হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়

সম্পাদকীয়
প্রকাশ : ১৩ জানুয়ারি ২০২৪, ০৭: ৪৮

হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারের সন্তান ছিলেন। অর্থাভাবে কলেজের থার্ড ইয়ারেই পড়াশোনায় ইতি ঘটে। তবে পড়ার মনটি ছিল ষোলো আনা। তাঁর এক পিসতুতো ভাই জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে খাজাঞ্চির কাজ করতেন। তাঁর অনুরোধে রবীন্দ্রনাথ মাসিক কিছু সাহায্যের ব্যবস্থা করেন। তবে নানা জনের সাহায্য নিয়ে পুরো ছাত্রজীবন শেষ করা সম্ভব ছিল না। তাই পড়াশোনা শেষ না করেই কাজে নামতে বাধ্য হন। সেই কাজের খোঁজে আবারও কবির সাহায্যে তাঁকে নওগাঁর আত্রাইয়ের পতিসরে পাঠানো হয়। কাছারিতেই যোগ দিয়ে কাজ শিখতে লাগলেন। কাজ শেষে সন্ধেবেলা হরিচরণ সংস্কৃত পড়তেন, বই লিখতেন।

একদিন রবীন্দ্রনাথ তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘দিনে সেরেস্তায় কাজ করো, রাত্রিতে কী করো?’ তিনি বললেন, ‘কিছুক্ষণ সংস্কৃতের আলোচনা করি আর কিছুক্ষণ একখানি বইয়ের পাণ্ডুলিপি দেখে প্রেসের কপি প্রস্তুত করি।’ কবি পাণ্ডুলিপি দেখতে চাইলেন। এরপর শান্তিনিকেতনে ফিরে গিয়ে ডাক পড়ে হরিচরণের। শান্তিনিকেতনে তিনি অধ্যাপনার কাজ পেলেন। পরে আত্মপ্রকাশ করলেন অভিধানকার হিসেবে।

অধ্যাপনাকালে রবীন্দ্রনাধের ইচ্ছায় ১৯০৫ সালে ‘বঙ্গীয় শব্দকোষ’ সংকলনের কাজ শুরু করেন। তাঁর সম্পূর্ণ একক প্রচেষ্টায় দুরূহ এ কাজ সম্পন্ন করেন ৪০ বছর পর, ১৯৪৫ সালে। সে বছরই বিশ্বভারতী থেকে পাঁচ খণ্ডে প্রকাশিত হয় ‘বঙ্গীয় শব্দকোষ’। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই শব্দকোষকে বাংলা ভাষার এক সম্পদ বলে আখ্যা দেন।

তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলো হলো—সংস্কৃত প্রবেশ, পালিত প্রবেশ, ব্যাকরণ কৌমুদী, কবির কথা ও রবীন্দ্রনাথের কথা। এ ছাড়া তিনি ম্যাথু আর্নল্ডের শোরাব রোস্তম এবং কবিকথা মঞ্জুষা প্রভৃতি গ্রন্থ অমিত্রাক্ষর ছন্দে অনুবাদ করেছিলেন।

বাংলা ভাষায় অসামান্য কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে ১৯৪৪ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরোজিনী বসু স্বর্ণপদক এবং ১৯৫৪ সালে শিশির কুমার স্মৃতি পুরস্কার দেওয়া হয়। এ ছাড়া ১৯৫৭ সালে বিশ্বভারতী তাঁকে ‘ডিলিট’ এবং ‘দেশিকোত্তম’ উপাধি দিয়ে সম্মানিত করে।

পণ্ডিত হরিচরণ ১৯৫৯ সালের ১৩ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত