ড. মঞ্জুরে খোদা
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যার সঙ্গে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার যুক্ত থাকার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণের কথা পার্লামেন্টে বলার পর থেকেই দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি হতে শুরু করে। ট্রুডোর এই অভিযোগকে ভারত সরকার তাৎক্ষণিক নাকচ করে দিয়েছে। এ ঘটনার পরই অটোয়া দিল্লির একজন শীর্ষ কূটনীতিককে বহিষ্কার করে, দিল্লিও কানাডার একজন কূটনীতিককে বহিষ্কার করে। শুধু তা-ই নয়, কানাডার নাগরিকদের ভিসা-সেবা বন্ধ করেছে ভারত।
এই ইস্যুতে কানাডার প্রধান দলগুলো তাদের সরকারকে সমর্থন করছে। তারা মনে করছে, এটা ‘কানাডার সার্বভৌমত্বের অবমাননা’। তারা এর সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ভারতের সহযোগিতা কামনা করে। অন্যদিকে ভারত অভিযোগ করছে, কানাডার শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ভারত সরকার ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে প্রচারণা ও তৎপরতা চালাচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। বিষয়টি কানাডা সরকারকে বারবার অবহিত করার পরও তারা কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় জি২০ সম্মেলনে ট্রুডোর কাছে মোদি এ বিষয়ে আবারও শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানান।
কিন্তু ঘটনার শুরু এখানে এবং এখন নয়। এই দ্বন্দ্ব-বিরোধের শুরু অনেক আগেই। জাস্টিন ট্রুডোর লিবারেল সরকার যে ৩০ জনের মন্ত্রিসভা গঠন করে, তাদের মধ্যে চারজনই শিখ সম্প্রদায় থেকে আসা ভারতীয়-কানাডিয়ান। তাঁদের দুজন প্রকাশ্যেই খালিস্তান আন্দোলনের পক্ষে। কানাডা সরকারের শীর্ষপর্যায়ে খালিস্তান বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থক-পৃষ্ঠপোষকদের অবস্থান থাকায় ভারত উদ্বেগ প্রকাশ করছে।
কানাডা কেন ভারতের অভিযোগকে গুরুত্ব দিচ্ছে না? তাদের বক্তব্য, কানাডা স্বাধীন মত প্রকাশ ও মানবাধিকারে বিশ্বাসী একটি দেশ। তারা কারও কথা বলার অধিকারকে হরণ করে না। শিখরা সেই অধিকারবলেই এখান থেকে স্বাধীন খালিস্তান রাষ্ট্রের পক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে। যদিও পাঞ্জাবের মূলধারার আলোচনায় এদের কোনো অবস্থান নেই। কানাডার সিবিসির এক সাক্ষাৎকারে একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, পাঞ্জাবে বসবাসকারী শিখদের তরুণ প্রজন্ম তাদের শিক্ষা, উন্নয়ন, ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যস্ত, বিচ্ছিন্নতা তাদের ভাবনায় নেই। আর প্রবীণেরা অতীতের ভয়াবহ দিনে ফিরে যেতে চান না। তবে বিচ্ছিন্নভাবে খালিস্তানের পক্ষে কেউ থাকতে পারে, সেটা ভারতে নয়, দেশের বাইরে।
ভারত বিশ্বের শীর্ষ জনবহুল দেশ, পঞ্চম অর্থনৈতিক ও চতুর্থ সামরিক শক্তি। গুরুত্বের দিক থেকে পশ্চিমাদের কাছে চীনের পরেই ভারতের স্থান। স্বার্থ ও নিরাপত্তার দিক থেকে চীন-ভারতের অবস্থান এক নয়। ভূরাজনীতি ও কৌশলগত অবস্থানের কারণে চীনের বিরুদ্ধে ভারতকে তারা সহযোগী মনে করে। আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও কূটনীতির ক্ষেত্রে ভারত অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। তারা ব্রিকসে আছে, কোয়াডেও আছে।
জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনে আছে; আবার রাশিয়া, আমেরিকার সঙ্গেও আছে। তার পরও ভারত-আমেরিকা নিজেরা একে অন্যের ঘনিষ্ঠ মিত্রই মনে করে এবং তাদের মধ্যে সেই ধরনের বোঝাপড়াও আছে। তাই মার্কিন কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই ভারত বিগড়ে যায় এমন কোনো অবস্থান গ্রহণ করবে না। এটা শুধু মার্কিনিদের ক্ষেত্রে নয়, কানাডার পশ্চিমা মিত্র সব দেশের ক্ষেত্রেই বলা যায়। পশ্চিমা নেতৃত্বের মন্তব্যে এমন অবস্থানই ইঙ্গিত করে।
খালিস্তান আন্দোলনের নেতা নিজ্জার কি আসলেই গুরুত্বপূর্ণ কেউ? জগতার সিং পাঞ্জাবের একজন পরিচিত সাংবাদিক, যিনি কয়েক দশক ধরে পাঞ্জাবের রাজনীতির নানা বিষয় নিয়ে লেখালেখি করছেন। নিউ ইয়র্ক টাইমসের সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘নিজ্জার এখানে সম্পূর্ণ অচেনা, অপরিচিত ব্যক্তি। আমরা তাঁর সম্পর্কে কখনো কিছু শুনিওনি।’
হরদীপ সিং নিজ্জার ১৯৯৭ সালে অন্য শিখদের মতোই গোপনে কানাডায় আসেন। তিনি পেশায় একজন মিস্ত্রি, পাইপ মেরামতকারী। থাকতেন কানাডার ব্রিটিশ-কলাম্বিয়ায়, যে অঞ্চলের জনসংখ্যার প্রায় ৭ শতাংশ শিখ। এখানকার স্থানীয় শিখ গুরুদ্বারে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করতেন এবং এই মন্দির কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
নিজ্জার শিখদের বড় মাপের কোনো নেতা না হলেও ছিলেন স্বাধীন খালিস্তান আন্দোলনের একজন একনিষ্ঠ স্পষ্টভাষী বক্তা। তিনি ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠেছেন—বিষয়টি এমনও নয়। কিন্তু ভারত সরকার বিদেশের মাটিতে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কর্মকাণ্ডে দীর্ঘদিন ধরেই অস্বস্তিতে আছে। সে কারণে তারা কানাডা সরকারকে বিভিন্ন সময়ে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কর্মকাণ্ড বন্ধ করার দাবি জানিয়ে আসছিল, কিন্তু মানবাধিকারের কথা ভেবে কানাডা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
বিষয়টি কি এতটাই নিরীহ? মনে হয় না। কেননা, কানাডার রাজনীতিতে শিখদের একটি শক্তিশালী অবস্থান আছে। এখানকার মোট জনসংখ্যার ২.১ শতাংশ শিখ, তারা একটি সংগঠিত ভোট ব্যাংক। যদিও ভারতীয় হিন্দুদের সংখ্যাও কম নয়; ২.৩ শতাংশ। ক্ষমতাসীন লিবারেল পার্টি সংখ্যালঘু সরকার, তারা কানাডার তৃতীয় বৃহত্তম দল এনডিপির সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় আছে। আর এই এনডিপির প্রধান জগমিত সিং একজন শিখ। ভারত ভ্রমণে তাঁর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অভিযোগ আছে, এনডিপিকে ভোটের রাজনীতিতে আস্থায় নিতে এবং শিখদের ভোট টানতে ট্রুডোর এই অবস্থান।
সম্প্রতি কানাডার এক জরিপে দেখা যাচ্ছে, আগামী নির্বাচনে কোন দলের অবস্থান কী হবে। সেখানে রক্ষণশীলদের পক্ষে সমর্থন আছে ৪০ শতাংশ, লিবারেলের পক্ষে ৩২ শতাংশ এবং এনডিপির পক্ষে ২২ শতাংশ। হিসাবটা এখানেই। লিবারেল ও এনডিপির যদি কোনো বোঝাপড়া হয়, তাহলে তাদের পক্ষে সমর্থন থাকবে ৩২ + ২২ = ৫৪ শতাংশ ভোটারের।
গত বছর করা কানাডার আদমশুমারিতে দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন দেশ থেকে আসা মোট অভিবাসীর ১৮.৬ শতাংশ ভারতীয়। শুধু তাই নয়, ২০১৮ সাল থেকে কানাডায় সবচেয়ে বেশিসংখ্যক আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভারত থেকে আসে। ২০২২ সালে কানাডায় অধ্যয়নরত বিদেশি শিক্ষার্থীদের ৪০ শতাংশই ভারতীয়। ২০১৩ সালের পর থেকে কানাডায় ভারতীয় অভিবাসীর সংখ্যা তিন গুণের বেশি বেড়েছে। কানাডার আন্তর্জাতিক বিমানভ্রমণের বাজারে ভারতীয়দের অবস্থান চতুর্থ। টিসিএস, ইনফোসিস, উইপ্রোর মতো ৩০টি ভারতীয় সংস্থা কানাডায় বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। তার মানে, কানাডার অর্থনীতিতে ভারতের অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ। একই সঙ্গে ভারতও এখান থেকে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে।
ভারত-কানাডার সম্পর্কের কি আরও অবনতি হবে? ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি এক ব্রিফিংয়ে বলেন, হরদীপ সিং নিজ্জারের হত্যাকাণ্ড নিয়ে কানাডার প্রধানমন্ত্রী যে অভিযোগ করেছেন, তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তিনি বলেন, কানাডায় বিচ্ছিন্নতাবাদী খালিস্তানি শিখদের উপস্থিতি এবং সে দেশের সরকারের প্রভাবের কারণে দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার তেমন কোনো সম্ভাবনা এখন নেই, বরং আরও অবনতি হতে পারে।
তিনি নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টিকে শিখদের দল হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, তাদের সমর্থন নিয়ে ট্রুডো দেশ চালাচ্ছেন। জগমিত সিং এই দলের প্রধান। ভারত সরকার তাঁকে খালিস্তানিদের সহযোগী ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মদদদাতা মনে করে। তিনি ব্রিফিংয়ে আরও উল্লেখ করেন, কানাডা হচ্ছে সন্ত্রাসবাদী ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ দেশ।
অরিন্দম বাগচির এই অভিযোগের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি নূর চৌধুরীর আশ্রয় এবং অভিযুক্ত অর্থ পাচারকারী ও খুনিদের আশ্রয়ের মিল খুঁজে পাই। বাগচি বলেন, সম্মান রক্ষা কিংবা সম্মানহানি রুখতে যদি কোনো দেশকে সচেষ্ট হতে হয়, সেটা কানাডাকেই হতে হবে।
লেখক-গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক; সমন্বয়ক, ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরি, কানাডা
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যার সঙ্গে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার যুক্ত থাকার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণের কথা পার্লামেন্টে বলার পর থেকেই দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি হতে শুরু করে। ট্রুডোর এই অভিযোগকে ভারত সরকার তাৎক্ষণিক নাকচ করে দিয়েছে। এ ঘটনার পরই অটোয়া দিল্লির একজন শীর্ষ কূটনীতিককে বহিষ্কার করে, দিল্লিও কানাডার একজন কূটনীতিককে বহিষ্কার করে। শুধু তা-ই নয়, কানাডার নাগরিকদের ভিসা-সেবা বন্ধ করেছে ভারত।
এই ইস্যুতে কানাডার প্রধান দলগুলো তাদের সরকারকে সমর্থন করছে। তারা মনে করছে, এটা ‘কানাডার সার্বভৌমত্বের অবমাননা’। তারা এর সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ভারতের সহযোগিতা কামনা করে। অন্যদিকে ভারত অভিযোগ করছে, কানাডার শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ভারত সরকার ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে প্রচারণা ও তৎপরতা চালাচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। বিষয়টি কানাডা সরকারকে বারবার অবহিত করার পরও তারা কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় জি২০ সম্মেলনে ট্রুডোর কাছে মোদি এ বিষয়ে আবারও শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানান।
কিন্তু ঘটনার শুরু এখানে এবং এখন নয়। এই দ্বন্দ্ব-বিরোধের শুরু অনেক আগেই। জাস্টিন ট্রুডোর লিবারেল সরকার যে ৩০ জনের মন্ত্রিসভা গঠন করে, তাদের মধ্যে চারজনই শিখ সম্প্রদায় থেকে আসা ভারতীয়-কানাডিয়ান। তাঁদের দুজন প্রকাশ্যেই খালিস্তান আন্দোলনের পক্ষে। কানাডা সরকারের শীর্ষপর্যায়ে খালিস্তান বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থক-পৃষ্ঠপোষকদের অবস্থান থাকায় ভারত উদ্বেগ প্রকাশ করছে।
কানাডা কেন ভারতের অভিযোগকে গুরুত্ব দিচ্ছে না? তাদের বক্তব্য, কানাডা স্বাধীন মত প্রকাশ ও মানবাধিকারে বিশ্বাসী একটি দেশ। তারা কারও কথা বলার অধিকারকে হরণ করে না। শিখরা সেই অধিকারবলেই এখান থেকে স্বাধীন খালিস্তান রাষ্ট্রের পক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে। যদিও পাঞ্জাবের মূলধারার আলোচনায় এদের কোনো অবস্থান নেই। কানাডার সিবিসির এক সাক্ষাৎকারে একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, পাঞ্জাবে বসবাসকারী শিখদের তরুণ প্রজন্ম তাদের শিক্ষা, উন্নয়ন, ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যস্ত, বিচ্ছিন্নতা তাদের ভাবনায় নেই। আর প্রবীণেরা অতীতের ভয়াবহ দিনে ফিরে যেতে চান না। তবে বিচ্ছিন্নভাবে খালিস্তানের পক্ষে কেউ থাকতে পারে, সেটা ভারতে নয়, দেশের বাইরে।
ভারত বিশ্বের শীর্ষ জনবহুল দেশ, পঞ্চম অর্থনৈতিক ও চতুর্থ সামরিক শক্তি। গুরুত্বের দিক থেকে পশ্চিমাদের কাছে চীনের পরেই ভারতের স্থান। স্বার্থ ও নিরাপত্তার দিক থেকে চীন-ভারতের অবস্থান এক নয়। ভূরাজনীতি ও কৌশলগত অবস্থানের কারণে চীনের বিরুদ্ধে ভারতকে তারা সহযোগী মনে করে। আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও কূটনীতির ক্ষেত্রে ভারত অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। তারা ব্রিকসে আছে, কোয়াডেও আছে।
জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনে আছে; আবার রাশিয়া, আমেরিকার সঙ্গেও আছে। তার পরও ভারত-আমেরিকা নিজেরা একে অন্যের ঘনিষ্ঠ মিত্রই মনে করে এবং তাদের মধ্যে সেই ধরনের বোঝাপড়াও আছে। তাই মার্কিন কর্তৃপক্ষ কোনোভাবেই ভারত বিগড়ে যায় এমন কোনো অবস্থান গ্রহণ করবে না। এটা শুধু মার্কিনিদের ক্ষেত্রে নয়, কানাডার পশ্চিমা মিত্র সব দেশের ক্ষেত্রেই বলা যায়। পশ্চিমা নেতৃত্বের মন্তব্যে এমন অবস্থানই ইঙ্গিত করে।
খালিস্তান আন্দোলনের নেতা নিজ্জার কি আসলেই গুরুত্বপূর্ণ কেউ? জগতার সিং পাঞ্জাবের একজন পরিচিত সাংবাদিক, যিনি কয়েক দশক ধরে পাঞ্জাবের রাজনীতির নানা বিষয় নিয়ে লেখালেখি করছেন। নিউ ইয়র্ক টাইমসের সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘নিজ্জার এখানে সম্পূর্ণ অচেনা, অপরিচিত ব্যক্তি। আমরা তাঁর সম্পর্কে কখনো কিছু শুনিওনি।’
হরদীপ সিং নিজ্জার ১৯৯৭ সালে অন্য শিখদের মতোই গোপনে কানাডায় আসেন। তিনি পেশায় একজন মিস্ত্রি, পাইপ মেরামতকারী। থাকতেন কানাডার ব্রিটিশ-কলাম্বিয়ায়, যে অঞ্চলের জনসংখ্যার প্রায় ৭ শতাংশ শিখ। এখানকার স্থানীয় শিখ গুরুদ্বারে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করতেন এবং এই মন্দির কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
নিজ্জার শিখদের বড় মাপের কোনো নেতা না হলেও ছিলেন স্বাধীন খালিস্তান আন্দোলনের একজন একনিষ্ঠ স্পষ্টভাষী বক্তা। তিনি ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠেছেন—বিষয়টি এমনও নয়। কিন্তু ভারত সরকার বিদেশের মাটিতে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কর্মকাণ্ডে দীর্ঘদিন ধরেই অস্বস্তিতে আছে। সে কারণে তারা কানাডা সরকারকে বিভিন্ন সময়ে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কর্মকাণ্ড বন্ধ করার দাবি জানিয়ে আসছিল, কিন্তু মানবাধিকারের কথা ভেবে কানাডা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
বিষয়টি কি এতটাই নিরীহ? মনে হয় না। কেননা, কানাডার রাজনীতিতে শিখদের একটি শক্তিশালী অবস্থান আছে। এখানকার মোট জনসংখ্যার ২.১ শতাংশ শিখ, তারা একটি সংগঠিত ভোট ব্যাংক। যদিও ভারতীয় হিন্দুদের সংখ্যাও কম নয়; ২.৩ শতাংশ। ক্ষমতাসীন লিবারেল পার্টি সংখ্যালঘু সরকার, তারা কানাডার তৃতীয় বৃহত্তম দল এনডিপির সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় আছে। আর এই এনডিপির প্রধান জগমিত সিং একজন শিখ। ভারত ভ্রমণে তাঁর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। অভিযোগ আছে, এনডিপিকে ভোটের রাজনীতিতে আস্থায় নিতে এবং শিখদের ভোট টানতে ট্রুডোর এই অবস্থান।
সম্প্রতি কানাডার এক জরিপে দেখা যাচ্ছে, আগামী নির্বাচনে কোন দলের অবস্থান কী হবে। সেখানে রক্ষণশীলদের পক্ষে সমর্থন আছে ৪০ শতাংশ, লিবারেলের পক্ষে ৩২ শতাংশ এবং এনডিপির পক্ষে ২২ শতাংশ। হিসাবটা এখানেই। লিবারেল ও এনডিপির যদি কোনো বোঝাপড়া হয়, তাহলে তাদের পক্ষে সমর্থন থাকবে ৩২ + ২২ = ৫৪ শতাংশ ভোটারের।
গত বছর করা কানাডার আদমশুমারিতে দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন দেশ থেকে আসা মোট অভিবাসীর ১৮.৬ শতাংশ ভারতীয়। শুধু তাই নয়, ২০১৮ সাল থেকে কানাডায় সবচেয়ে বেশিসংখ্যক আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ভারত থেকে আসে। ২০২২ সালে কানাডায় অধ্যয়নরত বিদেশি শিক্ষার্থীদের ৪০ শতাংশই ভারতীয়। ২০১৩ সালের পর থেকে কানাডায় ভারতীয় অভিবাসীর সংখ্যা তিন গুণের বেশি বেড়েছে। কানাডার আন্তর্জাতিক বিমানভ্রমণের বাজারে ভারতীয়দের অবস্থান চতুর্থ। টিসিএস, ইনফোসিস, উইপ্রোর মতো ৩০টি ভারতীয় সংস্থা কানাডায় বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। তার মানে, কানাডার অর্থনীতিতে ভারতের অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ। একই সঙ্গে ভারতও এখান থেকে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে।
ভারত-কানাডার সম্পর্কের কি আরও অবনতি হবে? ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি এক ব্রিফিংয়ে বলেন, হরদীপ সিং নিজ্জারের হত্যাকাণ্ড নিয়ে কানাডার প্রধানমন্ত্রী যে অভিযোগ করেছেন, তা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তিনি বলেন, কানাডায় বিচ্ছিন্নতাবাদী খালিস্তানি শিখদের উপস্থিতি এবং সে দেশের সরকারের প্রভাবের কারণে দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার তেমন কোনো সম্ভাবনা এখন নেই, বরং আরও অবনতি হতে পারে।
তিনি নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টিকে শিখদের দল হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, তাদের সমর্থন নিয়ে ট্রুডো দেশ চালাচ্ছেন। জগমিত সিং এই দলের প্রধান। ভারত সরকার তাঁকে খালিস্তানিদের সহযোগী ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মদদদাতা মনে করে। তিনি ব্রিফিংয়ে আরও উল্লেখ করেন, কানাডা হচ্ছে সন্ত্রাসবাদী ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ দেশ।
অরিন্দম বাগচির এই অভিযোগের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি নূর চৌধুরীর আশ্রয় এবং অভিযুক্ত অর্থ পাচারকারী ও খুনিদের আশ্রয়ের মিল খুঁজে পাই। বাগচি বলেন, সম্মান রক্ষা কিংবা সম্মানহানি রুখতে যদি কোনো দেশকে সচেষ্ট হতে হয়, সেটা কানাডাকেই হতে হবে।
লেখক-গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক; সমন্বয়ক, ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরি, কানাডা
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
২ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
২ দিন আগে