Ajker Patrika

শারদীয়ার সাজপোশাক

আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৩: ১১
শারদীয়ার সাজপোশাক

[…] বনদেবীর দ্বারে দ্বারে
শুনি গভীর শঙ্খধ্বনি,
আকাশবীণার তারে তারে
জাগে তোমার আগমনী। […]

–রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

কাশবনে লেগেছে শারদ হাওয়া। সে বাতাসে বইছে আগমনীর সুর। শিউলিতলা ভরে গেছে ফুলে ফুলে। মহালয়া পর্বের মাধ্যমে শুরু হয়ে গেছে দুর্গাপূজার প্রস্তুতি। এখন কেবল দিন গোনা শুরু। সর্বজনীন দুর্গাপূজা মানেই পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের সঙ্গে মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে বেড়ানো, জম্পেশ খাওয়াদাওয়া আর আড্ডা। সপ্তমী থেকে দশমীতে নিজেকে কীভাবে সাজাবেন, তা নিয়েই এখন যত জল্পনা-কল্পনা। প্রতিদিন সাজপোশাকে ভিন্নতা থাকা চাই। বলতে দ্বিধা নেই, পূজার দিনগুলোয় পরিধেয় হিসেবে শাড়ির বিকল্প নেই। তবে এর পাশাপাশি ভাবতে হবে নিজের আরাম আর দেখতে কতটা ভালো লাগছে, সে ব্যাপারটাও।

মানানসই শাড়ি 
মাঝারি গড়নের হলে সুতি, হ্যান্ডলুম, তসর, কোটা, সিল্ক, মসলিন, কোসা, মটকা, শিফন—সব ধরনের শাড়িই জমে যাবে আপনার সঙ্গে। একটু স্লিম যাঁরা, তাঁরা সুতি, জামদানি, কাতান পরতে পারেন। অন্যদিকে প্লাস সাইজের নারীরা সানন্দে গায়ে জড়াতে পারেন জর্জেট, হ্যান্ডলুম ও সিল্ক। তবে যেহেতু গরম, তাই দিনের বেলার জন্য সুতি শাড়ি বেছে নেওয়াই ভালো। আর রাতের জন্য বেছে নিন অন্য ফেব্রিকস।

সপ্তমীতে স্নিগ্ধ 
সপ্তমীতে একটু হালকা রঙের স্বল্প নকশার পোশাকই জুতসই। সপ্তমীর সন্ধ্যায় ক্রপ টপ বা ডিজাইনার ব্লাউজ দিয়ে পরে নেওয়া যায় মাল্টিকালার ফ্লোরাল মোটিফের বেবি পিংক বা মভ রঙের কাতান শাড়ি। এ ছাড়া পিচরঙা ট্রেডিশনাল গদোয়াল শাড়িও স্নিগ্ধতা ছড়াবে এ দিন। তবে গরমের কথা মাথায় রেখে দিনের বেলা অনায়াসে বেছে নিতে পারেন হ্যান্ডলুমের শাড়ি।

এবারের দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে কে ক্রাফট ম্যান্ডেলা ও ট্রেডিশনাল ট্রাইবাল মোটিফে শাড়ি নকশা করেছে। আর প্লেইন শাড়ির বদলে জোড়া শাড়ি নকশা করা হয়েছে। ম্যান্ডেলা নকশার শাড়িগুলোয় রঙের ক্ষেত্রে প্রাধান্য পেয়েছে লাইট স্যামন, কোরাল পিংক ও মেরুন ভেলভেট। অন্যদিকে ট্রেডিশনাল ট্রাইবাল মোটিফের শাড়িগুলোয় বার্গেন্ডি, কমলা ও পার্পল রংকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। সব শাড়িতেই মাধ্য়ম হিসেবে স্ক্রিনপ্রিন্ট ব্যবহার করা হয়েছে। 

শরিফুল হুদা বিপ্লব সিনিয়র ডিজাইনার, কে ক্রাফট 

অষ্টমীর ফিউশনে 
অষ্টমীতে একটু ভারী সাজসজ্জা করা যেতেই পারে। আলপনা, ফুল, পাখি আঁকা সিল্ক শাড়ি গায়ে তুলতেই পারেন। শাড়ির জমিন হতে পারে কমলা, সবুজ, মাস্টার্ড, টার্কিশ ব্লু ইত্যাদি রঙের। এ ছাড়া গাঢ় রঙের টেম্পল ডিজাইনের তসর শাড়িও বেশ জমে যাবে এ দিন। সিল্ক গদোয়াল শাড়িতে জরি পাড় থাকলে সঙ্গে যদি গ্লেসি ব্লাউজ পরা যায়, তবে অষ্টমীর সন্ধ্যায় মধ্যমণি হয়েও যেতে পারেন।

নবমীতে উজ্জ্বল 
নবমীর দিন একটু জমকালো পোশাক হলে ভালো লাগে দেখতে। একটু গাঢ় রং নবমীতে বেছে নিতে পারেন পরার জন্য। কাতান বা বেনারসি শাড়ির সঙ্গে ভারী নকশার ব্লাউজ উৎসবের আমেজ এনে দেবে সাজে। ব্লাউজ নিয়ে এবেলায় একটু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যেতে পারে। অফ শোল্ডার, ফুলহাতা, ফ্রিল দেওয়া সবই—যা আপনার চেহারা ও গড়নের সঙ্গে ভালো মানাবে তা-ই পরুন। ভিন্নতা আনুন ব্লাউজের রঙে, সেলাইয়ে অথবা বোতামের রঙে। 

দশমীর লাল-সাদায় 
দশমীর দিন প্রায় সবাই লাল-সাদা শাড়ি পরতে বেশি পছন্দ করেন। একেবারে সাদা পরতে না চাইলে বাদামি, অফহোয়াইটের সঙ্গে লালের মেলবন্ধন রয়েছে এমন শাড়িও পরা যায়।

পূজার সাজে: নৃত্যশিল্পী পূজা সেনগুপ্ত, শাড়ি: কে ক্রাফট, মেকআপ: রেড।সাজে উৎসবের আমেজ

সপ্তমী থেকে নবমীতে বিকেল বা সন্ধ্যার দিকে একটু ভারী সাজতে পারেন। এ সময়টায় মূলত ঘোরাঘুরির, পূজা দেখতে যাওয়া হয়। আর দশমীর দিন মেকআপের জন্য মুখে, গলায় ও ঘাড়ে ফাউন্ডেশন হালকা করে লাগিয়ে নিন। এর ওপর আলতো করে পাউডার এবং সামান্য বেজ কমপ্যাক্ট বুলিয়ে নিন। চোখের পুরো পাতায় আইশ্যাডো লাগান। চোখের ওপরের পাতায় আইলাইনার দিয়ে লাইন টেনে নিন। দুই গালে ব্লাসন বুলিয়ে দিন। লিপস্টিকের বদলে লাগান লিপগ্লস। আগেই চুল সেট করে নিন। খোঁপা করে ফুল দিতে পারেন অথবা ব্লো ডাই করে খুলে রাখতে পারেন।

রাতের সাজের সময় কোনো বাধা নেই। তবে সাজুন সময় ও যত্ন নিয়ে। প্রথমে মুখ পরিষ্কার করে টোনিং করুন। ওয়াটার বেজড ফাউন্ডেশন মুখে, গলায় ও ঘাড়ে লাগিয়ে ভালো করে ব্লেন্ড করে নিন। এর ওপর কমপ্যাক্ট পাউডার দিন। শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে চোখে গাঢ় রঙের শ্যাডো লাগিয়ে নিন। চোখের নিচে কাজল দিন।

চোখের ওপরের পাতায় আইলাইনার দিয়ে মোটা করে লাইন টেনে নিন। দুইবার করে মাসকারা লাগান। ঠোঁট এঁকে গাঢ় রঙের লিপস্টিক লাগিয়ে নিন। শাড়ি পরলে মানানসই টিপ পরুন, সঙ্গে হাতভর্তি কাচের চুড়ি। পূজা দেখার সময় অনেক হাঁটতে হয়। তাই আরামদায়ক স্যান্ডেল পরুন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত