জাহীদ রেজা নূর
আমাদের অলক্ষ্যেই চারদিকের সবকিছু যে দ্রুত পরিবর্তিত হয়ে গেছে এবং যাচ্ছে, সেটা আমরা এখনো খুব একটা বুঝে উঠতে পারছি না। কত দ্রুত এক একটা ইস্যু আসছে, তা নিয়ে মাঠ গরম হচ্ছে, তারপর নতুন কোনো ইস্যু এসে নিয়ে নিচ্ছে তার স্থান, সেটা আমরা ঠিকভাবে ধরতে পারছি কি? কখনো কোনো মতলবি কারবার দিয়ে মানুষকে ভোলানো হচ্ছে, কখনো সরল কোনো ঘটনাকে আখ্যা দেওয়া হচ্ছে মতলবি কারবার বলে। মূলত যে সময়টা আমরা পার করছি, তা প্রচণ্ড রকম অস্থির একটা সময়।
রাজনীতিটা যে আদর্শস্থানীয় মানুষের হাত থেকে টাকাওয়ালা লোকের হাতে চলে গেছে, সেটা আমরা সাদা চোখেই দেখতে পাই। সংসদে আইনজীবীর সংখ্যা কমতে কমতে তলানিতে এসে ঠেকেছে। সে জায়গা ভরাট করার চেষ্টা করছেন ধনপতিরা এবং সেটা ঘটছে রাজনৈতিক দলের নীতিনির্ধারকদের আশীর্বাদেই। এখন এমন এক অবস্থা দাঁড়িয়েছে, যাঁরা নির্বাচনে মনোনয়ন পান, তাঁদের মধ্যে খুব কমসংখ্যক প্রার্থীই আছেন, যাঁরা আদর্শকে পুঁজি করে নির্বাচনী বৈতরণি পার হয়ে আসতে পারবেন। টাকা আর পেশিশক্তির মিলনে যে রাজনীতি শুরু হয়েছে, তা আমাদের কোথায় নিয়ে যাবে, কেউ জানে না।
যে যার শ্রেণির স্বার্থ দেখবে, এটা নতুন কোনো কথা নয়। ফলে সংসদে শিল্পপতিদের সংখ্যা বাড়লে তাতে ব্যবসা-বাণিজ্যের রমরমা হবে বটে, কিন্তু তা হয়ে ওঠে সাধারণ ভোটারের সঙ্গে সম্পর্কহীন কাণ্ড-কারখানা। ফলে সিন্ডিকেট যদি গড়ে ওঠে, মালিক সমিতি যদি ধর্মঘট করে বসে, কিংবা ধর্মঘটে যান শ্রমিকেরা, তাহলে দেখা যাবে এই ধনী মানুষেরা কিংবা তাদের পোষ্যপুত্ররা সাধারণ মানুষের বিপরীতে
অবস্থান নিচ্ছে। কেন? কারণ আর কিছু নয়। তারাই মালিক, তারাই শ্রমিকনেতা, তারাই চালাচ্ছে সিন্ডিকেট।
রাজনীতির কাছে হতাশ হয়ে পড়ছে মানুষ এবং হয়ে পড়ছে অসহায়। বুঝতে পারছে, আসলে জনগণের সেবার জন্য যে রাজনীতি, তার এপিটাফ প্রায় লেখা হয়ে গেছে। যে গণতন্ত্রের কথা বলা হচ্ছে উচ্চ স্বরে, সেই গণতান্ত্রিক আচরণের বড্ড অভাব এই রাজনীতিতে। হ্যাঁ, শুধু সরকারি দলের কথা বলা হচ্ছে না, সামগ্রিকভাবেই গণতন্ত্র আজ যেকোনো দলের আদর্শের জায়গা থেকে নির্বাসিত।
সরকারি কিংবা বিরোধী দলের উচ্চপর্যায়ের নেতাদের কথাবার্তা লক্ষ করুন। মাঝে মাঝেই কৌতুকের খোরাক তাতে পেয়ে যাবেন। একসময় মনে হবে, আমরা বুঝি ‘যত দোষ নন্দ ঘোষ’কেই রাজনৈতিক জীবনের অন্যতম আদর্শে পরিণত করেছি। উদাহরণ? ঢের আছে। এই তো, এই শনিবারের পত্রিকা থেকে একই রকম দুটো উদাহরণ দিচ্ছি। নাটোর উপশহর মাঠে জেলা বিএনপির তৈরি করা মঞ্চ ভাঙচুর করা হয়েছে এবং তাতে আগুন দেওয়া হয়েছে। অভিযোগের তির ছুটে গেছে আওয়ামী লীগের দিকে। আওয়ামী লীগ তৎক্ষণাৎ বলে দিয়েছে, বিএনপি নিজেরাই নিজেদের মঞ্চ ভাঙচুর করেছে। কে বলেছেন কথাটা? বলেছেন আওয়ামী লীগের একজন দায়িত্বশীল নেতা। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তিনি। নাম শরিফুল ইসলাম রমজান।
আপনার নিশ্চয়ই হাসি পেল খবরটা পড়ে?
আপনি নিশ্চয়ই নিজেই বুঝে নিয়েছেন, কী ঘটেছিল সেখানে। তবে পুরো হাসি হাসবেন না। বিপরীত দিক থেকেও হাসির খোরাক পাবেন। রাজধানীর মিরপুরের পল্লবীতে বিএনপি আয়োজিত ইফতার মাহফিলে সাংবাদিকদের বেদম মারধরের ঘটনা ঘটেছে। বিএনপি বলছে, সরকারের দালালেরা গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছে। এ জন্য নাকি আওয়ামী লীগ দায়ী। বিএনপির এ রকম একটি মাহফিলে সরকারের চরেরা এসে সাংবাদিকদের পিটিয়ে গেল, এ কথাও বিশ্বাস করতে হবে? কথাগুলো কিন্তু বেরিয়েছে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কণ্ঠ থেকে!
রাজনীতির শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্বরাই নানা রকম মন্তব্য করে নিজেদের খেলো প্রতিপন্ন করার জন্য যেন প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। আর যা-ই হোক, এটাকে সুস্থ ধারা বলা যাচ্ছে না।
আর ছাত্ররাজনীতি? এ নিয়ে যা হচ্ছে, তার বিবরণ তো পত্রিকার পাতায় দৃশ্যমান। জাতীয় রাজনীতির সঙ্গে ছাত্ররাজনীতির একটা সংযোগ থাকতেই পারে। কিন্তু সেটা তো কখনোই লেজুড়বৃত্তি নয়। কোনো ভুল সংকেত যদি আসে রাজনৈতিক দলের দিক থেকে, তাহলেও ছাত্ররা সেটাকে মান্য করে চললে তা তো শিরদাঁড়াহীনতা ছাড়া আর কিছুই নয়। সত্যের পক্ষে থাকতে হবে—এই আপ্তবাক্যটি দিনে দিনে তার কার্যকারিতা হারিয়েছে।
ছাত্ররাজনীতি কতটা ফ্রাঙ্কেনস্টাইনে পরিণত হয়েছে, সেটা দেখার জন্য শুধু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গত কয়েক মাসে ঘটা ঘটনাগুলোর দিকে চোখ রাখাই যথেষ্ট।
২. শিল্পের যেমন বিমানবীকরণ হয়েছিল ইতিহাসের একটা সময়, তার ঠিক বিপরীত ঘটনা ঘটছে প্রযুক্তিতে অনেকটাই পরিবর্তিত হয়ে যাওয়া সংস্কৃতিক্ষেত্রে। সেটাও কি আমরা সব সময় ঠিকভাবে দেখতে পাচ্ছি? রুচির সংকট নিয়ে যে কথাবার্তা হচ্ছে আজকাল, তা মিথ্যেও নয়, নতুনও নয়। এই রুচির সংকট কি কখনো দূর হয়েছিল জীবন থেকে? নাকি সুরুচি আর রুচিহীনতা পাশাপাশি হেঁটেছে অনেকটা পথ? এখনো হাঁটছে? সুরুচির প্রশ্নটি জীবন থেকে ‘নেই’ করে দেওয়া যায় না ঠিকই, কিন্তু নতুন সময়ের বাস্তবতা বুঝেই প্রশ্নটি নিয়ে নাড়াচাড়া করতে হয়।
আমরা যে সংস্কৃতির কথা জেনে এসেছি, তা চর্চা ও শ্রমসাধ্য ব্যাপার। সাধনা ছাড়া কলা সৃষ্টি হয় না। সাধনা শিল্পীকে অন্য মানুষের কাছ থেকে আলাদা করে। যে লোক-সংস্কৃতির কথা আমরা বলি, সেটাও হাজার বছরের শ্রম, ঘাম ও সৃষ্টিশীলতার মাধ্যমেই প্রস্ফুটিত হয়। সংস্কৃতির উচ্চ এবং নিম্ন বলে কিছু আছে বলে আমি অন্তত মানি না। সৃজনশীলতা লোকদেখানো কোনো বস্তু নয় যে লোকে খুশি হলেই তার পূর্ণতা; বরং নিজেকে সার্বিকভাবে খুশি করার একটা চিন্তা থাকতে হয় এবং তাতে থাকে সার্বিক আনন্দ।
যে কেউ যা কিছু করল আর সেটা শিল্প হয়ে গেল, তা তো নয়। বেসুরো গলায় গান করলে সেটার সমালোচনা করা যাবে না কেন? সমালোচনা করলেই কটাক্ষ করা হবে কেন? আবার ভিন্নভাবে বললে, সমালোচনা করার সময় একই অন্যায়ের জন্য শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে ছাড় দেওয়া হবে কেন? থাপ্পড়টা কেন পড়বে শক্তিহীন ব্যক্তির গালে?
প্রশ্নগুলো এড়ানো যাবে না।
আরও একটি কথা মনে রাখতে হবে। যুগ পাল্টেছে। কারও হাতে একটা স্মার্টফোন থাকলেই সে নিজেই হয়ে যেতে পারে অভিনয়শিল্পী, সংগীতশিল্পী, আবৃত্তিশিল্পী, পরিচালক। যে কেউ যেকোনো বিষয়ে ভিডিও করে নিজেকে গণমাধ্যমের স্বজন দাবি করতে পারে। এসব কি আর ঠেকানো যাবে? একেবারে বেসুরো কণ্ঠে গান করার প্রতিকার তো পুলিশের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে গান বন্ধ করা নয়। সেটা কজনের সঙ্গে করবে পুলিশ? মূলত এগুলো না শোনাই হলো প্রতিকারের উপায়। কিন্তু এই বেসুরো শিল্পীই যদি ভিডিওর ক্যারিশমায় দর্শক-শ্রোতা খুঁজে পায়, তাহলে তাকে প্রতিহত করবেন কী দিয়ে? ভালো মানের সংস্কৃতি নির্মাণ করেই তো প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হবে। সেটা কি হচ্ছে?
আমরা মাঝে মাঝে ভুলে যাই, সংস্কৃতিক্ষেত্রটি যেমন কারও মা-বাবার সম্পত্তি নয়, তেমনি এ ক্ষেত্রটি এককভাবে কেউ নষ্ট করে দিতে
পারে না। একটি রাষ্ট্রকে অন্যের কাছে পরিচিত করে তোলার সবচেয়ে সূক্ষ্ম অথচ সহজ মাধ্যম হচ্ছে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড। বেঁচে থাকার আনন্দময় পথ অন্বেষণ করাও তো সংস্কৃতির কাজ।
আচারে-ব্যবহারে থাকতে হবে তার প্রকাশ। যে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমরা গৌরব করি, তারই সেরা ফসলের একটি ছিল নাটক। সেই নাটকের হাল আজ কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে, সে বিষয়ে ভাবতে হবে। কারা নাটককে বিপন্ন করল, কারা চলচ্চিত্র অঙ্গনকে প্রায় দর্শকশূন্য করে দিল, কারা শুধু অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকল এবং নিজেদের শিশু হিসেবে ঘোষণা করে রাষ্ট্রের কাছে নিরাপদ আশ্রয় চাইল, নিজেরা বেড়ে ওঠার চেষ্টা করল না, সেটাও কি আলোচনায় আসতে হবে না?
৩. একটি ভয়ংকর সত্য হলো, বাঙালি যেভাবে লড়তে শিখেছে, যেভাবে প্রতিবাদ করতে শিখেছে, সেভাবে শাসন করতে শেখেনি। ইতিহাস সাক্ষী, অন্যের হাতে শাসনভার তুলে দিয়ে দিব্যি আরামে কালাতিপাত করতে চেয়েছে। ফলে ‘ভেঙে আবার গড়তে’ পারার জাদুমন্ত্রটা আমাদের শেখা হয়নি। তাই চারদিকে ভাঙনের যত শব্দ শুনি, তার এক ভাগও গড়ে তোলার তাগিদ পরিলক্ষিত হয় না।
মাত্র দুটো সেক্টরের কথা বললাম, রাজনীতি আর সংস্কৃতি। অধরা রয়ে গেল অন্য সেক্টরগুলো। সেসব জায়গাতেও যে পেশিশক্তি আর ক্ষমতার আস্ফালন দেখতে পাবেন, সে ব্যাপারে আমার অন্তত কোনো সন্দেহ নেই। একটা ভয়ংকর সময় পার করছি আমরা। গন্তব্য এতটাই অবোধ্য যে কবি বিষ্ণু দের ভাষায় বলতে হয়, ‘এ নরকে মনে হয় আশা নেই।’
কবি কোন সময় কাকে উদ্দেশ করে কথাগুলো বলেছেন, তা এখানে আলোচ্য নয়, আলোচ্য বিষয় হলো, আমরা কি সেদিকেই যাচ্ছি?
জাহীদ রেজা নূর, উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
আমাদের অলক্ষ্যেই চারদিকের সবকিছু যে দ্রুত পরিবর্তিত হয়ে গেছে এবং যাচ্ছে, সেটা আমরা এখনো খুব একটা বুঝে উঠতে পারছি না। কত দ্রুত এক একটা ইস্যু আসছে, তা নিয়ে মাঠ গরম হচ্ছে, তারপর নতুন কোনো ইস্যু এসে নিয়ে নিচ্ছে তার স্থান, সেটা আমরা ঠিকভাবে ধরতে পারছি কি? কখনো কোনো মতলবি কারবার দিয়ে মানুষকে ভোলানো হচ্ছে, কখনো সরল কোনো ঘটনাকে আখ্যা দেওয়া হচ্ছে মতলবি কারবার বলে। মূলত যে সময়টা আমরা পার করছি, তা প্রচণ্ড রকম অস্থির একটা সময়।
রাজনীতিটা যে আদর্শস্থানীয় মানুষের হাত থেকে টাকাওয়ালা লোকের হাতে চলে গেছে, সেটা আমরা সাদা চোখেই দেখতে পাই। সংসদে আইনজীবীর সংখ্যা কমতে কমতে তলানিতে এসে ঠেকেছে। সে জায়গা ভরাট করার চেষ্টা করছেন ধনপতিরা এবং সেটা ঘটছে রাজনৈতিক দলের নীতিনির্ধারকদের আশীর্বাদেই। এখন এমন এক অবস্থা দাঁড়িয়েছে, যাঁরা নির্বাচনে মনোনয়ন পান, তাঁদের মধ্যে খুব কমসংখ্যক প্রার্থীই আছেন, যাঁরা আদর্শকে পুঁজি করে নির্বাচনী বৈতরণি পার হয়ে আসতে পারবেন। টাকা আর পেশিশক্তির মিলনে যে রাজনীতি শুরু হয়েছে, তা আমাদের কোথায় নিয়ে যাবে, কেউ জানে না।
যে যার শ্রেণির স্বার্থ দেখবে, এটা নতুন কোনো কথা নয়। ফলে সংসদে শিল্পপতিদের সংখ্যা বাড়লে তাতে ব্যবসা-বাণিজ্যের রমরমা হবে বটে, কিন্তু তা হয়ে ওঠে সাধারণ ভোটারের সঙ্গে সম্পর্কহীন কাণ্ড-কারখানা। ফলে সিন্ডিকেট যদি গড়ে ওঠে, মালিক সমিতি যদি ধর্মঘট করে বসে, কিংবা ধর্মঘটে যান শ্রমিকেরা, তাহলে দেখা যাবে এই ধনী মানুষেরা কিংবা তাদের পোষ্যপুত্ররা সাধারণ মানুষের বিপরীতে
অবস্থান নিচ্ছে। কেন? কারণ আর কিছু নয়। তারাই মালিক, তারাই শ্রমিকনেতা, তারাই চালাচ্ছে সিন্ডিকেট।
রাজনীতির কাছে হতাশ হয়ে পড়ছে মানুষ এবং হয়ে পড়ছে অসহায়। বুঝতে পারছে, আসলে জনগণের সেবার জন্য যে রাজনীতি, তার এপিটাফ প্রায় লেখা হয়ে গেছে। যে গণতন্ত্রের কথা বলা হচ্ছে উচ্চ স্বরে, সেই গণতান্ত্রিক আচরণের বড্ড অভাব এই রাজনীতিতে। হ্যাঁ, শুধু সরকারি দলের কথা বলা হচ্ছে না, সামগ্রিকভাবেই গণতন্ত্র আজ যেকোনো দলের আদর্শের জায়গা থেকে নির্বাসিত।
সরকারি কিংবা বিরোধী দলের উচ্চপর্যায়ের নেতাদের কথাবার্তা লক্ষ করুন। মাঝে মাঝেই কৌতুকের খোরাক তাতে পেয়ে যাবেন। একসময় মনে হবে, আমরা বুঝি ‘যত দোষ নন্দ ঘোষ’কেই রাজনৈতিক জীবনের অন্যতম আদর্শে পরিণত করেছি। উদাহরণ? ঢের আছে। এই তো, এই শনিবারের পত্রিকা থেকে একই রকম দুটো উদাহরণ দিচ্ছি। নাটোর উপশহর মাঠে জেলা বিএনপির তৈরি করা মঞ্চ ভাঙচুর করা হয়েছে এবং তাতে আগুন দেওয়া হয়েছে। অভিযোগের তির ছুটে গেছে আওয়ামী লীগের দিকে। আওয়ামী লীগ তৎক্ষণাৎ বলে দিয়েছে, বিএনপি নিজেরাই নিজেদের মঞ্চ ভাঙচুর করেছে। কে বলেছেন কথাটা? বলেছেন আওয়ামী লীগের একজন দায়িত্বশীল নেতা। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তিনি। নাম শরিফুল ইসলাম রমজান।
আপনার নিশ্চয়ই হাসি পেল খবরটা পড়ে?
আপনি নিশ্চয়ই নিজেই বুঝে নিয়েছেন, কী ঘটেছিল সেখানে। তবে পুরো হাসি হাসবেন না। বিপরীত দিক থেকেও হাসির খোরাক পাবেন। রাজধানীর মিরপুরের পল্লবীতে বিএনপি আয়োজিত ইফতার মাহফিলে সাংবাদিকদের বেদম মারধরের ঘটনা ঘটেছে। বিএনপি বলছে, সরকারের দালালেরা গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছে। এ জন্য নাকি আওয়ামী লীগ দায়ী। বিএনপির এ রকম একটি মাহফিলে সরকারের চরেরা এসে সাংবাদিকদের পিটিয়ে গেল, এ কথাও বিশ্বাস করতে হবে? কথাগুলো কিন্তু বেরিয়েছে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কণ্ঠ থেকে!
রাজনীতির শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্বরাই নানা রকম মন্তব্য করে নিজেদের খেলো প্রতিপন্ন করার জন্য যেন প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। আর যা-ই হোক, এটাকে সুস্থ ধারা বলা যাচ্ছে না।
আর ছাত্ররাজনীতি? এ নিয়ে যা হচ্ছে, তার বিবরণ তো পত্রিকার পাতায় দৃশ্যমান। জাতীয় রাজনীতির সঙ্গে ছাত্ররাজনীতির একটা সংযোগ থাকতেই পারে। কিন্তু সেটা তো কখনোই লেজুড়বৃত্তি নয়। কোনো ভুল সংকেত যদি আসে রাজনৈতিক দলের দিক থেকে, তাহলেও ছাত্ররা সেটাকে মান্য করে চললে তা তো শিরদাঁড়াহীনতা ছাড়া আর কিছুই নয়। সত্যের পক্ষে থাকতে হবে—এই আপ্তবাক্যটি দিনে দিনে তার কার্যকারিতা হারিয়েছে।
ছাত্ররাজনীতি কতটা ফ্রাঙ্কেনস্টাইনে পরিণত হয়েছে, সেটা দেখার জন্য শুধু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গত কয়েক মাসে ঘটা ঘটনাগুলোর দিকে চোখ রাখাই যথেষ্ট।
২. শিল্পের যেমন বিমানবীকরণ হয়েছিল ইতিহাসের একটা সময়, তার ঠিক বিপরীত ঘটনা ঘটছে প্রযুক্তিতে অনেকটাই পরিবর্তিত হয়ে যাওয়া সংস্কৃতিক্ষেত্রে। সেটাও কি আমরা সব সময় ঠিকভাবে দেখতে পাচ্ছি? রুচির সংকট নিয়ে যে কথাবার্তা হচ্ছে আজকাল, তা মিথ্যেও নয়, নতুনও নয়। এই রুচির সংকট কি কখনো দূর হয়েছিল জীবন থেকে? নাকি সুরুচি আর রুচিহীনতা পাশাপাশি হেঁটেছে অনেকটা পথ? এখনো হাঁটছে? সুরুচির প্রশ্নটি জীবন থেকে ‘নেই’ করে দেওয়া যায় না ঠিকই, কিন্তু নতুন সময়ের বাস্তবতা বুঝেই প্রশ্নটি নিয়ে নাড়াচাড়া করতে হয়।
আমরা যে সংস্কৃতির কথা জেনে এসেছি, তা চর্চা ও শ্রমসাধ্য ব্যাপার। সাধনা ছাড়া কলা সৃষ্টি হয় না। সাধনা শিল্পীকে অন্য মানুষের কাছ থেকে আলাদা করে। যে লোক-সংস্কৃতির কথা আমরা বলি, সেটাও হাজার বছরের শ্রম, ঘাম ও সৃষ্টিশীলতার মাধ্যমেই প্রস্ফুটিত হয়। সংস্কৃতির উচ্চ এবং নিম্ন বলে কিছু আছে বলে আমি অন্তত মানি না। সৃজনশীলতা লোকদেখানো কোনো বস্তু নয় যে লোকে খুশি হলেই তার পূর্ণতা; বরং নিজেকে সার্বিকভাবে খুশি করার একটা চিন্তা থাকতে হয় এবং তাতে থাকে সার্বিক আনন্দ।
যে কেউ যা কিছু করল আর সেটা শিল্প হয়ে গেল, তা তো নয়। বেসুরো গলায় গান করলে সেটার সমালোচনা করা যাবে না কেন? সমালোচনা করলেই কটাক্ষ করা হবে কেন? আবার ভিন্নভাবে বললে, সমালোচনা করার সময় একই অন্যায়ের জন্য শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে ছাড় দেওয়া হবে কেন? থাপ্পড়টা কেন পড়বে শক্তিহীন ব্যক্তির গালে?
প্রশ্নগুলো এড়ানো যাবে না।
আরও একটি কথা মনে রাখতে হবে। যুগ পাল্টেছে। কারও হাতে একটা স্মার্টফোন থাকলেই সে নিজেই হয়ে যেতে পারে অভিনয়শিল্পী, সংগীতশিল্পী, আবৃত্তিশিল্পী, পরিচালক। যে কেউ যেকোনো বিষয়ে ভিডিও করে নিজেকে গণমাধ্যমের স্বজন দাবি করতে পারে। এসব কি আর ঠেকানো যাবে? একেবারে বেসুরো কণ্ঠে গান করার প্রতিকার তো পুলিশের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে গান বন্ধ করা নয়। সেটা কজনের সঙ্গে করবে পুলিশ? মূলত এগুলো না শোনাই হলো প্রতিকারের উপায়। কিন্তু এই বেসুরো শিল্পীই যদি ভিডিওর ক্যারিশমায় দর্শক-শ্রোতা খুঁজে পায়, তাহলে তাকে প্রতিহত করবেন কী দিয়ে? ভালো মানের সংস্কৃতি নির্মাণ করেই তো প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হবে। সেটা কি হচ্ছে?
আমরা মাঝে মাঝে ভুলে যাই, সংস্কৃতিক্ষেত্রটি যেমন কারও মা-বাবার সম্পত্তি নয়, তেমনি এ ক্ষেত্রটি এককভাবে কেউ নষ্ট করে দিতে
পারে না। একটি রাষ্ট্রকে অন্যের কাছে পরিচিত করে তোলার সবচেয়ে সূক্ষ্ম অথচ সহজ মাধ্যম হচ্ছে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড। বেঁচে থাকার আনন্দময় পথ অন্বেষণ করাও তো সংস্কৃতির কাজ।
আচারে-ব্যবহারে থাকতে হবে তার প্রকাশ। যে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমরা গৌরব করি, তারই সেরা ফসলের একটি ছিল নাটক। সেই নাটকের হাল আজ কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে, সে বিষয়ে ভাবতে হবে। কারা নাটককে বিপন্ন করল, কারা চলচ্চিত্র অঙ্গনকে প্রায় দর্শকশূন্য করে দিল, কারা শুধু অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকল এবং নিজেদের শিশু হিসেবে ঘোষণা করে রাষ্ট্রের কাছে নিরাপদ আশ্রয় চাইল, নিজেরা বেড়ে ওঠার চেষ্টা করল না, সেটাও কি আলোচনায় আসতে হবে না?
৩. একটি ভয়ংকর সত্য হলো, বাঙালি যেভাবে লড়তে শিখেছে, যেভাবে প্রতিবাদ করতে শিখেছে, সেভাবে শাসন করতে শেখেনি। ইতিহাস সাক্ষী, অন্যের হাতে শাসনভার তুলে দিয়ে দিব্যি আরামে কালাতিপাত করতে চেয়েছে। ফলে ‘ভেঙে আবার গড়তে’ পারার জাদুমন্ত্রটা আমাদের শেখা হয়নি। তাই চারদিকে ভাঙনের যত শব্দ শুনি, তার এক ভাগও গড়ে তোলার তাগিদ পরিলক্ষিত হয় না।
মাত্র দুটো সেক্টরের কথা বললাম, রাজনীতি আর সংস্কৃতি। অধরা রয়ে গেল অন্য সেক্টরগুলো। সেসব জায়গাতেও যে পেশিশক্তি আর ক্ষমতার আস্ফালন দেখতে পাবেন, সে ব্যাপারে আমার অন্তত কোনো সন্দেহ নেই। একটা ভয়ংকর সময় পার করছি আমরা। গন্তব্য এতটাই অবোধ্য যে কবি বিষ্ণু দের ভাষায় বলতে হয়, ‘এ নরকে মনে হয় আশা নেই।’
কবি কোন সময় কাকে উদ্দেশ করে কথাগুলো বলেছেন, তা এখানে আলোচ্য নয়, আলোচ্য বিষয় হলো, আমরা কি সেদিকেই যাচ্ছি?
জাহীদ রেজা নূর, উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি বেড়েই চলছে। এ কারণে চালক ও যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছে এই সড়ক। ডাকাতির শিকার বেশি হচ্ছেন প্রবাসফেরত লোকজন। ডাকাতেরা অস্ত্র ঠেকিয়ে লুট করে নিচ্ছে সর্বস্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও ঘটছে ডাকাতির ঘটনা।
০২ মার্চ ২০২৫বিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
১৬ জানুয়ারি ২০২৫গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪