Ajker Patrika

প্যালেস্টাইন ব্যাগ বিতর্কের মধ্যেই বাংলাদেশ ইস্যুতে ব্যাগ নিয়ে হাজির প্রিয়াঙ্কা গান্ধী

অনলাইন ডেস্ক
বাংলাদেশ সংক্রান্ত ব্যাগসহ প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ও অন্যান্যরা। ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ সংক্রান্ত ব্যাগসহ প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ও অন্যান্যরা। ছবি: সংগৃহীত

কংগ্রেস নেতা ও লোকসভা সদস্য প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ভদ্র ‘প্যালেস্টাইন’ লেখা হাতব্যাগ নিয়ে হাজির হওয়ার একদিন পর এবার বাংলাদেশ সংক্রান্ত একটি ব্যাগ নিয়ে হাজির হয়েছেন। সেই ব্যাগে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি নিয়ে একটি স্লোগান লেখা ছিল। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

চলতি বছরের আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পতন ঘটে শেখ হাসিনার সরকারের। এরপর দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করতে শুরু করে ভারত। এমনকি দেশটির নেতারা আগবাড়িয়ে এসব বিষয়ে নানা উসকানিমূলক বক্তব্যও দেওয়া শুরু করেন। যা দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ককে শীতল করতে ভূমিকা রেখেছে।

এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর নতুন এই ব্যাগে লেখা ছিল ‘বাংলাদেশি হিন্দু ও খ্রিষ্টানদের পাশে দাঁড়ান’। প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর এই উদ্যোগের সঙ্গে তাল মেলান বিরোধী দলের বেশ কয়েকজন আইনপ্রণেতাও। তারাও একই ধরনের ব্যাগ নিয়ে প্রতিবাদে শামিল হন। গত সোমবার লোকসভার জিরো আওয়ারে নিজের ভাষণে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে অত্যাচারের বিষয়টি তুলে ধরতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি কেন্দ্রকে ঢাকার সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনা চালিয়ে হিন্দু ও খ্রিষ্টানদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।

লোকসভায় দেওয়া ভাষণে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বলেন, ‘বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের—হিন্দু ও খ্রিষ্টান—ওপর যে অন্যায় হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে সরকারের আওয়াজ তোলা উচিত। বাংলাদেশের সরকারের সঙ্গে আলোচনার ব্যবস্থা করা উচিত এবং যারা কষ্ট পাচ্ছে তাদের পূর্ণ সহায়তা দেওয়া উচিত।’

এদিকে, কেরালার ওয়ানাদ থেকে নির্বাচিত এই লোকসভার সদস্য প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর এই পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করেছে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি। দলটির অভিযোগ, প্রিয়াঙ্কা ফিলিস্তিন ইস্যুতে সরব কিন্তু বাংলাদেশে হিন্দুদের ব্যাপারে নিশ্চুপ। বিজেপি একে ‘তোষণ ও স্থূল সাম্প্রদায়িক অবস্থান’ বলে অভিহিত করেছে। প্রিয়াঙ্কার বাসভবনে ভারতে নিযুক্ত ফিলিস্তিনি দূতাবাসের প্রতিনিধি আবেদল রাজেক আবু জাজারের পরিদর্শনের বিষয়টি বিজেপির ‘সাম্প্রদায়িক অবস্থানের’ অভিযোগকে আরও উসকে দেয়।

এই বিষয়ে বিজেপি নেতা অনুরাগ ঠাকুর এনডিটিভিকে বলেন, ‘ব্যাগটি কি কোনো বার্তা দিল? তিনি বাংলাদেশি হিন্দুদের বিষয়টি কেন চুপ করে গেছেন? এটি একটি বড় প্রশ্ন। এটা ভারতীয় সংসদ। সাংসদরা এখানে ১৪০ কোটি ভারতীয়দের উদ্বেগ নিয়ে কথা বলার জন্য নির্বাচিত হন। প্রথমে ছিলেন আসাদউদ্দিন ওয়াইসি, যিনি “জয় ফিলিস্তিন” স্লোগান দিয়েছিলেন এবং এখন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, যিনি সংসদে “প্যালেস্টাইন” লেখা ব্যাগ নিয়ে এসেছেন।’

পরে বিজেপির সমালোচনা তুলে ধরে এক সাংবাদিক প্রিয়াঙ্কাকে প্রশ্ন করলে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে জবাব দেন, ‘আমার পোশাক কী হবে তা কে ঠিক করবে? এটা পুরুষতন্ত্রের সাধারণ উদাহরণ যে, নারীদের কী পরতে হবে সেটাও আপনারা ঠিক করবেন। আমি এটা মানি না। আমি যা চাই, তাই পরব।’

বিজেপির সোশ্যাল মিডিয়াপ্রধান অমিত মালব্য প্রিয়াঙ্কার ‘পুরুষতন্ত্র’ মন্তব্যকে কেন্দ্র করে বলেছেন, এটি প্রিয়াঙ্কার ‘বড় ব্যর্থতা’। একই সঙ্গে মালব্য প্রিয়াঙ্কার বিরুদ্ধে ‘মুসলিম তোষণের’ অভিযোগ তুলেছেন। মালব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে শেয়ার করা এক পোস্টে বলেন, ‘যারা ভেবেছিলেন প্রিয়াঙ্কা ভদ্র সেই দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সমাধান, যা তাদের আগেই গ্রহণ করা উচিত ছিল, তাঁরা সংসদ অধিবেশন শেষে দুই মিনিট নীরবতা পালন করুন। তিনি রাহুল গান্ধীর থেকেও বড় বিপর্যয়, যিনি সংসদে ফিলিস্তিনের পক্ষে ব্যাগ বহন করে সেটিকে পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই বলে মনে করেন।’

মালব্য আরও লেখেন, ‘মুসলিমদের প্রতি স্থূল সাম্প্রদায়িক সহানুভূতি এখন পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে অবস্থান বলে চালানো হচ্ছে! ভুল করবেন না, কংগ্রেসই এখন নতুন মুসলিম লীগ।’

পরে প্রিয়াঙ্কা বাংলাদেশে হিন্দুদের দুর্দশার চিত্র তুলে ধরে বিজেপিকে আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, তাঁর ব্যাগ নিয়ে তর্ক করার বদলে মোদি সরকার বাংলাদেশে হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুর ওপর হওয়া অত্যাচার বন্ধ করতে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘তাদের বলুন, বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর হওয়া অত্যাচারের বিষয়ে কিছু করুক, বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কথা বলুক, আর এসব বাজে কথা বলার দরকার নেই।’

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতের হস্তক্ষেপের বিষয়টি স্মরণ করে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বলেন, ‘আমরা যে যুদ্ধটা লড়েছিলাম, সেটা ছিল নীতির জন্য, গণতন্ত্রের জন্য, অত্যাচারের বিরুদ্ধে। এই নীতিগুলোই ভারতকে মহান করেছিল। আমাদের স্বাধীনতার লড়াইও এই নীতির উপর ভিত্তি করে ছিল। তখন আমরা একা ছিলাম। ইন্দিরা জি সারা বিশ্ব ঘুরে বলেছিলেন, এই অত্যাচার বন্ধ করতে হবে। কেউ দাঁড়ায়নি, কিন্তু আমাদের দেশ দাঁড়িয়েছিল। ইন্দিরা জি দাঁড়িয়েছিলেন, আমাদের সেনাবাহিনী দাঁড়িয়েছিল এবং আমাদের জনগণও দাঁড়িয়েছিল।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চকরিয়া থানার ওসিকে প্রত্যাহারের নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার

এনসিপির কর্মীদের ঢাকায় আনতে সরকারের বাস রিকুইজিশন, সমালোচনার ঝড়

নয়াদিল্লিতে নতুন হাইকমিশনার রিয়াজ হামিদুল্লাহ, ৩ মাস সময় নিল ভারত

চাপে পড়ে ৫টি বাস রিকুইজিশন দিয়েছেন পিরোজপুরের ডিসি, সরকারের হস্তক্ষেপ নেই: প্রেস সচিব

রাতে স্বামীর জন্মদিন উদ্‌যাপন, সকালে নদীতে মিলল নববধূর লাশ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত