Ajker Patrika

বিএনপি এবং নাশকতার রাজনীতি

এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন
বিএনপি এবং নাশকতার রাজনীতি

আওয়ামী লীগের সঙ্গে আরও একটি ইতিবাচক শক্তি স্বাধীনতা অর্জনের একান্ন বছরে দাঁড় হলো না; যা আমাদের কষ্ট দেয়। যারা আওয়ামী লীগের চেয়েও কখনো কখনো উন্নত চিন্তা করবে, সেই প্রত্যাশিত রাজনৈতিক বলয় আর এলই না।

রাজনৈতিক ধারাভাষ্য দেওয়ার সক্ষমতা প্রদানে তৃতীয় চোখ গুরুত্বপূর্ণ। যে চোখ দিয়ে সত্যটা বলার আপ্রাণ চেষ্টা না থাকলে, প্রহসন করা হলো। বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বাম-ডানপন্থীদের আবেগকে ধারণ করতে পেরেছে। নিজেদের উপযোগী শাসনব্যবস্থা কায়েমে পরিকল্পনা করে বাস্তবায়ন করতে পেরেছে আওয়ামী লীগ।

দেশের অপর নামধারী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) জন্মের ৪৪ বছরেও তাদের আদর্শ, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য জনগোষ্ঠীর কাছে অজানা। অথচ জনমানুষের একটি শ্রেণি তাদের সমর্থন করে কি না, তা প্রতিষ্ঠিত হয় না, কিন্তু আওয়ামী লীগকে ঠেকাও, এমন প্রেক্ষাপট বারবার করে ধরা দেয়। যারা মহান মুক্তিযুদ্ধে লাল-সবুজের স্বাধীনতা চায়নি, এমন কঠিন বাস্তবতাকে মেনে নিয়েই তাই ইতিহাসে বারবার করে তারা আঘাত হেনে বলেছে, ‘১৫ আগস্ট, ২১ আগস্ট চলতে থাকবে।’

আওয়ামী লীগের নিজেদের গঠনতন্ত্রকে সক্রিয় রাখা ও জনস্বার্থ বিবেচনায় দেশের অপরাপর রাজনৈতিক দলগুলোর অর্থবহ অনুভূতিগুলোকে দূরে না সরিয়ে কার্যকর ভূমিকা নিতে পেরেছে, তা প্রমাণিত সত্য হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু বিএনপি কি গভীর বাস্তবতায় গত দেড় যুগের বেশি সময় ধরে মূলধারার রাজনীতি হয়ে থাকতে পেরেছে? ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট থেকে গ্রেনেড হামলার মধ্য দিয়ে তারা রাজনৈতিক দল হিসেবে আর বিরাজ করতে পারেনি। কত সময় তারা পেয়েছে! অথচ আওয়ামী লীগের মতো ২১০০ সালের ডেলটা প্ল্যানের রূপরেখা তুলে ধরার মতো করে দেশের মানুষকে তারা বোঝাতে সক্ষম হয়নি যে আমরা তোমাদের জন্য ভাবছি।

এই ভাবতে না পারার কারণেই মানুষ সত্যিকারভাবে শেখ হাসিনা ও তাঁর নেতৃত্বের আওয়ামী লীগের ওপর আস্থা রেখেছে। তা-ও টানা তিনবার। মুষ্টিমেয় পর্যায়ে কাউকে কাউকে দেখি, কটাক্ষ করে কথা বলেন। সত্যি বলতে, আওয়ামী লীগ জনমানুষের দল না হলে, এত দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকতে পারত কি? অবশ্যই না।

বিএনপি, হালে দেশের বিভিন্ন প্রান্তরে মহাসমাবেশের সূচি রেখেছে। আমি বলব, দল প্রতিষ্ঠার উদ্যোক্তা হিসেবে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান কিংবা মশিউর রহমান যাদু মিয়াদের বিতর্কিত ভূমিকা নিয়ে কথা বলাটা আজকের প্রাসঙ্গিক ধারাভাষ্যে অর্থহীন।

প্রকৃতির দুই রূপ। ইতিবাচক ও নেতিবাচক। সমাজ ও রাষ্ট্রেও এমন প্রভাব পড়েছে, পড়বে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিএনপিকে নেতিবাচক শক্তি হিসেবে দেখার অযুত কারণ রয়েছে। কিন্তু প্রকৃতির নেতিবাচক শক্তিও তো ইতিবাচকের সঙ্গে লড়ে। এখানেও তা-ই। আওয়ামী লীগের সঙ্গে আরও একটি ইতিবাচক শক্তি স্বাধীনতা অর্জনের ৫১ বছরে দাঁড় হলো না; যা আমাদের কষ্ট দেয়। যারা আওয়ামী লীগের চেয়েও কখনো কখনো উন্নত চিন্তা করবে, সেই প্রত্যাশিত রাজনৈতিক বলয় আর এলই না। বিএনপি কি সত্যিকার অর্থে একটা রাজনৈতিক দল?

উদাহরণ দিয়েই বলছি। বিএনপি এরই মধ্যে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম, বিভাগীয় শহর ময়মনসিংহ এবং খুলনায় সমাবেশ করেছে। বৈশ্বিক প্রভাবে চলমান কিছু সংকটকে পুঁজি করে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে জন আস্থা নেওয়ার এমন কদর্য উদ্যোগকে কি রাজনীতি বলা যায়? এর অর্থ হলো, তারা শুধু বর্তমান সরকারের সমালোচনা করে কাণ্ডজ্ঞানহীন রাজনীতিকে প্রতিনিধিত্ব করেছে। তাদের রাজনীতি করতে হতো, আগামী দিনের বাংলাদেশে তারা কী কী কাজ করতে চায়, তা তুলে ধরে।

অতিমারি কোভিড-১৯ ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে উপেক্ষা করে হালের বিদ্যুৎ-সংকট, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির সংকটকে গুরুত্ব দিয়ে বিএনপি শিশুতোষ আচারকে সঙ্গী করেছে। অর্থাৎ, কিছু বলার দরকার, তাই চিৎকার করে অর্থহীন বক্তব্যে থাকা হচ্ছে। মানুষের জন্য রাজনীতি নেই। তাদের লক্ষ্য অন্য। বিএনপি বুর্জোয়া শ্রেণির প্রতিনিধি হয়ে নাশকতার রাজনীতিকেই বেছে নিতে যাচ্ছে। ফলে দলটি নতুন কৌশলে দেখাতে চাইছে, আমাদের সমাবেশে লোক হচ্ছে, তথা জনগণের অংশগ্রহণ রয়েছে।

বিএনপি ও তাদের লক্ষ্য সেই ঘুরেফিরে নাশকতা। আমার শঙ্কা হয়, তারা আগামী বছর বহু মানুষের প্রাণ নেবে। স্পষ্টতই তা প্রমাণ হয়। কেননা, এখন পর্যন্ত গত ১৮ বছরে তারা বাংলাদেশ নিয়ে কী কী করবে, তার ধারাবাহিক কোনো সূচি নেই। বিচ্ছিন্নভাবে তারা অর্থবছরের বাজেট দেওয়ার আগের দিবসে বিচ্ছিন্ন অর্থনীতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে। তা-ও দুই-একবার সেটিও করতে পারেনি। তাদের বলয়ে প্রয়াত সাইফুর রহমানের মতো এখন ট্যালেন্ট ইকোনমিস্টও নেই। তিস্তা চুক্তি নিয়ে এক-দুইবার লোকদেখানো লংমার্চ করেছে। ফলোআপে থাকেনি। সারাক্ষণ তারা ভারতবিরোধী বক্তব্য-বিবৃতিতে থেকেছে। অথচ ৫১টি অভিন্ন নদীর সমাধান চেয়ে তারা রাজনৈতিক দল হওয়ার শর্ত পূরণে ব্যস্ত থাকতেই পারত; যা আওয়ামী লীগের জন্য একটি প্রেশার হয়ে থাকত। তা-ও তো পারেনি তারা।

আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বিশ্বনন্দিত রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা প্রায়ই বলেন, ‘তাদের দলের নেতাটা কে? আসলে বিএনপিতে নেতৃত্বের সংকট আছে। সাজাপ্রাপ্ত আসামি কিংবা পলাতক আসামি দিয়ে আপনি দল পরিচালনা করতে পারেন না।’

বিএনপি কার্যত তাই বুর্জোয়া শ্রেণির সেই রাজনৈতিক প্রতিনিধি, যারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসে নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তনে সোচ্চার হয় বা হবে। তারা বাংলাদেশের কৃষিভিত্তিক সমাজের কিংবা শ্রমিকশ্রেণির বঞ্চনাকে ৪৪ বছরে ধারণ করতে পারেনি। তারা এখন বলছে, নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন হতে হবে; যা পশ্চিমা শক্তির প্রেসক্রিপশনে অসাংবিধানিক আয়োজনের পাঁয়তারা ছাড়া কিছু নয়।

বিএনপি মূলত নখদন্তহীন নেকড়ে। জামায়াতে ইসলামীর গোপন সংগঠকদের দিয়ে কিছু মানুষ, চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের স্বজন এবং তাদের উদ্যোগে কিছু ভাড়াটে লোক, তথা মিছিল-মিটিংয়ে যোগ দিয়ে অর্থ কামানোর একশ্রেণিকে দিয়ে তাদের মহাসমাবেশগুলোকে চালিয়ে নিতে থাকবে। একপর্যায়ে তারা সশস্ত্র অবস্থায় রাজপথে আসবে। বিপুল পরিমাণ অর্থের জোগান আছে। সুশীল জামা পরিধান করে যারা বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের পেছনে বহুদিন ধরে লেগে আছে, কথিত তারাই বিএনপিকে ব্যবহার করবে।

মাঝখান থেকে সাধারণ মানুষের ক্ষতি হয়ে যাবে। রাজনৈতিক অপশক্তির তকমা থেকে বিএনপি তাই বেরোতে পারছে না। সমাজের জন্য নেতিবাচক এই শক্তিটিকে রোধ করার নিশ্চয়ই পথ রয়েছে। প্রকৃতি যেমন খালেদা জিয়ার বিচার করেছে। এবার হয়তো বিএনপিকেও কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে বলা হবে, তোমরা ৪৪ বছরে সত্যিই কি রাজনৈতিক দল হতে পেরেছ?

লেখক: এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত