জাহীদ রেজা নূর
এ কথা তো ঠিক, একুশের মতো উজ্জ্বল একটি ঠিকানা আমাদের আছে, যা চিরকাল ভাষার দাবির উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে থাকবে, আবার এ কথাও তো ঠিক, সেই একুশের অঙ্গীকারগুলো রক্ষা করার ব্যাপারে আমাদের রয়েছে সীমাহীন ব্যর্থতা।
ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ তো চলে গেছে, এবার সম্ভবত একটু ঘুরে বসা যায়। আর একটা দিন পার হলেই বাঙালির টান টান আবেগ শিথিল হয়ে পড়বে। আবার কিছুকালের জন্য একুশকে ভুলে থাকা যাবে। মার্চ মাসে আছে স্বাধীনতার আমেজ। এবার লেখালেখি, সেমিনার, বক্তৃতা, টক শো হবে স্বাধীনতাময়। আমাদের এই হুজুগে স্বভাব যথেষ্ট পোক্ত হয়ে আছে।
সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচলন নিয়ে গলার রগ ফুলিয়ে বক্তৃতাটা এখন বন্ধ রাখতে হবে পুরো এক বছর। সামনের ১১ মাসে উচ্চ আদালতে একটার পর একটা ইংরেজিতে লেখা রায় নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য হবে না। উচ্চ আদালতের ভাষা বাংলা করা হলে বাদী-বিবাদী দুই পক্ষই সহজে বুঝতে পারত। এটা যে আমাদের সবার জন্য খুবই জরুরি একটি বিষয় এবং তা বাস্তবে পরিণত করতে হলে কিছুটা মেহনত করা দরকার, কিন্তু সেটা পরিশ্রমসাপেক্ষ বলে ইংরেজির সেই চলে আসা ধারাটাই ধরে রাখা হয়।
আর করপোরেট অফিস সংস্কৃতি? বাংলাটা একটু বাঁকিয়ে না বলতে পারলে, ‘আমরা’কে ‘আমড়া’ না বললে, ‘গরম’কে ‘গড়ম’ বলা না হলে, ‘কঠিন’কে ‘ডিফিকাল্ট’ না বললে সেই সংস্কৃতির সঙ্গে নিজেকে মিলিয়ে নেওয়া কঠিন। তাতে হালে পানি পাওয়াও কঠিন। যতই বাংলা সংস্কৃতির প্রতি মায়াকান্না করা হোক না কেন, আমাদের করপোরেট জগতে ইংরেজি জানা মানুষ ছাড়া গতি নেই, সেটা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। সেখানে উৎসবের আদলে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ‘সেলিব্রেট’ করা হয় বটে, কিন্তু সেটাও একটা ‘রিচুয়াল’ পালন করার মতো।
দুই. এবার একটি কঠিন প্রশ্ন করতে হয়। গরিব মানুষ বেশি বলে এখনো যাচাই করে দেখার সুযোগ হয়নি, এ দেশের কত ভাগ মানুষ তাঁর সততার কারণেই সৎ থাকতে পারেন, আর কত ভাগ মানুষ অসৎ কাজের সুযোগ পান না বলে সৎ থাকেন। অভিজ্ঞতা বলে, অর্থ সমাগমের সঙ্গে চরিত্র বদল আমাদের একটা স্বাভাবিক প্রবণতা।
আমারই এক কনিষ্ঠ সহকর্মী হঠাৎ একটি পত্রিকার সম্পাদক হয়ে যাওয়ার পর তাঁর ব্যবহারে যে পরিবর্তনগুলো এসেছিল, তা ছিল বিস্ময়কর। এটা শুধু টং চায়ের দোকান থেকে ‘বারিস্তা’ রেস্তোরাঁয় উত্তরণ দিয়ে বোঝানো যাবে না। নিজেকে অভিজাত ক্লাবের সদস্য হিসেবে ভাবতে হলে কোন কোন জিনিস জীবন থেকে ছাঁটাই করতে হবে, সেটা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শিখে নিয়েছেন তিনি। আর এ রকম হলে নিজের স্বভাবের বাইরে গিয়ে নিজেকে খুঁজে নিতে হয়। একজন তুখোড় কমিউনিস্ট নেতা খবরের কাগজের সম্পাদক হয়ে কীভাবে অভিজাত বুর্জোয়ায় পরিণত হয়েছেন, সে খবর অনেকেই রাখেন।
এই যে পরিবর্তন, তার একটা বড় কারণ হলো, যে শিক্ষায় শিক্ষিত হয় মানুষ, তা আসলে জোলো, জীবনবিমুখ। বস্তা পচা সিলেবাসে যে শিক্ষা রপ্ত হয়, বাস্তব জীবনে তা কোনো কাজে লাগে না। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে পরীক্ষার ফলাফল চাকরি পাওয়ার যোগ্যতা হয় না। পরিচিত বা স্বজন হলেই সে হয়ে উঠতে পারে যোগ্য মানুষ। আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোয় এই ‘চেনাজানার’ ভিড় একটু বেশি। তাই একুশে ফেব্রুয়ারির রক্তদানের মর্ম বোঝার ক্ষমতা আমাদের নেই, আমরা তা অর্জন করে উঠতে পারি না। আমরা যে আদর্শ জীবনের কথা ভাবি আর যে জীবনযাপন করি, তার মধ্যে থাকে দুস্তর ব্যবধান।
চাকরির সঙ্গে উপরি পাওয়ার একটা আত্মীয়তাবোধ আমাদের আচ্ছন্ন করে কি না, সে কথা আমরা কজন ভেবেছি? আমাদের দেশে একজন সৎ মানুষকে সফল বলা হয় না আর, একজন দরিদ্র শিক্ষক আর শ্রদ্ধার যোগ্য মানুষ নন। একজন দুর্নীতিবাজ ঠিকাদার কিংবা অন্যের জমি দখল করা শিল্পপতি টাকার জোরে হয়ে ওঠেন সফল মানুষ। ঘুষ আর দুর্নীতির বাইরে তাঁরা নন।
তিন. নিম্নমধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত এবং উচ্চমধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীরা এখন কোন স্বপ্ন দেখে? ভড়ং বাদ দিয়ে বললে বলতে হবে, আইইএলটিএস, জিম্যাট ধরনের পরীক্ষা দিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিদেশে গিয়ে লেখাপড়া করার ব্যবস্থা করতে চায় তারা। এই চিন্তা যৌক্তিক কি না, সে প্রসঙ্গে আসুন। আমাদের উচ্চ শিক্ষায়তন থেকে পাস করার পর যে জীবনের মুখোমুখি হতে হয়, তা কাঙ্ক্ষিত নয়। কঠোর পরিশ্রমের পড়াশোনা ভালো কোনো চাকরির নিশ্চয়তা দেয় না। সবাই তো আত্মীয়তা সূত্রে ধনবান ব্যক্তির শ্যালক বা দুলাভাই নন যে চাইলেই তাঁর স্বপ্ন পূরণ করা চাকরি হাতিয়ে নেবেন। ব্যবসার বাজারও টিকে থাকার নিশ্চয়তা দেয় না। আমার এক বন্ধু বলছিলেন গ্রামে জমিজমার কথা। যদি আপনি সরলভাবে জানতে চান, কেমন আছে গ্রাম, তাহলে উত্তরে যে কথাগুলো শুনবেন, তা সুখকর। কিন্তু সেখানে জমিজমা বিক্রি-সংক্রান্ত আলাপ করে দেখুন তো! তখন জমির মালিকের চেয়ে অনেক বেশি আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে আসবে দলীয় লোকজন। তারাই রফা করবে জমির দাম, তারাই রফা করবে মালিক কত টাকা পাবেন আর তাদের ভাগে কত পড়বে। সবখানেই যে দুষ্টচক্র গড়ে উঠেছে, তা কখনোই একটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশের ইঙ্গিত দেয় না।
পদে পদে নিগ্রহ যখন আপনাকে চেপে ধরে, তখন আপনি নিজের সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে যদি শঙ্কিত হয়ে পড়েন, তাহলে কি আপনাকে দোষ দেওয়া যাবে?
চার. উচ্চাকাঙ্ক্ষা কোনো খারাপ কিছু নয়। কিন্তু মানবতাহীন উচ্চাকাঙ্ক্ষা ভয়ংকর ব্যাপার। অতীত ভুলে থাকতে বলি না, অতীতই ভবিষ্যতের পথ গড়ে দেয়। সেই নাড়ির টান বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে আত্মপরিচয় থাকে না। কিন্তু জীবনটা অতীতসর্বস্ব হয়ে গেলে তার কোনো ভবিষ্যৎ থাকে না। তখন অতীত গুণকীর্তনেই সময় কেটে যায়। তখন যে স্থবিরতার সৃষ্টি হয়, তাকে ভুলে থাকার জন্য ‘আমিই শ্রেষ্ঠ’, ‘আমার চেয়ে বড় কেউ নেই’, ‘আমার দেশটাই সেরা দেশ’ ইত্যাদি বলে বাস্তব থেকে সরে থাকতে হয়।
এ কথা তো ঠিক, একটি রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জন করা হয়েছে আমাদের এই দেশ এবং সঙ্গে এ কথাও তো সত্য, দুর্নীতিবাজ দেশের তালিকায় আমাদের দেশের অবস্থান শুধু লজ্জাই দেয় আমাদের। এ কথা তো ঠিক, একুশের মতো উজ্জ্বল একটি ঠিকানা আমাদের আছে, যা চিরকাল ভাষার দাবির উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে থাকবে, আবার এ কথাও তো ঠিক, সেই একুশের অঙ্গীকারগুলো রক্ষা করার ব্যাপারে আমাদের রয়েছে সীমাহীন ব্যর্থতা। এটাকে শুধু ‘ব্যর্থতা’ বলা হলে নিজেদের অপরাধকে ঢেকে রাখা সহজ হয়। আসলে এই অপরাধকে ‘অপরাধ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় না বলেই লোকদেখানো মায়াকান্নায় আচ্ছন্ন থেকে শান্তি পাই আমরা।
আমরা আমাদের যে কথাগুলো দিয়েছিলাম বায়ান্নয়, যে কথাগুলো দিয়েছিলাম একাত্তরে, সে কথাগুলো একবার মনে করে দেখার চেষ্টা করুন। তার কোন কোন অঙ্গীকার পূরণ করেছি, ভেবে দেখার জন্য নিজেকে একটু সময় দিন। আমি নিশ্চিত, ঠিকভাবে নিজেকে প্রশ্নগুলো করলে লজ্জায় মাথাটা নত হয়ে যাবে।
জাহীদ রেজা নূর, উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
এ কথা তো ঠিক, একুশের মতো উজ্জ্বল একটি ঠিকানা আমাদের আছে, যা চিরকাল ভাষার দাবির উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে থাকবে, আবার এ কথাও তো ঠিক, সেই একুশের অঙ্গীকারগুলো রক্ষা করার ব্যাপারে আমাদের রয়েছে সীমাহীন ব্যর্থতা।
ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ তো চলে গেছে, এবার সম্ভবত একটু ঘুরে বসা যায়। আর একটা দিন পার হলেই বাঙালির টান টান আবেগ শিথিল হয়ে পড়বে। আবার কিছুকালের জন্য একুশকে ভুলে থাকা যাবে। মার্চ মাসে আছে স্বাধীনতার আমেজ। এবার লেখালেখি, সেমিনার, বক্তৃতা, টক শো হবে স্বাধীনতাময়। আমাদের এই হুজুগে স্বভাব যথেষ্ট পোক্ত হয়ে আছে।
সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচলন নিয়ে গলার রগ ফুলিয়ে বক্তৃতাটা এখন বন্ধ রাখতে হবে পুরো এক বছর। সামনের ১১ মাসে উচ্চ আদালতে একটার পর একটা ইংরেজিতে লেখা রায় নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য হবে না। উচ্চ আদালতের ভাষা বাংলা করা হলে বাদী-বিবাদী দুই পক্ষই সহজে বুঝতে পারত। এটা যে আমাদের সবার জন্য খুবই জরুরি একটি বিষয় এবং তা বাস্তবে পরিণত করতে হলে কিছুটা মেহনত করা দরকার, কিন্তু সেটা পরিশ্রমসাপেক্ষ বলে ইংরেজির সেই চলে আসা ধারাটাই ধরে রাখা হয়।
আর করপোরেট অফিস সংস্কৃতি? বাংলাটা একটু বাঁকিয়ে না বলতে পারলে, ‘আমরা’কে ‘আমড়া’ না বললে, ‘গরম’কে ‘গড়ম’ বলা না হলে, ‘কঠিন’কে ‘ডিফিকাল্ট’ না বললে সেই সংস্কৃতির সঙ্গে নিজেকে মিলিয়ে নেওয়া কঠিন। তাতে হালে পানি পাওয়াও কঠিন। যতই বাংলা সংস্কৃতির প্রতি মায়াকান্না করা হোক না কেন, আমাদের করপোরেট জগতে ইংরেজি জানা মানুষ ছাড়া গতি নেই, সেটা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। সেখানে উৎসবের আদলে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ‘সেলিব্রেট’ করা হয় বটে, কিন্তু সেটাও একটা ‘রিচুয়াল’ পালন করার মতো।
দুই. এবার একটি কঠিন প্রশ্ন করতে হয়। গরিব মানুষ বেশি বলে এখনো যাচাই করে দেখার সুযোগ হয়নি, এ দেশের কত ভাগ মানুষ তাঁর সততার কারণেই সৎ থাকতে পারেন, আর কত ভাগ মানুষ অসৎ কাজের সুযোগ পান না বলে সৎ থাকেন। অভিজ্ঞতা বলে, অর্থ সমাগমের সঙ্গে চরিত্র বদল আমাদের একটা স্বাভাবিক প্রবণতা।
আমারই এক কনিষ্ঠ সহকর্মী হঠাৎ একটি পত্রিকার সম্পাদক হয়ে যাওয়ার পর তাঁর ব্যবহারে যে পরিবর্তনগুলো এসেছিল, তা ছিল বিস্ময়কর। এটা শুধু টং চায়ের দোকান থেকে ‘বারিস্তা’ রেস্তোরাঁয় উত্তরণ দিয়ে বোঝানো যাবে না। নিজেকে অভিজাত ক্লাবের সদস্য হিসেবে ভাবতে হলে কোন কোন জিনিস জীবন থেকে ছাঁটাই করতে হবে, সেটা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শিখে নিয়েছেন তিনি। আর এ রকম হলে নিজের স্বভাবের বাইরে গিয়ে নিজেকে খুঁজে নিতে হয়। একজন তুখোড় কমিউনিস্ট নেতা খবরের কাগজের সম্পাদক হয়ে কীভাবে অভিজাত বুর্জোয়ায় পরিণত হয়েছেন, সে খবর অনেকেই রাখেন।
এই যে পরিবর্তন, তার একটা বড় কারণ হলো, যে শিক্ষায় শিক্ষিত হয় মানুষ, তা আসলে জোলো, জীবনবিমুখ। বস্তা পচা সিলেবাসে যে শিক্ষা রপ্ত হয়, বাস্তব জীবনে তা কোনো কাজে লাগে না। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে পরীক্ষার ফলাফল চাকরি পাওয়ার যোগ্যতা হয় না। পরিচিত বা স্বজন হলেই সে হয়ে উঠতে পারে যোগ্য মানুষ। আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোয় এই ‘চেনাজানার’ ভিড় একটু বেশি। তাই একুশে ফেব্রুয়ারির রক্তদানের মর্ম বোঝার ক্ষমতা আমাদের নেই, আমরা তা অর্জন করে উঠতে পারি না। আমরা যে আদর্শ জীবনের কথা ভাবি আর যে জীবনযাপন করি, তার মধ্যে থাকে দুস্তর ব্যবধান।
চাকরির সঙ্গে উপরি পাওয়ার একটা আত্মীয়তাবোধ আমাদের আচ্ছন্ন করে কি না, সে কথা আমরা কজন ভেবেছি? আমাদের দেশে একজন সৎ মানুষকে সফল বলা হয় না আর, একজন দরিদ্র শিক্ষক আর শ্রদ্ধার যোগ্য মানুষ নন। একজন দুর্নীতিবাজ ঠিকাদার কিংবা অন্যের জমি দখল করা শিল্পপতি টাকার জোরে হয়ে ওঠেন সফল মানুষ। ঘুষ আর দুর্নীতির বাইরে তাঁরা নন।
তিন. নিম্নমধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত এবং উচ্চমধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীরা এখন কোন স্বপ্ন দেখে? ভড়ং বাদ দিয়ে বললে বলতে হবে, আইইএলটিএস, জিম্যাট ধরনের পরীক্ষা দিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিদেশে গিয়ে লেখাপড়া করার ব্যবস্থা করতে চায় তারা। এই চিন্তা যৌক্তিক কি না, সে প্রসঙ্গে আসুন। আমাদের উচ্চ শিক্ষায়তন থেকে পাস করার পর যে জীবনের মুখোমুখি হতে হয়, তা কাঙ্ক্ষিত নয়। কঠোর পরিশ্রমের পড়াশোনা ভালো কোনো চাকরির নিশ্চয়তা দেয় না। সবাই তো আত্মীয়তা সূত্রে ধনবান ব্যক্তির শ্যালক বা দুলাভাই নন যে চাইলেই তাঁর স্বপ্ন পূরণ করা চাকরি হাতিয়ে নেবেন। ব্যবসার বাজারও টিকে থাকার নিশ্চয়তা দেয় না। আমার এক বন্ধু বলছিলেন গ্রামে জমিজমার কথা। যদি আপনি সরলভাবে জানতে চান, কেমন আছে গ্রাম, তাহলে উত্তরে যে কথাগুলো শুনবেন, তা সুখকর। কিন্তু সেখানে জমিজমা বিক্রি-সংক্রান্ত আলাপ করে দেখুন তো! তখন জমির মালিকের চেয়ে অনেক বেশি আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে আসবে দলীয় লোকজন। তারাই রফা করবে জমির দাম, তারাই রফা করবে মালিক কত টাকা পাবেন আর তাদের ভাগে কত পড়বে। সবখানেই যে দুষ্টচক্র গড়ে উঠেছে, তা কখনোই একটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশের ইঙ্গিত দেয় না।
পদে পদে নিগ্রহ যখন আপনাকে চেপে ধরে, তখন আপনি নিজের সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে যদি শঙ্কিত হয়ে পড়েন, তাহলে কি আপনাকে দোষ দেওয়া যাবে?
চার. উচ্চাকাঙ্ক্ষা কোনো খারাপ কিছু নয়। কিন্তু মানবতাহীন উচ্চাকাঙ্ক্ষা ভয়ংকর ব্যাপার। অতীত ভুলে থাকতে বলি না, অতীতই ভবিষ্যতের পথ গড়ে দেয়। সেই নাড়ির টান বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে আত্মপরিচয় থাকে না। কিন্তু জীবনটা অতীতসর্বস্ব হয়ে গেলে তার কোনো ভবিষ্যৎ থাকে না। তখন অতীত গুণকীর্তনেই সময় কেটে যায়। তখন যে স্থবিরতার সৃষ্টি হয়, তাকে ভুলে থাকার জন্য ‘আমিই শ্রেষ্ঠ’, ‘আমার চেয়ে বড় কেউ নেই’, ‘আমার দেশটাই সেরা দেশ’ ইত্যাদি বলে বাস্তব থেকে সরে থাকতে হয়।
এ কথা তো ঠিক, একটি রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অর্জন করা হয়েছে আমাদের এই দেশ এবং সঙ্গে এ কথাও তো সত্য, দুর্নীতিবাজ দেশের তালিকায় আমাদের দেশের অবস্থান শুধু লজ্জাই দেয় আমাদের। এ কথা তো ঠিক, একুশের মতো উজ্জ্বল একটি ঠিকানা আমাদের আছে, যা চিরকাল ভাষার দাবির উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে থাকবে, আবার এ কথাও তো ঠিক, সেই একুশের অঙ্গীকারগুলো রক্ষা করার ব্যাপারে আমাদের রয়েছে সীমাহীন ব্যর্থতা। এটাকে শুধু ‘ব্যর্থতা’ বলা হলে নিজেদের অপরাধকে ঢেকে রাখা সহজ হয়। আসলে এই অপরাধকে ‘অপরাধ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় না বলেই লোকদেখানো মায়াকান্নায় আচ্ছন্ন থেকে শান্তি পাই আমরা।
আমরা আমাদের যে কথাগুলো দিয়েছিলাম বায়ান্নয়, যে কথাগুলো দিয়েছিলাম একাত্তরে, সে কথাগুলো একবার মনে করে দেখার চেষ্টা করুন। তার কোন কোন অঙ্গীকার পূরণ করেছি, ভেবে দেখার জন্য নিজেকে একটু সময় দিন। আমি নিশ্চিত, ঠিকভাবে নিজেকে প্রশ্নগুলো করলে লজ্জায় মাথাটা নত হয়ে যাবে।
জাহীদ রেজা নূর, উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি বেড়েই চলছে। এ কারণে চালক ও যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছে এই সড়ক। ডাকাতির শিকার বেশি হচ্ছেন প্রবাসফেরত লোকজন। ডাকাতেরা অস্ত্র ঠেকিয়ে লুট করে নিচ্ছে সর্বস্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও ঘটছে ডাকাতির ঘটনা।
০২ মার্চ ২০২৫বিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
১৬ জানুয়ারি ২০২৫গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪