অরুণ কর্মকার
বিএনপি কি ১৪৪ ধারা ভেঙে সমাবেশ করার চেষ্টা করবে? যদি তা করে তাহলে নগরীর বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘাত-সংঘর্ষ বাধবে। পুলিশ শক্তি প্রদর্শন করবে।
বিএনপির সমাবেশে আগেভাগে আসা ব্যক্তিরা ছত্রভঙ্গ হবে। হতাহতের ঘটনা ঘটাও অস্বাভাবিক নয়।
মানুষের সব জল্পনা, আলোচনা, বিশ্লেষণ, পর্যালোচনা এখন ১০ ডিসেম্বরের ঢাকা নিয়ে। ১০ ডিসেম্বর কী ঘটবে ঢাকায়! কী ঘটতে পারে! আদৌ কিছু কি ঘটবে?
বিএনপি কি নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে পারবে? পুলিশ তথা সরকার কি তা করতে দেবে? না হলে তাদের পক্ষে কি পুলিশের শর্তের বেড়াজালের মধ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করা সম্ভব হবে? সেটা কি তারা করবে? নাকি শেষ পর্যন্ত বিএনপির সমাবেশই ভণ্ডুল হয়ে যাবে? তা যদি হয়, কী হবে তার পরবর্তী প্রতিক্রিয়া!
অনেক প্রশ্ন। সঙ্গে মত-অমতেরও শেষ নেই। এ-ই চলছে সর্বত্র। অফিস, ক্লাব, পরিবহন কিংবা পারিবারিক গণ্ডি, যেখানেই কিছুক্ষণের জন্যও কয়েকজন মানুষ একত্র হচ্ছে, বসছে, সেখানেই এটি হয়ে উঠছে প্রধান আলোচনার বিষয়। ঢাকা মহানগর পুলিশ নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশের আবেদন নাকচ করে ২৬টি শর্তসাপেক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে বলার পর গণমাধ্যমেও এ নিয়ে আলোচনার শেষ নেই।
নয়াপল্টন কেন: এখন পর্যন্ত ঢাকার বাইরে বিএনপির যে কটি বিভাগীয় সমাবেশ হয়েছে, তাতে প্রচুর জনসমাগম লক্ষ করা গেছে। ১০ ডিসেম্বর ঢাকার বিভাগীয় সমাবেশে জনসমাগম হওয়ার কথা আরও বেশি। অন্তত বিএনপির পক্ষ থেকে সে রকমই বলা হয়েছে। তেমন একটি সমাবেশের জন্য নয়াপল্টন, বিএনপি অফিসের সামনের রাস্তাটি একমদমই যে উপযুক্ত নয়, তা সবাই বোঝে।
তাহলে ওই স্থানেই বিভাগীয় সমাবেশ করতে বিএনপি বদ্ধপরিকর কেন? কৌশল কী? কী আছে বিএনপির মনে? এই বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময় সরকারের উদ্দেশ্যে বিএনপি কিছু স্পর্শকাতর কথাবার্তাও বলেছে। যেমন ১০ ডিসেম্বর থেকে খালেদা জিয়ার নির্দেশে দেশ চলবে। সরকার পালাতে বাধ্য হবে, ইত্যাদি। এরপর এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপির মনের কথা বা কৌশল নিয়ে সরকারের চিন্তা করার যথেষ্ট কারণ আছে।
নয়াপল্টনে বিভাগীয় সমাবেশ করার পেছনে বিএনপির একমাত্র কৌশল হতে পারে ব্যাপক জনসমাগম ঘটিয়ে নয়াপল্টনসহ চারপাশের সব রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেওয়া।
নয়াপল্টনের রাস্তা পূর্বদিকে মতিঝিলের শাপলা চত্বর থেকে টিকাটুলি পর্যন্ত বিস্তৃত। পশ্চিমে কাকরাইল মসজিদ। সেখান থেকে একটু উত্তরে মিন্টো রোড-মন্ত্রিপাড়া।
বিজয়নগরের রাস্তা ধরে দক্ষিণে পুরানা পল্টন মোড় হয়ে গুলিস্তান। একটু পশ্চিমে সরকারের প্রশাসনিক প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়, জাতীয় প্রেসক্লাব। পুরানা পল্টন মোড় থেকে পূর্বদিকে বায়তুল মোকাররম মসজিদ, দৈনিক বাংলার মোড় হয়ে আবার মতিঝিল-শাপলাচত্বর। রাজধানীর এই পুরো কেন্দ্রীয় অঞ্চলটি হয়ে উঠবে নয়াপল্টনের জনসমাবেশের এক্সটেনশন।
এ রকম পরিস্থিতিতে সমাবেশকারীরা সরকার পদত্যাগ না করা পর্যন্ত গণ-অবস্থানের ঘোষণাও দিয়ে বসতে পারে। তখন সরকারবিরোধী বিএনপির অন্যান্য সহযোগী রাজনৈতিক শক্তিরও সেখানে যুক্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আশঙ্কা থাকে অন্তর্ঘাতমূলক এবং সন্ত্রাসী হামলারও। সে ক্ষেত্রে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা পুলিশ তথা সরকারের জন্য কঠিন হবে। হয়তো সে রকম একটি পরিস্থিতি সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই বিএনপি বিভাগীয় সমাবেশের স্থান হিসেবে নয়াপল্টনকে উপযুক্ত মনে করছে। কিন্তু ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তথা সরকার সেখানে সমাবেশ করার অনুমতি দিচ্ছে না। দেবে না।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কেন: পুলিশ তথা সরকার আবার বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের জন্য উপযুক্ত বিবেচনা করে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।
সেখানে সমাবেশস্থলের নিরাপত্তা রক্ষা করা পুলিশের জন্য সুবিধাজনক। উদ্যানের চারপাশের রাস্তায় পাহারাচৌকি বসিয়ে এবং অবস্থান নিয়ে পুলিশ অপেক্ষাকৃত সহজেই তা করতে পারবে। তা ছাড়া, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশ আশপাশের রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা নেই।
বড় কোনো সমাবেশ বা গণজমায়েতের জন্য বর্তমানে ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান একটি আদর্শ স্থান। কিন্তু এ স্থানটি বিএনপির পছন্দ নয়। সে কারণে বিএনপির এই বিভাগীয় সমাবেশের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সম্পর্কে তাদের মনের কথা বা কৌশল নিয়ে পুলিশ বিভাগ তথা সরকার বিশেষভাবে সন্দিহান। তাই কোনোভাবেই বিএনপিকে নয়াপল্টনে এই সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না।
তবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হলেও গোল বাধিয়েছে সঙ্গে জুড়ে দেওয়া ২৬টি শর্ত। এর মধ্যে সমাবেশ শুরুর দুই ঘণ্টার বেশি আগে কোনো নেতা-কর্মী সমাবেশস্থলে যেতে পারবেন না, এমন শর্তও রয়েছে। এ ধরনের শর্তের কারণে সুষ্ঠুভাবে সমাবেশ করতে দেওয়ার সরকারি সদিচ্ছা নিয়ে সন্দিহান বিএনপি। কেননা এ রকম একটি বিভাগীয় সমাবেশে ঢাকার বাইরের সংশ্লিষ্ট জেলাগুলো থেকে প্রচুর মানুষ আসবে। কিন্তু তারা যদি আগেভাগে সমাবেশস্থলে যেতে না পারে, তাহলে যাবে কোথায়? এটা তো দুই-পাঁচজন লোকের ব্যাপার নয়। তা ছাড়া, এ ধরনের অগ্রহণযোগ্য শর্তাদি না দিয়ে সোহারওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দেওয়ার পরও বিএনপি তাতে রাজি না হলে সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপির কূটকৌশল সবার কাছে আরও স্পষ্ট হয়ে উঠত। কিন্তু সরকার সে পথে যায়নি।
শেষ পর্যন্ত কি সমাবেশ হবে: পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে বিএনপি নয়াপল্টনেই সমাবেশ করতে অনড়। অন্যদিকে পুলিশ সেখানে সমাবেশের অনুমতি দেবে না। পুলিশ অনুমতি দেবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। কিন্তু বিএনপি সেখানে সমাবেশ করবে না।
পুলিশের অনুমতি ছাড়াই বিএনপি নয়াপল্টনে সমাবেশ করবে বলে দলটির নেতা-কর্মীদের কথাবার্তায় মনে হয়। কিন্তু পুলিশ যদি ৯ ডিসেম্বর রাত থেকে নয়াপল্টন এবং তার সঙ্গে সংযুক্ত কোনো রাস্তায় কাউকে দাঁড়াতেই না দেয়? যদি শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য ওই সব এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে আগের রাত থেকেই?
তাহলে বিএনপি কি ১৪৪ ধারা ভেঙে সমাবেশ করার চেষ্টা করবে? যদি তা করে তাহলে নগরীর বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘাত-সংঘর্ষ বাধবে। পুলিশ শক্তি প্রদর্শন করবে। বিএনপির সমাবেশে আগেভাগে আসা ব্যক্তিরা ছত্রভঙ্গ হবে। হতাহতের ঘটনা ঘটাও অস্বাভাবিক নয়। এই পরিস্থিতিতে সমাবেশের উদ্দেশ্যে রওনা করেও অনেকে নিরাপদে বাড়ি ফিরে যাওয়াই শ্রেয় মনে করবে। সে ক্ষেত্রে শেষ পর্যন্ত সমাবেশটি হবে না। বিএনপি পিছু হটতে বাধ্য হবে। তখন পুলিশ আরও আগ্রাসী হয়ে আটক-গ্রেপ্তার শুরু করতে পারে।
এর বিপরীত চিত্র হতে পারে জনসমাবেশে আসা জনতার প্রবল শক্তির কাছে পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পিছু হটল। নতি স্বীকার করল। সেই পরিস্থিতিতে বিএনপি সমাবেশ থেকে গণ-অভ্যুত্থানের ডাক দিল। সরকারের পতন ঘটাল। তাদের মূল লক্ষ্য অর্জিত হলো।
তবে এই সম্ভাবনা যেহেতু এখন পর্যন্ত শূন্যের কোঠায়, সেহেতু বিএনপি নয়াপল্টনে সমাবেশ করার জন্য গোঁ ধরে থাকলে ১০ ডিসেম্বর সংঘাত-সংঘর্ষ অনিবার্য। তাতে বিএনপির কতটা লাভ হবে, সেটা তারাই ভালো বুঝবে। এ কথা বলা যায় যে তারা যদি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার জন্য শর্ত শিথিল করার দাবি করে, তাতে তারা জনসমর্থন পাবে। হয়তো পুলিশ বিভাগ তথা সরকার কিছু শর্ত শিথিল করতেও পারে। তাতে বিএনপির পরিকল্পিত সমাবেশটি হবে।
এখন বিএনপিকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে কী পদ্ধতিতে তারা লক্ষ্যে পৌঁছাতে চায়।
অন্যদিকে সরকারকে ভাবতে হবে গণতন্ত্রের সাধারণ রীতিনীতি মেনে বিএনপিকে কীভাবে সভা-সমাবেশ করার সুযোগটুকু দেওয়া যায়। রাজনৈতিক সংঘাত-সংঘর্ষ দীর্ঘ মেয়াদে কারও জন্যই সুফল বয়ে আনবে না। সাধারণ জনগণের জন্য তো নয়ই।
লেখক: অরুণ কর্মকার, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
বিএনপি কি ১৪৪ ধারা ভেঙে সমাবেশ করার চেষ্টা করবে? যদি তা করে তাহলে নগরীর বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘাত-সংঘর্ষ বাধবে। পুলিশ শক্তি প্রদর্শন করবে।
বিএনপির সমাবেশে আগেভাগে আসা ব্যক্তিরা ছত্রভঙ্গ হবে। হতাহতের ঘটনা ঘটাও অস্বাভাবিক নয়।
মানুষের সব জল্পনা, আলোচনা, বিশ্লেষণ, পর্যালোচনা এখন ১০ ডিসেম্বরের ঢাকা নিয়ে। ১০ ডিসেম্বর কী ঘটবে ঢাকায়! কী ঘটতে পারে! আদৌ কিছু কি ঘটবে?
বিএনপি কি নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে পারবে? পুলিশ তথা সরকার কি তা করতে দেবে? না হলে তাদের পক্ষে কি পুলিশের শর্তের বেড়াজালের মধ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করা সম্ভব হবে? সেটা কি তারা করবে? নাকি শেষ পর্যন্ত বিএনপির সমাবেশই ভণ্ডুল হয়ে যাবে? তা যদি হয়, কী হবে তার পরবর্তী প্রতিক্রিয়া!
অনেক প্রশ্ন। সঙ্গে মত-অমতেরও শেষ নেই। এ-ই চলছে সর্বত্র। অফিস, ক্লাব, পরিবহন কিংবা পারিবারিক গণ্ডি, যেখানেই কিছুক্ষণের জন্যও কয়েকজন মানুষ একত্র হচ্ছে, বসছে, সেখানেই এটি হয়ে উঠছে প্রধান আলোচনার বিষয়। ঢাকা মহানগর পুলিশ নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশের আবেদন নাকচ করে ২৬টি শর্তসাপেক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে বলার পর গণমাধ্যমেও এ নিয়ে আলোচনার শেষ নেই।
নয়াপল্টন কেন: এখন পর্যন্ত ঢাকার বাইরে বিএনপির যে কটি বিভাগীয় সমাবেশ হয়েছে, তাতে প্রচুর জনসমাগম লক্ষ করা গেছে। ১০ ডিসেম্বর ঢাকার বিভাগীয় সমাবেশে জনসমাগম হওয়ার কথা আরও বেশি। অন্তত বিএনপির পক্ষ থেকে সে রকমই বলা হয়েছে। তেমন একটি সমাবেশের জন্য নয়াপল্টন, বিএনপি অফিসের সামনের রাস্তাটি একমদমই যে উপযুক্ত নয়, তা সবাই বোঝে।
তাহলে ওই স্থানেই বিভাগীয় সমাবেশ করতে বিএনপি বদ্ধপরিকর কেন? কৌশল কী? কী আছে বিএনপির মনে? এই বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময় সরকারের উদ্দেশ্যে বিএনপি কিছু স্পর্শকাতর কথাবার্তাও বলেছে। যেমন ১০ ডিসেম্বর থেকে খালেদা জিয়ার নির্দেশে দেশ চলবে। সরকার পালাতে বাধ্য হবে, ইত্যাদি। এরপর এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপির মনের কথা বা কৌশল নিয়ে সরকারের চিন্তা করার যথেষ্ট কারণ আছে।
নয়াপল্টনে বিভাগীয় সমাবেশ করার পেছনে বিএনপির একমাত্র কৌশল হতে পারে ব্যাপক জনসমাগম ঘটিয়ে নয়াপল্টনসহ চারপাশের সব রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেওয়া।
নয়াপল্টনের রাস্তা পূর্বদিকে মতিঝিলের শাপলা চত্বর থেকে টিকাটুলি পর্যন্ত বিস্তৃত। পশ্চিমে কাকরাইল মসজিদ। সেখান থেকে একটু উত্তরে মিন্টো রোড-মন্ত্রিপাড়া।
বিজয়নগরের রাস্তা ধরে দক্ষিণে পুরানা পল্টন মোড় হয়ে গুলিস্তান। একটু পশ্চিমে সরকারের প্রশাসনিক প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়, জাতীয় প্রেসক্লাব। পুরানা পল্টন মোড় থেকে পূর্বদিকে বায়তুল মোকাররম মসজিদ, দৈনিক বাংলার মোড় হয়ে আবার মতিঝিল-শাপলাচত্বর। রাজধানীর এই পুরো কেন্দ্রীয় অঞ্চলটি হয়ে উঠবে নয়াপল্টনের জনসমাবেশের এক্সটেনশন।
এ রকম পরিস্থিতিতে সমাবেশকারীরা সরকার পদত্যাগ না করা পর্যন্ত গণ-অবস্থানের ঘোষণাও দিয়ে বসতে পারে। তখন সরকারবিরোধী বিএনপির অন্যান্য সহযোগী রাজনৈতিক শক্তিরও সেখানে যুক্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আশঙ্কা থাকে অন্তর্ঘাতমূলক এবং সন্ত্রাসী হামলারও। সে ক্ষেত্রে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা পুলিশ তথা সরকারের জন্য কঠিন হবে। হয়তো সে রকম একটি পরিস্থিতি সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই বিএনপি বিভাগীয় সমাবেশের স্থান হিসেবে নয়াপল্টনকে উপযুক্ত মনে করছে। কিন্তু ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তথা সরকার সেখানে সমাবেশ করার অনুমতি দিচ্ছে না। দেবে না।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কেন: পুলিশ তথা সরকার আবার বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের জন্য উপযুক্ত বিবেচনা করে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।
সেখানে সমাবেশস্থলের নিরাপত্তা রক্ষা করা পুলিশের জন্য সুবিধাজনক। উদ্যানের চারপাশের রাস্তায় পাহারাচৌকি বসিয়ে এবং অবস্থান নিয়ে পুলিশ অপেক্ষাকৃত সহজেই তা করতে পারবে। তা ছাড়া, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশ আশপাশের রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা নেই।
বড় কোনো সমাবেশ বা গণজমায়েতের জন্য বর্তমানে ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান একটি আদর্শ স্থান। কিন্তু এ স্থানটি বিএনপির পছন্দ নয়। সে কারণে বিএনপির এই বিভাগীয় সমাবেশের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সম্পর্কে তাদের মনের কথা বা কৌশল নিয়ে পুলিশ বিভাগ তথা সরকার বিশেষভাবে সন্দিহান। তাই কোনোভাবেই বিএনপিকে নয়াপল্টনে এই সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না।
তবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হলেও গোল বাধিয়েছে সঙ্গে জুড়ে দেওয়া ২৬টি শর্ত। এর মধ্যে সমাবেশ শুরুর দুই ঘণ্টার বেশি আগে কোনো নেতা-কর্মী সমাবেশস্থলে যেতে পারবেন না, এমন শর্তও রয়েছে। এ ধরনের শর্তের কারণে সুষ্ঠুভাবে সমাবেশ করতে দেওয়ার সরকারি সদিচ্ছা নিয়ে সন্দিহান বিএনপি। কেননা এ রকম একটি বিভাগীয় সমাবেশে ঢাকার বাইরের সংশ্লিষ্ট জেলাগুলো থেকে প্রচুর মানুষ আসবে। কিন্তু তারা যদি আগেভাগে সমাবেশস্থলে যেতে না পারে, তাহলে যাবে কোথায়? এটা তো দুই-পাঁচজন লোকের ব্যাপার নয়। তা ছাড়া, এ ধরনের অগ্রহণযোগ্য শর্তাদি না দিয়ে সোহারওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দেওয়ার পরও বিএনপি তাতে রাজি না হলে সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপির কূটকৌশল সবার কাছে আরও স্পষ্ট হয়ে উঠত। কিন্তু সরকার সে পথে যায়নি।
শেষ পর্যন্ত কি সমাবেশ হবে: পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে বিএনপি নয়াপল্টনেই সমাবেশ করতে অনড়। অন্যদিকে পুলিশ সেখানে সমাবেশের অনুমতি দেবে না। পুলিশ অনুমতি দেবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। কিন্তু বিএনপি সেখানে সমাবেশ করবে না।
পুলিশের অনুমতি ছাড়াই বিএনপি নয়াপল্টনে সমাবেশ করবে বলে দলটির নেতা-কর্মীদের কথাবার্তায় মনে হয়। কিন্তু পুলিশ যদি ৯ ডিসেম্বর রাত থেকে নয়াপল্টন এবং তার সঙ্গে সংযুক্ত কোনো রাস্তায় কাউকে দাঁড়াতেই না দেয়? যদি শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য ওই সব এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে আগের রাত থেকেই?
তাহলে বিএনপি কি ১৪৪ ধারা ভেঙে সমাবেশ করার চেষ্টা করবে? যদি তা করে তাহলে নগরীর বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘাত-সংঘর্ষ বাধবে। পুলিশ শক্তি প্রদর্শন করবে। বিএনপির সমাবেশে আগেভাগে আসা ব্যক্তিরা ছত্রভঙ্গ হবে। হতাহতের ঘটনা ঘটাও অস্বাভাবিক নয়। এই পরিস্থিতিতে সমাবেশের উদ্দেশ্যে রওনা করেও অনেকে নিরাপদে বাড়ি ফিরে যাওয়াই শ্রেয় মনে করবে। সে ক্ষেত্রে শেষ পর্যন্ত সমাবেশটি হবে না। বিএনপি পিছু হটতে বাধ্য হবে। তখন পুলিশ আরও আগ্রাসী হয়ে আটক-গ্রেপ্তার শুরু করতে পারে।
এর বিপরীত চিত্র হতে পারে জনসমাবেশে আসা জনতার প্রবল শক্তির কাছে পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পিছু হটল। নতি স্বীকার করল। সেই পরিস্থিতিতে বিএনপি সমাবেশ থেকে গণ-অভ্যুত্থানের ডাক দিল। সরকারের পতন ঘটাল। তাদের মূল লক্ষ্য অর্জিত হলো।
তবে এই সম্ভাবনা যেহেতু এখন পর্যন্ত শূন্যের কোঠায়, সেহেতু বিএনপি নয়াপল্টনে সমাবেশ করার জন্য গোঁ ধরে থাকলে ১০ ডিসেম্বর সংঘাত-সংঘর্ষ অনিবার্য। তাতে বিএনপির কতটা লাভ হবে, সেটা তারাই ভালো বুঝবে। এ কথা বলা যায় যে তারা যদি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার জন্য শর্ত শিথিল করার দাবি করে, তাতে তারা জনসমর্থন পাবে। হয়তো পুলিশ বিভাগ তথা সরকার কিছু শর্ত শিথিল করতেও পারে। তাতে বিএনপির পরিকল্পিত সমাবেশটি হবে।
এখন বিএনপিকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে কী পদ্ধতিতে তারা লক্ষ্যে পৌঁছাতে চায়।
অন্যদিকে সরকারকে ভাবতে হবে গণতন্ত্রের সাধারণ রীতিনীতি মেনে বিএনপিকে কীভাবে সভা-সমাবেশ করার সুযোগটুকু দেওয়া যায়। রাজনৈতিক সংঘাত-সংঘর্ষ দীর্ঘ মেয়াদে কারও জন্যই সুফল বয়ে আনবে না। সাধারণ জনগণের জন্য তো নয়ই।
লেখক: অরুণ কর্মকার, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি বেড়েই চলছে। এ কারণে চালক ও যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছে এই সড়ক। ডাকাতির শিকার বেশি হচ্ছেন প্রবাসফেরত লোকজন। ডাকাতেরা অস্ত্র ঠেকিয়ে লুট করে নিচ্ছে সর্বস্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও ঘটছে ডাকাতির ঘটনা।
০২ মার্চ ২০২৫বিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
১৬ জানুয়ারি ২০২৫গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪