Ajker Patrika

চাঁদের বয়স আগের ধারণার চেয়ে ৪ কোটি বছর বেশি: গবেষণা

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২৫ অক্টোবর ২০২৩, ০০: ১১
চাঁদের বয়স আগের ধারণার চেয়ে ৪ কোটি বছর বেশি: গবেষণা

ডাইনোসরের বিলুপ্তি দেখেছে চাঁদ, হয়েছে অনেক কবির অনুপ্রেরণা, এর বুকে চষে বেড়িয়েছেন অনেক নির্ভীক নভোচারী। বেশ দীর্ঘ সময় ধরেই এর উপস্থিতি থাকা সত্ত্বেও এর অস্তিত্বে আসার দিনক্ষণ নিয়ে নানা বিতর্ক রয়েছে। সম্প্রতি গবেষকেরা বলছেন, পৃথিবীর এ উপগ্রহের বয়স আগের ধারণার চেয়ে ৪ কোটি বছর বেশি। 

সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন অনুসারে, শেষবার ১৯৭২ সালে অ্যাপোলো-১৭ মিশনের অংশ হিসেবে আনা চাঁদের ধূলি থেকে প্রাপ্ত স্ফটিক পরীক্ষা করে এ তথ্য দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। 

গবেষণা প্রতিবেদনটির প্রধান লেখক গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জেনিকা গ্রিয়ার বলেন, ‘আমার হাতের পাথরটিই মানুষের পাওয়া চাঁদের সবচেয়ে পুরোনো অংশ—এটি দারুণ এক অনুভূতি। এটি পৃথিবীকে ঘিরে অনেক প্রশ্নের গোড়ার কথা। কোনো জিনিস কতটা পুরোনো, তা জানলে এর ইতিহাস সম্পর্কে ভালোভাবে জানা যায়। 

সৌরজগৎ সৃষ্টির ১০ কোটি বছর পর, যখন সব গ্রহ আকৃতি পেয়ে গেছে, তখন মঙ্গল গ্রহের সমান একটি মহাজাগতিক বস্তু পৃথিবীকে আঘাত করে। এ সংঘর্ষ থেকে বিচ্ছিন্ন একটি অংশ থেকে তৈরি হয় চাঁদ। যে শক্তিতে এ সংঘর্ষ হয়, তাতে ধারণা করা হয়, প্রাথমিকভাবে এর পৃষ্ঠ গলিত অবস্থায় ছিল। তবে চাঁদের সেই ম্যাগমা সমুদ্র (গলিত শিলা) ঠান্ডা হতে হতে কঠিন রূপ ধারণ করে। 

ধারণা করা হয়, শীতলীভবন প্রক্রিয়ার সময় গঠিত স্ফটিকগুলোর গাঠনিক উপাদান থেকেই এগুলোর বয়স নির্ধারণ করা সম্ভব। এ থেকে চাঁদের বয়সও ধারণা করা যায়। 

বিজ্ঞানীরা বলেন, এ ধরনের সময়কাল নির্ধারণ করা কিছুটা জটিল। চাঁদের কিছু বস্তুর ওপর পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন, চাঁদের বয়স প্রায় ৪৪২ কোটি বছর। তবে সম্প্রতি স্ফটিকের ওপর এ গবেষণা বলছে, চাঁদের বয়স এর চেয়ে বেশি। 

গবেষকেরা বলছেন, নতুন এক বিশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় উঠে এসেছে, স্ফটিকগুলো ধারণারও আগে গঠিত হয়েছে। 

নতুন এ বিশ্লেষণ প্রক্রিয়া পরমাণু অনুসন্ধান টমোগ্রাফি নামে পরিচিত। এ প্রক্রিয়ায় একটি লেজারের সাহায্যে স্ফটিককে বাষ্পীভবনের মাধ্যমে পরমাণুকে আলাদা করা হয়। এ পদ্ধতিতে লেজারের মাধ্যমে স্ফটিকগুলোর সূক্ষ্ম আগা তৈরি করা হয়, এটিকে বলে ‘ন্যানো টিপ’। 

এ পরমাণুগুলোর ভর নির্ধারণ করা সম্ভব। আর বিভিন্ন ভরের ইউরেনিয়াম এবং সিসা পরমাণুর সঙ্গে এর অনুপাত পরিমাপ করা হয়। একই ধাতুর বিভিন্ন ভরের পরমাণুকে বলে আইসোটোপ। তেজস্ক্রিয় ক্ষয়ের ফলে ইউরেনিয়াম আইসোটোপ সময়ের সঙ্গে সিসায় পরিণত হয়। এই বৈশিষ্ট্যের কারণে স্ফটিকের ওই পরমাণুগুলোর সঙ্গে ইউরেনিয়াম ও সিসার পরমাণুর অনুপাত বের করে ধারণা করা যায় স্ফটিকগুলোর বয়স কত। 

জিওমেট্রিক্যাল পারস্পেকটিভ লেটার্স সাময়িকীতে প্রকাশিত এ গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, এ স্ফটিকগুলো তথা আমাদের গ্রহের একমাত্র উপগ্রহটি অন্তত ৪৪৬ কোটি বছরের পুরোনো। 

গবেষণা দলটি বলছে, পর্যবেক্ষণে প্রাপ্ত এ বয়স প্রথমবার নির্ধারিত চাঁদের ত্বকের বয়সের চেয়ে ৪ কোটি বছর বেশি। সৌরজগৎ গঠনের পর ১১ কোটি বছরের মধ্যে চাঁদ গঠনের ন্যূনতম একটি সময় সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। 

ম্যানচেস্টারের বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. রোমেইন তারতেসে গবেষণাটিকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি এ গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। রোমেইন বলেন, ‘এ গবেষণা ইঙ্গিত দেয় যে চাঁদ কমপক্ষে ৪৪৬ কোটি বছর পুরোনো, যা একটি তুলনামূলক তরুণ চাঁদ গঠনের জন্য সাম্প্রতিক কিছু প্রস্তাবের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।’ 

তিনি আরও বলেন, যে সংঘর্ষের কারণে চাঁদ গঠিত হয়েছিল, সম্ভবত তা আরও কয়েক কোটি বছর আগে ঘটেছিল। 

তবে রোমেইন উল্লেখ করেছেন, গবেষণায় অ্যাপোলো অভিযানে আনা নমুনাগুলোর ফলাফল পুরো চাঁদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বলে অনুমান করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তেমনটি না-ও হতে পারে। 

তিনি বলেন, ‘এ গবেষণা ভবিষ্যতে চাঁদের বিভিন্ন অংশ থেকে আরও নমুনা আনার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে।’ 

উল্লেখ্য, এখন পর্যন্ত একমাত্র যুক্তরাষ্ট্র চাঁদে সফলভাবে মনুষ্যবাহী মহাকাশযান পাঠিয়েছে। নিল আর্মস্ট্রং, এডুইন অলড্রিনসহ মোট ১২ জন মার্কিন চাঁদের মাটিতে পা রেখেছেন। 

আবারও চাঁদে মানুষ পাঠাতে ‘আর্টেমিস’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। এই প্রকল্পের আওতায় ২০২৪ সালে চাঁদে মানুষ পাঠানোর কথা। অবশ্য অনেকে বলছেন, এর যে খরচ এবং অন্যান্য জটিলতার কারণে এ মিশনে আরও দেরি হতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত