মাসুদ কামাল
সংস্কারের দাবিগুলো শুরু থেকেই উঠছিল। হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই বলা হচ্ছিল—এমন একটা ব্যবস্থা চাই, যাতে ভবিষ্যতে যে সরকার আসবে, তারা যেন চাইলেও স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে না পারে। প্রত্যাশিত সেই ব্যবস্থা কায়েমের জন্যই সংস্কার। বলা হলো, এই যে আমাদের সংবিধান, কাটা-ছেঁড়া করতে করতে এটাকে এমন একটা পর্যায়ে নিয়ে আসা হয়েছে, এটিই এখন দেশের প্রধানমন্ত্রীকে প্রায় ঈশ্বরের মতো ক্ষমতাবান করে তুলেছে। তিনি যা ইচ্ছা তা-ই করার ক্ষমতা রাখেন। তাঁকে চ্যালেঞ্জ করার কেউ থাকে না। তাই এই সংবিধানকে সংস্কার করতে হবে। অপ্রয়োজনীয় ও আপত্তিকর ধারাগুলো বাদ দিতে হবে, গণতান্ত্রিক কিছু ধারা যুক্ত করতে হবে। সব মিলিয়ে সংবিধানের চেহারাটা এমন দাঁড়াবে, যাতে এই সংবিধানই একজন ব্যক্তিকে গণতান্ত্রিক থাকতে বাধ্য করে। প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রের অন্য যে কেউ, তিনি যেন জবাবদিহির ঊর্ধ্বে না থাকেন।
কেবল সংবিধানেই নয়, সংস্কারের দবি উঠেছে আরও অনেক ক্ষেত্রেই। হাসিনা সরকার রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল টানা ১৫ বছর। এই সময়ে তারা সবকিছুকেই নিজেদের মতো করে সাজিয়ে নিয়েছিল। প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ, বিচার বিভাগ—সবকিছুকেই নিজেদের অনুগত করে নিয়েছিল। কাজেই পরিবর্তন আনতে হবে সেসব ক্ষেত্রেও। দাবিগুলো বিশেষ কোনো একটি গোষ্ঠীর ছিল না, ছিল সবার। ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার দাবিগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে শুরুতেই ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করল। পরে দ্বিতীয় দফায় আরও পাঁচটি বিষয়ের সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। প্রথমে গঠিত কমিশনগুলোকে বলা হলো, এ বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে তাদের রিপোর্ট পেশ করতে। পরে অবশ্য এই সময়সীমা বাড়িয়ে জানুয়ারির শেষ পর্যন্ত করা হয়েছে। ধারণা করছি, আগামী দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যে এসব রিপোর্ট আসতে থাকবে।
প্রশ্ন হচ্ছে, কমিশনের রিপোর্ট পেলেই কি সংস্কার হয়ে যাবে? তা যে হবে না, সেটা সবাই জানেন। এরপরও থেকে যাবে বেশ কিছু ধাপ। প্রথমত, প্রশ্ন উঠবে—কমিশনের দেওয়া এই যে সংস্কার প্রস্তাবগুলো, রাজনৈতিক দলগুলো কি মানবে? ড. ইউনূসের এই সরকার তো নিয়মিত কোনো সরকার নয়। একটা নির্বাচন দিয়ে, নির্বাচিতদের হাতে ক্ষমতা তুলে
দিয়ে তারা চলে যাবে। নতুন যাঁরা ক্ষমতায় আসবেন, তাঁরা এক বা একাধিক রাজনৈতিক দলের লোক হবেন। ফলে সংস্কার প্রস্তাবগুলো তাঁদের মানা বা না-মানার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।
সরকার অবশ্য বলছে, কমিশনগুলোর কাছ থেকে সংস্কার প্রস্তাব পাওয়ার পর সেগুলো নিয়ে তারা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসবে। তাদের মতামত নেবে। এ কাজগুলো ঠিকঠাকমতো করার জন্য একটা ‘জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন’-এর কথাও বলেছেন ড. ইউনূস। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এই ঐকমত্য কমিশনের গঠন ও এর কাজ সম্পর্কে একটা ধারণা দিয়েছেন। জানিয়েছেন, এই কমিশনের কাজ হবে বিভিন্ন প্রস্তাবের বিষয়ে একটা রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরি করা। প্রথমে গঠন করা ছয়টি কমিশনের রিপোর্ট পাওয়ার পরই শুরু হবে এই নতুন কমিশনের কাজ। নতুন এই কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে থাকবেন ড. ইউনূস নিজে। আর তাঁর সঙ্গে সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
যত দূর বুঝতে পারছি, ছয়টি কমিশন থেকে পাওয়া সুপারিশগুলো নিয়ে ‘জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন’ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসবে। যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে সমর্থন পাওয়া যাবে সেগুলো টিকবে, বাকিগুলো বাদ যাবে। সম্ভবত এই প্রক্রিয়াতেই চূড়ান্ত হবে সংস্কার প্রস্তাব।
এতক্ষণ আমি কেবল সংস্কারের প্রক্রিয়াগুলো নিয়ে কথা বললাম। এগুলো আসলে পুরো বিষয়ের মধ্যে একেবারে প্রাথমিক ও সবচেয়ে সহজ ধাপ। প্রকৃত ঝামেলাটা হয়তো দেখা দেবে সামনে। এই যে ‘জাতীয় ঐকমত্য গঠন’, আমার বিবেচনায় এটাই হবে কঠিন একটা ধাপ। রাজনৈতিক দলগুলোর নিজস্ব একটা পলিসি আছে, চিন্তা আছে। একেক দলের একেক রকম চিন্তা। সবার চিন্তা এক জায়গায় নিয়ে আসা সহজ কোনো কাজ নয়। আবার বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপির নিজেদেরও রাষ্ট্র সংস্কারবিষয়ক সুস্পষ্ট কিছু বক্তব্য আছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার বছর দেড়েক আগে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে সেই প্রস্তাবগুলো উপস্থাপন করেছে। সেসব নিয়ে দেশজুড়ে প্রচারণা চালিয়েছে। নিজেদের দলের নেতা-কর্মীদের রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফা নিয়ে রীতিমতো পাঠচক্রের মতো করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, বিএনপির পূর্বঘোষিত এই ৩১ দফা কি অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন করা সংস্কার কমিশন তাদের বিবেচনায় নিয়েছে? যদি না নিয়ে থাকে, যদি কমিশনের সংস্কার প্রস্তাবগুলো বিএনপির ৩১ দফার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ না হয়, জাতীয় ঐকমত্য গঠন কি সহজ হবে?
আমার কেন যেন মনে হয়, এই জটিলতাগুলো এড়ানো যেত। প্রতিটি সংস্কার কমিশনে একজন করে ছাত্র প্রতিনিধিকে নেওয়া হয়েছে। তাঁরা সেখানে কতটুকু কী ভূমিকা রাখতে পারছেন বলা কঠিন, তবে যে দু-একটা নমুনা, বিশেষ করে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ছাত্র প্রতিনিধির যে নমুনা এরই মধ্যে দেখা গেছে, তাতে হতাশার জন্ম হয়। এ রকম ‘দুধভাত’জাতীয় সদস্যকে যখন ধারণ করা সম্ভব হয়েছে, আমার তো মনে হয় কমিশনগুলোতে দু-তিনজন করে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিকেও রাখা যেত। সে ক্ষেত্রে ‘জাতীয় ঐকমত্য গঠন’ কমিশনের কাজ অনেকটাই সহজ হয়ে যেত।
এ পর্যন্ত গঠিত কমিশনগুলোর চেহারা দেখে একটা বিষয় স্পষ্ট—তারা প্রাণপণে চেষ্টা করেছে কমিটিগুলোকে একটা ‘সুশীল’ চেহারা দেওয়ার। রাজনীতিবিদদের তারা এই কমিটিতে রাখতে চায়নি। ফলে একটা প্রশ্ন কিন্তু এরই মধ্যে উঠতে শুরু করেছে, অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের সংস্কার প্রস্তাব রাজনীতিবিদেরা শেষ পর্যন্ত মানবেন কেন? রাজনীতিবিদেরা কি তাহলে সংস্কার করার যোগ্যতা রাখেন না? যাঁদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সংস্কারের জন্য, তাঁরা সবাই কি খুবই যোগ্য? সংস্কার নিয়ে চিন্তাভাবনার কোনো ইতিহাস কি আছে এঁদের?
আবার এসব কমিশনের সুশীল সদস্য বা চেয়ারম্যানদের নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এখানে এমন অনেককে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যাঁরা দশকের পর দশক ধরে এ দেশে অবস্থানই করেন না। হাজার হাজার কিলোমিটার দূরে বসে তাঁরা দেশকে অবলোকন করেন, দেশ ও দেশের মানুষকে পরিবর্তন করার ইউটোপিয়ান চিন্তা হয়তো করেন। তাঁদের সেসব চিন্তা কতটুকু বাস্তবসম্মত হবে? আমাদের জন্য কতটুকু লাগসই হবে? অধ্যাপক আলী রীয়াজের কথাই ধরা যাক। এই ভদ্রলোক প্রায় চার দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন। এ দেশের মাটি ও মানুষের সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততা কতটুকু? অথচ তিনিই এই তাবৎ সংস্কার কমিশনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তিনি সংবিধান বিশেষজ্ঞ কীভাবে সেটা আমার বোধগম্য নয়। অথচ তিনিই সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান! জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশনের প্রধান হচ্ছে স্বয়ং ড. ইউনূস। আবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ইউনূস সাহেব যখন এই নতুন কমিশনের সহসভাপতির নাম বলে দেন, তখন বোঝা যায় প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার কারণে তিনি হয়তো এখানে খুব একটা সময় দিতে পারবেন না, বেশির ভাগ কাজ এই সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজই করবেন। এসব ভেবে আমি আশাবাদী হই, দেশটা তাহলে খুব শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্রের মতো আধুনিক হয়ে যাবে! তিনি যুক্তরাষ্ট্রের একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। কিন্তু আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো কি তাঁর মাস্টারিতে স্বস্তি অনুভব করবে?
এসব প্রশ্ন ও সন্দেহকে সঙ্গে নিয়েই আমাদের অগ্রসর হতে হচ্ছে সংস্কারের দিকে।
লেখক: মাসুদ কামাল
জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
সংস্কারের দাবিগুলো শুরু থেকেই উঠছিল। হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই বলা হচ্ছিল—এমন একটা ব্যবস্থা চাই, যাতে ভবিষ্যতে যে সরকার আসবে, তারা যেন চাইলেও স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে না পারে। প্রত্যাশিত সেই ব্যবস্থা কায়েমের জন্যই সংস্কার। বলা হলো, এই যে আমাদের সংবিধান, কাটা-ছেঁড়া করতে করতে এটাকে এমন একটা পর্যায়ে নিয়ে আসা হয়েছে, এটিই এখন দেশের প্রধানমন্ত্রীকে প্রায় ঈশ্বরের মতো ক্ষমতাবান করে তুলেছে। তিনি যা ইচ্ছা তা-ই করার ক্ষমতা রাখেন। তাঁকে চ্যালেঞ্জ করার কেউ থাকে না। তাই এই সংবিধানকে সংস্কার করতে হবে। অপ্রয়োজনীয় ও আপত্তিকর ধারাগুলো বাদ দিতে হবে, গণতান্ত্রিক কিছু ধারা যুক্ত করতে হবে। সব মিলিয়ে সংবিধানের চেহারাটা এমন দাঁড়াবে, যাতে এই সংবিধানই একজন ব্যক্তিকে গণতান্ত্রিক থাকতে বাধ্য করে। প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রের অন্য যে কেউ, তিনি যেন জবাবদিহির ঊর্ধ্বে না থাকেন।
কেবল সংবিধানেই নয়, সংস্কারের দবি উঠেছে আরও অনেক ক্ষেত্রেই। হাসিনা সরকার রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল টানা ১৫ বছর। এই সময়ে তারা সবকিছুকেই নিজেদের মতো করে সাজিয়ে নিয়েছিল। প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ, বিচার বিভাগ—সবকিছুকেই নিজেদের অনুগত করে নিয়েছিল। কাজেই পরিবর্তন আনতে হবে সেসব ক্ষেত্রেও। দাবিগুলো বিশেষ কোনো একটি গোষ্ঠীর ছিল না, ছিল সবার। ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার দাবিগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে শুরুতেই ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করল। পরে দ্বিতীয় দফায় আরও পাঁচটি বিষয়ের সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। প্রথমে গঠিত কমিশনগুলোকে বলা হলো, এ বছরের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে তাদের রিপোর্ট পেশ করতে। পরে অবশ্য এই সময়সীমা বাড়িয়ে জানুয়ারির শেষ পর্যন্ত করা হয়েছে। ধারণা করছি, আগামী দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যে এসব রিপোর্ট আসতে থাকবে।
প্রশ্ন হচ্ছে, কমিশনের রিপোর্ট পেলেই কি সংস্কার হয়ে যাবে? তা যে হবে না, সেটা সবাই জানেন। এরপরও থেকে যাবে বেশ কিছু ধাপ। প্রথমত, প্রশ্ন উঠবে—কমিশনের দেওয়া এই যে সংস্কার প্রস্তাবগুলো, রাজনৈতিক দলগুলো কি মানবে? ড. ইউনূসের এই সরকার তো নিয়মিত কোনো সরকার নয়। একটা নির্বাচন দিয়ে, নির্বাচিতদের হাতে ক্ষমতা তুলে
দিয়ে তারা চলে যাবে। নতুন যাঁরা ক্ষমতায় আসবেন, তাঁরা এক বা একাধিক রাজনৈতিক দলের লোক হবেন। ফলে সংস্কার প্রস্তাবগুলো তাঁদের মানা বা না-মানার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।
সরকার অবশ্য বলছে, কমিশনগুলোর কাছ থেকে সংস্কার প্রস্তাব পাওয়ার পর সেগুলো নিয়ে তারা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসবে। তাদের মতামত নেবে। এ কাজগুলো ঠিকঠাকমতো করার জন্য একটা ‘জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন’-এর কথাও বলেছেন ড. ইউনূস। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এই ঐকমত্য কমিশনের গঠন ও এর কাজ সম্পর্কে একটা ধারণা দিয়েছেন। জানিয়েছেন, এই কমিশনের কাজ হবে বিভিন্ন প্রস্তাবের বিষয়ে একটা রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরি করা। প্রথমে গঠন করা ছয়টি কমিশনের রিপোর্ট পাওয়ার পরই শুরু হবে এই নতুন কমিশনের কাজ। নতুন এই কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে থাকবেন ড. ইউনূস নিজে। আর তাঁর সঙ্গে সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
যত দূর বুঝতে পারছি, ছয়টি কমিশন থেকে পাওয়া সুপারিশগুলো নিয়ে ‘জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশন’ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসবে। যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে সমর্থন পাওয়া যাবে সেগুলো টিকবে, বাকিগুলো বাদ যাবে। সম্ভবত এই প্রক্রিয়াতেই চূড়ান্ত হবে সংস্কার প্রস্তাব।
এতক্ষণ আমি কেবল সংস্কারের প্রক্রিয়াগুলো নিয়ে কথা বললাম। এগুলো আসলে পুরো বিষয়ের মধ্যে একেবারে প্রাথমিক ও সবচেয়ে সহজ ধাপ। প্রকৃত ঝামেলাটা হয়তো দেখা দেবে সামনে। এই যে ‘জাতীয় ঐকমত্য গঠন’, আমার বিবেচনায় এটাই হবে কঠিন একটা ধাপ। রাজনৈতিক দলগুলোর নিজস্ব একটা পলিসি আছে, চিন্তা আছে। একেক দলের একেক রকম চিন্তা। সবার চিন্তা এক জায়গায় নিয়ে আসা সহজ কোনো কাজ নয়। আবার বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপির নিজেদেরও রাষ্ট্র সংস্কারবিষয়ক সুস্পষ্ট কিছু বক্তব্য আছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার বছর দেড়েক আগে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে সেই প্রস্তাবগুলো উপস্থাপন করেছে। সেসব নিয়ে দেশজুড়ে প্রচারণা চালিয়েছে। নিজেদের দলের নেতা-কর্মীদের রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফা নিয়ে রীতিমতো পাঠচক্রের মতো করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, বিএনপির পূর্বঘোষিত এই ৩১ দফা কি অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন করা সংস্কার কমিশন তাদের বিবেচনায় নিয়েছে? যদি না নিয়ে থাকে, যদি কমিশনের সংস্কার প্রস্তাবগুলো বিএনপির ৩১ দফার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ না হয়, জাতীয় ঐকমত্য গঠন কি সহজ হবে?
আমার কেন যেন মনে হয়, এই জটিলতাগুলো এড়ানো যেত। প্রতিটি সংস্কার কমিশনে একজন করে ছাত্র প্রতিনিধিকে নেওয়া হয়েছে। তাঁরা সেখানে কতটুকু কী ভূমিকা রাখতে পারছেন বলা কঠিন, তবে যে দু-একটা নমুনা, বিশেষ করে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ছাত্র প্রতিনিধির যে নমুনা এরই মধ্যে দেখা গেছে, তাতে হতাশার জন্ম হয়। এ রকম ‘দুধভাত’জাতীয় সদস্যকে যখন ধারণ করা সম্ভব হয়েছে, আমার তো মনে হয় কমিশনগুলোতে দু-তিনজন করে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিকেও রাখা যেত। সে ক্ষেত্রে ‘জাতীয় ঐকমত্য গঠন’ কমিশনের কাজ অনেকটাই সহজ হয়ে যেত।
এ পর্যন্ত গঠিত কমিশনগুলোর চেহারা দেখে একটা বিষয় স্পষ্ট—তারা প্রাণপণে চেষ্টা করেছে কমিটিগুলোকে একটা ‘সুশীল’ চেহারা দেওয়ার। রাজনীতিবিদদের তারা এই কমিটিতে রাখতে চায়নি। ফলে একটা প্রশ্ন কিন্তু এরই মধ্যে উঠতে শুরু করেছে, অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের সংস্কার প্রস্তাব রাজনীতিবিদেরা শেষ পর্যন্ত মানবেন কেন? রাজনীতিবিদেরা কি তাহলে সংস্কার করার যোগ্যতা রাখেন না? যাঁদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সংস্কারের জন্য, তাঁরা সবাই কি খুবই যোগ্য? সংস্কার নিয়ে চিন্তাভাবনার কোনো ইতিহাস কি আছে এঁদের?
আবার এসব কমিশনের সুশীল সদস্য বা চেয়ারম্যানদের নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এখানে এমন অনেককে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যাঁরা দশকের পর দশক ধরে এ দেশে অবস্থানই করেন না। হাজার হাজার কিলোমিটার দূরে বসে তাঁরা দেশকে অবলোকন করেন, দেশ ও দেশের মানুষকে পরিবর্তন করার ইউটোপিয়ান চিন্তা হয়তো করেন। তাঁদের সেসব চিন্তা কতটুকু বাস্তবসম্মত হবে? আমাদের জন্য কতটুকু লাগসই হবে? অধ্যাপক আলী রীয়াজের কথাই ধরা যাক। এই ভদ্রলোক প্রায় চার দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন। এ দেশের মাটি ও মানুষের সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততা কতটুকু? অথচ তিনিই এই তাবৎ সংস্কার কমিশনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তিনি সংবিধান বিশেষজ্ঞ কীভাবে সেটা আমার বোধগম্য নয়। অথচ তিনিই সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান! জাতীয় ঐকমত্য গঠন কমিশনের প্রধান হচ্ছে স্বয়ং ড. ইউনূস। আবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ইউনূস সাহেব যখন এই নতুন কমিশনের সহসভাপতির নাম বলে দেন, তখন বোঝা যায় প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার কারণে তিনি হয়তো এখানে খুব একটা সময় দিতে পারবেন না, বেশির ভাগ কাজ এই সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজই করবেন। এসব ভেবে আমি আশাবাদী হই, দেশটা তাহলে খুব শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্রের মতো আধুনিক হয়ে যাবে! তিনি যুক্তরাষ্ট্রের একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। কিন্তু আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো কি তাঁর মাস্টারিতে স্বস্তি অনুভব করবে?
এসব প্রশ্ন ও সন্দেহকে সঙ্গে নিয়েই আমাদের অগ্রসর হতে হচ্ছে সংস্কারের দিকে।
লেখক: মাসুদ কামাল
জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
ব্যক্তির একটি অন্যতম আচরণ অ্যাটিচিউড বা মনোভাব। ব্যক্তির ইতিবাচক গ্রহণযোগ্যতার জন্য প্রয়োজন তাঁর পজিটিভ অ্যাটিচিউড বা ইতিবাচক মনোভাব। সাধারণত দেখা যায়, অনেকেই একজন আরেকজনের অ্যাটিচিউড নিয়ে কথা বলছে, কথা বলতে ভালোবাসছে। অভ্যস্ত হয়ে উঠছে। হয়তো তারা জানেই না যে একজন ব্যক্তির অ্যাটিচিউড আসলে কী ধরনের আচ
১৬ ঘণ্টা আগেসামরিক সরকার বোঝেওনি, তাদের পরামর্শগুলো হাস্যকর। জুলাই থেকেই ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় চলছিল বোমা হামলা। ভীত পাকিস্তানি বাহিনীকে নৈতিক সাহায্য দেওয়ার জন্য রাজাকার কিংবা শান্তি কমিটির লোকেরা থাকত বটে, কিন্তু তাদের অবস্থাও পাকিস্তানি হানাদারদের চেয়ে কোনো অংশে ভালো ছিল না।
১৬ ঘণ্টা আগেক্ষমতার পালাবদলের পর কোনো দৃশ্যমান পরিবর্তন কি দেখা যাচ্ছে—এ প্রশ্ন এখন অনেকের মনে। নাগরিক জীবনে যে সমস্যাগুলো ছিল, তার কতটা কেটেছে, এ রকম প্রশ্ন করা হলে ভুক্তভোগী মানুষ নীরবই থাকবেন।
১৬ ঘণ্টা আগেআমার এক বন্ধুর স্ত্রী অকস্মাৎ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। স্ত্রীটি জাপানের, তাঁর নাম কাজুকো। আমার বন্ধু জাপানে লেখাপড়া করতে যান এবং সেখানেই তাঁদের পরিচয়, বন্ধুত্ব ও সম্পর্ক তৈরি হয়। পরিচয়ের কারণ, আমাদের দেশে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের ত্রাণ কার্যক্রমে তরুণী কাজুকো অংশ নিয়েছিলেন এবং পরবর্তীকালে মুক্তি
২ দিন আগে