মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপান সরকারের আমন্ত্রণে ২৫ এপ্রিল চার দিনের সফরে ঢাকা ত্যাগ করেছেন। জাপান সফর শেষে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের সহযোগিতা প্রতিষ্ঠার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন উপলক্ষে তিনি ওয়াশিংটনে যাবেন। সেখান থেকে কমনওয়েলথ দেশের রাজা তৃতীয় চার্লস ও তাঁর পত্নী ক্যামিলার রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য লন্ডনে যাবেন। তিন দেশে তাঁর এই সফর ১৫ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর আগামী ৯ মে তিনি দেশে ফিরবেন বলে আশা করা হচ্ছে। শেখ হাসিনার এই মেয়াদের প্রায় শেষ সময়ে এসে তাঁর এই তিন দেশে সফরটি বাংলাদেশের সঙ্গে জাপান, আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক ও কমনওয়েলথের সম্পর্ক সহযোগিতার সক্ষমতার নতুন উচ্চতার সাক্ষ্য দিচ্ছে।
স্বার্থসংশ্লিষ্টতার বিবেচনায় তাঁর এই তিন দেশের সফরের মধ্যে জাপানের সফরই সবচেয়ে বেশি তাৎপর্য বহন করছে। জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার কার্যালয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে কৃষি, শুল্কবিষয়ক, প্রতিরক্ষা, আইসিটি ও সাইবার নিরাপত্তা, শিল্প আপগ্রেডিং, বুদ্ধিভিত্তিক সম্পদ, জাহাজ পুনর্ব্যবহার এবং মেট্রোরেল বিষয়ে আটটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। জাপানের সম্রাট নারুহিতোর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিভিন্ন উন্নয়ন-সহযোগীর প্রধানদের সঙ্গেও তাঁর অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ-জাপানের মধ্যকার বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ‘ব্যাপক অংশীদারত্ব’ থেকে সফলভাবে ‘কৌশলগত অংশীদারত্বে’ পৌঁছেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিভিন্ন আলোচনায় দুই দেশের অর্থনৈতিক, ভূরাজনৈতিক এবং ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতার বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে। এ সম্পর্কে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা গত মার্চ মাসে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব ওয়ার্ল্ড অ্যাফেয়ার্স’-এর বৈঠকে পরিষ্কার বলেছেন, ‘বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চল আর উত্তর-পূর্ব ভারতের শিল্পোন্নয়নে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে একটা যৌথ অর্থনৈতিক পথনির্দেশিকা তৈরি করা হবে।’ জাপানের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ দাই সুকে সিনতানি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘গোটা জাপান এখন তাকিয়ে রয়েছে শেখ হাসিনার এই সফরের দিকে।’ এ ছাড়া ওয়াশিংটন উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন-সহযোগী জাপান দীর্ঘদিন ধরে কৌশলগত তাৎপর্য সম্পর্কে অবগত, যে কারণে তারা প্রায় পাঁচ বছর আগে সেখানে একটি বন্দর উন্নয়নের কাজ শুরু করে।’ জাপানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরটি এই সব বিবেচনা থেকে সব আন্তর্জাতিক মহলকেই বেশ গভীর পর্যবেক্ষণে রাখতে দেখা গেছে, যা সচরাচর অন্য অনেক দেশের ক্ষেত্রেই খুব একটা দেখা যায় না।
জাপান-বাংলাদেশের সম্পর্ক মুক্তিযুদ্ধের সময়কাল থেকেই ক্রমবর্ধমানভাবে বাড়ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই সম্পর্কের ভিত্তি রচনা করে গেছেন। শেখ হাসিনার সরকার সেই সম্পর্ককে বিস্তৃত ও গভীরতর করেছে। বিশেষত ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরকালে তৎকালীন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সঙ্গে একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যাতে ৬০০ বিলিয়ন ইয়েন বা তখনকার সময়ে ৬ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের ওডিএ (অফিশিয়াল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিসটেন্স) ঋণ দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করার ফলে বাংলাদেশের ওপর জাপানের আস্থা বহুগুণ বেড়েছে। বাংলাদেশ কার্যত বড় বড় মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করার সক্ষমতা অর্জন করার মাধ্যমে শুধু জাপানই নয়, বিশ্বের বড় বড় উন্নত দেশ ও দাতা সংস্থাসমূহের বিশেষ নজর কাড়ে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ এই অঞ্চলের অন্যতম গতিশীল অর্থনৈতিক দেশ হিসেবেও পরিচিতি লাভ করেছে। কৌশলগত ভূপ্রাকৃতিক অবস্থানের দিক থেকেও বাংলাদেশ ও এর জলসীমানায় ব্লু ইকোনমির সম্ভাবনা সব বৃহৎ শক্তির মনোযোগের অন্যতম একটি কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে কেন্দ্র করে কয়েক বছর ধরে ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে (আইপিএস) অংশ নেওয়া নিয়ে কাজ করছে বিভিন্ন দেশ ও জোট।
বাংলাদেশ নীতিগতভাবেই কোনো সামরিক বা বৃহৎ শক্তির জোটের অংশীজন হওয়ার অবস্থান থেকে দূরে থাকার কথা দৃঢ়ভাবে বলে এসেছে। বাংলাদেশের মূল লক্ষ্য হচ্ছে সব দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের উন্নয়নকে সবার আগে গুরুত্ব দেওয়া। এই নীতি ধরে রাখার কারণেই বাংলাদেশ গত কয়েক বছরে আন্তর্জাতিক নানা সংকট ও জটিলতাকে চমৎকারভাবে মোকাবিলা করার সক্ষমতা প্রদর্শন করতে পেরেছে। বাংলাদেশ যেকোনো ধরনের সামরিক শক্তির সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ার অবস্থান থেকে দূরে থাকতে বদ্ধপরিকর। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের নানা ধরনের চাপ ও কৌশলও বাংলাদেশকে কূটনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে হয়েছে। এর ফলে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বৃহৎ শক্তিসমূহের মধ্যে সামরিক জোট ও অর্থনৈতিক স্বার্থসংশ্লিষ্টতা নিয়ে ঠান্ডা লড়াই কখনো কখনো চরম আকার ধারণ করলেও বাংলাদেশ কারও সঙ্গেই বৈরিতার সম্পর্কে যুক্ত হয়নি। ফলে ভারত, চীন, জাপানসহ নিকটবর্তী দেশসমূহের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা ও সম্পর্কের ক্ষেত্রে চমৎকার আস্থার বন্ধন তৈরি হয়েছে।
জাপান এই আস্থার প্রতিদান হিসেবেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বর্তমান সফরকে নিয়েছে। বাংলাদেশও তার অবস্থান প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফরের প্রাক্কালে চার মৌলিক নীতিমালা এবং ১৫ অভিলক্ষ্য নিয়ে ইন্দো-প্যাসিফিক রূপরেখা উপস্থাপন করেছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে অটুট থাকা, বিদেশি রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা, আন্তর্জাতিক বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান, জাতিসংঘ সনদের নীতিসমূহের প্রতি শ্রদ্ধাসহ আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে শক্তি প্রয়োগ পরিহারের মতো বিষয়গুলো যুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ওপর জোর দিয়ে সামরিক বিষয়গুলোকে পরিহার করেছে। এর ফলে বাংলাদেশের গভীর সমুদ্রবন্দরে জাপানের বিনিয়োগ বাংলাদেশ, ভারত ও জাপানের মধ্যে আরও ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রেও ভারসাম্য রক্ষিত হবে। বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অর্থনীতি, কূটনীতি এবং সম্পর্কের দৃঢ় অবস্থানকে যে মাত্রায় উন্নীত করতে পেরেছে, তার ফল সব দেশের সঙ্গেই আলোচনায় দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে যেমনভাবে ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক অবস্থানে নেওয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখছে, একইভাবে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নানা মাত্রিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আস্থা সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তাকে যেভাবে গুরুত্ব দিচ্ছেন, তা বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নতিতে যেমন ভূমিকা রাখছে, তেমনি অভ্যন্তরীণ এবং বহির্দেশীয় জঙ্গিবাদের প্রভাব থেকে মুক্ত রাখতে পেরেছে। এর ফলে জাপানের মতো রাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে হোলি আর্টিজেনের মতো নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডে জাপানি সংস্থা জাইকার বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ নিহত হওয়ার পরও অর্থনৈতিক সহযোগিতার সম্পর্ক দ্বিধাহীন চিত্তে বৃদ্ধি করে চলছে। বাংলাদেশ সামরিক জোট এড়িয়ে চললেও নিজস্ব সামরিক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রযুক্তি, প্রশিক্ষণ ও উন্নত শৃঙ্খলাবোধ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয়ভাবে বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতার সম্পর্ক বৃদ্ধি করে চলছে। বিশেষত জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে অংশ নেওয়ার জন্য বাংলাদেশের এসব বাহিনীর প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণগত দক্ষতার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হয়েছে। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার বিষয়টিও বিবেচনার বাইরে নয়। সে কারণে বিভিন্ন দেশ থেকে সামরিক অস্ত্র ক্রয়ে বাংলাদেশ একটি ভারসাম্যমূলক নীতি অনুসরণ করে চলেছে। জাপানের সঙ্গে এই সফরকালে সামরিক সহযোগিতার বিষয়টিও সে কারণেই প্রাধান্য পেয়েছে।
জাপান সফর শেষে তিনি আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগদানের মাধ্যমে উন্নয়ন-সহযোগী এ দুই সংস্থার সঙ্গে বাংলাদেশকে সহযোগিতার বিষয়টি নতুনভাবে ঢেলে সাজাতে পরামর্শ দেবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। লন্ডনে রাজা ও তাঁর স্ত্রীর অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগদানের মাধ্যমে তিনি কমনওয়েলথের সঙ্গে সম্পর্ক ছাড়াও উপস্থিত নেতাদের সঙ্গে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে কথা বলার সুযোগ পাবেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এই সাক্ষাৎ হবে অনেকের সঙ্গে শেখ হাসিনার দীর্ঘদিনের সরকারপ্রধানের দায়িত্ব পালনকালের চেনাজানা ও পূর্ব পরিচয়ের মিলন ঘটানো, যার মাধ্যমে বাংলাদেশ লাভবান হতে পারে।
মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী, অধ্যাপক, ইতিহাসবিদ ও কলামিস্ট
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপান সরকারের আমন্ত্রণে ২৫ এপ্রিল চার দিনের সফরে ঢাকা ত্যাগ করেছেন। জাপান সফর শেষে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের সহযোগিতা প্রতিষ্ঠার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন উপলক্ষে তিনি ওয়াশিংটনে যাবেন। সেখান থেকে কমনওয়েলথ দেশের রাজা তৃতীয় চার্লস ও তাঁর পত্নী ক্যামিলার রাজ্যাভিষেক অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য লন্ডনে যাবেন। তিন দেশে তাঁর এই সফর ১৫ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর আগামী ৯ মে তিনি দেশে ফিরবেন বলে আশা করা হচ্ছে। শেখ হাসিনার এই মেয়াদের প্রায় শেষ সময়ে এসে তাঁর এই তিন দেশে সফরটি বাংলাদেশের সঙ্গে জাপান, আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক ও কমনওয়েলথের সম্পর্ক সহযোগিতার সক্ষমতার নতুন উচ্চতার সাক্ষ্য দিচ্ছে।
স্বার্থসংশ্লিষ্টতার বিবেচনায় তাঁর এই তিন দেশের সফরের মধ্যে জাপানের সফরই সবচেয়ে বেশি তাৎপর্য বহন করছে। জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার কার্যালয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে কৃষি, শুল্কবিষয়ক, প্রতিরক্ষা, আইসিটি ও সাইবার নিরাপত্তা, শিল্প আপগ্রেডিং, বুদ্ধিভিত্তিক সম্পদ, জাহাজ পুনর্ব্যবহার এবং মেট্রোরেল বিষয়ে আটটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। জাপানের সম্রাট নারুহিতোর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিভিন্ন উন্নয়ন-সহযোগীর প্রধানদের সঙ্গেও তাঁর অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ-জাপানের মধ্যকার বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ‘ব্যাপক অংশীদারত্ব’ থেকে সফলভাবে ‘কৌশলগত অংশীদারত্বে’ পৌঁছেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিভিন্ন আলোচনায় দুই দেশের অর্থনৈতিক, ভূরাজনৈতিক এবং ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতার বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে। এ সম্পর্কে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা গত মার্চ মাসে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব ওয়ার্ল্ড অ্যাফেয়ার্স’-এর বৈঠকে পরিষ্কার বলেছেন, ‘বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চল আর উত্তর-পূর্ব ভারতের শিল্পোন্নয়নে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে একটা যৌথ অর্থনৈতিক পথনির্দেশিকা তৈরি করা হবে।’ জাপানের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ দাই সুকে সিনতানি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘গোটা জাপান এখন তাকিয়ে রয়েছে শেখ হাসিনার এই সফরের দিকে।’ এ ছাড়া ওয়াশিংটন উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন-সহযোগী জাপান দীর্ঘদিন ধরে কৌশলগত তাৎপর্য সম্পর্কে অবগত, যে কারণে তারা প্রায় পাঁচ বছর আগে সেখানে একটি বন্দর উন্নয়নের কাজ শুরু করে।’ জাপানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরটি এই সব বিবেচনা থেকে সব আন্তর্জাতিক মহলকেই বেশ গভীর পর্যবেক্ষণে রাখতে দেখা গেছে, যা সচরাচর অন্য অনেক দেশের ক্ষেত্রেই খুব একটা দেখা যায় না।
জাপান-বাংলাদেশের সম্পর্ক মুক্তিযুদ্ধের সময়কাল থেকেই ক্রমবর্ধমানভাবে বাড়ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই সম্পর্কের ভিত্তি রচনা করে গেছেন। শেখ হাসিনার সরকার সেই সম্পর্ককে বিস্তৃত ও গভীরতর করেছে। বিশেষত ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরকালে তৎকালীন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সঙ্গে একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যাতে ৬০০ বিলিয়ন ইয়েন বা তখনকার সময়ে ৬ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের ওডিএ (অফিশিয়াল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিসটেন্স) ঋণ দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করার ফলে বাংলাদেশের ওপর জাপানের আস্থা বহুগুণ বেড়েছে। বাংলাদেশ কার্যত বড় বড় মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করার সক্ষমতা অর্জন করার মাধ্যমে শুধু জাপানই নয়, বিশ্বের বড় বড় উন্নত দেশ ও দাতা সংস্থাসমূহের বিশেষ নজর কাড়ে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ এই অঞ্চলের অন্যতম গতিশীল অর্থনৈতিক দেশ হিসেবেও পরিচিতি লাভ করেছে। কৌশলগত ভূপ্রাকৃতিক অবস্থানের দিক থেকেও বাংলাদেশ ও এর জলসীমানায় ব্লু ইকোনমির সম্ভাবনা সব বৃহৎ শক্তির মনোযোগের অন্যতম একটি কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে কেন্দ্র করে কয়েক বছর ধরে ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে (আইপিএস) অংশ নেওয়া নিয়ে কাজ করছে বিভিন্ন দেশ ও জোট।
বাংলাদেশ নীতিগতভাবেই কোনো সামরিক বা বৃহৎ শক্তির জোটের অংশীজন হওয়ার অবস্থান থেকে দূরে থাকার কথা দৃঢ়ভাবে বলে এসেছে। বাংলাদেশের মূল লক্ষ্য হচ্ছে সব দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের উন্নয়নকে সবার আগে গুরুত্ব দেওয়া। এই নীতি ধরে রাখার কারণেই বাংলাদেশ গত কয়েক বছরে আন্তর্জাতিক নানা সংকট ও জটিলতাকে চমৎকারভাবে মোকাবিলা করার সক্ষমতা প্রদর্শন করতে পেরেছে। বাংলাদেশ যেকোনো ধরনের সামরিক শক্তির সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ার অবস্থান থেকে দূরে থাকতে বদ্ধপরিকর। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের নানা ধরনের চাপ ও কৌশলও বাংলাদেশকে কূটনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে হয়েছে। এর ফলে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বৃহৎ শক্তিসমূহের মধ্যে সামরিক জোট ও অর্থনৈতিক স্বার্থসংশ্লিষ্টতা নিয়ে ঠান্ডা লড়াই কখনো কখনো চরম আকার ধারণ করলেও বাংলাদেশ কারও সঙ্গেই বৈরিতার সম্পর্কে যুক্ত হয়নি। ফলে ভারত, চীন, জাপানসহ নিকটবর্তী দেশসমূহের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা ও সম্পর্কের ক্ষেত্রে চমৎকার আস্থার বন্ধন তৈরি হয়েছে।
জাপান এই আস্থার প্রতিদান হিসেবেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বর্তমান সফরকে নিয়েছে। বাংলাদেশও তার অবস্থান প্রধানমন্ত্রীর জাপান সফরের প্রাক্কালে চার মৌলিক নীতিমালা এবং ১৫ অভিলক্ষ্য নিয়ে ইন্দো-প্যাসিফিক রূপরেখা উপস্থাপন করেছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে অটুট থাকা, বিদেশি রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা, আন্তর্জাতিক বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান, জাতিসংঘ সনদের নীতিসমূহের প্রতি শ্রদ্ধাসহ আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে শক্তি প্রয়োগ পরিহারের মতো বিষয়গুলো যুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ওপর জোর দিয়ে সামরিক বিষয়গুলোকে পরিহার করেছে। এর ফলে বাংলাদেশের গভীর সমুদ্রবন্দরে জাপানের বিনিয়োগ বাংলাদেশ, ভারত ও জাপানের মধ্যে আরও ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রেও ভারসাম্য রক্ষিত হবে। বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অর্থনীতি, কূটনীতি এবং সম্পর্কের দৃঢ় অবস্থানকে যে মাত্রায় উন্নীত করতে পেরেছে, তার ফল সব দেশের সঙ্গেই আলোচনায় দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে যেমনভাবে ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক অবস্থানে নেওয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখছে, একইভাবে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নানা মাত্রিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আস্থা সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তাকে যেভাবে গুরুত্ব দিচ্ছেন, তা বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নতিতে যেমন ভূমিকা রাখছে, তেমনি অভ্যন্তরীণ এবং বহির্দেশীয় জঙ্গিবাদের প্রভাব থেকে মুক্ত রাখতে পেরেছে। এর ফলে জাপানের মতো রাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে হোলি আর্টিজেনের মতো নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডে জাপানি সংস্থা জাইকার বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ নিহত হওয়ার পরও অর্থনৈতিক সহযোগিতার সম্পর্ক দ্বিধাহীন চিত্তে বৃদ্ধি করে চলছে। বাংলাদেশ সামরিক জোট এড়িয়ে চললেও নিজস্ব সামরিক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রযুক্তি, প্রশিক্ষণ ও উন্নত শৃঙ্খলাবোধ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয়ভাবে বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতার সম্পর্ক বৃদ্ধি করে চলছে। বিশেষত জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে অংশ নেওয়ার জন্য বাংলাদেশের এসব বাহিনীর প্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণগত দক্ষতার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হয়েছে। অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার বিষয়টিও বিবেচনার বাইরে নয়। সে কারণে বিভিন্ন দেশ থেকে সামরিক অস্ত্র ক্রয়ে বাংলাদেশ একটি ভারসাম্যমূলক নীতি অনুসরণ করে চলেছে। জাপানের সঙ্গে এই সফরকালে সামরিক সহযোগিতার বিষয়টিও সে কারণেই প্রাধান্য পেয়েছে।
জাপান সফর শেষে তিনি আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগদানের মাধ্যমে উন্নয়ন-সহযোগী এ দুই সংস্থার সঙ্গে বাংলাদেশকে সহযোগিতার বিষয়টি নতুনভাবে ঢেলে সাজাতে পরামর্শ দেবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। লন্ডনে রাজা ও তাঁর স্ত্রীর অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগদানের মাধ্যমে তিনি কমনওয়েলথের সঙ্গে সম্পর্ক ছাড়াও উপস্থিত নেতাদের সঙ্গে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে কথা বলার সুযোগ পাবেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এই সাক্ষাৎ হবে অনেকের সঙ্গে শেখ হাসিনার দীর্ঘদিনের সরকারপ্রধানের দায়িত্ব পালনকালের চেনাজানা ও পূর্ব পরিচয়ের মিলন ঘটানো, যার মাধ্যমে বাংলাদেশ লাভবান হতে পারে।
মমতাজউদ্দীন পাটোয়ারী, অধ্যাপক, ইতিহাসবিদ ও কলামিস্ট
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি বেড়েই চলছে। এ কারণে চালক ও যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছে এই সড়ক। ডাকাতির শিকার বেশি হচ্ছেন প্রবাসফেরত লোকজন। ডাকাতেরা অস্ত্র ঠেকিয়ে লুট করে নিচ্ছে সর্বস্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও ঘটছে ডাকাতির ঘটনা।
০২ মার্চ ২০২৫বিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
১৬ জানুয়ারি ২০২৫গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪