শাইখ সিরাজ
দেশের প্রায় ২৫ শতাংশ এলাকা হচ্ছে উপকূলীয়। বরিশাল অঞ্চলে, বিশেষ করে বরগুনা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী ও বরিশাল জেলায় শুষ্ক মৌসুমে বিঘার পর বিঘা জমি পতিত থাকে। লবণাক্ততার কারণে বেশির ভাগ এলাকায় বছরে মাত্র একটি ফসল হয়। আমন ধান তোলার পর বাকি সময় মাঠের পর মাঠ এমন অলস পড়ে থাকে।
লবণপানির ভয়াবহতার কারণে প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে উপকূলীয় এলাকায় প্রায় সাড়ে চার লাখ হেক্টর জমি থেকে যায় অনাবাদি। আর এ কারণে এই অঞ্চলে দারিদ্র্যের হার বেশি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বলছে, বরিশাল বিভাগে মোট জনসংখ্যার ২৬ দশমিক ৯ শতাংশই দরিদ্র।
যেখানে দারিদ্র্যের হার ঢাকায় ১৭ দশমিক ৯, চট্টগ্রামে ১৫ দশমিক ৮, রাজশাহীতে ১৬ দশমিক ৭, সিলেটে ১৭ দশমিক ৪, রংপুরে ২৪ দশমিক ৮, বরিশালে ২৬ দশমিক ৯ ও ময়মনসিংহে ২৪ দশমিক ২ শতাংশ। এই দারিদ্র্যের অন্যতম প্রধান কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের অপঘাতে মাটির লবণাক্ততা বৃদ্ধি এবং সেচযোগ্য পানির দুষ্প্রাপ্যতায় একটি মাত্র ফসলের ওপর নির্ভরশীলতা।
গত সপ্তাহে বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনার উপকূলীয় অঞ্চল ঘুরে আসার সুযোগ হয়। বিস্তীর্ণ উপকূল অঞ্চলজুড়ে এই সময়ের ফসলহীন জমি। আমাদের নদীগুলো যেমন শুকিয়ে গেছে, শুকিয়ে গেছে খাল-বিল। ফলে এই অঞ্চলগুলোয় শুকনো মৌসুমে সেচের পানি পাওয়া যায় না।
উপকূলের এই সমস্যা সমাধানে একটি লাগসই প্রযুক্তি বের করতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নানা ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করছে। স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত ড. মৃন্ময় গুহ নিয়োগী তেমনই একজন। অস্ট্রেলিয়ান সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যাগ্রিকালচারাল রিসার্চের সহায়তায় পাঁচ-সাত বছর ধরে তিনি গবেষণা করছেন পতিত জমি আবাদের আওতায় আনার জন্য। তিনি বলছেন, রিলে পদ্ধতিতে গম বা মুগ ডাল চাষের মাধ্যমে এই অঞ্চলের কৃষকের আয় অনেকটা বাড়িয়ে দেওয়া সম্ভব।
যেহেতু গম এবং ডালজাতীয় ফসলে অল্প পানি সেচ দিলেই ভালো ফসল উৎপাদন সম্ভব এবং গম প্রকৃতিগতভাবেই কিছুটা লবণাক্ততাসহিষ্ণু, তাই জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অপঘাত মোকাবিলায় উপকূলে রিলে পদ্ধতিতে গম ও মুগ ফসলের প্রযুক্তি উদ্ভাবনের লক্ষ্যে তিনি গবেষণা করছেন।
মৃন্ময় গুহ বলেন, গম মূলত ঠান্ডা আবহাওয়া পছন্দ করে। ১৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের নিচের তাপমাত্রায় গমগাছ ভালোভাবে বেড়ে উঠতে পারে এবং সেখান থেকে ভালো মানের গমের শিষ বের হতে সহায়তা করে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে এখন শীতকাল ছোট হয়ে গেছে। দক্ষিণাঞ্চলে শীতকাল আরও কম। তবে গম ফসল উৎপাদনে এ ধরনের ঠান্ডা আবহাওয়া এখনো বাংলাদেশের উপকূলে শুধু ডিসেম্বর মাসের শেষার্ধে এবং জানুয়ারি মাসে পাওয়া যায়। সে জন্য বাংলাদেশের উপকূলে গম বোনার প্রকৃত সময় মধ্য নভেম্বর। মধ্য নভেম্বরে জমিতে গমবীজ বুনলে জানুয়ারি মাসের অনুকূল ঠান্ডা আবহাওয়ায় প্রচুর গমের ছড়া বের হতে সহায়ক হবে।
কিন্তু উপকূলের জমিতে নভেম্বর মাসে আমন ধান থাকে, যা কৃষকেরা ডিসেম্বর মাসে কেটে থাকেন। এ কারণে সঠিক সময়ে জমিতে আমন ধান থাকা অবস্থায় মধ্য নভেম্বরেই গমবীজ ছিটানো হয়েছে। এটিই রিলে পদ্ধতিতে গম চাষ প্রযুক্তি।
বরগুনার নলবুনিয়ায় ২০ জন কৃষক পরীক্ষামূলকভাবে গম চাষ করেছেন। তাঁদের মাঠ পরিদর্শন করি। কথা হয় কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে। তাঁরা জানান, রিলে প্রযুক্তিতে জমি চাষের প্রয়োজন হয় না বিধায় উৎপাদন খরচও অনেক কম, যা পরিবেশ সহায়ক। এ ছাড়া গম চাষাবাদে কম পানি সেচ দিতে হয়।
আবার রিলে গম চাষাবাদে পানির প্রয়োজন আরও কম। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে এখন প্রায় প্রতিবছরই আগাম বৃষ্টি হচ্ছে। প্রতিবছরই ডিসেম্বর বা জানুয়ারি অথবা ফেব্রুয়ারির প্রথমে কোনো না কোনো সময়ে বৃষ্টি হচ্ছে, যা গম চাষের জন্য ভালো। এ সময় বৃষ্টি হলে সেচের প্রয়োজন হয় না। এতে সেচ খরচও কমে যায়।
ড. নিয়োগী বলেন, উপকূলের পতিত জমিতে শুষ্ক মৌসুমে ফসল ফলাতে লবণাক্ততার পাশাপাশি সেচযোগ্য পানির অপ্রতুলতাও একটি সমস্যা। গবেষণায় দেখা গেছে, উপকূলের লবণাক্ত জমির ঠিক নিচেই যে পানির স্তর আছে, তা লবণাক্ত এবং সেচযোগ্য নয়। কিন্তু এসব জমির ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ ফুট গভীরের পানি লবণাক্তমুক্ত এবং সেচযোগ্য। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই পানির লবণাক্ততা শূন্য দশমিক ৫ ডিএস/ মিটারের কম, যা শুধু ফসল চাষাবাদেই নয়, খাওয়ারও যোগ্য।
সাবমারসিবল পাম্পের সাহায্যে ১ হাজার ১০০ ফুট বা এরও নিচের পানি উত্তোলন করা সম্ভব। বোরিং এবং ফিটিংসহ সম্পূর্ণ পাম্পটি কিনতে এবং বসাতে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। এ ধরনের একটি পাম্প দিয়ে ৪০-৫০ বিঘা জমিতে অনায়াসে রিলে প্রযুক্তিতে গমসহ অন্যান্য রবি ফসলের চাষাবাদ এবং এর থেকে নিরাপদ খাওয়ার পানিও পাওয়া যাবে। ড. নিয়োগীর এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে আমার প্রশ্ন ছিল, আমরা যদি গভীর নলকূপ দিয়ে ভূ-গর্ভস্থ পানি তুলে আনি, তবে সেটা টেকসই প্রযুক্তি হবে কি না।
ড. নিয়োগী বললেন, উপকূলের প্রায় সব জায়গাতেই প্রচুর খাল, পুকুর, ডোবা, জলাশয় আছে, সেগুলো সংস্কার করে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করলেই উপকূলের বিশাল জমি রিলে গম চাষের আওতায় আনা সম্ভব। এ ছাড়া তাঁদের আর একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ১ একর বা ১০০ শতাংশ জমির ১০ ভাগ, অর্থাৎ মাত্র ১০ শতাংশ জমিতে যদি ৬ ফুট, ৬ ফুট, ৬ ফুট—অর্থাৎ দৈর্ঘ্যে ৬ ফুট, প্রস্থে ৬ ফুট এবং গভীরতায় ৬ ফুট করে জমির উঁচু স্থানে পুকুর খনন করা যায় এবং ওই পুকুরের পানি যাতে চুইয়ে নিচে চলে না যায়, সে জন্য পুকুরের তলদেশে মোটা পলিথিন বিছিয়ে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করা যায়, তাহলে ওই বৃষ্টির পানিতে ছয় মাস মাছ চাষ সম্ভব এবং ওই পানি দিয়ে বাকি ৯০ শতাংশ জমিতে রিলে পদ্ধতিতে গম উৎপাদন সম্ভব।
উপকূলের কৃষক ইব্রাহিম এবার দুই বিঘা জমিতে রিলে পদ্ধতিতে গমের চাষ করেছেন। রিলে পদ্ধতিতে গম চাষ নিয়ে আশাবাদী কৃষক ইদ্রিস। এখন এখানকার অনেক কৃষকেরই চোখ খুলেছে। তাঁরাও আগামীবার মাঠে নামবেন—এমন প্রত্যয় দেখা গেল অনেকের মাঝে। তাঁরা বললেন, প্রথমে তাঁরা ভেবেছিলেন এটা কোনোভাবেই সম্ভব না। পাগলামি ছাড়া কিছু নয়। কিন্তু এখন মাঠে গমের ফলন দেখে বিশ্বাস হলো, এভাবেও গম চাষ সম্ভব।
দেশের মানুষের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের কারণে গমের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। বাংলাদেশে এখন প্রতিবছর ৭৫ লাখ টন গমের চাহিদা। দেশে উৎপাদন হচ্ছে ১১-১২ লাখ টন। বাকি ৬০-৬৫ লাখ টন বাইরে থেকে আমদানি করতে হচ্ছে। বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা শুধু গম আমদানিতেই চলে যাচ্ছে। তাই উপকূলের পতিত জমিতে এই রিলে প্রযুক্তিতে গম চাষ করলে একদিকে যেমন সহজেই কৃষকের আয় বাড়বে, এক ফসলি জমিকে দুই ফসলি জমিতে রূপান্তরিত করা যাবে, পাশাপাশি গমের আমদানি কমিয়ে সাশ্রয় করা সম্ভব হবে বৈদেশিক মুদ্রা।
ছোট্ট একটি প্রযুক্তিই বিশাল জনপদকে আমূল বদলে দিতে পারে। উপকূলের কৃষকের মাঝে নতুন স্বপ্ন রচিত হচ্ছে। তাঁরাও আগ্রহী হচ্ছেন দিনবদলে।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা কি এখানেও গভীর নলকূপের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানি তুলে এনে নতুন বিপর্যয় ডেকে আনব? অথচ নেদারল্যান্ডসে দেখেছি নালা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কত সহজে সব কৃষি ভূমিকে তারা সেচের আওতায় এনেছে।
আমার বিশ্বাস, সরকার জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অপঘাত মোকাবিলায় উপকূলের পতিত জমিতে রিলে পদ্ধতিতে আমন ধানের জমিতে গম চাষের এই প্রযুক্তিকে গুরুত্বের সঙ্গে যাচাই করবে এবং কৃষক লাভবান হলে তা সম্প্রসারণের উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে উপকূলের কৃষি ও কৃষককে সমৃদ্ধ হতে সহায়ক হবে।
লেখক: পরিচালক ও বার্তাপ্রধান, চ্যানেল আই
দেশের প্রায় ২৫ শতাংশ এলাকা হচ্ছে উপকূলীয়। বরিশাল অঞ্চলে, বিশেষ করে বরগুনা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী ও বরিশাল জেলায় শুষ্ক মৌসুমে বিঘার পর বিঘা জমি পতিত থাকে। লবণাক্ততার কারণে বেশির ভাগ এলাকায় বছরে মাত্র একটি ফসল হয়। আমন ধান তোলার পর বাকি সময় মাঠের পর মাঠ এমন অলস পড়ে থাকে।
লবণপানির ভয়াবহতার কারণে প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে উপকূলীয় এলাকায় প্রায় সাড়ে চার লাখ হেক্টর জমি থেকে যায় অনাবাদি। আর এ কারণে এই অঞ্চলে দারিদ্র্যের হার বেশি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বলছে, বরিশাল বিভাগে মোট জনসংখ্যার ২৬ দশমিক ৯ শতাংশই দরিদ্র।
যেখানে দারিদ্র্যের হার ঢাকায় ১৭ দশমিক ৯, চট্টগ্রামে ১৫ দশমিক ৮, রাজশাহীতে ১৬ দশমিক ৭, সিলেটে ১৭ দশমিক ৪, রংপুরে ২৪ দশমিক ৮, বরিশালে ২৬ দশমিক ৯ ও ময়মনসিংহে ২৪ দশমিক ২ শতাংশ। এই দারিদ্র্যের অন্যতম প্রধান কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের অপঘাতে মাটির লবণাক্ততা বৃদ্ধি এবং সেচযোগ্য পানির দুষ্প্রাপ্যতায় একটি মাত্র ফসলের ওপর নির্ভরশীলতা।
গত সপ্তাহে বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনার উপকূলীয় অঞ্চল ঘুরে আসার সুযোগ হয়। বিস্তীর্ণ উপকূল অঞ্চলজুড়ে এই সময়ের ফসলহীন জমি। আমাদের নদীগুলো যেমন শুকিয়ে গেছে, শুকিয়ে গেছে খাল-বিল। ফলে এই অঞ্চলগুলোয় শুকনো মৌসুমে সেচের পানি পাওয়া যায় না।
উপকূলের এই সমস্যা সমাধানে একটি লাগসই প্রযুক্তি বের করতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নানা ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করছে। স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত ড. মৃন্ময় গুহ নিয়োগী তেমনই একজন। অস্ট্রেলিয়ান সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যাগ্রিকালচারাল রিসার্চের সহায়তায় পাঁচ-সাত বছর ধরে তিনি গবেষণা করছেন পতিত জমি আবাদের আওতায় আনার জন্য। তিনি বলছেন, রিলে পদ্ধতিতে গম বা মুগ ডাল চাষের মাধ্যমে এই অঞ্চলের কৃষকের আয় অনেকটা বাড়িয়ে দেওয়া সম্ভব।
যেহেতু গম এবং ডালজাতীয় ফসলে অল্প পানি সেচ দিলেই ভালো ফসল উৎপাদন সম্ভব এবং গম প্রকৃতিগতভাবেই কিছুটা লবণাক্ততাসহিষ্ণু, তাই জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অপঘাত মোকাবিলায় উপকূলে রিলে পদ্ধতিতে গম ও মুগ ফসলের প্রযুক্তি উদ্ভাবনের লক্ষ্যে তিনি গবেষণা করছেন।
মৃন্ময় গুহ বলেন, গম মূলত ঠান্ডা আবহাওয়া পছন্দ করে। ১৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের নিচের তাপমাত্রায় গমগাছ ভালোভাবে বেড়ে উঠতে পারে এবং সেখান থেকে ভালো মানের গমের শিষ বের হতে সহায়তা করে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে এখন শীতকাল ছোট হয়ে গেছে। দক্ষিণাঞ্চলে শীতকাল আরও কম। তবে গম ফসল উৎপাদনে এ ধরনের ঠান্ডা আবহাওয়া এখনো বাংলাদেশের উপকূলে শুধু ডিসেম্বর মাসের শেষার্ধে এবং জানুয়ারি মাসে পাওয়া যায়। সে জন্য বাংলাদেশের উপকূলে গম বোনার প্রকৃত সময় মধ্য নভেম্বর। মধ্য নভেম্বরে জমিতে গমবীজ বুনলে জানুয়ারি মাসের অনুকূল ঠান্ডা আবহাওয়ায় প্রচুর গমের ছড়া বের হতে সহায়ক হবে।
কিন্তু উপকূলের জমিতে নভেম্বর মাসে আমন ধান থাকে, যা কৃষকেরা ডিসেম্বর মাসে কেটে থাকেন। এ কারণে সঠিক সময়ে জমিতে আমন ধান থাকা অবস্থায় মধ্য নভেম্বরেই গমবীজ ছিটানো হয়েছে। এটিই রিলে পদ্ধতিতে গম চাষ প্রযুক্তি।
বরগুনার নলবুনিয়ায় ২০ জন কৃষক পরীক্ষামূলকভাবে গম চাষ করেছেন। তাঁদের মাঠ পরিদর্শন করি। কথা হয় কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে। তাঁরা জানান, রিলে প্রযুক্তিতে জমি চাষের প্রয়োজন হয় না বিধায় উৎপাদন খরচও অনেক কম, যা পরিবেশ সহায়ক। এ ছাড়া গম চাষাবাদে কম পানি সেচ দিতে হয়।
আবার রিলে গম চাষাবাদে পানির প্রয়োজন আরও কম। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে এখন প্রায় প্রতিবছরই আগাম বৃষ্টি হচ্ছে। প্রতিবছরই ডিসেম্বর বা জানুয়ারি অথবা ফেব্রুয়ারির প্রথমে কোনো না কোনো সময়ে বৃষ্টি হচ্ছে, যা গম চাষের জন্য ভালো। এ সময় বৃষ্টি হলে সেচের প্রয়োজন হয় না। এতে সেচ খরচও কমে যায়।
ড. নিয়োগী বলেন, উপকূলের পতিত জমিতে শুষ্ক মৌসুমে ফসল ফলাতে লবণাক্ততার পাশাপাশি সেচযোগ্য পানির অপ্রতুলতাও একটি সমস্যা। গবেষণায় দেখা গেছে, উপকূলের লবণাক্ত জমির ঠিক নিচেই যে পানির স্তর আছে, তা লবণাক্ত এবং সেচযোগ্য নয়। কিন্তু এসব জমির ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ ফুট গভীরের পানি লবণাক্তমুক্ত এবং সেচযোগ্য। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই পানির লবণাক্ততা শূন্য দশমিক ৫ ডিএস/ মিটারের কম, যা শুধু ফসল চাষাবাদেই নয়, খাওয়ারও যোগ্য।
সাবমারসিবল পাম্পের সাহায্যে ১ হাজার ১০০ ফুট বা এরও নিচের পানি উত্তোলন করা সম্ভব। বোরিং এবং ফিটিংসহ সম্পূর্ণ পাম্পটি কিনতে এবং বসাতে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। এ ধরনের একটি পাম্প দিয়ে ৪০-৫০ বিঘা জমিতে অনায়াসে রিলে প্রযুক্তিতে গমসহ অন্যান্য রবি ফসলের চাষাবাদ এবং এর থেকে নিরাপদ খাওয়ার পানিও পাওয়া যাবে। ড. নিয়োগীর এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে আমার প্রশ্ন ছিল, আমরা যদি গভীর নলকূপ দিয়ে ভূ-গর্ভস্থ পানি তুলে আনি, তবে সেটা টেকসই প্রযুক্তি হবে কি না।
ড. নিয়োগী বললেন, উপকূলের প্রায় সব জায়গাতেই প্রচুর খাল, পুকুর, ডোবা, জলাশয় আছে, সেগুলো সংস্কার করে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করলেই উপকূলের বিশাল জমি রিলে গম চাষের আওতায় আনা সম্ভব। এ ছাড়া তাঁদের আর একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ১ একর বা ১০০ শতাংশ জমির ১০ ভাগ, অর্থাৎ মাত্র ১০ শতাংশ জমিতে যদি ৬ ফুট, ৬ ফুট, ৬ ফুট—অর্থাৎ দৈর্ঘ্যে ৬ ফুট, প্রস্থে ৬ ফুট এবং গভীরতায় ৬ ফুট করে জমির উঁচু স্থানে পুকুর খনন করা যায় এবং ওই পুকুরের পানি যাতে চুইয়ে নিচে চলে না যায়, সে জন্য পুকুরের তলদেশে মোটা পলিথিন বিছিয়ে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করা যায়, তাহলে ওই বৃষ্টির পানিতে ছয় মাস মাছ চাষ সম্ভব এবং ওই পানি দিয়ে বাকি ৯০ শতাংশ জমিতে রিলে পদ্ধতিতে গম উৎপাদন সম্ভব।
উপকূলের কৃষক ইব্রাহিম এবার দুই বিঘা জমিতে রিলে পদ্ধতিতে গমের চাষ করেছেন। রিলে পদ্ধতিতে গম চাষ নিয়ে আশাবাদী কৃষক ইদ্রিস। এখন এখানকার অনেক কৃষকেরই চোখ খুলেছে। তাঁরাও আগামীবার মাঠে নামবেন—এমন প্রত্যয় দেখা গেল অনেকের মাঝে। তাঁরা বললেন, প্রথমে তাঁরা ভেবেছিলেন এটা কোনোভাবেই সম্ভব না। পাগলামি ছাড়া কিছু নয়। কিন্তু এখন মাঠে গমের ফলন দেখে বিশ্বাস হলো, এভাবেও গম চাষ সম্ভব।
দেশের মানুষের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের কারণে গমের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। বাংলাদেশে এখন প্রতিবছর ৭৫ লাখ টন গমের চাহিদা। দেশে উৎপাদন হচ্ছে ১১-১২ লাখ টন। বাকি ৬০-৬৫ লাখ টন বাইরে থেকে আমদানি করতে হচ্ছে। বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা শুধু গম আমদানিতেই চলে যাচ্ছে। তাই উপকূলের পতিত জমিতে এই রিলে প্রযুক্তিতে গম চাষ করলে একদিকে যেমন সহজেই কৃষকের আয় বাড়বে, এক ফসলি জমিকে দুই ফসলি জমিতে রূপান্তরিত করা যাবে, পাশাপাশি গমের আমদানি কমিয়ে সাশ্রয় করা সম্ভব হবে বৈদেশিক মুদ্রা।
ছোট্ট একটি প্রযুক্তিই বিশাল জনপদকে আমূল বদলে দিতে পারে। উপকূলের কৃষকের মাঝে নতুন স্বপ্ন রচিত হচ্ছে। তাঁরাও আগ্রহী হচ্ছেন দিনবদলে।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা কি এখানেও গভীর নলকূপের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানি তুলে এনে নতুন বিপর্যয় ডেকে আনব? অথচ নেদারল্যান্ডসে দেখেছি নালা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কত সহজে সব কৃষি ভূমিকে তারা সেচের আওতায় এনেছে।
আমার বিশ্বাস, সরকার জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অপঘাত মোকাবিলায় উপকূলের পতিত জমিতে রিলে পদ্ধতিতে আমন ধানের জমিতে গম চাষের এই প্রযুক্তিকে গুরুত্বের সঙ্গে যাচাই করবে এবং কৃষক লাভবান হলে তা সম্প্রসারণের উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে উপকূলের কৃষি ও কৃষককে সমৃদ্ধ হতে সহায়ক হবে।
লেখক: পরিচালক ও বার্তাপ্রধান, চ্যানেল আই
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
২ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
২ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
২ দিন আগে