হাজার বছর পরও অক্ষত মানুষের মস্তিষ্ক, হিসাব মিলছে না বিজ্ঞানীদের

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২৯ মার্চ ২০২৪, ০০: ২৯
Thumbnail image

একটি কিংবা দুটি নয়, সহস্রাধিক মানুষের মস্তিষ্কের জীবাশ্ম আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা। এসব মস্তিষ্কের কিছু আবার ১২ হাজার বছর কিংবা তারও আগের কোনো মানুষের। জাহাজের ধ্বংসাবশেষ কিংবা জলাবদ্ধ কোনো কবরের মতো স্থানে হাজার হাজার বছর ধরে কীভাবে মস্তিষ্কের মতো একটি নরম বস্তু জীবাশ্মে পরিণত হলো তা বিজ্ঞানীদের কাছে এক রহস্য। দেখা গেছে—মানুষগুলোর অস্থি, চর্ম সহ শারীরিক অবয়বের সবকিছু বিলীন হয়ে গেলেও অলৌকিকভাবে শুধু মস্তিষ্কটি জীবাশ্ম আকারে থেকে গেছে। 

বিষয়টিকে অদ্ভুত আখ্যা দিয়ে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষক আলেকজান্দ্রা মর্টন-হেওয়ার্ড বলেন, ‘সত্যিকার অর্থে, যে পরিবেশই হোক না কেন—তা মস্তিষ্ককে সংরক্ষণ করবে, এমনটা আমরা আশা করি না।’ 

এ বিষয়ে নিও সায়েন্টিস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খোঁড়াখুঁড়ির কাজ করতে গিয়ে মস্তিষ্ক সংরক্ষণে আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন মর্টন-হেওয়ার্ড। তিনি জানান, কোনো মানুষের মৃত্যুর পর পচে যাওয়া প্রথম অঙ্গগুলোর মধ্যে মস্তিষ্ক অন্যতম। পচে গিয়ে এটি বেশ দ্রুত তরলে পরিণত হয়। তাহলে কীভাবে হাজার বছর পরও অসংখ্য মানুষের জমাটবাঁধা মস্তিষ্ক উদ্ধার হলো—তা এক রহস্যই বটে। মর্টন-হেওয়ার্ড এবং তার সহকর্মীরা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে আবিষ্কৃত প্রায় সাড়ে ৪ হাজার সংরক্ষিত মানব মস্তিষ্কের একটি ডেটাবেইস তৈরি করেছেন। 

মর্টন মনে করেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মস্তিষ্কের এমন সংরক্ষিত অবস্থায় থেকে যাওয়াকে একটি পরিচিত প্রক্রিয়া দ্বারা ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ—১৪৫০ সালের দিকে দক্ষিণ আমেরিকার ইনকা সভ্যতায় বলিদান করা অসংখ্য মানুষকে একটি আগ্নেয়গিরির চূড়ায় সমাধিস্থ করা হয়েছিল। তাদের অনেকের মস্তিষ্ক বরফে জমে গিয়েছিল কিংবা শরীরের সঙ্গে শুকিয়ে গিয়েছিল। 

আবার টোলুন্ড ম্যান-এর মতো বগ মানুষের মৃতদেহের কথাই ধরা যাক। অন্তত ২ হাজার ৪০০ বছর আগে ডেনমার্কে এই মানুষটিকে মেরে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। হাজার বছর পরও তাঁর শরীর ও মস্তিষ্ক অক্ষত অবস্থায় ছিল মূলত ট্যানারি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে, যে উপায়ে পশুদের চামড়া সংরক্ষণ করা হয়। 

সংরক্ষিত থেকে যাওয়া একটি মস্তিষ্ক হাতে আলেকজান্দ্রা মর্টন-হেওয়ার্ডএ ছাড়া ১৯৩৬ সালে স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধের সময় গুলি করে মারা কিছু মানুষকে গণকবর দেওয়া হলে, তাদের মস্তিষ্কগুলো অক্ষত অবস্থায় পাওয়া যায়। মর্টনের মতে, এ ক্ষেত্রে মস্তিষ্ক সংরক্ষিত হয়েছিল স্যাপোনিফিকেশন প্রক্রিয়ায়। এই প্রক্রিয়ায় কবরের ভেতর চর্বিযুক্ত পদার্থ সাবানের একটি রূপে পরিবর্তিত হয়। 

তবে পরিচিত প্রক্রিয়াগুলো শুধু মস্তিষ্ক নয়, মৃতদেহের অন্যান্য সব নরম টিস্যুকেও সংরক্ষণ করে। কিন্তু ১ হাজার ৩০০ টিরও বেশি ক্ষেত্রে একমাত্র নরম টিস্যু হিসেবে শুধু মস্তিষ্ক টিকে থাকার কোনো সমাধান পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে মর্টন বলেন, ‘অজানা এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ ভিন্ন। এর মূল বৈশিষ্ট্য হলো—শুধুমাত্র মস্তিষ্ক এবং হাড় ছাড়া কোনো চামড়া, পেশি এবং অন্ত্রের অস্তিত্ব নেই।’ 

উদাহরণস্বরূপ—সিলেসিয়ার সেইন্ট হেডউইগের কথাই ধরা যাক। ১২৪৩ সালে তাঁকে সমাহিত করা হয়েছিল এবং সপ্তদশ শতকে দেহাবশেষটি উত্তোলন করে দেখা যায় তাঁর মস্তিষ্ক মস্তিষ্ক জমাটবদ্ধ অবস্থায় সংরক্ষিত ছিল। সেই আমলে বিষয়টিকে একটি ঐশ্বরিক শক্তির কাণ্ড হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছিল। 

এ ক্ষেত্রে মর্টন ধারণা করেন, কিছু বিশেষ পরিস্থিতিতে লোহার মতো মাটির উপাদান মস্তিষ্কের প্রোটিন এবং লিপিডগুলোর মধ্যে রাসায়নিক প্রভাব তৈরি করে আরও স্থিতিশীল অণু গঠন করে, যা ক্ষয় প্রতিরোধে সক্ষম।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কারা পরিদর্শক হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক

ট্রাম্পের অভিষেক: সি আমন্ত্রণ পেলেও পাননি মোদি, থাকছেন আরও যাঁরা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে: সলিমুল্লাহ খান

দেওয়ানি মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিতে একগুচ্ছ সুপারিশ কমিশনের

সংস্কারের কিছু প্রস্তাবে মনঃক্ষুণ্ন বিএনপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত