Ajker Patrika

পুলিশের তৈরি ঘর

সম্পাদকীয়
আপডেট : ১২ এপ্রিল ২০২২, ০৮: ৩২
পুলিশের তৈরি ঘর

হঠাৎ আবিষ্কার করেছিলেন তাঁদের কোনো জায়গাজমি কিংবা ঘরবাড়ি নেই। মানুষের বাড়িতে কাজ করে তাঁদের বাড়িতেই সন্তানসহ থাকতে হতো তাঁকে। একজন মানুষ এ রকম পরজীবী হয়ে থাকলে তাঁর মানসিক অবস্থা কেমন হয়, তা ভুক্তভোগীমাত্রই জানেন।

মুজিববর্ষ আকতার বানুকে একটা চমক উপহার দিয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশ মুজিববর্ষে বিভিন্ন পরিকল্পনা করলেও করোনা মহামারির কারণে তার কিছু কিছু বাস্তবায়ন করতে পারেনি। ফলে সেই বেঁচে যাওয়া অর্থ দিয়ে তারা প্রধানমন্ত্রীর আবাসন কার্যক্রমে শামিল হয়েছে এবং গৃহহীনদের জন্য ঘর নির্মাণ করে দিয়েছে। বহু নিরানন্দ খবরের পাশে এ খবরটি স্বস্তি দেয়।

অনেকেরই মনে হতে পারে এ আর এমন কী। সরকারি টাকাই তো খরচ করেছে পুলিশ। এতে বাহ্বা দেওয়ার কী আছে? ঠান্ডা মাথায় একটু ভেবে দেখলেই বোঝা যাবে, ‘সরকার কা মাল, দরিয়া মে ঢাল’—প্রচলিত এ বাক্যটি এখনো তার তাৎপর্য হারায়নি। সরকারি টাকা মেরে খাওয়ার নজির খুঁজতে গেলে ঠগ বাছতে গাঁ উজাড় হয়ে যাবে। কাজের চেয়ে কথায় পারদর্শী হলে উন্নয়নকাজ থাকে সংখ্যায়, বাস্তবে তার দেখা পাওয়া যায় না। সে রকম ঘটনা ঘটানোর জন্য কত ধুরন্ধর মানুষই না চেষ্টা করে যাচ্ছে! পুলিশ কর্তৃপক্ষ যদি বেঁচে যাওয়া এই টাকাগুলো হাপিস করে দিত, তাহলে কেউ সে খবর রাখত না। দরিদ্রের জন্য কাজ করার কথা বলে কত মানুষ বড়লোক হয়ে গেল, অথচ দরিদ্রের ভাগ্য পরিবর্তন হলো না। বিভিন্ন এনজিও-মারফত দিন বদলানোর স্বপ্ন যারা দেখেছে, তাদের হতাশ্বাসের শব্দ এখনো পাওয়া যায়। এ রকম ঘটনাও অনেক। তাই নিঃসম্বল নিঃসহায় আকতার বানু পুলিশের অর্থায়নে ছোট একটি বাড়ি পেয়েছেন, এ খবরটির ব্যাপ্তি মোটেই ছোট নয়।

একটি আপাত দূরবর্তী উদাহরণ দিই। আমরা খেয়াল করে দেখিনি, কী অসাধ্যসাধন করছেন আমাদের কৃষকেরা। ছোট্ট একটি জনবহুল দেশকে যেভাবে খাদ্যসম্ভার দিয়ে ভরিয়ে রেখেছেন তাঁরা, তার খবর কে রাখে? একেবারেই দরিদ্র অবস্থায় বসবাস করে দেশবাসীর জন্য বছর ধরে এই ফলন উপহার দেন কৃষক। তাঁরাই সাহস করে জানিয়ে দেন, একেবারে আশাহত হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু মাঠের সেই নায়ক আমাদের সমগ্র ভাবনাজগৎ থেকে নির্বাসিতপ্রায়। ছোট ছোট জমিতে চাষ করে তাঁরা যে বাংলাদেশকে পাল্টে দিচ্ছেন, তাতে এ দেশের নায়ক খুঁজতে কি দূরে কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন আছে? এই দিক বিবেচনা করে দেখলে ছোট ছোট সুসংবাদ কেন আমাদের জীবনের পাথেয় হওয়ার ক্ষমতা রাখে, সে কথা বোঝা যাবে।

আকতার বানুর মতো আরও অনেক ভূমিহীন নিঃসম্বল মানুষের ভাগ্য ইতিবাচকভাবে বদলে যাক, শুরু হোক সেই প্রক্রিয়া।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত