স্বপ্না রেজা
অভিভাবকেরা উৎকণ্ঠিত। দিশাহীন। কোথায় যাবেন, কীভাবে সহজ উপায়ে তাঁদের বিশেষ শিশুরা করোনা ভ্যাকসিন পাবে। অভিভাবকদের কেউ কেউ ইতিমধ্যে আক্রান্ত। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁরা তাঁদের সেই উৎকণ্ঠার কথা বলেছেন, বলছেন।
সুস্থতা ও সুস্থ হয়ে বেঁচে থাকার তীব্র বাসনা প্রতিটি মানুষের। রাষ্ট্র তার নাগরিকদের সেই বাসনা পূরণে সক্রিয় থাকে। সক্রিয় থাকতে হয়। জাতিকে সুরক্ষিত করতে একটি রাষ্ট্রে নানান উদ্যোগ থাকে। থাকে পরিকল্পনা এবং তার বাস্তবায়ন ও সমন্বয়। বাংলাদেশ উদ্যোগ, পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে পিছিয়ে নেই। তবে সমন্বয়হীনতা আছে। এই সমন্বয়হীনতা লক্ষ্য পূরণে অন্তরায়; বিশেষ করে অতিমারি করোনার আঘাত থেকে জাতিকে সুরক্ষিত করার লক্ষ্যে বিবিধ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, হচ্ছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন, বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে। প্রত্যেক নাগরিককে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বাধ্য করা হচ্ছে; বিশেষ করে কমিউনিটি সংক্রমণ রোধের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে, হচ্ছে। সেই সঙ্গে ভ্যাকসিন বা টিকা নিতে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে, হচ্ছে। ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে সর্বস্তরে। আমরা দেখেছি, অনেক উন্নয়নশীল দেশের আগেই বাংলাদেশ সরকার জনগণকে ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজটি শুরু করেছে, যা প্রশংসার দাবিদার।
২০২০ থেকে শুরু হওয়া অতিমারি করোনা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি ভ্যাকসিন নেওয়ার বিষয়টিকে নিশ্চিত করার জন্য যেকোনো সামাজিক অনুষ্ঠানসহ হোটেল, রেস্তোরাঁয় খাবার খেতে বসার সময় ভ্যাকসিন গ্রহণের কার্ড সঙ্গে নিতে বলা হয়েছে। মানে হলো, এই ভ্যাকসিনের কার্ড ছাড়া কেউ হোটেল, রেস্তোরাঁসহ কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে যেতে পারবেন না। পরিবহনে চলাচল করতে পারবেন না। এই মুহূর্তে ভ্যাকসিন গ্রহণের সনদ অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। কিন্তু সব মন্ত্রণালয় একযোগে বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিকের কথা ভাবছে কি না, প্রশ্ন থেকে যায়। সব পেশা-শ্রেণির মানুষ ভ্যাকসিন গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে কি না, সুযোগের পথ সহজ করা হয়েছে কি না, সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা যত সহজে বলবেন দেওয়া হয়েছে, হচ্ছে; ঠিক তার দ্বিগুণ সহজ করে একটা শ্রেণি বলবে, পাচ্ছে না ভ্যাকসিন। সেই সুযোগ নেই ভ্যাকসিন পাওয়ার। ফলে অতিমারির সময়ে সুস্থতা ও সুস্থ হয়ে বেঁচে থাকার তীব্র বাসনাও যেন স্তিমিত হয়ে আসে এই শ্রেণির মানুষের জীবনে। উৎকণ্ঠা বাড়ে স্বজন আর পরিজনের। জি, আমি বিশেষ জনগোষ্ঠীর কথা বলছি। সমাজ যাঁদের প্রতিবন্ধী ব্যক্তি বলে চিহ্নিত করে থাকে। বাংলাদেশ সরকার প্রতিবন্ধীবান্ধব সরকার, কোনো সংশয় নেই। ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সুরক্ষা আইন ২০১৩’ বর্তমান সরকার কর্তৃক প্রণয়নকৃত একটি আইন, যেখানে নাগরিক হিসেবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সব অধিকার প্রাপ্তি ও ভোগের সুস্পষ্ট কথা বলা হয়েছে।
সুবর্ণ কার্ডও বর্তমান সরকার কর্তৃক প্রদত্ত একধরনের পরিচয়পত্র। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের রাষ্ট্রের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগের জন্য এই সুবর্ণ কার্ডের প্রবর্তন। ফলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও প্রতিবন্ধী শিশু-কিশোর-যুবক আছেন এমন পরিবারের অভিভাবকেরা সুবর্ণ কার্ড সংগ্রহ করেন এবং আশ্বস্ত হন। ভরসার জায়গা তৈরি হয়। অতিমারি করোনা যেন সেই ভরসার জায়গাকে সংকুচিত করে দিল। সংশয়ে ফেলে দিল। এমন দৃষ্টান্ত কম নয়।
তাহমিনা ইসলাম মুমু বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধিতায় আক্রান্ত একজন তরুণী। বয়স ২৬ বছর। করোনায় আক্রান্ত মুমুর মা রাবেয়া ইসলাম নীলা একটি বিশেষ স্কুলের অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত। দুঃখ নিয়ে বলছিলেন, সরকার যখন করোনাভাইরাস মোকাবিলায় একে একে দেশের সব নাগরিক ভ্যাকসিন পাবে—এই লক্ষ্যে মূলধারার শিক্ষার্থীসহ সিংহভাগ মানুষের বিষয়টি মাথায় রেখেছে, রাখছে, তখন বাদ পড়ে আছে, বাদ পড়ে যাচ্ছে কেবল আমাদের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু ও ব্যক্তিরা; বিশেষ করে নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তিরা। তাঁর ভাষায়, টিকা সুরক্ষা অ্যাপে একটা বড় ফাঁক রয়ে গেছে মনে হচ্ছে। এই অ্যাপে কোনোভাবেই অগ্রাধিকার কিংবা অধিকার পাচ্ছেন না সুবর্ণ কার্ডহোল্ডার এই সব বিশেষ ব্যক্তি। সব ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই। শারীরিক, দৃষ্টি ও বাক্প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জাতীয় পরিচয় থাকলেও স্নায়ুবিকাশজনিত প্রতিবন্ধিতায় আক্রান্তদের অনেকেরই জাতীয় পরিচয়পত্র নেই। ফলে জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় শুধু জন্মনিবন্ধন কার্ড দিয়ে তাঁদের রেজিস্ট্রেশন করতে হয়, যেখানে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য কোনো অপশনই রাখা হয়নি। তাঁর বিশেষ স্কুলে এমন বেশ কজন বিশেষ শিক্ষার্থী আছেন। যেমন জেমি আক্তার, বয়স ২৪ বছর, ডাউন্স সিনড্রোম, আশরাফুল আলম, ২৭ বছর, সেরিব্রাল পলসি, খুকি আক্তার, ১৮ বছর, ডোয়ার্ফইজম, আবদুল্লাহ, ১৫ বছর—অটিজম আক্রান্ত তারা কেউই করোনার ভ্যাকসিন নামক সুস্থ থাকার সোনার হরিণের দেখা পাননি আজও। এ ছাড়া অনেক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী আছেন এই কাতারে।
যেহেতু আগে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল যে বিশেষ ব্যক্তির সুবর্ণ নাগরিক কার্ডটি তাঁর সব রাষ্ট্রীয় অধিকার ভোগের ক্ষেত্রে ভ্যালিড হিসেবে গণ্য করা হবে, তাই অনেক অভিভাবক তাঁদের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন সন্তানের জন্য নতুন করে জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেননি। সংগ্রহ করার কথা চিন্তাও করেননি। প্রতিবন্ধী ব্যক্তি বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন সন্তান আছেন পরিবারে, এমন অভিভাবকেরা কোভিডে আক্রান্ত হলে তাঁর সন্তানকে আইসোলেশনে রাখা কঠিন, কষ্টসাধ্য। একই কথা প্রযোজ্য তাঁদের সন্তান কোভিডে আক্রান্ত হলে। আবার এসব বিশেষ ব্যক্তিদের করোনার পরীক্ষা করানোও সহজেই সম্ভব নয়। মুমুর মা দুঃখ করে আরও বলছিলেন, কোভিডে আক্রান্ত মায়ের সান্নিধ্যে থেকে যখন সন্তানের মধ্যে রোগের লক্ষণ দেখা দেয়, তখন নাসারন্ধ্রে টেস্ট কিট প্রবেশ করিয়ে তাঁর ভাইরাসের সংক্রমণ নিশ্চিত হতে চাওয়া তো আমাদের মতো বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পিতা-মাতার জন্য মস্ত এক কঠিন পরীক্ষা! কে বুঝবেন সেই কষ্ট!
মুমুর মতো অনেক ব্যক্তিই সুবর্ণ নাগরিক কার্ডহোল্ডার হয়েও সুরক্ষা অ্যাপে অধিকারবলে আসেননি, তাঁদের জায়গা হয়নি। সুবর্ণ নাগরিক কার্ডকে সুরক্ষা অ্যাপে আনা হয়নি। কেন আনা হয়নি তার জবাব সংশ্লিষ্টরা ভালো জানেন। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এখানে জবাবদিহি থাকতে পারে। তবে এই না আসাটা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার হরণ করেছে। সেই সঙ্গে সুবর্ণ নাগরিক কার্ডের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করে কি না, ভাবা দরকার। সুবর্ণ নাগরিক কার্ড আছে এমন প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংখ্যা কিন্তু কম নয়। তাঁদের অগ্রাধিকার পাওয়ার সুযোগ ঘটেনি শুধু জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায়। অভিভাবকদের অভিযোগ, কেন সুরক্ষা অ্যাপে সুবর্ণ নাগরিক কার্ডের বিষয়টিকে আনা হলো না। সুবর্ণ নাগরিক কার্ডহোল্ডার মানেই তো তিনি একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং এ দেশের একজন নাগরিক। ঝুমুর জন্মনিবন্ধন দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে এক মাস হলো। ভ্যাকসিনের তারিখ আসেনি। সুরক্ষা অ্যাপে সুবর্ণ নাগরিকের কার্ডের অপশন থাকলে হয়তো এই বিশেষ জনগোষ্ঠী ভ্যাকসিন নেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পেতেন। তাতে অভিভাবকদের উৎকণ্ঠা থাকত না। আজ মুমুর মায়ের মতন অনেক মায়ের আকুল আকুতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে, বিশেষ শিশু-কিশোর-তরুণদের জন্য করোনা ভ্যাকসিন সহজলভ্য করে দিন! অগ্রাধিকার না দিন, অন্তত অধিকার ভোগের সুযোগটুকু দিন!
পরিশেষে বলব, বাংলাদেশে প্রায় দেড় কোটি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি আছেন। সঠিক পরিসংখ্যান হলে এই সংখ্যার হয়তোবা পরিবর্তন হবে, বাড়বে। প্রতিবন্ধী শিশু-কিশোর ও যুবকদের জন্য রয়েছে বিশেষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। যেখানে মূলধারার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে, সেখানে বিশেষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য কী ব্যবস্থা, এর সদুত্তর কোথায় পাওয়া যাবে—আজকের লেখায় সেই প্রশ্ন রাখছি। নাকি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি
বলেই তাঁদের পেছনে রাখা হয়েছে কিংবা তাঁদের কথা মনেই নেই?
সরকারের কাছে আবেদন, ভ্যাকসিন পাওয়ার ক্ষেত্রে সুবর্ণ নাগরিক কার্ডকে কার্যকর করুন। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যবস্থা করে দৃশ্যমান বৈষম্যকে দূর করুন। আর যদি সুবর্ণ নাগরিক কার্ডহোল্ডারদের করোনা ভ্যাকসিন নেওয়ার সুযোগ থেকেই থাকে, তবে তা প্রচারের ব্যবস্থা করে অভিভাবকদের উৎকণ্ঠা দূর করুন।
অভিভাবকেরা উৎকণ্ঠিত। দিশাহীন। কোথায় যাবেন, কীভাবে সহজ উপায়ে তাঁদের বিশেষ শিশুরা করোনা ভ্যাকসিন পাবে। অভিভাবকদের কেউ কেউ ইতিমধ্যে আক্রান্ত। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁরা তাঁদের সেই উৎকণ্ঠার কথা বলেছেন, বলছেন।
সুস্থতা ও সুস্থ হয়ে বেঁচে থাকার তীব্র বাসনা প্রতিটি মানুষের। রাষ্ট্র তার নাগরিকদের সেই বাসনা পূরণে সক্রিয় থাকে। সক্রিয় থাকতে হয়। জাতিকে সুরক্ষিত করতে একটি রাষ্ট্রে নানান উদ্যোগ থাকে। থাকে পরিকল্পনা এবং তার বাস্তবায়ন ও সমন্বয়। বাংলাদেশ উদ্যোগ, পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে পিছিয়ে নেই। তবে সমন্বয়হীনতা আছে। এই সমন্বয়হীনতা লক্ষ্য পূরণে অন্তরায়; বিশেষ করে অতিমারি করোনার আঘাত থেকে জাতিকে সুরক্ষিত করার লক্ষ্যে বিবিধ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, হচ্ছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন, বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে। প্রত্যেক নাগরিককে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বাধ্য করা হচ্ছে; বিশেষ করে কমিউনিটি সংক্রমণ রোধের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে, হচ্ছে। সেই সঙ্গে ভ্যাকসিন বা টিকা নিতে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে, হচ্ছে। ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে সর্বস্তরে। আমরা দেখেছি, অনেক উন্নয়নশীল দেশের আগেই বাংলাদেশ সরকার জনগণকে ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজটি শুরু করেছে, যা প্রশংসার দাবিদার।
২০২০ থেকে শুরু হওয়া অতিমারি করোনা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি ভ্যাকসিন নেওয়ার বিষয়টিকে নিশ্চিত করার জন্য যেকোনো সামাজিক অনুষ্ঠানসহ হোটেল, রেস্তোরাঁয় খাবার খেতে বসার সময় ভ্যাকসিন গ্রহণের কার্ড সঙ্গে নিতে বলা হয়েছে। মানে হলো, এই ভ্যাকসিনের কার্ড ছাড়া কেউ হোটেল, রেস্তোরাঁসহ কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে যেতে পারবেন না। পরিবহনে চলাচল করতে পারবেন না। এই মুহূর্তে ভ্যাকসিন গ্রহণের সনদ অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। কিন্তু সব মন্ত্রণালয় একযোগে বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিকের কথা ভাবছে কি না, প্রশ্ন থেকে যায়। সব পেশা-শ্রেণির মানুষ ভ্যাকসিন গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছে কি না, সুযোগের পথ সহজ করা হয়েছে কি না, সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা যত সহজে বলবেন দেওয়া হয়েছে, হচ্ছে; ঠিক তার দ্বিগুণ সহজ করে একটা শ্রেণি বলবে, পাচ্ছে না ভ্যাকসিন। সেই সুযোগ নেই ভ্যাকসিন পাওয়ার। ফলে অতিমারির সময়ে সুস্থতা ও সুস্থ হয়ে বেঁচে থাকার তীব্র বাসনাও যেন স্তিমিত হয়ে আসে এই শ্রেণির মানুষের জীবনে। উৎকণ্ঠা বাড়ে স্বজন আর পরিজনের। জি, আমি বিশেষ জনগোষ্ঠীর কথা বলছি। সমাজ যাঁদের প্রতিবন্ধী ব্যক্তি বলে চিহ্নিত করে থাকে। বাংলাদেশ সরকার প্রতিবন্ধীবান্ধব সরকার, কোনো সংশয় নেই। ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সুরক্ষা আইন ২০১৩’ বর্তমান সরকার কর্তৃক প্রণয়নকৃত একটি আইন, যেখানে নাগরিক হিসেবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সব অধিকার প্রাপ্তি ও ভোগের সুস্পষ্ট কথা বলা হয়েছে।
সুবর্ণ কার্ডও বর্তমান সরকার কর্তৃক প্রদত্ত একধরনের পরিচয়পত্র। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের রাষ্ট্রের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগের জন্য এই সুবর্ণ কার্ডের প্রবর্তন। ফলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও প্রতিবন্ধী শিশু-কিশোর-যুবক আছেন এমন পরিবারের অভিভাবকেরা সুবর্ণ কার্ড সংগ্রহ করেন এবং আশ্বস্ত হন। ভরসার জায়গা তৈরি হয়। অতিমারি করোনা যেন সেই ভরসার জায়গাকে সংকুচিত করে দিল। সংশয়ে ফেলে দিল। এমন দৃষ্টান্ত কম নয়।
তাহমিনা ইসলাম মুমু বহুমাত্রিক প্রতিবন্ধিতায় আক্রান্ত একজন তরুণী। বয়স ২৬ বছর। করোনায় আক্রান্ত মুমুর মা রাবেয়া ইসলাম নীলা একটি বিশেষ স্কুলের অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত। দুঃখ নিয়ে বলছিলেন, সরকার যখন করোনাভাইরাস মোকাবিলায় একে একে দেশের সব নাগরিক ভ্যাকসিন পাবে—এই লক্ষ্যে মূলধারার শিক্ষার্থীসহ সিংহভাগ মানুষের বিষয়টি মাথায় রেখেছে, রাখছে, তখন বাদ পড়ে আছে, বাদ পড়ে যাচ্ছে কেবল আমাদের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু ও ব্যক্তিরা; বিশেষ করে নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তিরা। তাঁর ভাষায়, টিকা সুরক্ষা অ্যাপে একটা বড় ফাঁক রয়ে গেছে মনে হচ্ছে। এই অ্যাপে কোনোভাবেই অগ্রাধিকার কিংবা অধিকার পাচ্ছেন না সুবর্ণ কার্ডহোল্ডার এই সব বিশেষ ব্যক্তি। সব ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই। শারীরিক, দৃষ্টি ও বাক্প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জাতীয় পরিচয় থাকলেও স্নায়ুবিকাশজনিত প্রতিবন্ধিতায় আক্রান্তদের অনেকেরই জাতীয় পরিচয়পত্র নেই। ফলে জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় শুধু জন্মনিবন্ধন কার্ড দিয়ে তাঁদের রেজিস্ট্রেশন করতে হয়, যেখানে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য কোনো অপশনই রাখা হয়নি। তাঁর বিশেষ স্কুলে এমন বেশ কজন বিশেষ শিক্ষার্থী আছেন। যেমন জেমি আক্তার, বয়স ২৪ বছর, ডাউন্স সিনড্রোম, আশরাফুল আলম, ২৭ বছর, সেরিব্রাল পলসি, খুকি আক্তার, ১৮ বছর, ডোয়ার্ফইজম, আবদুল্লাহ, ১৫ বছর—অটিজম আক্রান্ত তারা কেউই করোনার ভ্যাকসিন নামক সুস্থ থাকার সোনার হরিণের দেখা পাননি আজও। এ ছাড়া অনেক প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী আছেন এই কাতারে।
যেহেতু আগে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল যে বিশেষ ব্যক্তির সুবর্ণ নাগরিক কার্ডটি তাঁর সব রাষ্ট্রীয় অধিকার ভোগের ক্ষেত্রে ভ্যালিড হিসেবে গণ্য করা হবে, তাই অনেক অভিভাবক তাঁদের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন সন্তানের জন্য নতুন করে জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেননি। সংগ্রহ করার কথা চিন্তাও করেননি। প্রতিবন্ধী ব্যক্তি বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন সন্তান আছেন পরিবারে, এমন অভিভাবকেরা কোভিডে আক্রান্ত হলে তাঁর সন্তানকে আইসোলেশনে রাখা কঠিন, কষ্টসাধ্য। একই কথা প্রযোজ্য তাঁদের সন্তান কোভিডে আক্রান্ত হলে। আবার এসব বিশেষ ব্যক্তিদের করোনার পরীক্ষা করানোও সহজেই সম্ভব নয়। মুমুর মা দুঃখ করে আরও বলছিলেন, কোভিডে আক্রান্ত মায়ের সান্নিধ্যে থেকে যখন সন্তানের মধ্যে রোগের লক্ষণ দেখা দেয়, তখন নাসারন্ধ্রে টেস্ট কিট প্রবেশ করিয়ে তাঁর ভাইরাসের সংক্রমণ নিশ্চিত হতে চাওয়া তো আমাদের মতো বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পিতা-মাতার জন্য মস্ত এক কঠিন পরীক্ষা! কে বুঝবেন সেই কষ্ট!
মুমুর মতো অনেক ব্যক্তিই সুবর্ণ নাগরিক কার্ডহোল্ডার হয়েও সুরক্ষা অ্যাপে অধিকারবলে আসেননি, তাঁদের জায়গা হয়নি। সুবর্ণ নাগরিক কার্ডকে সুরক্ষা অ্যাপে আনা হয়নি। কেন আনা হয়নি তার জবাব সংশ্লিষ্টরা ভালো জানেন। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এখানে জবাবদিহি থাকতে পারে। তবে এই না আসাটা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার হরণ করেছে। সেই সঙ্গে সুবর্ণ নাগরিক কার্ডের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করে কি না, ভাবা দরকার। সুবর্ণ নাগরিক কার্ড আছে এমন প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংখ্যা কিন্তু কম নয়। তাঁদের অগ্রাধিকার পাওয়ার সুযোগ ঘটেনি শুধু জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায়। অভিভাবকদের অভিযোগ, কেন সুরক্ষা অ্যাপে সুবর্ণ নাগরিক কার্ডের বিষয়টিকে আনা হলো না। সুবর্ণ নাগরিক কার্ডহোল্ডার মানেই তো তিনি একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং এ দেশের একজন নাগরিক। ঝুমুর জন্মনিবন্ধন দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে এক মাস হলো। ভ্যাকসিনের তারিখ আসেনি। সুরক্ষা অ্যাপে সুবর্ণ নাগরিকের কার্ডের অপশন থাকলে হয়তো এই বিশেষ জনগোষ্ঠী ভ্যাকসিন নেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পেতেন। তাতে অভিভাবকদের উৎকণ্ঠা থাকত না। আজ মুমুর মায়ের মতন অনেক মায়ের আকুল আকুতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে, বিশেষ শিশু-কিশোর-তরুণদের জন্য করোনা ভ্যাকসিন সহজলভ্য করে দিন! অগ্রাধিকার না দিন, অন্তত অধিকার ভোগের সুযোগটুকু দিন!
পরিশেষে বলব, বাংলাদেশে প্রায় দেড় কোটি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি আছেন। সঠিক পরিসংখ্যান হলে এই সংখ্যার হয়তোবা পরিবর্তন হবে, বাড়বে। প্রতিবন্ধী শিশু-কিশোর ও যুবকদের জন্য রয়েছে বিশেষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। যেখানে মূলধারার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে, সেখানে বিশেষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য কী ব্যবস্থা, এর সদুত্তর কোথায় পাওয়া যাবে—আজকের লেখায় সেই প্রশ্ন রাখছি। নাকি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি
বলেই তাঁদের পেছনে রাখা হয়েছে কিংবা তাঁদের কথা মনেই নেই?
সরকারের কাছে আবেদন, ভ্যাকসিন পাওয়ার ক্ষেত্রে সুবর্ণ নাগরিক কার্ডকে কার্যকর করুন। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ভ্যাকসিন দেওয়ার ব্যবস্থা করে দৃশ্যমান বৈষম্যকে দূর করুন। আর যদি সুবর্ণ নাগরিক কার্ডহোল্ডারদের করোনা ভ্যাকসিন নেওয়ার সুযোগ থেকেই থাকে, তবে তা প্রচারের ব্যবস্থা করে অভিভাবকদের উৎকণ্ঠা দূর করুন।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি বেড়েই চলছে। এ কারণে চালক ও যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছে এই সড়ক। ডাকাতির শিকার বেশি হচ্ছেন প্রবাসফেরত লোকজন। ডাকাতেরা অস্ত্র ঠেকিয়ে লুট করে নিচ্ছে সর্বস্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও ঘটছে ডাকাতির ঘটনা।
০২ মার্চ ২০২৫বিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
১৬ জানুয়ারি ২০২৫গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪