তাপস মজুমদার
একটি ঘটনা খুব কাছের মানুষের সঙ্গে ঘটেছে। মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তির রেজাল্ট বেরিয়েছে। কাছের সেই ছেলেটি চান্স পেয়েছে। সামনেই ভর্তির তারিখ। ভর্তির সময় মার্কশিটের মূল কপি নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু বোর্ড এখন পর্যন্ত তা দেয়নি। ছেলেটি তার এক বন্ধুর কাছ থেকে জানল বোর্ডে আবেদন করার পদ্ধতি। আবেদন করে বসে আছে। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে এসএমএস আসার কথা। কিন্তু আসেনি। তখন সে তার বন্ধুকে আবার ফোন করে এবং জানতে পারে তার বন্ধুটি নিজে শিক্ষা বোর্ড অফিসে গিয়ে বিশেষ একটি রুমে এক ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করে তিন হাজার টাকা হাতে দিয়ে তার মার্কশিট হাতে হাতে পেয়েছে। আমার এই আলোচ্য ছেলেটি একই কাজ করেছে এবং পেয়ে গেছে। মার্কশিট হাতে নিয়ে সে মানসিকভাবে অস্থির হয়ে পড়েছে। বারবার বলছে, এ আমি কী করলাম! কেন করলাম! জীবনে এটাই তার প্রথম কাউকে ঘুষ দেওয়া।
উল্লেখ্য, ঘুষ নেওয়ার সময় ভদ্রলোক বলেছেন, এখানে সিসিটিভি ক্যামেরা আছে। সুতরাং ‘এখানে তুমি পকেটে হাত দিয়ো না, বাইরে চলো।’ একটি বিশেষ জায়গায়, যেখানে সিসিটিভি ক্যামেরা নেই, নিয়ে গিয়ে তার কাছ থেকে টাকাটা নিয়েছেন।
কয়েক দিন আগে বগুড়ার একটি সরকারি গার্লস স্কুলে একজন অভিভাবক, যিনি নিম্ন আদালতের একজন বিচারক, অন্য একজন অভিভাবককে প্রকাশ্যে মাফ চাইতে বাধ্য করেছেন। ঘটনাটি সারা দেশে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে।
এ সময়ে অন্য একটি ঘটনাও আলোচিত হয়েছে। স্যার না বলায় রংপুরের জেলা প্রশাসক বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের সঙ্গে অনভিপ্রেত আচরণ করেছেন।
স্যার বলা না-বলা নিয়ে ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এবং খবরের কাগজে আরও অনেক খবর ও বিশ্লেষণ বেরিয়েছে। কেউ কেউ স্যার না বলতে টেবিলে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে রেখেছেন। কেউ এত বড় ঘটনার পরও স্যার না বলায় মাইকে ঘোষণা দিয়ে অভিযোগ করেছেন। একজন অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব স্যার না বলে নাম ধরে ডাকা সমীচীন বলে মন্তব্য করেছেন। কেউ আবার নৈতিকতার যুক্তি তুলে সরকারি কর্মচারীদের পরামর্শ দিয়েছেন—সব নাগরিককে স্যার ডাকার। একজন মন্ত্রী বলেছেন, স্যার সম্বোধন করার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই ইত্যাদি।
আমি কথা দিচ্ছি, আজকের লেখায় এই ঘটনাগুলোর আলোচনার পুনরাবৃত্তি করব না। কারণ, দুটি ঘটনা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। এখন তা অনেকটা বিরক্তির পর্যায়ে। যদিও আমার মতে, আলোচনাটা জারি থাকা ভালো। কেননা, এ ধরনের সমস্যা বা অপ্রয়োজনীয় ও অনাকাঙ্ক্ষিত অবস্থার উদ্ভব মাঝে মাঝেই হচ্ছে, যা উদ্বেগজনক। আলোচনা, সমালোচনা হয়ে একটি সিদ্ধান্তের জায়গায় পৌঁছালে সব পক্ষের জন্য যেমন স্বস্তির হবে, তেমনি জাতির জন্য সেটা কল্যাণকর হবে।
ঘটনাগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে পারিপার্শ্বিক কিছু অনুধাবন আমাদের প্রয়োজন। বিষয়গুলো ভিন্ন হলেও একটা জায়গায় বোধ হয় এগুলোর মধ্যে বেশ মিল আছে। সেটা হলো আত্মসম্মানবোধ। কারও প্রখর আবার কারও তা-ও নেই।
রংপুরের ডিসির ঘটনাটি যেভাবে আয়ত্তে এনেছেন, সেটা ভালো। তিনি জেন্ডার সেনসিটিভিটির কথা বলেছেন। সরল মনে তা গ্রহণ করা যেতেও পারে। যদি তা না-ও বলতেন, তবু স্যার সম্বোধন করা বা না করার বিষয়টি শুধু রংপুরের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। সরকারি কর্মচারীদের এটা মজ্জাগত হয়ে গেছে। এখান থেকে বের হতেই হবে। কেননা, স্যার সম্বোধন প্রভু ভৃত্যের মতো শোনায়। এটা হয়তো ঔপনিবেশিক আমলের প্রভাব।
সম্প্রতি আমি একটি ঘটনা লক্ষ করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সিনিয়র প্রফেসর এবং সাবেক উপ-উপাচার্য একটি আলোচনায় ডিসি সাহেবকে ‘স্যার’ সম্বোধন করছেন (তিনি সবাইকে স্যার বলেন)। অপরপক্ষে ডিসি সাহেব সেই সিনিয়র প্রফেসরকে ‘প্রফেসর সাহেব’ বলেছেন। নিশ্চয়ই এই প্রশ্ন যুক্তিসংগত, কেন একজন ডিসি বা এডিসি একজন চিফ ইঞ্জিনিয়ার, সরকারি ব্যাংকের ডিজিএম, জিএম, কোনো হাসপাতালের প্রধান অথবা বিভাগীয় পর্যায়ের আধিকারিক, যিনি তাঁর চেয়ে পদে বড়, তাঁকে স্যার সম্বোধন করেন না (ব্যতিক্রম অবশ্য আছে)! বয়স, পদ, পেশা, ক্ষমতানির্বিশেষে সবাই সবাইকে স্যার সম্বোধন করলে বোধ হয় ‘স্যার’-এর অহংকার কমত।
একটি স্কুলের ক্লাসরুম, ভবন, মাঠ পরিষ্কার রাখার কাজটি ছেলেমেয়েদের দিয়ে করানো হয়। এটা শুধু যথার্থ নয়, প্রয়োজনীয়ও বটে। কেননা, তাতে সমতার দৃষ্টিতে দেখার বোধ এবং পরিশ্রমী, পরিচ্ছন্ন ও দায়িত্ববান মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার সুযোগ তৈরি হয়। আমার মতে, এটা সব স্কুলে চালু হওয়া উচিত। ওই ঘটনা নিয়ে আর কোনো মন্তব্য করতে চাই না। কিন্তু একজন অভিভাবক তিনি বিচারক, আমলা, ব্যবসায়ী, ব্যাংকার, কৃষক, শিক্ষক, পুলিশ, রিকশাওয়ালা, ডাক্তার, মোটর ড্রাইভার, ইঞ্জিনিয়ার যা-ই হোন না কেন, তাঁদের মর্যাদা সমান। স্কুলের ওই সব কাজের মধ্য দিয়ে ছোটবেলা থেকেই এই
বোধের উন্মেষ ঘটে।
প্রকৃতপক্ষে, আমরা শুধু ‘চাকরি’ করছি। সবাই চাকরিটাকে ‘কাজ’ হিসেবে নিচ্ছি না। সেখানে বিবেকের চর্চা করছি না। দায়িত্বকে অঙ্গীকার হিসেবে দেখছি না। সমাজের সব শ্রেণি বা পেশার মানুষের মধ্যেই ওপরে থাকার আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়ে যাচ্ছে (যাদের যেমন ক্ষমতা আছে), খানিকটা প্রভুত্ব করার প্রয়াস। সমতার চর্চাটা গড়ে উঠছে না।
মেডিকেলে ভর্তির জন্য যে মূল মার্কশিট তুলতে হবে, সেটা মেডিকেলের ভর্তির রেজাল্টের পাশাপাশি বোর্ডগুলোকে জানিয়ে দেওয়া দরকার ছিল। এখানে ব্যবস্থাপনার ত্রুটি ও সমন্বয়ের অভাব ঘটায় দুর্নীতিবাজেরা টাকা লুটে নিচ্ছে। পাশাপাশি চিরদিনের জন্য বড় ক্ষতি করছে সদ্য কৈশোর-উত্তীর্ণ তরুণদের—উন্নততর শিক্ষার শুরুতে যারা অনৈতিক পথ অবলম্বন করতে বাধ্য হচ্ছে। প্রশ্ন উঠতে পারে গলদটি আসলে কোথায়? উত্তর হবে নিশ্চয়—প্রধানত শিক্ষায়; তারপর অবৈধভাবে ক্ষমতা, পদ ও অর্থ উপার্জনের সুযোগে।
এখন এটা মানতেই হবে আমাদের সমাজে শ্রমের মর্যাদা আগের তুলনায় বেশ খানিকটা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, অথবা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পথে রয়েছে। পাশাপাশি সরকারি, বেসরকারি বা স্বনিয়োজিত সব পেশার মানুষের ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবোধ বৃদ্ধি পেয়েছে। সুতরাং সব পেশার মানুষকে সম্মান করার মানসিকতা আমাদের তৈরি করে ফেলতে হবে। মানুষকে আপন করে নেওয়ার দরদি মন তৈরি করতে হবে। সেবাগ্রহীতাকে পূর্ণ মর্যাদা দিতে হবে। আমাদের ভাবনাগুলোকে সাধারণ মানুষের ভাবনার সঙ্গে মিশিয়ে ফেলতে পারলেই সেটা সম্ভব।
আমরা কি ভেবে দেখি, যিনি একটি ভালো চাকরি করেন তাঁকে সুবিধা দেওয়া হয়েছে—নিয়মিত বেতন, সন্তানের শিক্ষা ভাতা, লাঞ্চ সাবসিডি, প্রতিদিনের যাতায়াত ভাতা অথবা গাড়ি, বাড়ি, পেনশনের ব্যবস্থা করে দিয়ে। এগুলো নিয়ে জনগণ আপত্তি করে না। এই সুবিধাগুলো পাওয়ার বিনিময়ে তিনি সেবা দেবেন—এটাই কাম্য। তিনি প্রভু হবেন, এটা কাম্য হতে পারে না। সেবাগ্রহীতা সেটাই আশা করেন। সেটা না পেলেই বিপত্তি ঘটে। দেশটা তো আমার একার না। এটা সবার।
অন্যের ওপর ক্ষমতা দেখানো অথবা দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসম্মানকে বিসর্জন না দিয়ে আমরা যদি পারি মধ্যস্বত্বভোগী কমিয়ে দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখতে, শিক্ষকদের প্রাইভেট পড়ানো বা কনসালট্যান্সি বাদ দিয়ে ক্লাসে উদ্বুদ্ধ করতে, লাশ পরিবহন নিয়ে হাসপাতাল চত্বরে তুঘলকি কাণ্ড বন্ধ করতে, বিনা ঘুষে পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স অথবা বোর্ড থেকে সার্টিফিকেট তোলার ব্যবস্থা করতে, ব্যক্তিগত কাজে অফিসের গাড়ির ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ করতে, ব্যাংকঋণের টাকা বিদেশে পাচার রোধ করতে, অন্যায়ের বিচার দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে, চাকরি, পদোন্নতি বা অফিসে কাজের জন্য তদবির ও তেলবাজির প্রথা সমূলে ধ্বংস করতে, সর্বোপরি রুচির দুর্ভিক্ষ নিবারণ করতে, তবে সেই চেষ্টাই করা উচিত। তা না হলে যে সন্তান আপনার-আমার ঘরে বড় হচ্ছে, তাদের চিতার অগ্নির মুখে পড়তে হবে।
আমাদের যে সক্ষমতা আছে, গত ১৪-১৫ বছরে সে পরিচয় আমরা দিয়েছি। কিন্তু এখনো ধ্যান-ধারণায় পরিবর্তন আনতে পারিনি। প্রকৃতপক্ষে, আত্মশক্তির ক্ষমতা উপলব্ধি করতে না পারাটাই আমাদের দারিদ্র্য।
তাপস মজুমদার, সংস্কৃতিকর্মী
একটি ঘটনা খুব কাছের মানুষের সঙ্গে ঘটেছে। মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তির রেজাল্ট বেরিয়েছে। কাছের সেই ছেলেটি চান্স পেয়েছে। সামনেই ভর্তির তারিখ। ভর্তির সময় মার্কশিটের মূল কপি নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু বোর্ড এখন পর্যন্ত তা দেয়নি। ছেলেটি তার এক বন্ধুর কাছ থেকে জানল বোর্ডে আবেদন করার পদ্ধতি। আবেদন করে বসে আছে। ৭২ ঘণ্টার মধ্যে এসএমএস আসার কথা। কিন্তু আসেনি। তখন সে তার বন্ধুকে আবার ফোন করে এবং জানতে পারে তার বন্ধুটি নিজে শিক্ষা বোর্ড অফিসে গিয়ে বিশেষ একটি রুমে এক ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করে তিন হাজার টাকা হাতে দিয়ে তার মার্কশিট হাতে হাতে পেয়েছে। আমার এই আলোচ্য ছেলেটি একই কাজ করেছে এবং পেয়ে গেছে। মার্কশিট হাতে নিয়ে সে মানসিকভাবে অস্থির হয়ে পড়েছে। বারবার বলছে, এ আমি কী করলাম! কেন করলাম! জীবনে এটাই তার প্রথম কাউকে ঘুষ দেওয়া।
উল্লেখ্য, ঘুষ নেওয়ার সময় ভদ্রলোক বলেছেন, এখানে সিসিটিভি ক্যামেরা আছে। সুতরাং ‘এখানে তুমি পকেটে হাত দিয়ো না, বাইরে চলো।’ একটি বিশেষ জায়গায়, যেখানে সিসিটিভি ক্যামেরা নেই, নিয়ে গিয়ে তার কাছ থেকে টাকাটা নিয়েছেন।
কয়েক দিন আগে বগুড়ার একটি সরকারি গার্লস স্কুলে একজন অভিভাবক, যিনি নিম্ন আদালতের একজন বিচারক, অন্য একজন অভিভাবককে প্রকাশ্যে মাফ চাইতে বাধ্য করেছেন। ঘটনাটি সারা দেশে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে।
এ সময়ে অন্য একটি ঘটনাও আলোচিত হয়েছে। স্যার না বলায় রংপুরের জেলা প্রশাসক বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষকের সঙ্গে অনভিপ্রেত আচরণ করেছেন।
স্যার বলা না-বলা নিয়ে ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এবং খবরের কাগজে আরও অনেক খবর ও বিশ্লেষণ বেরিয়েছে। কেউ কেউ স্যার না বলতে টেবিলে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে রেখেছেন। কেউ এত বড় ঘটনার পরও স্যার না বলায় মাইকে ঘোষণা দিয়ে অভিযোগ করেছেন। একজন অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব স্যার না বলে নাম ধরে ডাকা সমীচীন বলে মন্তব্য করেছেন। কেউ আবার নৈতিকতার যুক্তি তুলে সরকারি কর্মচারীদের পরামর্শ দিয়েছেন—সব নাগরিককে স্যার ডাকার। একজন মন্ত্রী বলেছেন, স্যার সম্বোধন করার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই ইত্যাদি।
আমি কথা দিচ্ছি, আজকের লেখায় এই ঘটনাগুলোর আলোচনার পুনরাবৃত্তি করব না। কারণ, দুটি ঘটনা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। এখন তা অনেকটা বিরক্তির পর্যায়ে। যদিও আমার মতে, আলোচনাটা জারি থাকা ভালো। কেননা, এ ধরনের সমস্যা বা অপ্রয়োজনীয় ও অনাকাঙ্ক্ষিত অবস্থার উদ্ভব মাঝে মাঝেই হচ্ছে, যা উদ্বেগজনক। আলোচনা, সমালোচনা হয়ে একটি সিদ্ধান্তের জায়গায় পৌঁছালে সব পক্ষের জন্য যেমন স্বস্তির হবে, তেমনি জাতির জন্য সেটা কল্যাণকর হবে।
ঘটনাগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে পারিপার্শ্বিক কিছু অনুধাবন আমাদের প্রয়োজন। বিষয়গুলো ভিন্ন হলেও একটা জায়গায় বোধ হয় এগুলোর মধ্যে বেশ মিল আছে। সেটা হলো আত্মসম্মানবোধ। কারও প্রখর আবার কারও তা-ও নেই।
রংপুরের ডিসির ঘটনাটি যেভাবে আয়ত্তে এনেছেন, সেটা ভালো। তিনি জেন্ডার সেনসিটিভিটির কথা বলেছেন। সরল মনে তা গ্রহণ করা যেতেও পারে। যদি তা না-ও বলতেন, তবু স্যার সম্বোধন করা বা না করার বিষয়টি শুধু রংপুরের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। সরকারি কর্মচারীদের এটা মজ্জাগত হয়ে গেছে। এখান থেকে বের হতেই হবে। কেননা, স্যার সম্বোধন প্রভু ভৃত্যের মতো শোনায়। এটা হয়তো ঔপনিবেশিক আমলের প্রভাব।
সম্প্রতি আমি একটি ঘটনা লক্ষ করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সিনিয়র প্রফেসর এবং সাবেক উপ-উপাচার্য একটি আলোচনায় ডিসি সাহেবকে ‘স্যার’ সম্বোধন করছেন (তিনি সবাইকে স্যার বলেন)। অপরপক্ষে ডিসি সাহেব সেই সিনিয়র প্রফেসরকে ‘প্রফেসর সাহেব’ বলেছেন। নিশ্চয়ই এই প্রশ্ন যুক্তিসংগত, কেন একজন ডিসি বা এডিসি একজন চিফ ইঞ্জিনিয়ার, সরকারি ব্যাংকের ডিজিএম, জিএম, কোনো হাসপাতালের প্রধান অথবা বিভাগীয় পর্যায়ের আধিকারিক, যিনি তাঁর চেয়ে পদে বড়, তাঁকে স্যার সম্বোধন করেন না (ব্যতিক্রম অবশ্য আছে)! বয়স, পদ, পেশা, ক্ষমতানির্বিশেষে সবাই সবাইকে স্যার সম্বোধন করলে বোধ হয় ‘স্যার’-এর অহংকার কমত।
একটি স্কুলের ক্লাসরুম, ভবন, মাঠ পরিষ্কার রাখার কাজটি ছেলেমেয়েদের দিয়ে করানো হয়। এটা শুধু যথার্থ নয়, প্রয়োজনীয়ও বটে। কেননা, তাতে সমতার দৃষ্টিতে দেখার বোধ এবং পরিশ্রমী, পরিচ্ছন্ন ও দায়িত্ববান মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার সুযোগ তৈরি হয়। আমার মতে, এটা সব স্কুলে চালু হওয়া উচিত। ওই ঘটনা নিয়ে আর কোনো মন্তব্য করতে চাই না। কিন্তু একজন অভিভাবক তিনি বিচারক, আমলা, ব্যবসায়ী, ব্যাংকার, কৃষক, শিক্ষক, পুলিশ, রিকশাওয়ালা, ডাক্তার, মোটর ড্রাইভার, ইঞ্জিনিয়ার যা-ই হোন না কেন, তাঁদের মর্যাদা সমান। স্কুলের ওই সব কাজের মধ্য দিয়ে ছোটবেলা থেকেই এই
বোধের উন্মেষ ঘটে।
প্রকৃতপক্ষে, আমরা শুধু ‘চাকরি’ করছি। সবাই চাকরিটাকে ‘কাজ’ হিসেবে নিচ্ছি না। সেখানে বিবেকের চর্চা করছি না। দায়িত্বকে অঙ্গীকার হিসেবে দেখছি না। সমাজের সব শ্রেণি বা পেশার মানুষের মধ্যেই ওপরে থাকার আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়ে যাচ্ছে (যাদের যেমন ক্ষমতা আছে), খানিকটা প্রভুত্ব করার প্রয়াস। সমতার চর্চাটা গড়ে উঠছে না।
মেডিকেলে ভর্তির জন্য যে মূল মার্কশিট তুলতে হবে, সেটা মেডিকেলের ভর্তির রেজাল্টের পাশাপাশি বোর্ডগুলোকে জানিয়ে দেওয়া দরকার ছিল। এখানে ব্যবস্থাপনার ত্রুটি ও সমন্বয়ের অভাব ঘটায় দুর্নীতিবাজেরা টাকা লুটে নিচ্ছে। পাশাপাশি চিরদিনের জন্য বড় ক্ষতি করছে সদ্য কৈশোর-উত্তীর্ণ তরুণদের—উন্নততর শিক্ষার শুরুতে যারা অনৈতিক পথ অবলম্বন করতে বাধ্য হচ্ছে। প্রশ্ন উঠতে পারে গলদটি আসলে কোথায়? উত্তর হবে নিশ্চয়—প্রধানত শিক্ষায়; তারপর অবৈধভাবে ক্ষমতা, পদ ও অর্থ উপার্জনের সুযোগে।
এখন এটা মানতেই হবে আমাদের সমাজে শ্রমের মর্যাদা আগের তুলনায় বেশ খানিকটা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, অথবা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পথে রয়েছে। পাশাপাশি সরকারি, বেসরকারি বা স্বনিয়োজিত সব পেশার মানুষের ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবোধ বৃদ্ধি পেয়েছে। সুতরাং সব পেশার মানুষকে সম্মান করার মানসিকতা আমাদের তৈরি করে ফেলতে হবে। মানুষকে আপন করে নেওয়ার দরদি মন তৈরি করতে হবে। সেবাগ্রহীতাকে পূর্ণ মর্যাদা দিতে হবে। আমাদের ভাবনাগুলোকে সাধারণ মানুষের ভাবনার সঙ্গে মিশিয়ে ফেলতে পারলেই সেটা সম্ভব।
আমরা কি ভেবে দেখি, যিনি একটি ভালো চাকরি করেন তাঁকে সুবিধা দেওয়া হয়েছে—নিয়মিত বেতন, সন্তানের শিক্ষা ভাতা, লাঞ্চ সাবসিডি, প্রতিদিনের যাতায়াত ভাতা অথবা গাড়ি, বাড়ি, পেনশনের ব্যবস্থা করে দিয়ে। এগুলো নিয়ে জনগণ আপত্তি করে না। এই সুবিধাগুলো পাওয়ার বিনিময়ে তিনি সেবা দেবেন—এটাই কাম্য। তিনি প্রভু হবেন, এটা কাম্য হতে পারে না। সেবাগ্রহীতা সেটাই আশা করেন। সেটা না পেলেই বিপত্তি ঘটে। দেশটা তো আমার একার না। এটা সবার।
অন্যের ওপর ক্ষমতা দেখানো অথবা দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসম্মানকে বিসর্জন না দিয়ে আমরা যদি পারি মধ্যস্বত্বভোগী কমিয়ে দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখতে, শিক্ষকদের প্রাইভেট পড়ানো বা কনসালট্যান্সি বাদ দিয়ে ক্লাসে উদ্বুদ্ধ করতে, লাশ পরিবহন নিয়ে হাসপাতাল চত্বরে তুঘলকি কাণ্ড বন্ধ করতে, বিনা ঘুষে পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স অথবা বোর্ড থেকে সার্টিফিকেট তোলার ব্যবস্থা করতে, ব্যক্তিগত কাজে অফিসের গাড়ির ব্যবহার সম্পূর্ণ বন্ধ করতে, ব্যাংকঋণের টাকা বিদেশে পাচার রোধ করতে, অন্যায়ের বিচার দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে, চাকরি, পদোন্নতি বা অফিসে কাজের জন্য তদবির ও তেলবাজির প্রথা সমূলে ধ্বংস করতে, সর্বোপরি রুচির দুর্ভিক্ষ নিবারণ করতে, তবে সেই চেষ্টাই করা উচিত। তা না হলে যে সন্তান আপনার-আমার ঘরে বড় হচ্ছে, তাদের চিতার অগ্নির মুখে পড়তে হবে।
আমাদের যে সক্ষমতা আছে, গত ১৪-১৫ বছরে সে পরিচয় আমরা দিয়েছি। কিন্তু এখনো ধ্যান-ধারণায় পরিবর্তন আনতে পারিনি। প্রকৃতপক্ষে, আত্মশক্তির ক্ষমতা উপলব্ধি করতে না পারাটাই আমাদের দারিদ্র্য।
তাপস মজুমদার, সংস্কৃতিকর্মী
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি বেড়েই চলছে। এ কারণে চালক ও যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছে এই সড়ক। ডাকাতির শিকার বেশি হচ্ছেন প্রবাসফেরত লোকজন। ডাকাতেরা অস্ত্র ঠেকিয়ে লুট করে নিচ্ছে সর্বস্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও ঘটছে ডাকাতির ঘটনা।
০২ মার্চ ২০২৫বিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
১৬ জানুয়ারি ২০২৫গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪