চিররঞ্জন সরকার
অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের প্রায় আড়াই মাস হয়ে গেল। কিন্তু নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না। কোথাও পণ্যের কমতি নেই, তবু পণ্যের দাম আকাশছোঁয়া। বেশি দামের কারণে নিম্ন আয়ের মানুষ তো বটেই, মধ্যবিত্তরাও এখন দিশেহারা।
কোনো টোটকাতেই বাগে আসছে না নিত্যপণ্যের বল্গাহীন বাজার। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও বাজার ছিল নিয়ন্ত্রণহীন। নির্দলীয় অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া মানুষের আশা ছিল সিন্ডিকেট বন্ধ হবে, দামের তেজ কমবে। তবে সেই আশাতেও যেন গুড়ে বালি!
গেল এক মাসে, বিশেষ করে সবজির দামে ক্রেতার চোখ কপালে ঠেকেছে! পাশাপাশি ডিম-মুরগিসহ সবকিছুর দামই লাফিয়ে বাড়ছে। ফলে নির্দিষ্ট আয়ের সাধারণ মানুষ জীবন চালাতে খেই হারিয়ে ফেলছেন। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর দফায় দফায় বৈঠক করছে। জেলায় জেলায় হয়েছে বিশেষ টাস্কফোর্স; নিয়মিত তদারকিও হচ্ছে। সিন্ডিকেট ধরতে চলছে অভিযান-জরিমানা। দেশের বাইরে থেকে আসছে পণ্য। স্বয়ং বাণিজ্য উপদেষ্টা নিজেই বাজার তদারকিতে মাঠে নেমেছেন। সরকারের এতসব পদক্ষেপের যোগফল ‘শূন্য’।
ক্রেতাকে ‘স্বস্তি’ দিতে নতুন সরকার নতুন উদ্যোগও নিয়েছে। গেল সপ্তাহ থেকে রাজধানীতে ওপেন মার্কেট সেলের (ওএমএস) আওতায় আলু, ডিম, পেঁয়াজের পাশাপাশি বিভিন্ন সবজি বিক্রি শুরু করেছে। সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে কিনে রাজধানীর নির্দিষ্ট ২০টি স্থানে সুলভ মূল্যে সবজি বিক্রি করছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। কিন্তু তারপরও বাজারে তেমন কোনো ইতিবাচক প্রভাব লক্ষ করা যাচ্ছে না। অবশ্য বিশাল এই রাজধানীতে মাত্র ২০টি স্থানে সুলভ মূল্যে সবজি বিক্রি সিন্ধুতে জলের বিন্দুর মতোই।
বর্ষা-বন্যার কারণে কিছুটা বাড়তি দাম মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন পণ্যের দাম যেভাবে বাড়ানো হয়েছে, সেটা রীতিমতো কারসাজি। চাল-ডাল-তেল-মাছ-মাংস-চিনি-ডিমের দাম তো বাড়ছেই, এর সঙ্গে যোগ হয়েছে শাকসবজির ঊর্ধ্বমূল্য। বেশির ভাগ সবজির কেজি ৮০ বা ১০০ টাকার ওপরে। নাগালের মধ্যে নেই আলু, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, মরিচের মতো পণ্যও। ডিম, তেল, চিনিসহ সরকার থেকে কয়েকটি পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও তার চেয়ে বেশি দামে পণ্য বিক্রি হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ সরকার নেই, নেই পুরোনো সিন্ডিকেট। আকাশছোঁয়া দাম ঠেকাতে সরকারের টাস্কফোর্সও রয়েছে। কিন্তু তারপরেও তরিতরকারিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম এভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে কেন বাড়ছে, তার উত্তর মিলছে না। দাম বাড়ার নেপথ্যে যৌক্তিক কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
অনেকের মতে, অসৎ ব্যবসায়ী ও মধ্যস্থতাকারীদের কারসাজির জন্যই মূলত পণ্যমূল্য বাড়ছে। বিশ্ববাজারে বেশ কিছু পণ্যের দাম কমেছে। কিন্তু বাংলাদেশে তার প্রভাব নেই। বরং উল্টো জিনিসের দাম বেড়েছে। সরকার বলছে, বর্তমানে পরিবহনে চাঁদাবাজি কমেছে।
এ ছাড়া ২৯টি পণ্যের আমদানি শুল্ক কমানো হলেও তার প্রভাবও বাজারে দেখা যাচ্ছে না। পুলিশ প্রটেকশন না পাওয়ায় জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরও ঠিকঠাক কাজ করতে পারছে না। এ জন্য আগের মতোই নিয়ন্ত্রণহীন বাজার। ভোক্তাদের জীবন চালানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে। সরকার বদলালেও বাজার বা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য কমেনি। পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারেরও তেমন কোনো মাথাব্যথা আছে বলে মনে হচ্ছে না। পণ্যের দাম বাড়ার জন্য বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা দায়ী করেছেন সিন্ডিকেটকে।
সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, এসব সিন্ডিকেট ভাঙতে সরকারের বাধা কোথায়? আবার অনেকে দাম বাড়ার পেছনে বাজার ব্যবস্থাপনায় সরকারের নিয়ন্ত্রণের অভাব এবং বাজারে চাহিদা ও জোগান সম্পর্কিত তথ্যে স্বচ্ছতার অভাবকে দুষছেন। আসলে বাজারের সংকট অনেক গভীর এবং ছোটখাটো যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তাতে আপাতত কিছুটা লাভ হলেও দীর্ঘ মেয়াদে ফায়দা হবে না। যেসব ব্যবসায়ী কারসাজি করে দাম বাড়ান, তাঁদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
মনে রাখা দরকার যে আমাদের দেশের কিছু কিছু ব্যবসায়ী এতটাই অসৎ যে তাঁরা কোনো নীতিনৈতিকতার ধার ধারেন না। এঁদের বাগে আনতে আইনের প্রয়োগের বিকল্প নেই। আর আইনে শাস্তির বিধান কম হওয়ায় বড় ব্যবসায়ীরা বারবার একই কাজ করছেন। প্রয়োজনে আইন সংশোধন করতে হবে।
যেসব পণ্য আমদানি করা হয়, সেগুলোর দাম বেড়ে যাওয়ার পেছনে তবু কার্যকারণ সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায়, কিন্তু দেশে উৎপাদিত শাকসবজির দাম যখন আকাশছোঁয়া হয়, তখন সত্যিই বিস্মিত হতে হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায়ের পর কয়েক দিন চাঁদাবাজি বন্ধ থাকলেও আবার তা শুরু হয়েছে। এই চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে তেমন কোনো ভূমিকা পালন করতে দেখা যাচ্ছে না।
এদিকে কৃষিপণ্য বাজারজাত করার আগে সংরক্ষণের পরিকাঠামো আমাদের দেশে এখনো প্রায় নেই বললেই চলে। চাষি থেকে খুচরা বিক্রেতা—সবাই দাবি করেন, তরিতরকারির দাম নির্ভর করে জোগান এবং পাইকারি ব্যবসায়ীদের ওপরে। যাঁদের আরেক পরিচয় ফড়িয়া বা ‘ফড়ে’। মাঠ থেকে চাষিরা কোন সবজি কত পরিমাণ আনতে পারছেন, তার ওপরেই পাইকারি বাজারগুলোতে সবজির দাম নির্ধারিত হয়।
খুচরা ব্যবসায়ীরা পাইকারি বাজার থেকে কেনার পরে দর আরও কিছুটা বাড়িয়ে বাজারে তা বিক্রি করছেন। শুধু ফড়েরা নন, অভিযোগ এখানেও রয়েছে। পাইকারি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বাজারে জোগান কমলে দাম বাড়ে। এই সুযোগে খুচরা ব্যবসায়ীরাও ঝোপ বুঝে কোপ মারতে দাম অনেকটাই বাড়িয়ে সবজি বিক্রি করেন।
ফলন কম হলে এমনিতেই দাম চড়ে। তাই বলে কাঁচা মরিচ ৬০০-৭০০ টাকা ছোঁবে? উৎপাদনকারীরা ৩০-৪০ টাকার বেশি পান না। শহরে সবজি আসে গাঁ-গঞ্জের হাট থেকে। সেখান থেকে একশ্রেণির আড়তদার বা ফড়ে সবজি শহরে পাঠান। সবজির আমদানি বাড়লে ফড়েরা দাম কমিয়ে দেন। চাষিদের কাছ থেকে সবজি নিয়ে আড়তদারেরা পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। তাঁরা কেনা দামের ওপরে ৪-৫ শতাংশ লাভ রাখেন। এর বাইরেও রয়েছে আরও একধরনের কারবারি। তাঁরা স্থানীয় ফড়ে।
স্থানীয় ফড়েরা আবার ছোট চাষিদের কাছ থেকে সবজি কিনে নেন অনেক কম দামে। অন্যদিকে, এই ধরনের অনেক চাষির ফসল একসঙ্গে হাটে আনতে ফড়েদের খরচও কম পড়ে। সে জন্য ছোট চাষিরা মার খাচ্ছেন দীর্ঘদিন ধরে। আর পাইকারি ব্যবসায়ীদের যুক্তি, ঝাড়াই-বাছাই করে সবজি গাড়িতে তোলা, মজুরের খরচ, আনা-নেওয়ার ফলে কিছু সবজি নষ্ট হওয়া, এসব কারণে লাভ পোষাতে দাম বাড়ে। এর বাইরে রাস্তায় অনেককে টাকা দিতে হয়। সেই চাঁদার খরচও চেপে বসে সবজির দামে।
দ্রব্যমূল্য সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি সমাধানে অনেক দিন ধরেই একটি ‘প্রাইস কমিশন’ গঠনের পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এ কমিশনের কাছেই তথ্য থাকবে যে কার কাছে কোন পণ্য কতটা মজুত আছে। এমনকি কে কোন পণ্য আমদানি করল, কতটা বিক্রি করল—এসব তথ্যও তাদের কাছে থাকবে। ফলে কেউ যেমন কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে পারবে না, আবার বাজার সম্পর্কেও একটি পূর্ণ তথ্য-সংবলিত ধারণা সরকারের হাতে থাকবে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু সরকারের মধ্যে তেমন কিছু করার তাগিদ দেখা যাচ্ছে না।
আড়তদার, ফড়ে, খুচরা ব্যবসায়ী—হাত বদলের সঙ্গে সঙ্গে সবজির দাম বাড়ছে। যে যাঁর ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছেন। বাজারভেদেও জিনিসপত্রের দাম ভিন্ন হচ্ছে। উৎপাদনকারী কৃষকেরা খেতের ফসলের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না, কিন্তু গাঁট কাটা যাচ্ছে আমজনতার।
এমন প্রস্তাব বহুবার শোনা গেছে যে এমন একটি ব্যবস্থা চালু হবে যেখানে চাষিরা সরাসরি খেতের ফসল আনবেন এবং পাইকারেরা সেখান থেকে ন্যায্যমূল্যে সবজি কিনবেন। মাঝে কেউ থাকবে না। কিন্তু এমন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কোনো ইচ্ছা বা পরিকল্পনাও দেখা যাচ্ছে না।
নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ার দায় অন্তর্বর্তী সরকারকেই নিতে হবে। বাজার নিয়ন্ত্রণে সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণের বিকল্প নেই। সাধারণ মানুষ কিন্তু সংস্কার, ফ্যাসিবাদী শাসনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিচারের চেয়ে জিনিসপত্র যৌক্তিক দামে কিনতে পারাটাকে অধিক গুরুত্ব প্রদান করেন।
লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি দেশবাসীর কাছে একটা গুরুতর সমস্যা। জীবনযাত্রার ব্যয় ক্রমাগত বেড়ে গেলে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। মানুষ খেয়ে-পরে বাঁচলেই কেবল সুশাসনের খোঁজ করেন। সীমিত আয়ের মানুষ যদি প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে না পারেন, তাহলে তাঁরা বিদ্রোহ করতে পারেন। আর সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হলে অন্তর্বর্তী সরকার যে উদ্দেশ্য নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে, তা-ও ভেস্তে যেতে পারে। কাজেই জিনিসপত্রের দাম যেন সহনীয় পর্যায়ে থাকে সে জন্য সরকারকে সর্বোচ্চ উদ্যোগ নিতে হবে। এখানে ব্যর্থ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
লেখক: গবেষক, কলামিস্ট
অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের প্রায় আড়াই মাস হয়ে গেল। কিন্তু নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না। কোথাও পণ্যের কমতি নেই, তবু পণ্যের দাম আকাশছোঁয়া। বেশি দামের কারণে নিম্ন আয়ের মানুষ তো বটেই, মধ্যবিত্তরাও এখন দিশেহারা।
কোনো টোটকাতেই বাগে আসছে না নিত্যপণ্যের বল্গাহীন বাজার। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও বাজার ছিল নিয়ন্ত্রণহীন। নির্দলীয় অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া মানুষের আশা ছিল সিন্ডিকেট বন্ধ হবে, দামের তেজ কমবে। তবে সেই আশাতেও যেন গুড়ে বালি!
গেল এক মাসে, বিশেষ করে সবজির দামে ক্রেতার চোখ কপালে ঠেকেছে! পাশাপাশি ডিম-মুরগিসহ সবকিছুর দামই লাফিয়ে বাড়ছে। ফলে নির্দিষ্ট আয়ের সাধারণ মানুষ জীবন চালাতে খেই হারিয়ে ফেলছেন। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর দফায় দফায় বৈঠক করছে। জেলায় জেলায় হয়েছে বিশেষ টাস্কফোর্স; নিয়মিত তদারকিও হচ্ছে। সিন্ডিকেট ধরতে চলছে অভিযান-জরিমানা। দেশের বাইরে থেকে আসছে পণ্য। স্বয়ং বাণিজ্য উপদেষ্টা নিজেই বাজার তদারকিতে মাঠে নেমেছেন। সরকারের এতসব পদক্ষেপের যোগফল ‘শূন্য’।
ক্রেতাকে ‘স্বস্তি’ দিতে নতুন সরকার নতুন উদ্যোগও নিয়েছে। গেল সপ্তাহ থেকে রাজধানীতে ওপেন মার্কেট সেলের (ওএমএস) আওতায় আলু, ডিম, পেঁয়াজের পাশাপাশি বিভিন্ন সবজি বিক্রি শুরু করেছে। সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে কিনে রাজধানীর নির্দিষ্ট ২০টি স্থানে সুলভ মূল্যে সবজি বিক্রি করছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। কিন্তু তারপরও বাজারে তেমন কোনো ইতিবাচক প্রভাব লক্ষ করা যাচ্ছে না। অবশ্য বিশাল এই রাজধানীতে মাত্র ২০টি স্থানে সুলভ মূল্যে সবজি বিক্রি সিন্ধুতে জলের বিন্দুর মতোই।
বর্ষা-বন্যার কারণে কিছুটা বাড়তি দাম মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন পণ্যের দাম যেভাবে বাড়ানো হয়েছে, সেটা রীতিমতো কারসাজি। চাল-ডাল-তেল-মাছ-মাংস-চিনি-ডিমের দাম তো বাড়ছেই, এর সঙ্গে যোগ হয়েছে শাকসবজির ঊর্ধ্বমূল্য। বেশির ভাগ সবজির কেজি ৮০ বা ১০০ টাকার ওপরে। নাগালের মধ্যে নেই আলু, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, মরিচের মতো পণ্যও। ডিম, তেল, চিনিসহ সরকার থেকে কয়েকটি পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও তার চেয়ে বেশি দামে পণ্য বিক্রি হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ সরকার নেই, নেই পুরোনো সিন্ডিকেট। আকাশছোঁয়া দাম ঠেকাতে সরকারের টাস্কফোর্সও রয়েছে। কিন্তু তারপরেও তরিতরকারিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম এভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে কেন বাড়ছে, তার উত্তর মিলছে না। দাম বাড়ার নেপথ্যে যৌক্তিক কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
অনেকের মতে, অসৎ ব্যবসায়ী ও মধ্যস্থতাকারীদের কারসাজির জন্যই মূলত পণ্যমূল্য বাড়ছে। বিশ্ববাজারে বেশ কিছু পণ্যের দাম কমেছে। কিন্তু বাংলাদেশে তার প্রভাব নেই। বরং উল্টো জিনিসের দাম বেড়েছে। সরকার বলছে, বর্তমানে পরিবহনে চাঁদাবাজি কমেছে।
এ ছাড়া ২৯টি পণ্যের আমদানি শুল্ক কমানো হলেও তার প্রভাবও বাজারে দেখা যাচ্ছে না। পুলিশ প্রটেকশন না পাওয়ায় জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরও ঠিকঠাক কাজ করতে পারছে না। এ জন্য আগের মতোই নিয়ন্ত্রণহীন বাজার। ভোক্তাদের জীবন চালানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে। সরকার বদলালেও বাজার বা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য কমেনি। পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারেরও তেমন কোনো মাথাব্যথা আছে বলে মনে হচ্ছে না। পণ্যের দাম বাড়ার জন্য বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা দায়ী করেছেন সিন্ডিকেটকে।
সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, এসব সিন্ডিকেট ভাঙতে সরকারের বাধা কোথায়? আবার অনেকে দাম বাড়ার পেছনে বাজার ব্যবস্থাপনায় সরকারের নিয়ন্ত্রণের অভাব এবং বাজারে চাহিদা ও জোগান সম্পর্কিত তথ্যে স্বচ্ছতার অভাবকে দুষছেন। আসলে বাজারের সংকট অনেক গভীর এবং ছোটখাটো যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তাতে আপাতত কিছুটা লাভ হলেও দীর্ঘ মেয়াদে ফায়দা হবে না। যেসব ব্যবসায়ী কারসাজি করে দাম বাড়ান, তাঁদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
মনে রাখা দরকার যে আমাদের দেশের কিছু কিছু ব্যবসায়ী এতটাই অসৎ যে তাঁরা কোনো নীতিনৈতিকতার ধার ধারেন না। এঁদের বাগে আনতে আইনের প্রয়োগের বিকল্প নেই। আর আইনে শাস্তির বিধান কম হওয়ায় বড় ব্যবসায়ীরা বারবার একই কাজ করছেন। প্রয়োজনে আইন সংশোধন করতে হবে।
যেসব পণ্য আমদানি করা হয়, সেগুলোর দাম বেড়ে যাওয়ার পেছনে তবু কার্যকারণ সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায়, কিন্তু দেশে উৎপাদিত শাকসবজির দাম যখন আকাশছোঁয়া হয়, তখন সত্যিই বিস্মিত হতে হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের বিদায়ের পর কয়েক দিন চাঁদাবাজি বন্ধ থাকলেও আবার তা শুরু হয়েছে। এই চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে তেমন কোনো ভূমিকা পালন করতে দেখা যাচ্ছে না।
এদিকে কৃষিপণ্য বাজারজাত করার আগে সংরক্ষণের পরিকাঠামো আমাদের দেশে এখনো প্রায় নেই বললেই চলে। চাষি থেকে খুচরা বিক্রেতা—সবাই দাবি করেন, তরিতরকারির দাম নির্ভর করে জোগান এবং পাইকারি ব্যবসায়ীদের ওপরে। যাঁদের আরেক পরিচয় ফড়িয়া বা ‘ফড়ে’। মাঠ থেকে চাষিরা কোন সবজি কত পরিমাণ আনতে পারছেন, তার ওপরেই পাইকারি বাজারগুলোতে সবজির দাম নির্ধারিত হয়।
খুচরা ব্যবসায়ীরা পাইকারি বাজার থেকে কেনার পরে দর আরও কিছুটা বাড়িয়ে বাজারে তা বিক্রি করছেন। শুধু ফড়েরা নন, অভিযোগ এখানেও রয়েছে। পাইকারি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বাজারে জোগান কমলে দাম বাড়ে। এই সুযোগে খুচরা ব্যবসায়ীরাও ঝোপ বুঝে কোপ মারতে দাম অনেকটাই বাড়িয়ে সবজি বিক্রি করেন।
ফলন কম হলে এমনিতেই দাম চড়ে। তাই বলে কাঁচা মরিচ ৬০০-৭০০ টাকা ছোঁবে? উৎপাদনকারীরা ৩০-৪০ টাকার বেশি পান না। শহরে সবজি আসে গাঁ-গঞ্জের হাট থেকে। সেখান থেকে একশ্রেণির আড়তদার বা ফড়ে সবজি শহরে পাঠান। সবজির আমদানি বাড়লে ফড়েরা দাম কমিয়ে দেন। চাষিদের কাছ থেকে সবজি নিয়ে আড়তদারেরা পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। তাঁরা কেনা দামের ওপরে ৪-৫ শতাংশ লাভ রাখেন। এর বাইরেও রয়েছে আরও একধরনের কারবারি। তাঁরা স্থানীয় ফড়ে।
স্থানীয় ফড়েরা আবার ছোট চাষিদের কাছ থেকে সবজি কিনে নেন অনেক কম দামে। অন্যদিকে, এই ধরনের অনেক চাষির ফসল একসঙ্গে হাটে আনতে ফড়েদের খরচও কম পড়ে। সে জন্য ছোট চাষিরা মার খাচ্ছেন দীর্ঘদিন ধরে। আর পাইকারি ব্যবসায়ীদের যুক্তি, ঝাড়াই-বাছাই করে সবজি গাড়িতে তোলা, মজুরের খরচ, আনা-নেওয়ার ফলে কিছু সবজি নষ্ট হওয়া, এসব কারণে লাভ পোষাতে দাম বাড়ে। এর বাইরে রাস্তায় অনেককে টাকা দিতে হয়। সেই চাঁদার খরচও চেপে বসে সবজির দামে।
দ্রব্যমূল্য সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি সমাধানে অনেক দিন ধরেই একটি ‘প্রাইস কমিশন’ গঠনের পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এ কমিশনের কাছেই তথ্য থাকবে যে কার কাছে কোন পণ্য কতটা মজুত আছে। এমনকি কে কোন পণ্য আমদানি করল, কতটা বিক্রি করল—এসব তথ্যও তাদের কাছে থাকবে। ফলে কেউ যেমন কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে পারবে না, আবার বাজার সম্পর্কেও একটি পূর্ণ তথ্য-সংবলিত ধারণা সরকারের হাতে থাকবে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু সরকারের মধ্যে তেমন কিছু করার তাগিদ দেখা যাচ্ছে না।
আড়তদার, ফড়ে, খুচরা ব্যবসায়ী—হাত বদলের সঙ্গে সঙ্গে সবজির দাম বাড়ছে। যে যাঁর ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছেন। বাজারভেদেও জিনিসপত্রের দাম ভিন্ন হচ্ছে। উৎপাদনকারী কৃষকেরা খেতের ফসলের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না, কিন্তু গাঁট কাটা যাচ্ছে আমজনতার।
এমন প্রস্তাব বহুবার শোনা গেছে যে এমন একটি ব্যবস্থা চালু হবে যেখানে চাষিরা সরাসরি খেতের ফসল আনবেন এবং পাইকারেরা সেখান থেকে ন্যায্যমূল্যে সবজি কিনবেন। মাঝে কেউ থাকবে না। কিন্তু এমন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কোনো ইচ্ছা বা পরিকল্পনাও দেখা যাচ্ছে না।
নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ার দায় অন্তর্বর্তী সরকারকেই নিতে হবে। বাজার নিয়ন্ত্রণে সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণের বিকল্প নেই। সাধারণ মানুষ কিন্তু সংস্কার, ফ্যাসিবাদী শাসনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিচারের চেয়ে জিনিসপত্র যৌক্তিক দামে কিনতে পারাটাকে অধিক গুরুত্ব প্রদান করেন।
লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি দেশবাসীর কাছে একটা গুরুতর সমস্যা। জীবনযাত্রার ব্যয় ক্রমাগত বেড়ে গেলে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। মানুষ খেয়ে-পরে বাঁচলেই কেবল সুশাসনের খোঁজ করেন। সীমিত আয়ের মানুষ যদি প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে না পারেন, তাহলে তাঁরা বিদ্রোহ করতে পারেন। আর সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ হলে অন্তর্বর্তী সরকার যে উদ্দেশ্য নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে, তা-ও ভেস্তে যেতে পারে। কাজেই জিনিসপত্রের দাম যেন সহনীয় পর্যায়ে থাকে সে জন্য সরকারকে সর্বোচ্চ উদ্যোগ নিতে হবে। এখানে ব্যর্থ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
লেখক: গবেষক, কলামিস্ট
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
২ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
২ দিন আগে