক্ষককে তিন মাসের বাধ্যতামূলক ছুটি দিয়ে তাঁর কক্ষে তালা মারা হয়েছে।
ঢাবিতে শিক্ষক কর্তৃক নারী শিক্ষার্থীর যৌন হয়রানির ঘটনাও এই প্রথম নয়। সব ঘটনা আবার প্রকাশও পায় না। অনেক ছাত্রী প্রকাশ করেন না, পরীক্ষার ফলাফলে এর বিরূপ প্রভাব ফেলার আশঙ্কায়। একজন ছাত্রী বলছিলেন, শিক্ষকের রোষানলে পড়লে ভবিষ্যৎ বরবাদ। বাবা-মা যে স্বপ্ন দেখে সন্তানকে পড়ালেখা করতে বড় বড় বিদ্যাপীঠে পাঠান, তা তাঁদের অনেক কষ্টের পয়সায়; বিশেষ করে যাঁরা মফস্বল শহর থেকে উচ্চশিক্ষার জন্য শহরে আসেন। পড়ালেখায় অকৃতকার্য হলে তাঁরা হতাশ হবেন। ফলে কোনো কোনো ছাত্রী যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েও মুখ বন্ধ রাখেন।
সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিশেষ বিষয় নিয়ে কথা বলার অজুহাতে শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রীদের যৌন নিপীড়ন করার ঘটনা অহরহ ঘটছে। এসব অপরাধে যেসব প্রতিবাদ দৃশ্যমান হয়, তার শাস্তি খুব একটা প্রকাশ্যে আসতে দেখা যায় না। ফলে শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রীদের যৌন নিপীড়ন করার বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সহজাত আচরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
উল্লিখিত ঘটনার রেশ না কাটতেই আরও একটি যৌন নিপীড়নের ঘটনার সংবাদ স্থানীয় একটি টিভি চ্যানেলে দেখা গেল। ঘটনাটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি মর্যাদাকর প্রতিষ্ঠানে ঘটেছে। সেই সংবাদে জানা যায়, একজন অধ্যাপক কর্তৃক একজন সহকারী নারী অধ্যাপক যৌন নিপীড়নের শিকার হন। সংবাদটি ছিল চমকে দেওয়ার মতো। যৌন নিপীড়নের বিষয়টি যে আজকাল শিক্ষা-দীক্ষা কিংবা নৈতিকতা বোঝে না, স্থান-কাল-পাত্র বোঝে না, তা খুবই পরিষ্কার। পথে-ঘাটে, পরিবহনে যে যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটতে দেখা যায়, তা ঘটায় স্বল্পশিক্ষিত, অশিক্ষিত পুরুষেরা। আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, হাসপাতালে যখন এমন ঘটনার অভিযোগ ওঠে, তখন তাঁদের শিক্ষার মানদণ্ড পরিবহনের যৌন নিপীড়কের শিক্ষার মানদণ্ডের চেয়ে কোনো অংশেই আর বড় হতে পারে না।
মাদ্রাসার মতো ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটে এবং তা সংখ্যায় কম নয়। ছেলে কিংবা মেয়ে উভয়ই মর্মান্তিক ও অমানবিকভাবে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়। যার সংবাদ প্রায়ই গণমাধ্যমে আসে। মূলধারার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কলেজও পিছিয়ে নেই। একটা সময়ে মনে করা হতো নাইট ক্লাব, হোটেল-রেস্তোরাঁ নারীর জন্য নিরাপদ জায়গা নয়। মনে করা হতো থার্টি ফার্স্ট নাইট নিরাপদ নয়। অথচ আমরা পয়লা বৈশাখেও নারীর প্রতি অশোভন আচরণ করার প্রবণতা দেখি। নৈতিক মূল্যবোধের মারাত্মক অবক্ষয় যেন স্থান-কাল-পাত্র বোঝে না, সর্বত্র ছড়িয়ে গেছে। নারী মানেই যেন কামনা আর ভোগের বস্তু, যেখানে শিক্ষা-দীক্ষা কিংবা সামাজিক মর্যাদার কোনো স্থান নেই, মূল্য নেই।
শিক্ষিত ও সামাজিক পদমর্যাদার কোনো ব্যক্তি যখন যৌন নিপীড়ক, ধর্ষক কিংবা লম্পটের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন, তখন সমাজের সুস্থ পরিবেশ কীভাবে আশা করা যায়? বাসে, ট্রেনে, স্টেশনে কিংবা ফুটপাতে যখন কোনো যৌন নিপীড়ক বা ধর্ষককে ধরা হয়, তখন তাঁকে কিল, চড়, ঘুষি, লাথি খেতে দেখি। কিন্তু কখনো কি একজন শিক্ষিত যৌন নিপীড়ক কিংবা ধর্ষককে আটকের পর কিল, ঘুষি কিংবা লাথি খেতে দেখা যায়? যায় না। যাঁরা অন্যায়, অপরাধ নির্মূলের দায়িত্বে থাকেন, সমাজকে নিরাপদ রাখতে তটস্থ থাকেন, তাঁরাও অপরাধীদের ভেতর বৈষম্যের রেখা টেনে দেন এবং সেটা ব্যক্তিস্বার্থপরতায়।
ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের মতো ঘৃণ্য অপরাধ তথাকথিত শিক্ষিত সমাজ থেকে নির্মূল করা সম্ভব না হলে সমাজ থেকে এ ধরনের ঘৃণ্য আচরণ দূর করা সম্ভব নয়। সমাজের উঁচু অবস্থানে যেসব নিপীড়ক ও ধর্ষক রয়েছেন, প্রথমে তাঁদের আনতে হবে কঠিন শাস্তির আওতায়। পাপ যে বাপকেও ছাড়ে না, এটা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। যৌন নিপীড়ন কিংবা ধর্ষণ একটা সামাজিক অপরাধ—এই বুলি আওড়িয়ে, সাময়িক বা স্থায়ীভাবে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করেই কেবল নয়, চরম শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। নতুবা যুব অবক্ষয় দূর হবে না। নিপীড়ক ও ধর্ষকের সংখ্যা বাড়বেই। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বলা যায়, দয়া করে বিশ্ববিদ্যালয় যেন যৌন নিপীড়কের আখড়া না হয়।
লেখক: কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
২ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
২ দিন আগে