বিভুরঞ্জন সরকার
নিত্যপণ্যের দাম ক্রমাগত বাড়ছে। আমরা প্রায়ই বলি, মানুষের ব্যয় বাড়ছে, কিন্তু আয় বাড়ছে না। সমস্যার কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। সবারই নিজ নিজ অভিজ্ঞতার ভান্ডার এ ব্যাপারে সমৃদ্ধ। সমস্যা সমাধানের উপায় কী, সে বিষয়ে ভাবা দরকার। সমাধানের পথ না দেখিয়ে শুধু সমস্যার কথা বলে আর কারও মনোযোগ আকর্ষণ করা যাচ্ছে না, যাবেও না। তাই আর সমস্যার কথা নয়, বলতে হবে সমাধানের কথা। কেউ কি তা বলছেন?
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে দেশের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে—বিএনপিসহ আওয়ামী লীগবিরোধী সবাই বছরের পর বছর এ কথা বলছে। প্রশ্ন হলো, আওয়ামী লীগ যদি বারোটা বাজিয়েই থাকে তাহলে মানুষ কেন সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ফেটে পড়ছে না?
এই প্রশ্নেরও গৎবাঁধা উত্তর আছে। সেটা হলো, অত্যাচার-নির্যাতন-মামলা-হামলা চালিয়ে সরকার দেশে ভয়ের সংস্কৃতির বিস্তার ঘটিয়েছে। মানুষ অসহায়-দিশেহারা।
আত্মরক্ষা বা নিজ নিজ সুবিধা অনুযায়ী, কারণে-অকারণে যেসব দেশ থেকে উদাহরণ খুঁজে এনে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা করি, সেই সব দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ, সংস্কৃতির বাস্তবতা সম্পর্কে আমরা অবহিত না হয়েই সচরাচর ওই সব উদাহরণ দিয়ে থাকি। আমরা আমাদের দেশের রাজনীতির ইতিহাস, বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি কোন পটভূমিতে স্বাধীন হলো, তারপর নানা সময়ে দেশের অভ্যন্তীরণ রাজনীতির বাঁকবদলের কাহিনিও পুরোপুরি না জেনে-বুঝে নানা রকম মন্তব্য করে সস্তা বাহবা পাওয়ার চেষ্টা করে থাকি।
বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে লিখতে বা বলতে গেলে সবার আগে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পটভূমিটা মনে রাখতে হবে। আমরা অনেক দাম দিয়ে এই স্বাধীনতা অর্জন করেছি। দেশের সব মানুষ পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ রাষ্ট্র হোক—সেটা চায়নি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিঃসন্দেহে গৌরবোজ্জ্বল। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে যেমন বেশির ভাগ মানুষ ছিল, তেমনি বিরোধিতা করার মতো মানুষও ছিল। সেটা দেশের ভেতরে ও বাইরেও। পক্ষের শক্তি প্রবল হওয়ায় মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভ সম্ভব হয়েছে। কিন্তু যারা চায়নি বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হোক, তারা নিষ্ক্রিয় হয়নি কখনো। দুঃখের বিষয় হলো, ওই বিরোধিতাকারীর সংখ্যা না কমে; বরং দিন দিন বেড়েছে এবং বাড়ছে। কাজেই আমাদের দেশের রাজনীতির একটি দুর্বলতা হলো, বৃহত্তর জাতীয় ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ হতে না পারা। রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে বিদ্বেষ ও বিরোধিতা স্থায়ী রূপ নিয়েছে।
দুই.
জ্বালানি তেল, ইউরিয়া সার, নিত্যপণ্যের দাম ও পরিবহনভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে ২৫ আগস্ট অর্ধদিবস হরতালের ডাক দিয়েছিল বাম গণতান্ত্রিক জোট। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হরতালের কর্মসূচিতে পথে নামেন জোটের নেতা-কর্মীরা। হরতাল পালনে পুলিশ ও সরকারদলীয় সংগঠন বাধা দিয়েছে বলে অভিযোগ করে দলটির নেতারা বলেছেন, দুর্নীতি, লুটপাট বন্ধ না হওয়া এবং নিত্যপণ্যের দাম না কমা পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। দাবি মানা না হলে সামনে অবরোধ, ঘেরাওসহ আন্দোলনের কঠোর কর্মসূচির হুমকি দেওয়া হয়েছে। মূল্যবৃদ্ধির জ্বালায় মানুষ অতিষ্ঠ।
কিন্তু তার প্রতিবাদে ডাকা হরতালে কেমন সাড়া পাওয়া গেছে? সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর: হরতালে সকাল থেকেই রাজধানীতে যান চলাচল ছিল স্বাভাবিক। রাজধানীর
সব সড়কেই দেখা গেছে অফিসগামী যাত্রীদের চাপ। সংখ্যায় কিছুটা কম হলেও গণপরিবহনের পাশাপাশি চলেছে ব্যক্তিগত গাড়িও। পল্টনে কিছুটা যানজট থাকলেও বেলা ১১টার পর থেকে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
অর্থাৎ দু-একটি পকেট এলাকা ছাড়া হরতালের প্রভাব তেমন লক্ষ করা যায়নি। অথচ বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা হরতালের পর দাবি করেছেন, সাধারণ মানুষ রাস্তায় না নামলেও স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন জানিয়েছে। প্রশ্ন হলো এই স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থনের বিষয়টি কীভাবে জানলেন বা বুঝলেন তাঁরা?
এবার দেখা যাক, নতুন প্রজন্মের একজন সচেতন তরুণীর হরতাল নিয়ে প্রতিক্রিয়া। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি তাঁর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন এভাবে: ‘রাজপথ দখল করে হরতাল করার পদ্ধতিটা আমার ভীষণ অপছন্দের। যে বিষয়ে প্রতিবাদ, তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দপ্তর-অধিদপ্তরের সামনে গিয়ে অবস্থান করা যেতে পারে, কর্মকর্তাদেরও ঘেরাও করা যেতে পারে। কিন্তু সড়ক অবরোধ করে, খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করে, মানুষের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে যাওয়া বন্ধ করে, হাসপাতালে রোগীদের ভোগান্তির শিকার করে (সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছাতে না পেরে রোগীর মৃত্যু ঘটিয়ে), রাষ্ট্রের সম্পদ নষ্ট করে—এ কোন ধরনের প্রতিবাদ বুঝি না। অন্যায় উপায়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ করা তো একটি হাস্যকর বিষয়। কচু পোড়া দিতে অভ্যস্ত বাম দলগুলো (বাংলাদেশের বাম দলগুলোকে আমার কাছে লোকদেখানো উটকো ঝামেলাবাজ বলে মনে হয়) পল্টন, শাহবাগসহ কয়েকটি স্থানে যানবাহন চলাচলে বাধা দিয়ে কী অর্জন করল?’
হরতাল যে আর আন্দোলনের কার্যকর হাতিয়ার নেই, সেটা বোঝার ক্ষমতা যাদের নেই, তারা কীভাবে রাজনীতির বিকল্প শক্তি হবে, সেটা ভাবার বিষয় বৈকি!
তিন.
সরকার বদলের গণতান্ত্রিক পথ হলো নির্বাচন। বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার আর বছরখানেকের কিছু বেশি সময় বাকি। আওয়ামী লীগ সরকারের পরিবর্তে ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা বিএনপির। কিন্তু বিএনপি গোঁ ধরে আছে, তারা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। বিএনপির এই দাবির সঙ্গে কোরাসে শামিল আছে আরও কিছু দল। এই দলগুলোর নেতাদের সম্পর্কে অনেকের মন্তব্য, তাঁরা সবাই ‘গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল’। ড. কামাল হোসেন, আ স ম আবদুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্না, মেজর জেনারেল (অব.) ইবরাহিম কিংবা নতুন গজিয়ে ওঠা নেতা রেজা কিবরিয়া-নুরুল হক নুরের নেতৃত্বে মানুষ সরকার পতনের আন্দোলনে নামবে, এটা আহাম্মক ছাড়া কেউ বিশ্বাস করে?
মানুষ তো বরং মনে করে পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, বিএনপির উচিত হবে নির্বাচনে অংশ নেওয়া। শেখ হাসিনা পদত্যাগ না করলে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত হবে বিএনপির জন্য আত্মঘাতী। তাহলে বিএনপি আরেক দফা ভাঙবে। সরকারের সঙ্গে বিএনপির যোগাযোগের খবর গোপন নেই। আজকের পত্রিকায় ২৬ আগস্টের প্রধান শিরোনাম ‘বিএনপির একাংশকে ভোটে আনার চেষ্টা’।
২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন যে প্রক্রিয়া বা কৌশলে হয়েছে, আগামী নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ একই কৌশল অনুসরণ করবে মনে করার কোনো কারণ নেই। নির্বাচন ও নির্বাচন-পরবর্তী সরকারের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টি বিবেচনায় না নিলে চরম ভুল করা হবে। এত বছর আওয়ামী লীগ টানা ক্ষমতায় থেকে দেশের প্রকৃত লাভ কী হলো—এ প্রশ্ন কিন্তু উঠছে। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের ‘উন্নয়ন’ মানুষের মনে স্থায়ী দাগ না কেটে, প্রতিদিনের ঘটনার ধাক্কা বেশি দাগ কাটছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে সাম্প্রদায়িক ও ধর্মান্ধ শক্তির ঔদ্ধত্য বাড়ছে, সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার কমছে না, প্রশাসনে জামায়াতি রাজনীতির প্রতিনিধিদের তৎপরতা স্পষ্ট হচ্ছে, আওয়ামী পরিবারের কিছু সদস্যের নীতিহীনতার গল্প মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ছে—এগুলো কোনোটাই ভালো লক্ষণ নয়।
চার.
শঙ্কার কথা এটাই, দেশের নতুন প্রজন্ম যে রাজনীতিবিমুখ কিংবা প্রকাশ্যে বলছে তারা রাজনীতিকে ঘৃণা করে, তাদের মনমানসিকতায় পরিবর্তন আনার কথা কি আওয়ামী লীগ, বিএনপি বা বাম দলগুলোর চিন্তায় আছে? কেন তরুণদের মধ্যে এত হতাশা, রাজনীতির প্রতি বিদ্বেষী মনোভাব, তার কারণ জানার চেষ্টা কি রাজনৈতিক নেতারা করেছেন? ক্ষমতায় যেতে চান, ক্ষমতায় থাকতে চান কিন্তু ভালোকে ‘হ্যাঁ’ আর মন্দকে ‘না’ বলার অভ্যাস রপ্ত করতে চান না—এভাবে ক্ষমতার পরিবর্তন হলেও মানুষের জীবনের শান্তি-স্বস্তির পথ প্রশস্ত হবে না।
বিএনপি এককভাবে বা মিত্রদের নিয়ে ক্ষমতায় এলে দেশে কী অবস্থা হবে, তা অনেকেই বোঝেন। আর বোঝেন বলেই বিএনপির ডাকে সাড়া দেন না। কিন্তু আওয়ামী লীগের নামে যদি দেশে কার্যত জামায়াতি নীতি-আদর্শের শাসন চালু হয়, সেটা কি মানুষকে খুশি করবে?
এখনকার আওয়ামী লীগের প্রসঙ্গে একজন তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতার বক্তব্য, ‘এরা বঙ্গবন্ধুকে বিরিয়ানির প্যাকেটে বন্দী করে রেখেছে। তাদের বেশির ভাগের সাধনা পদ-পদবি বাগানোর। কোনো পদ-পদবি পেলেই মেওয়া ফলবে। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের জ্ঞান আহরণের চেয়ে দাপট দেখানোর জন্য আগ্রহ সীমাহীন। এরা ক্ষমতার লোভে মুখে “জয় বাংলা” বলে, কিন্তু মনে মনে তারাও চায় না বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য হোক! কারণ তারা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে সবার আগে তারা মুসলমান!’
বাংলাদেশটাকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বা সব মানুষের দেশ বানাতে হলে দেশে একটি সাংস্কৃতিক জাগরণের প্রয়োজন। এই জাগরণের সঙ্গে একাত্ম করে তুলতে হবে তরুণ প্রজন্মকে। এটাই এখনকার বিকল্প।
বিভুরঞ্জন সরকার , সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
নিত্যপণ্যের দাম ক্রমাগত বাড়ছে। আমরা প্রায়ই বলি, মানুষের ব্যয় বাড়ছে, কিন্তু আয় বাড়ছে না। সমস্যার কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। সবারই নিজ নিজ অভিজ্ঞতার ভান্ডার এ ব্যাপারে সমৃদ্ধ। সমস্যা সমাধানের উপায় কী, সে বিষয়ে ভাবা দরকার। সমাধানের পথ না দেখিয়ে শুধু সমস্যার কথা বলে আর কারও মনোযোগ আকর্ষণ করা যাচ্ছে না, যাবেও না। তাই আর সমস্যার কথা নয়, বলতে হবে সমাধানের কথা। কেউ কি তা বলছেন?
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে দেশের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে—বিএনপিসহ আওয়ামী লীগবিরোধী সবাই বছরের পর বছর এ কথা বলছে। প্রশ্ন হলো, আওয়ামী লীগ যদি বারোটা বাজিয়েই থাকে তাহলে মানুষ কেন সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে ফেটে পড়ছে না?
এই প্রশ্নেরও গৎবাঁধা উত্তর আছে। সেটা হলো, অত্যাচার-নির্যাতন-মামলা-হামলা চালিয়ে সরকার দেশে ভয়ের সংস্কৃতির বিস্তার ঘটিয়েছে। মানুষ অসহায়-দিশেহারা।
আত্মরক্ষা বা নিজ নিজ সুবিধা অনুযায়ী, কারণে-অকারণে যেসব দেশ থেকে উদাহরণ খুঁজে এনে একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা করি, সেই সব দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ, সংস্কৃতির বাস্তবতা সম্পর্কে আমরা অবহিত না হয়েই সচরাচর ওই সব উদাহরণ দিয়ে থাকি। আমরা আমাদের দেশের রাজনীতির ইতিহাস, বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি কোন পটভূমিতে স্বাধীন হলো, তারপর নানা সময়ে দেশের অভ্যন্তীরণ রাজনীতির বাঁকবদলের কাহিনিও পুরোপুরি না জেনে-বুঝে নানা রকম মন্তব্য করে সস্তা বাহবা পাওয়ার চেষ্টা করে থাকি।
বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে লিখতে বা বলতে গেলে সবার আগে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পটভূমিটা মনে রাখতে হবে। আমরা অনেক দাম দিয়ে এই স্বাধীনতা অর্জন করেছি। দেশের সব মানুষ পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ রাষ্ট্র হোক—সেটা চায়নি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিঃসন্দেহে গৌরবোজ্জ্বল। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে যেমন বেশির ভাগ মানুষ ছিল, তেমনি বিরোধিতা করার মতো মানুষও ছিল। সেটা দেশের ভেতরে ও বাইরেও। পক্ষের শক্তি প্রবল হওয়ায় মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভ সম্ভব হয়েছে। কিন্তু যারা চায়নি বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হোক, তারা নিষ্ক্রিয় হয়নি কখনো। দুঃখের বিষয় হলো, ওই বিরোধিতাকারীর সংখ্যা না কমে; বরং দিন দিন বেড়েছে এবং বাড়ছে। কাজেই আমাদের দেশের রাজনীতির একটি দুর্বলতা হলো, বৃহত্তর জাতীয় ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ হতে না পারা। রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে বিদ্বেষ ও বিরোধিতা স্থায়ী রূপ নিয়েছে।
দুই.
জ্বালানি তেল, ইউরিয়া সার, নিত্যপণ্যের দাম ও পরিবহনভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে ২৫ আগস্ট অর্ধদিবস হরতালের ডাক দিয়েছিল বাম গণতান্ত্রিক জোট। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হরতালের কর্মসূচিতে পথে নামেন জোটের নেতা-কর্মীরা। হরতাল পালনে পুলিশ ও সরকারদলীয় সংগঠন বাধা দিয়েছে বলে অভিযোগ করে দলটির নেতারা বলেছেন, দুর্নীতি, লুটপাট বন্ধ না হওয়া এবং নিত্যপণ্যের দাম না কমা পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। দাবি মানা না হলে সামনে অবরোধ, ঘেরাওসহ আন্দোলনের কঠোর কর্মসূচির হুমকি দেওয়া হয়েছে। মূল্যবৃদ্ধির জ্বালায় মানুষ অতিষ্ঠ।
কিন্তু তার প্রতিবাদে ডাকা হরতালে কেমন সাড়া পাওয়া গেছে? সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবর: হরতালে সকাল থেকেই রাজধানীতে যান চলাচল ছিল স্বাভাবিক। রাজধানীর
সব সড়কেই দেখা গেছে অফিসগামী যাত্রীদের চাপ। সংখ্যায় কিছুটা কম হলেও গণপরিবহনের পাশাপাশি চলেছে ব্যক্তিগত গাড়িও। পল্টনে কিছুটা যানজট থাকলেও বেলা ১১টার পর থেকে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
অর্থাৎ দু-একটি পকেট এলাকা ছাড়া হরতালের প্রভাব তেমন লক্ষ করা যায়নি। অথচ বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা হরতালের পর দাবি করেছেন, সাধারণ মানুষ রাস্তায় না নামলেও স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন জানিয়েছে। প্রশ্ন হলো এই স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থনের বিষয়টি কীভাবে জানলেন বা বুঝলেন তাঁরা?
এবার দেখা যাক, নতুন প্রজন্মের একজন সচেতন তরুণীর হরতাল নিয়ে প্রতিক্রিয়া। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি তাঁর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন এভাবে: ‘রাজপথ দখল করে হরতাল করার পদ্ধতিটা আমার ভীষণ অপছন্দের। যে বিষয়ে প্রতিবাদ, তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দপ্তর-অধিদপ্তরের সামনে গিয়ে অবস্থান করা যেতে পারে, কর্মকর্তাদেরও ঘেরাও করা যেতে পারে। কিন্তু সড়ক অবরোধ করে, খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করে, মানুষের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে যাওয়া বন্ধ করে, হাসপাতালে রোগীদের ভোগান্তির শিকার করে (সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছাতে না পেরে রোগীর মৃত্যু ঘটিয়ে), রাষ্ট্রের সম্পদ নষ্ট করে—এ কোন ধরনের প্রতিবাদ বুঝি না। অন্যায় উপায়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ করা তো একটি হাস্যকর বিষয়। কচু পোড়া দিতে অভ্যস্ত বাম দলগুলো (বাংলাদেশের বাম দলগুলোকে আমার কাছে লোকদেখানো উটকো ঝামেলাবাজ বলে মনে হয়) পল্টন, শাহবাগসহ কয়েকটি স্থানে যানবাহন চলাচলে বাধা দিয়ে কী অর্জন করল?’
হরতাল যে আর আন্দোলনের কার্যকর হাতিয়ার নেই, সেটা বোঝার ক্ষমতা যাদের নেই, তারা কীভাবে রাজনীতির বিকল্প শক্তি হবে, সেটা ভাবার বিষয় বৈকি!
তিন.
সরকার বদলের গণতান্ত্রিক পথ হলো নির্বাচন। বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার আর বছরখানেকের কিছু বেশি সময় বাকি। আওয়ামী লীগ সরকারের পরিবর্তে ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা বিএনপির। কিন্তু বিএনপি গোঁ ধরে আছে, তারা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না। বিএনপির এই দাবির সঙ্গে কোরাসে শামিল আছে আরও কিছু দল। এই দলগুলোর নেতাদের সম্পর্কে অনেকের মন্তব্য, তাঁরা সবাই ‘গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল’। ড. কামাল হোসেন, আ স ম আবদুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্না, মেজর জেনারেল (অব.) ইবরাহিম কিংবা নতুন গজিয়ে ওঠা নেতা রেজা কিবরিয়া-নুরুল হক নুরের নেতৃত্বে মানুষ সরকার পতনের আন্দোলনে নামবে, এটা আহাম্মক ছাড়া কেউ বিশ্বাস করে?
মানুষ তো বরং মনে করে পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, বিএনপির উচিত হবে নির্বাচনে অংশ নেওয়া। শেখ হাসিনা পদত্যাগ না করলে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত হবে বিএনপির জন্য আত্মঘাতী। তাহলে বিএনপি আরেক দফা ভাঙবে। সরকারের সঙ্গে বিএনপির যোগাযোগের খবর গোপন নেই। আজকের পত্রিকায় ২৬ আগস্টের প্রধান শিরোনাম ‘বিএনপির একাংশকে ভোটে আনার চেষ্টা’।
২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন যে প্রক্রিয়া বা কৌশলে হয়েছে, আগামী নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ একই কৌশল অনুসরণ করবে মনে করার কোনো কারণ নেই। নির্বাচন ও নির্বাচন-পরবর্তী সরকারের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টি বিবেচনায় না নিলে চরম ভুল করা হবে। এত বছর আওয়ামী লীগ টানা ক্ষমতায় থেকে দেশের প্রকৃত লাভ কী হলো—এ প্রশ্ন কিন্তু উঠছে। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের ‘উন্নয়ন’ মানুষের মনে স্থায়ী দাগ না কেটে, প্রতিদিনের ঘটনার ধাক্কা বেশি দাগ কাটছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে সাম্প্রদায়িক ও ধর্মান্ধ শক্তির ঔদ্ধত্য বাড়ছে, সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার কমছে না, প্রশাসনে জামায়াতি রাজনীতির প্রতিনিধিদের তৎপরতা স্পষ্ট হচ্ছে, আওয়ামী পরিবারের কিছু সদস্যের নীতিহীনতার গল্প মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ছে—এগুলো কোনোটাই ভালো লক্ষণ নয়।
চার.
শঙ্কার কথা এটাই, দেশের নতুন প্রজন্ম যে রাজনীতিবিমুখ কিংবা প্রকাশ্যে বলছে তারা রাজনীতিকে ঘৃণা করে, তাদের মনমানসিকতায় পরিবর্তন আনার কথা কি আওয়ামী লীগ, বিএনপি বা বাম দলগুলোর চিন্তায় আছে? কেন তরুণদের মধ্যে এত হতাশা, রাজনীতির প্রতি বিদ্বেষী মনোভাব, তার কারণ জানার চেষ্টা কি রাজনৈতিক নেতারা করেছেন? ক্ষমতায় যেতে চান, ক্ষমতায় থাকতে চান কিন্তু ভালোকে ‘হ্যাঁ’ আর মন্দকে ‘না’ বলার অভ্যাস রপ্ত করতে চান না—এভাবে ক্ষমতার পরিবর্তন হলেও মানুষের জীবনের শান্তি-স্বস্তির পথ প্রশস্ত হবে না।
বিএনপি এককভাবে বা মিত্রদের নিয়ে ক্ষমতায় এলে দেশে কী অবস্থা হবে, তা অনেকেই বোঝেন। আর বোঝেন বলেই বিএনপির ডাকে সাড়া দেন না। কিন্তু আওয়ামী লীগের নামে যদি দেশে কার্যত জামায়াতি নীতি-আদর্শের শাসন চালু হয়, সেটা কি মানুষকে খুশি করবে?
এখনকার আওয়ামী লীগের প্রসঙ্গে একজন তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতার বক্তব্য, ‘এরা বঙ্গবন্ধুকে বিরিয়ানির প্যাকেটে বন্দী করে রেখেছে। তাদের বেশির ভাগের সাধনা পদ-পদবি বাগানোর। কোনো পদ-পদবি পেলেই মেওয়া ফলবে। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের জ্ঞান আহরণের চেয়ে দাপট দেখানোর জন্য আগ্রহ সীমাহীন। এরা ক্ষমতার লোভে মুখে “জয় বাংলা” বলে, কিন্তু মনে মনে তারাও চায় না বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য হোক! কারণ তারা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে সবার আগে তারা মুসলমান!’
বাংলাদেশটাকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বা সব মানুষের দেশ বানাতে হলে দেশে একটি সাংস্কৃতিক জাগরণের প্রয়োজন। এই জাগরণের সঙ্গে একাত্ম করে তুলতে হবে তরুণ প্রজন্মকে। এটাই এখনকার বিকল্প।
বিভুরঞ্জন সরকার , সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি বেড়েই চলছে। এ কারণে চালক ও যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছে এই সড়ক। ডাকাতির শিকার বেশি হচ্ছেন প্রবাসফেরত লোকজন। ডাকাতেরা অস্ত্র ঠেকিয়ে লুট করে নিচ্ছে সর্বস্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও ঘটছে ডাকাতির ঘটনা।
০২ মার্চ ২০২৫বিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
১৬ জানুয়ারি ২০২৫গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪