মামুনুর রশীদ
রুচির দুর্ভিক্ষের প্রশ্নে শিল্পী সমিতির সম্মেলনে আমার বক্তব্য একটি দৈনিক পত্রিকায় পুনরুল্লেখকে কেন্দ্র করে কয়েক দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একেবারে তোলপাড় চলছে। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন আজ থেকে প্রায় ৫০ বছর আগে বলেছিলেন, ‘দেশে আজ রুচির দুর্ভিক্ষ চলছে। তাই দুর্ভিক্ষ থাকলেও দুর্ভিক্ষের ছবি আঁকতে পারছি না।’ কথাটি আমি বলার পর এ নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা হয়নি। কিন্তু ওই দৈনিকে বিষয়টার কিছু বিশ্লেষণ দেওয়ার পরেই সামাজিক মাধ্যমে ঝড় ওঠে। অধিকাংশ পাঠক সমর্থন করে পোস্ট দিতে থাকেন, আবার বেশ কিছু পাঠক ওই পোস্টের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করতে থাকেন।
বিষোদ্গারের ভাষা কখনো যুক্তিহীন এবং আক্রমণ ব্যক্তিগত। ওখানে বিতর্কের কেন্দ্রস্থলে দাঁড়িয়ে গেল হিরো আলম। রুচির দুর্ভিক্ষ কি একাই হিরো আলম ঘটিয়েছেন? নাকি বিপুলসংখ্যক লোকই বিষয়টির মূলে রয়েছে?
বলা হয়েছিল, দেশে এখন রুচির দুর্ভিক্ষ চলছে এবং তার মধ্যে হিরো আলমের উত্থান হয়েছে। তাঁর সমর্থকেরা অত্যন্ত জোর দিয়ে তাঁর শ্রেণি অবস্থানকে টেনেছেন—তিনি গরিব, সে কারণেই তাঁর কথা বলা হয়েছে। ধনাঢ্য মাহফুজুর রহমান ও অনন্ত জলিলকে নিয়ে কেন লেখা হলো না? কেউ কেউ অত্যন্ত আপত্তিকরভাবে আমাকে নিয়ে মন্তব্য করতে ছাড়েননি। একজন সাবেক চিত্র পরিচালক বলেছেন, আমি নাকি আলোচনায় আসার জন্য এসব করছি। আমার আলোচনায় আসতে হবে কেন? আলোচনায় এলে আমার লাভই বা কী হবে?
আমি যে শিল্পে কাজ করি, সেখানে কোনো মারমার-কাটকাট নেই। ক্রিকেট, ফুটবল বা সিনেমার মতো লাখ লাখ দর্শক নিয়ে আমাদের কারবার নয়; যা কিছু করে থাকি মঞ্চে, টেলিভিশনে বা সিনেমায় তা একধরনের মননশীল উপস্থিতি; পরিশ্রম করে একটা কিছু দাঁড় করানো। এ ধরনের আলোচনা তৈরি করা যে আমার উদ্দেশ্য নয়, তা আমার সুদীর্ঘ ৫০ বছরের কর্মকাণ্ড থেকেই পরিষ্কার। তবে সম্মান পেয়েছি প্রচুর। পুরস্কার ও সম্মাননা যা পাওয়ার তা পেয়েছি। শুধু আমি নই, আমার যাঁরা সহকর্মী, ছাত্র, তাঁরাও ঢের পেয়েছেন। কেউ কেউ আমার চেয়েও অনেক বেশি পেয়েছেন। এসব ব্যাপারে কোনো ঈর্ষা কিংবা অহংকার কোথাও প্রকাশ করাকে আমি চিরকাল অন্যায় বলে মনে করেছি।
যাঁরা সামাজিক মাধ্যমে তাঁদের মুক্তচিন্তাকে প্রকাশ করেছেন, তাঁদের আক্রমণের ভাষা এত স্থূল যে বোঝা যায় তাঁরা পুরো প্রতিবেদনটি পড়েননি। যুক্তিগুলো বোঝার কোনো চেষ্টাও করেননি। আমি অনেক ধরনের বিষয়কে এনেছি, যা খুবই সম্পর্কিত। শিক্ষা, রাজনীতি এসব বিষয় তাঁদের পোস্টে আসেনি। আমরা কি একটি অত্যন্ত সুস্থ রাজনীতির মধ্যে দিনযাপন করছি? একটা যুগোপযোগী ও মননশীল শিক্ষাব্যবস্থায় রয়েছি? প্রতিদিন এসব বিষয়ে যেসব সংবাদ গণমাধ্যমে ছাপা হয় তা কি মনোযোগ দিয়ে পড়ি? এত ধরনের লুণ্ঠন, অর্থ পাচার, ধর্ষণের ঘটনা প্রতিদিন ঘটছে, সেগুলোর বিশ্লেষণ করলে তার মধ্যে মিডিয়ার যে দায়িত্বহীনতা, তা কি প্রকাশ পায় না? আর এই দায়িত্বহীনতা কারা করছে? একা হিরো আলম করছেন কি? এখানে তিনি একটা উদাহরণ মাত্র। আর এই উদাহরণ যথার্থই। যাঁরা তাঁর পক্ষে দাঁড়িয়েছেন এবং সুরুচির পক্ষে সাফাই গাইছেন তাঁরা অনুগ্রহ করে তাঁর কাজগুলো কি কখনো দেখেছেন? আমি নিশ্চিত, তাঁরা দেখেননি। কারণ অনেকেই আমাকে বলেছেন, ‘ওর এগুলো আমরা দেখিও না, এই সব আবর্জনা নিয়ে কথাও বলি না।’ কথাটি একেবারেই ঠিক না। যাঁরা সচেতন এবং উদ্বিগ্ন নাগরিক, তাঁদের তো এসব দেখতেই হবে, আলোচনা করতেই হবে। কারণ, দেশটার উন্নতি ও অবনতির দায় তো নাগরিকদের নিতেই হবে।
একদা দেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে অনুষ্ঠান, বিশেষ করে নাটকগুলো দেখে তারপর প্রচার করা হতো। বাংলাদেশ টেলিভিশন তো রিভিউ করে কখনো কিছু নাটকের বা অনুষ্ঠানের প্রচারও বন্ধ করে দিয়েছে। প্রাইভেট চ্যানেলেও কেউ কেউ বেশ ভালো করেই প্রিভিউ করত। কিন্তু প্রাইভেট চ্যানেলে ব্যবসা একটা বড় ব্যাপার। সংবাদমাধ্যমে প্রিন্ট মিডিয়ায়ও এই সংকট দেখা দিল। তাই চ্যানেলগুলোর কর্তৃত্ব চলে গেল বিপণনের হাতে। বিপণন চাইছে বিনোদন। অনুষ্ঠানের কর্মীরা অসহায়। আবার এর সঙ্গে যুক্ত আছে বিজ্ঞাপনদাতারা। তারা চায় টিআরপি (টেলিভিশন রেটিং পয়েন্ট)। সবটা মিলিয়ে একটা অতি বিনোদনের মহামারিতে ঢুকে গেল চ্যানেল।
এর মধ্যে প্রযুক্তির আশীর্বাদে এসে গেল ইউটিউব। সবার জন্য অবারিত একটি মাধ্যম, যার কোনো জবাবদিহি, যুক্তি বা নিয়ন্ত্রণ নেই। এটা খুবই ভালো কথা। আমরা তো সত্যিকার অর্থেই কোনো নিয়ন্ত্রণ চাই না। অবাধ তথ্য সম্প্রচারের সুযোগ তো আমরাই চাইছিলাম। এর মধ্যেই ঢুকে পড়ল লক্ষ-কোটি নির্মাতা। দেখা গেল দর্শক অনুষ্ঠান দেখার বদলে খেতে শুরু করল! বেশি খেলে যেমন বদহজম হয়, সেটি হওয়া অস্বাভাবিক নয়।
একধরনের দর্শকশ্রেণি তৈরি হতে সমাজের কিছু উপাদান সাহায্যের হাত নিয়ে এগিয়ে এল। তাদের মধ্যে শিক্ষা, রাজনীতির প্রতিনিধিরাও থাকলেন। থাকলেন পুঁজিপতিরা। ইউটিউব আবার টাকাও দেয়। তাই লগ্নিকারকের অভাব হলো না। সামাজিক প্রতিরোধের কোনো বালাই নেই। তাই বাঁধভাঙা সেই জোয়ারে ভেসে গেল মূল্যবোধ, সুশিক্ষা, বাংলার হাজার বছরের সংস্কৃতি।
এত বড় একটা দক্ষযজ্ঞ কি হিরো আলমের পক্ষে করা সম্ভব? সঙ্গে লাখ লাখ মানুষ জড়িত। রাজনৈতিক ও সামাজিক দায়িত্বকে এড়িয়ে কোনো কথা আমি বলিনি। হিরো আলম যা করেন তা তো তিনি একাই করেন না। অনেক তথাকথিত শিক্ষিত মানুষেরাও করেন।
আমাদের চলচ্চিত্রও একসময় সেদিকে চলে গিয়েছিল। ভালো ভালো পরিচালক, অভিনেতা, অভিনেত্রী, টেকনিশিয়ান বসে গিয়েছিলেন। সেই সময়ে দর্শকই সেসবকে বাতিল করে দিয়েছে। কিন্তু আজকের দিনে কোটি কোটি সিনেমা হল যখন মানুষের হাতে হাতে, তখন এই সংকট থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন। কিছু কিছু চ্যানেলও সেদিকে যাচ্ছে।
সেই সঙ্গে সমাজের অভিভাবকত্বেও পরিবর্তন এসেছে। জ্ঞানী, যুক্তিবাদী মানুষ আর সমাজের নেতৃত্বে থাকছেন না। লুটেরা পুঁজি, পেশিশক্তি এবং অবৈধ অর্থের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রাজনৈতিক শক্তি। এই পরিস্থিতিতে সমাজের রুচির দুর্ভিক্ষ, চিন্তার সংকট, সঠিক মুক্তচিন্তার অভাবই প্রকট হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যেকোনো বিষয়ই বিতর্কের ঊর্ধ্বে নয়। আমার বক্তব্য নিয়ে এত মানুষের অংশগ্রহণ তো আনন্দের। কিন্তু যদি তা রুচির দুর্ভিক্ষকে উৎসাহিত করে, তাহলে তা দুর্ভাগ্য। যেসব যুক্তিহীন তর্কবিতর্ক সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে তাঁদের অনুরোধ করব, দয়া করে একটু খতিয়ে দেখুন আমরা কোথায় যাচ্ছি। খোদ হিরো আলম যে স্ট্যাটাস দিয়েছেন নিজে উপস্থিত হয়ে, তা-ও দেখুন। ওটা নিয়ে আমি আর কিছু বলব না। ছেড়ে দেব মানুষের হাতে। কারণ, আমি মানুষের মহত্তম সম্ভাবনায় বিশ্বাস করি।
মামুনুর রশীদ, নাট্যব্যক্তিত্ব
রুচির দুর্ভিক্ষের প্রশ্নে শিল্পী সমিতির সম্মেলনে আমার বক্তব্য একটি দৈনিক পত্রিকায় পুনরুল্লেখকে কেন্দ্র করে কয়েক দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একেবারে তোলপাড় চলছে। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন আজ থেকে প্রায় ৫০ বছর আগে বলেছিলেন, ‘দেশে আজ রুচির দুর্ভিক্ষ চলছে। তাই দুর্ভিক্ষ থাকলেও দুর্ভিক্ষের ছবি আঁকতে পারছি না।’ কথাটি আমি বলার পর এ নিয়ে তেমন কোনো আলোচনা হয়নি। কিন্তু ওই দৈনিকে বিষয়টার কিছু বিশ্লেষণ দেওয়ার পরেই সামাজিক মাধ্যমে ঝড় ওঠে। অধিকাংশ পাঠক সমর্থন করে পোস্ট দিতে থাকেন, আবার বেশ কিছু পাঠক ওই পোস্টের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করতে থাকেন।
বিষোদ্গারের ভাষা কখনো যুক্তিহীন এবং আক্রমণ ব্যক্তিগত। ওখানে বিতর্কের কেন্দ্রস্থলে দাঁড়িয়ে গেল হিরো আলম। রুচির দুর্ভিক্ষ কি একাই হিরো আলম ঘটিয়েছেন? নাকি বিপুলসংখ্যক লোকই বিষয়টির মূলে রয়েছে?
বলা হয়েছিল, দেশে এখন রুচির দুর্ভিক্ষ চলছে এবং তার মধ্যে হিরো আলমের উত্থান হয়েছে। তাঁর সমর্থকেরা অত্যন্ত জোর দিয়ে তাঁর শ্রেণি অবস্থানকে টেনেছেন—তিনি গরিব, সে কারণেই তাঁর কথা বলা হয়েছে। ধনাঢ্য মাহফুজুর রহমান ও অনন্ত জলিলকে নিয়ে কেন লেখা হলো না? কেউ কেউ অত্যন্ত আপত্তিকরভাবে আমাকে নিয়ে মন্তব্য করতে ছাড়েননি। একজন সাবেক চিত্র পরিচালক বলেছেন, আমি নাকি আলোচনায় আসার জন্য এসব করছি। আমার আলোচনায় আসতে হবে কেন? আলোচনায় এলে আমার লাভই বা কী হবে?
আমি যে শিল্পে কাজ করি, সেখানে কোনো মারমার-কাটকাট নেই। ক্রিকেট, ফুটবল বা সিনেমার মতো লাখ লাখ দর্শক নিয়ে আমাদের কারবার নয়; যা কিছু করে থাকি মঞ্চে, টেলিভিশনে বা সিনেমায় তা একধরনের মননশীল উপস্থিতি; পরিশ্রম করে একটা কিছু দাঁড় করানো। এ ধরনের আলোচনা তৈরি করা যে আমার উদ্দেশ্য নয়, তা আমার সুদীর্ঘ ৫০ বছরের কর্মকাণ্ড থেকেই পরিষ্কার। তবে সম্মান পেয়েছি প্রচুর। পুরস্কার ও সম্মাননা যা পাওয়ার তা পেয়েছি। শুধু আমি নই, আমার যাঁরা সহকর্মী, ছাত্র, তাঁরাও ঢের পেয়েছেন। কেউ কেউ আমার চেয়েও অনেক বেশি পেয়েছেন। এসব ব্যাপারে কোনো ঈর্ষা কিংবা অহংকার কোথাও প্রকাশ করাকে আমি চিরকাল অন্যায় বলে মনে করেছি।
যাঁরা সামাজিক মাধ্যমে তাঁদের মুক্তচিন্তাকে প্রকাশ করেছেন, তাঁদের আক্রমণের ভাষা এত স্থূল যে বোঝা যায় তাঁরা পুরো প্রতিবেদনটি পড়েননি। যুক্তিগুলো বোঝার কোনো চেষ্টাও করেননি। আমি অনেক ধরনের বিষয়কে এনেছি, যা খুবই সম্পর্কিত। শিক্ষা, রাজনীতি এসব বিষয় তাঁদের পোস্টে আসেনি। আমরা কি একটি অত্যন্ত সুস্থ রাজনীতির মধ্যে দিনযাপন করছি? একটা যুগোপযোগী ও মননশীল শিক্ষাব্যবস্থায় রয়েছি? প্রতিদিন এসব বিষয়ে যেসব সংবাদ গণমাধ্যমে ছাপা হয় তা কি মনোযোগ দিয়ে পড়ি? এত ধরনের লুণ্ঠন, অর্থ পাচার, ধর্ষণের ঘটনা প্রতিদিন ঘটছে, সেগুলোর বিশ্লেষণ করলে তার মধ্যে মিডিয়ার যে দায়িত্বহীনতা, তা কি প্রকাশ পায় না? আর এই দায়িত্বহীনতা কারা করছে? একা হিরো আলম করছেন কি? এখানে তিনি একটা উদাহরণ মাত্র। আর এই উদাহরণ যথার্থই। যাঁরা তাঁর পক্ষে দাঁড়িয়েছেন এবং সুরুচির পক্ষে সাফাই গাইছেন তাঁরা অনুগ্রহ করে তাঁর কাজগুলো কি কখনো দেখেছেন? আমি নিশ্চিত, তাঁরা দেখেননি। কারণ অনেকেই আমাকে বলেছেন, ‘ওর এগুলো আমরা দেখিও না, এই সব আবর্জনা নিয়ে কথাও বলি না।’ কথাটি একেবারেই ঠিক না। যাঁরা সচেতন এবং উদ্বিগ্ন নাগরিক, তাঁদের তো এসব দেখতেই হবে, আলোচনা করতেই হবে। কারণ, দেশটার উন্নতি ও অবনতির দায় তো নাগরিকদের নিতেই হবে।
একদা দেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে অনুষ্ঠান, বিশেষ করে নাটকগুলো দেখে তারপর প্রচার করা হতো। বাংলাদেশ টেলিভিশন তো রিভিউ করে কখনো কিছু নাটকের বা অনুষ্ঠানের প্রচারও বন্ধ করে দিয়েছে। প্রাইভেট চ্যানেলেও কেউ কেউ বেশ ভালো করেই প্রিভিউ করত। কিন্তু প্রাইভেট চ্যানেলে ব্যবসা একটা বড় ব্যাপার। সংবাদমাধ্যমে প্রিন্ট মিডিয়ায়ও এই সংকট দেখা দিল। তাই চ্যানেলগুলোর কর্তৃত্ব চলে গেল বিপণনের হাতে। বিপণন চাইছে বিনোদন। অনুষ্ঠানের কর্মীরা অসহায়। আবার এর সঙ্গে যুক্ত আছে বিজ্ঞাপনদাতারা। তারা চায় টিআরপি (টেলিভিশন রেটিং পয়েন্ট)। সবটা মিলিয়ে একটা অতি বিনোদনের মহামারিতে ঢুকে গেল চ্যানেল।
এর মধ্যে প্রযুক্তির আশীর্বাদে এসে গেল ইউটিউব। সবার জন্য অবারিত একটি মাধ্যম, যার কোনো জবাবদিহি, যুক্তি বা নিয়ন্ত্রণ নেই। এটা খুবই ভালো কথা। আমরা তো সত্যিকার অর্থেই কোনো নিয়ন্ত্রণ চাই না। অবাধ তথ্য সম্প্রচারের সুযোগ তো আমরাই চাইছিলাম। এর মধ্যেই ঢুকে পড়ল লক্ষ-কোটি নির্মাতা। দেখা গেল দর্শক অনুষ্ঠান দেখার বদলে খেতে শুরু করল! বেশি খেলে যেমন বদহজম হয়, সেটি হওয়া অস্বাভাবিক নয়।
একধরনের দর্শকশ্রেণি তৈরি হতে সমাজের কিছু উপাদান সাহায্যের হাত নিয়ে এগিয়ে এল। তাদের মধ্যে শিক্ষা, রাজনীতির প্রতিনিধিরাও থাকলেন। থাকলেন পুঁজিপতিরা। ইউটিউব আবার টাকাও দেয়। তাই লগ্নিকারকের অভাব হলো না। সামাজিক প্রতিরোধের কোনো বালাই নেই। তাই বাঁধভাঙা সেই জোয়ারে ভেসে গেল মূল্যবোধ, সুশিক্ষা, বাংলার হাজার বছরের সংস্কৃতি।
এত বড় একটা দক্ষযজ্ঞ কি হিরো আলমের পক্ষে করা সম্ভব? সঙ্গে লাখ লাখ মানুষ জড়িত। রাজনৈতিক ও সামাজিক দায়িত্বকে এড়িয়ে কোনো কথা আমি বলিনি। হিরো আলম যা করেন তা তো তিনি একাই করেন না। অনেক তথাকথিত শিক্ষিত মানুষেরাও করেন।
আমাদের চলচ্চিত্রও একসময় সেদিকে চলে গিয়েছিল। ভালো ভালো পরিচালক, অভিনেতা, অভিনেত্রী, টেকনিশিয়ান বসে গিয়েছিলেন। সেই সময়ে দর্শকই সেসবকে বাতিল করে দিয়েছে। কিন্তু আজকের দিনে কোটি কোটি সিনেমা হল যখন মানুষের হাতে হাতে, তখন এই সংকট থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন। কিছু কিছু চ্যানেলও সেদিকে যাচ্ছে।
সেই সঙ্গে সমাজের অভিভাবকত্বেও পরিবর্তন এসেছে। জ্ঞানী, যুক্তিবাদী মানুষ আর সমাজের নেতৃত্বে থাকছেন না। লুটেরা পুঁজি, পেশিশক্তি এবং অবৈধ অর্থের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রাজনৈতিক শক্তি। এই পরিস্থিতিতে সমাজের রুচির দুর্ভিক্ষ, চিন্তার সংকট, সঠিক মুক্তচিন্তার অভাবই প্রকট হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যেকোনো বিষয়ই বিতর্কের ঊর্ধ্বে নয়। আমার বক্তব্য নিয়ে এত মানুষের অংশগ্রহণ তো আনন্দের। কিন্তু যদি তা রুচির দুর্ভিক্ষকে উৎসাহিত করে, তাহলে তা দুর্ভাগ্য। যেসব যুক্তিহীন তর্কবিতর্ক সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে তাঁদের অনুরোধ করব, দয়া করে একটু খতিয়ে দেখুন আমরা কোথায় যাচ্ছি। খোদ হিরো আলম যে স্ট্যাটাস দিয়েছেন নিজে উপস্থিত হয়ে, তা-ও দেখুন। ওটা নিয়ে আমি আর কিছু বলব না। ছেড়ে দেব মানুষের হাতে। কারণ, আমি মানুষের মহত্তম সম্ভাবনায় বিশ্বাস করি।
মামুনুর রশীদ, নাট্যব্যক্তিত্ব
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি বেড়েই চলছে। এ কারণে চালক ও যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছে এই সড়ক। ডাকাতির শিকার বেশি হচ্ছেন প্রবাসফেরত লোকজন। ডাকাতেরা অস্ত্র ঠেকিয়ে লুট করে নিচ্ছে সর্বস্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও ঘটছে ডাকাতির ঘটনা।
০২ মার্চ ২০২৫বিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
১৬ জানুয়ারি ২০২৫গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪