মোইরা ফেগান
২০২৪ সালের ঘটনাগুলোর দিকে ফিরে তাকালে আমরা বলতে পারি যে এটি বড় ধরনের রূপান্তর, ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তন, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং বৈশ্বিক স্থায়িত্বের ওপর সংজ্ঞায়িত একটি বছর ছিল। বছরটি বিজয় ও চ্যালেঞ্জের। বছরটি আমাদের বিশ্বের আন্তসংযোগ ও মানবতার মাপকাঠির ওঠানামার কথা মনে করিয়ে দেয়।
ভূ-রাজনীতি ও বৈশ্বিক সম্পর্ক: ২০২৪ সালে ভূ-রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে, যা সহযোগিতা ও সংঘর্ষ—এই দুয়ের দ্বারাই চালিত হয়েছে। প্রধান শক্তিগুলো তাদের সম্পর্কের জটিল টানাপোড়েনের পরীক্ষা করতে থাকে এবং এর মধ্য দিয়ে নতুন অংশীদারত্বের উদ্ভব হয়।
নির্বাচনের বছর: ২০২৪ নির্বাচনের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য বছর ছিল, কারণ ৬০টির বেশি দেশের ভোটাররা ভোট দিয়েছেন। ক্ষমতাসীন ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলগুলোর জন্যও এটি একটি কঠিন বছর ছিল। জীবনযাত্রার ব্যয় ক্রমবর্ধমান হওয়ায় বিচলিত, সাংস্কৃতিক ইস্যুতে বিভক্ত এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় ক্ষুব্ধ—অনেক দেশের ভোটাররা হতাশার বার্তা পাঠিয়েছেন।
বছরটা শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের নির্বাচনের মাধ্যমে এবং বলা যায়, শেষ হয়েছে মহাশক্তিধর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। এর মধ্যে বাংলাদেশে একপেশে নির্বাচনে ক্ষমতায় আসা শাসক দল ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে উৎখাত হয়েছে। পরবর্তী নির্বাচনের সময় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতভেদ বাড়ছে। পাকিস্তানেও একধরনের সাজানো নির্বাচন হয়েছে। কোনোরকমে জোড়াতালির সরকার চালাতে গিয়ে এখন লেজেগোবরে অবস্থা পিপিপি নেতা শাহবাজ শরিফের। বিরোধী দল ইমরান খানের তেহরিক-ই-ইনসাফের সদস্যরা রাজপথ কাঁপাচ্ছেন। ভারতে লোকসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদির দল ধাক্কা খেলেও এখন তা কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে। হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রেসিডেন্ট রাইসিকে হারানোর কারণে আগাম প্রেসিডন্ট নির্বাচনে গেছে ইরান। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আরও ছয় বছরের জন্য নিজের গদি পাকাপোক্ত করেছেন। অবশ্য এ নিয়ে কোনো সন্দেহই ছিল না। কিন্তু তাঁর শত্রু ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি যুদ্ধ ও জরুরি অবস্থার অজুহাত দেখিয়ে বিনা ভোটে গদিনশিন থাকলেন।
অবশ্য বড় খেলাটা হয়ে গেল যুক্তরাষ্ট্রে। বলা যায় এ বছরের সবচেয়ে বড় মাপের নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী প্রেসিডেন্ট পদে হেরেছেন। রিপাবলিকান প্রার্থী সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিপুল ভোটে পরাজিত করলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে। এটি ছিল পরপর তৃতীয়বারের মতো মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের পরাজয়। কংগ্রেসের উভয় কক্ষেই রিপাবলিকানরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি গোটা দুনিয়াকে কোথায় নিয়ে যান, সেটা দেখার অপেক্ষায় সময় গুনছে সবাই। ২০ জানুয়ারি হোয়াইট হাউসের বাসিন্দা হচ্ছেন তিনি। কোনো অঘটন না ঘটলে আগামী চার বছর তিনি সেখানে থাকবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিপরীতে যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক ক্ষমতা বাম দিকে ঝুঁকেছে। লেবার পার্টি ১৪ বছর পর কনজারভেটিভ বা টোরিদের শাসনের অবসান ঘটিয়ে হাউস অব কমন্সে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে।
এপ্রিলে দক্ষিণ কোরিয়ার ভোটাররা বিরোধী ডেমোক্রেটিক পার্টিকে জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন দিয়েছেন, যাকে পিপল পাওয়ার পার্টির প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলকে ঠেকানো হিসেবে দেখা হয়েছিল। তিনি ইতিমধ্যে অভিশংসিত হয়ে বিদায় নিয়েছেন। ঘানা,
পানামা, পর্তুগাল এবং উরুগুয়েসহ বিভিন্ন মতাদর্শিক স্ট্রাইপের বিরোধী দলগুলো বিভিন্ন দেশে ক্ষমতায় জিতেছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত: ২০২২ সালে শুরু হওয়া রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যকার সংঘাত ২০২৪-এ শেষ হয়নি। তবে নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতি প্রায় তিন বছর ধরে চলা সংঘাত অবসানের একটা আশার আলো দেখাচ্ছে। শেষ সময়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের নানা উসকানিমূলক সিদ্ধান্তের মুখে রাশিয়া শান্ত থেকেছে। জেলেনস্কিও বুঝতে পারছেন, যার ৯-এ হয় না, তাকে দিয়ে ৯০-তেও হবে না। তিন বছরের যুদ্ধে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ মারা গেছে। আহত হয়েছে অনেক। আহতদের মধ্যে দুই পক্ষের সেনাসদস্যই বেশি। তবে সবচেয়ে বেশি ধ্বংস হয়েছে জনপদ। রাশিয়ার হামলায় ইউক্রেনের একের পর এক শহর-গ্রাম বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। যুদ্ধ থামলে এগুলো আদৌ ঠিক হবে কি না—কেউ জানে না। এর জন্য যে অর্থের প্রয়োজন তা ইউক্রেনকে যারা যুদ্ধ করতে আর্থিক সহায়তা জুগিয়েছে, তারা দেবে কি না, জেলেনস্কিও তা জানেন না।
মধ্যপ্রাচ্যে বর্বরতা: দুটি শব্দে এর প্রকাশ এভাবে ছাড়া সম্ভব না। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজা ও পশ্চিম তীরে যে বর্বরতা চালিয়েছে, তা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়কালে নৃশংসতার মাপকাঠিকে ছাড়িয়ে গেছে। লেবাননের মানুষও বাঁচতে পারেনি ইসরায়েলের বর্বরতার হাত থেকে। গাজা, পশ্চিম তীর ও লেবানন মিলিয়ে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের প্রাণ গেছে ইসরায়েলের হামলায়। এর অধিকাংশ নারী ও শিশু। গাজায় ২২ লাখ অধিবাসীর মধ্যে ২০ লাখই গৃহহারা। পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতির পরিধি প্রতিদিন বাড়ছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র ইরান পাশে দাঁড়িয়েছিল ফিলিস্তিনের। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা ইসরায়েলের এই নরসংহার অভিযানে এত ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিল যে, ইরান পেরে ওঠেনি। সিরিয়ায় অকস্মাৎ আসাদ সরকারের পতন ইরানকে মধ্যপ্রাচ্যে অনেকটা পিছিয়ে দিয়েছে। এর মধ্যে ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক আবার জোড়া লাগায় মুসলিম বিশ্বে স্বস্তি এসেছে। কিন্তু সব স্বস্তি একাই কেড়ে নিচ্ছে ইসরায়েল।
প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবন: ২০২৪ প্রযুক্তিগত অগ্রগতির জন্য একটি যুগান্তকারী বছর ছিল। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অগ্রগতি থেকে শুরু করে মহাকাশ অনুসন্ধানে অগ্রগতি ও উদ্ভাবন বিশ্বকে নতুন দিকে ধাবিত করছে। এখনো কেউ বুঝতে পারছে না পরের বছর এটা কোথায় থামবে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও অটোমেশন: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) প্রযুক্তিগত আলোচনার অগ্রভাগে ছিল। জেনারেটিভ এআই টুলের ব্যাপক গ্রহণ স্বাস্থ্যসেবা থেকে শিক্ষা পর্যন্ত সর্বত্র বিপ্লব ঘটিয়েছে। যা-ই হোক, এআইয়ের এই উত্থান নৈতিকতা, নিয়ন্ত্রণ ও চাকরির বাজারে এর প্রভাব সম্পর্কে নানা আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সরকার ও প্রযুক্তির সঙ্গে জড়িত নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা এআইয়ের বিকাশের জন্য নির্দেশিকা তৈরির জন্য বৈশ্বিক শীর্ষ সম্মেলন আহ্বান করেছেন।
মহাকাশ অনুসন্ধান: মহাকাশ অনুসন্ধান ২০২৪ সালে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। নাসার আর্টেমিস প্রোগ্রাম উল্লেখযোগ্য মাইলফলক অর্জন করেছে, যা মানুষকে চাঁদে একটি স্থায়ী বসতি স্থাপনের কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। ইতিমধ্যে স্পেসএক্স এবং ব্লু অরিজিনের মতো বেসরকারি সংস্থাগুলো মঙ্গল গ্রহে বসবাসের জন্য অনুসন্ধানের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে। পৃথিবীকে ছাড়িয়ে বসবাসের নতুন জগতের সন্ধানে মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়েছে।
সবুজ প্রযুক্তি: নবায়নযোগ্য শক্তি এবং কার্বন ক্যাপচার প্রযুক্তির ব্যাপারে অগ্রগতিসহ টেকসই প্রযুক্তির জন্য জোর আরও তীব্র হয়েছে। দেশ এবং প্রতিষ্ঠানগুলো বিশ্বব্যাপী জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সবুজ অবকাঠামোতে প্রচুর বিনিয়োগ করেছে। বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারি এবং হাইড্রোজেন এনার্জি জমা রাখার জন্য স্থান নতুন করে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে যে ভবিষ্যতে কার্বনের ব্যবহার আরও কমবে।
অর্থনীতি এবং বৈশ্বিক বাজার: ২০২৪ সালে বিশ্ব অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের বিষয়টি উদ্ভাবন এবং নতুন চ্যালেঞ্জ দ্বারা চিহ্নিত ছিল। কিছু খাত উন্নতি লাভ করলেও অন্যগুলো বাধার সম্মুখীন হয়। প্রযুক্তি, স্বাস্থ্যসেবা ও পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির সঙ্গে মহামারি-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার অব্যাহত রয়েছে। যাই হোক, মুদ্রাস্ফীতি এবং সরবরাহ শৃঙ্খল বিঘ্নিত হওয়ার মতো চ্যালেঞ্জগুলো রয়েই গেছে।
ডিজিটাল অর্থনীতি দ্রুত প্রসারিত হয়েছে। ই-কমার্স, ফিনটেক এবং গিগ অর্থনীতি দ্বারা চালিত হয়েছে। ক্রিপ্টোকারেন্সি ও ব্লকচেইন প্রযুক্তি মূলধারার গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছে। এর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিতর্ক এখনো অব্যাহত আছে।
সামনের পথ: অনেক বিচারে ২০২৪ সাল একটি টার্নিং পয়েন্ট ছিল। আমরা যে চ্যালেঞ্জগুলোর মুখোমুখি হয়েছি, সেগুলো কিন্তু সহযোগিতা ও উদ্ভাবনের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছে। একই সময়ে প্রযুক্তি, জলবায়ু পরিবর্তন এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য মানুষের আকাঙ্ক্ষা একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশা দেখাচ্ছে।
সামনের দিকে তাকিয়ে, ২০২৪-এর পাঠ আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের সমাধানও বৈশ্বিকভাবে হতে হবে। তা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করে হোক আর মানবাধিকারের অগ্রগতি হোক বা ভালোর জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার হোক—এগিয়ে যাওয়ার পথ নির্ভর করে আছে একটি ন্যায়সংগত ও টেকসই বিশ্বের প্রতি আমাদের সম্মিলিত অঙ্গীকারের ওপর।
(পিউ রিসার্চ সেন্টারের একটি লেখার ছায়া অবলম্বনে তৈরি)
লেখক: রিচার্ড ওয়াইক, মোইরা ফেগান ও লরা ক্ল্যান্সি
গবেষক, পিউ রিসার্চ সেন্টার
২০২৪ সালের ঘটনাগুলোর দিকে ফিরে তাকালে আমরা বলতে পারি যে এটি বড় ধরনের রূপান্তর, ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তন, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং বৈশ্বিক স্থায়িত্বের ওপর সংজ্ঞায়িত একটি বছর ছিল। বছরটি বিজয় ও চ্যালেঞ্জের। বছরটি আমাদের বিশ্বের আন্তসংযোগ ও মানবতার মাপকাঠির ওঠানামার কথা মনে করিয়ে দেয়।
ভূ-রাজনীতি ও বৈশ্বিক সম্পর্ক: ২০২৪ সালে ভূ-রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে, যা সহযোগিতা ও সংঘর্ষ—এই দুয়ের দ্বারাই চালিত হয়েছে। প্রধান শক্তিগুলো তাদের সম্পর্কের জটিল টানাপোড়েনের পরীক্ষা করতে থাকে এবং এর মধ্য দিয়ে নতুন অংশীদারত্বের উদ্ভব হয়।
নির্বাচনের বছর: ২০২৪ নির্বাচনের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য বছর ছিল, কারণ ৬০টির বেশি দেশের ভোটাররা ভোট দিয়েছেন। ক্ষমতাসীন ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলগুলোর জন্যও এটি একটি কঠিন বছর ছিল। জীবনযাত্রার ব্যয় ক্রমবর্ধমান হওয়ায় বিচলিত, সাংস্কৃতিক ইস্যুতে বিভক্ত এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় ক্ষুব্ধ—অনেক দেশের ভোটাররা হতাশার বার্তা পাঠিয়েছেন।
বছরটা শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের নির্বাচনের মাধ্যমে এবং বলা যায়, শেষ হয়েছে মহাশক্তিধর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। এর মধ্যে বাংলাদেশে একপেশে নির্বাচনে ক্ষমতায় আসা শাসক দল ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে উৎখাত হয়েছে। পরবর্তী নির্বাচনের সময় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতভেদ বাড়ছে। পাকিস্তানেও একধরনের সাজানো নির্বাচন হয়েছে। কোনোরকমে জোড়াতালির সরকার চালাতে গিয়ে এখন লেজেগোবরে অবস্থা পিপিপি নেতা শাহবাজ শরিফের। বিরোধী দল ইমরান খানের তেহরিক-ই-ইনসাফের সদস্যরা রাজপথ কাঁপাচ্ছেন। ভারতে লোকসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদির দল ধাক্কা খেলেও এখন তা কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে। হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রেসিডেন্ট রাইসিকে হারানোর কারণে আগাম প্রেসিডন্ট নির্বাচনে গেছে ইরান। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আরও ছয় বছরের জন্য নিজের গদি পাকাপোক্ত করেছেন। অবশ্য এ নিয়ে কোনো সন্দেহই ছিল না। কিন্তু তাঁর শত্রু ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি যুদ্ধ ও জরুরি অবস্থার অজুহাত দেখিয়ে বিনা ভোটে গদিনশিন থাকলেন।
অবশ্য বড় খেলাটা হয়ে গেল যুক্তরাষ্ট্রে। বলা যায় এ বছরের সবচেয়ে বড় মাপের নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী প্রেসিডেন্ট পদে হেরেছেন। রিপাবলিকান প্রার্থী সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিপুল ভোটে পরাজিত করলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে। এটি ছিল পরপর তৃতীয়বারের মতো মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের পরাজয়। কংগ্রেসের উভয় কক্ষেই রিপাবলিকানরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি গোটা দুনিয়াকে কোথায় নিয়ে যান, সেটা দেখার অপেক্ষায় সময় গুনছে সবাই। ২০ জানুয়ারি হোয়াইট হাউসের বাসিন্দা হচ্ছেন তিনি। কোনো অঘটন না ঘটলে আগামী চার বছর তিনি সেখানে থাকবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিপরীতে যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক ক্ষমতা বাম দিকে ঝুঁকেছে। লেবার পার্টি ১৪ বছর পর কনজারভেটিভ বা টোরিদের শাসনের অবসান ঘটিয়ে হাউস অব কমন্সে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে।
এপ্রিলে দক্ষিণ কোরিয়ার ভোটাররা বিরোধী ডেমোক্রেটিক পার্টিকে জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন দিয়েছেন, যাকে পিপল পাওয়ার পার্টির প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলকে ঠেকানো হিসেবে দেখা হয়েছিল। তিনি ইতিমধ্যে অভিশংসিত হয়ে বিদায় নিয়েছেন। ঘানা,
পানামা, পর্তুগাল এবং উরুগুয়েসহ বিভিন্ন মতাদর্শিক স্ট্রাইপের বিরোধী দলগুলো বিভিন্ন দেশে ক্ষমতায় জিতেছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত: ২০২২ সালে শুরু হওয়া রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যকার সংঘাত ২০২৪-এ শেষ হয়নি। তবে নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতি প্রায় তিন বছর ধরে চলা সংঘাত অবসানের একটা আশার আলো দেখাচ্ছে। শেষ সময়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের নানা উসকানিমূলক সিদ্ধান্তের মুখে রাশিয়া শান্ত থেকেছে। জেলেনস্কিও বুঝতে পারছেন, যার ৯-এ হয় না, তাকে দিয়ে ৯০-তেও হবে না। তিন বছরের যুদ্ধে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ মারা গেছে। আহত হয়েছে অনেক। আহতদের মধ্যে দুই পক্ষের সেনাসদস্যই বেশি। তবে সবচেয়ে বেশি ধ্বংস হয়েছে জনপদ। রাশিয়ার হামলায় ইউক্রেনের একের পর এক শহর-গ্রাম বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। যুদ্ধ থামলে এগুলো আদৌ ঠিক হবে কি না—কেউ জানে না। এর জন্য যে অর্থের প্রয়োজন তা ইউক্রেনকে যারা যুদ্ধ করতে আর্থিক সহায়তা জুগিয়েছে, তারা দেবে কি না, জেলেনস্কিও তা জানেন না।
মধ্যপ্রাচ্যে বর্বরতা: দুটি শব্দে এর প্রকাশ এভাবে ছাড়া সম্ভব না। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজা ও পশ্চিম তীরে যে বর্বরতা চালিয়েছে, তা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়কালে নৃশংসতার মাপকাঠিকে ছাড়িয়ে গেছে। লেবাননের মানুষও বাঁচতে পারেনি ইসরায়েলের বর্বরতার হাত থেকে। গাজা, পশ্চিম তীর ও লেবানন মিলিয়ে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের প্রাণ গেছে ইসরায়েলের হামলায়। এর অধিকাংশ নারী ও শিশু। গাজায় ২২ লাখ অধিবাসীর মধ্যে ২০ লাখই গৃহহারা। পশ্চিম তীরে ইহুদি বসতির পরিধি প্রতিদিন বাড়ছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র ইরান পাশে দাঁড়িয়েছিল ফিলিস্তিনের। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা ইসরায়েলের এই নরসংহার অভিযানে এত ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিল যে, ইরান পেরে ওঠেনি। সিরিয়ায় অকস্মাৎ আসাদ সরকারের পতন ইরানকে মধ্যপ্রাচ্যে অনেকটা পিছিয়ে দিয়েছে। এর মধ্যে ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক আবার জোড়া লাগায় মুসলিম বিশ্বে স্বস্তি এসেছে। কিন্তু সব স্বস্তি একাই কেড়ে নিচ্ছে ইসরায়েল।
প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবন: ২০২৪ প্রযুক্তিগত অগ্রগতির জন্য একটি যুগান্তকারী বছর ছিল। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অগ্রগতি থেকে শুরু করে মহাকাশ অনুসন্ধানে অগ্রগতি ও উদ্ভাবন বিশ্বকে নতুন দিকে ধাবিত করছে। এখনো কেউ বুঝতে পারছে না পরের বছর এটা কোথায় থামবে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও অটোমেশন: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) প্রযুক্তিগত আলোচনার অগ্রভাগে ছিল। জেনারেটিভ এআই টুলের ব্যাপক গ্রহণ স্বাস্থ্যসেবা থেকে শিক্ষা পর্যন্ত সর্বত্র বিপ্লব ঘটিয়েছে। যা-ই হোক, এআইয়ের এই উত্থান নৈতিকতা, নিয়ন্ত্রণ ও চাকরির বাজারে এর প্রভাব সম্পর্কে নানা আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সরকার ও প্রযুক্তির সঙ্গে জড়িত নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা এআইয়ের বিকাশের জন্য নির্দেশিকা তৈরির জন্য বৈশ্বিক শীর্ষ সম্মেলন আহ্বান করেছেন।
মহাকাশ অনুসন্ধান: মহাকাশ অনুসন্ধান ২০২৪ সালে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। নাসার আর্টেমিস প্রোগ্রাম উল্লেখযোগ্য মাইলফলক অর্জন করেছে, যা মানুষকে চাঁদে একটি স্থায়ী বসতি স্থাপনের কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। ইতিমধ্যে স্পেসএক্স এবং ব্লু অরিজিনের মতো বেসরকারি সংস্থাগুলো মঙ্গল গ্রহে বসবাসের জন্য অনুসন্ধানের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে। পৃথিবীকে ছাড়িয়ে বসবাসের নতুন জগতের সন্ধানে মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়েছে।
সবুজ প্রযুক্তি: নবায়নযোগ্য শক্তি এবং কার্বন ক্যাপচার প্রযুক্তির ব্যাপারে অগ্রগতিসহ টেকসই প্রযুক্তির জন্য জোর আরও তীব্র হয়েছে। দেশ এবং প্রতিষ্ঠানগুলো বিশ্বব্যাপী জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সবুজ অবকাঠামোতে প্রচুর বিনিয়োগ করেছে। বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারি এবং হাইড্রোজেন এনার্জি জমা রাখার জন্য স্থান নতুন করে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে যে ভবিষ্যতে কার্বনের ব্যবহার আরও কমবে।
অর্থনীতি এবং বৈশ্বিক বাজার: ২০২৪ সালে বিশ্ব অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের বিষয়টি উদ্ভাবন এবং নতুন চ্যালেঞ্জ দ্বারা চিহ্নিত ছিল। কিছু খাত উন্নতি লাভ করলেও অন্যগুলো বাধার সম্মুখীন হয়। প্রযুক্তি, স্বাস্থ্যসেবা ও পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির সঙ্গে মহামারি-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার অব্যাহত রয়েছে। যাই হোক, মুদ্রাস্ফীতি এবং সরবরাহ শৃঙ্খল বিঘ্নিত হওয়ার মতো চ্যালেঞ্জগুলো রয়েই গেছে।
ডিজিটাল অর্থনীতি দ্রুত প্রসারিত হয়েছে। ই-কমার্স, ফিনটেক এবং গিগ অর্থনীতি দ্বারা চালিত হয়েছে। ক্রিপ্টোকারেন্সি ও ব্লকচেইন প্রযুক্তি মূলধারার গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছে। এর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিতর্ক এখনো অব্যাহত আছে।
সামনের পথ: অনেক বিচারে ২০২৪ সাল একটি টার্নিং পয়েন্ট ছিল। আমরা যে চ্যালেঞ্জগুলোর মুখোমুখি হয়েছি, সেগুলো কিন্তু সহযোগিতা ও উদ্ভাবনের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছে। একই সময়ে প্রযুক্তি, জলবায়ু পরিবর্তন এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য মানুষের আকাঙ্ক্ষা একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশা দেখাচ্ছে।
সামনের দিকে তাকিয়ে, ২০২৪-এর পাঠ আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের সমাধানও বৈশ্বিকভাবে হতে হবে। তা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করে হোক আর মানবাধিকারের অগ্রগতি হোক বা ভালোর জন্য প্রযুক্তির ব্যবহার হোক—এগিয়ে যাওয়ার পথ নির্ভর করে আছে একটি ন্যায়সংগত ও টেকসই বিশ্বের প্রতি আমাদের সম্মিলিত অঙ্গীকারের ওপর।
(পিউ রিসার্চ সেন্টারের একটি লেখার ছায়া অবলম্বনে তৈরি)
লেখক: রিচার্ড ওয়াইক, মোইরা ফেগান ও লরা ক্ল্যান্সি
গবেষক, পিউ রিসার্চ সেন্টার
বর্তমানে মিয়ানমারের রাখাইন এলাকা বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির দখলে। ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে রাখাইনের ১৭টি শহরের ভেতর ১৪টি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে বলে আরাকান আর্মি দাবি করছে। দখল করা শহরের মধ্যে বাংলাদেশের সীমান্তসংলগ্ন মংডু, বুথিডাং এবং চিন রাজ্যের প
৩৭ মিনিট আগেরাষ্ট্রীয় প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র বাংলাদেশ সচিবালয়ের একটি উঁচু ভবনে কয়েক দিন আগে ঘটে যাওয়া অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে গঠিত উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বিদ্যুতের লুজ কানেকশন থেকে ওই ঘটনার সূত্রপাত বলে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে। সে সিদ্ধান্তের আলোকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্ম
৪০ মিনিট আগেগণ-অভ্যুত্থান যখন আগস্ট থেকে জানুয়ারিতে এসে পা রেখেছে, তখন বিভিন্ন সংগঠনের সৃষ্ট অনেক ঘটনাতেই রাজনৈতিক জটিলতা বেড়ে ওঠার আলামত দেখা যাচ্ছে। যে স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনে যুক্ত হয়েছিল মানুষ, আন্দোলন শেষে তা এখন কিছুটা শীতল। আন্দোলনের নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব নিয়ে জমে উঠেছে বিতর্ক। যে যার মতো করে নিজেদেরই আন্দোলন
১ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশে বটতলার একজন উকিল ছিলেন। বটতলার হলে কী হবে, তিনি ছিলেন ‘পূর্ব পাকিস্তানের’ গভর্নর—জবরদস্ত শাসক মোনায়েম খান। তাঁর দাপটে পূর্ব পাকিস্তান ছিল কম্পমান। কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরের এই স্বৈরশাসক একবার তাঁর ওস্তাদ ‘পাকিস্তানের’ স্বঘোষিত ফিল্ড মার্শাল প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের কাছ থেকে হুকুম পান...
১ দিন আগে