মামুনুর রশীদ
মানুষ যেকোনো সূর্যোদয় থেকে দিবাবসান পর্যন্ত একটি বার্তার জন্য অপেক্ষা করে। কখনো সেই বার্তা বেদনায় বিষাদময় অথবা কোনো সুসংবাদ। যদিও পৃথিবীতে এমন কিছু মানবগোষ্ঠী থাকে, যাদের কাছে নিত্যদিনের বার্তাই একটা অশনিসংকেত। প্রতিদিনই ভূমি থেকে উচ্ছেদের সংবাদ, জমি হারানোর সংবাদ, প্রিয়জনের দেশত্যাগের সংবাদ। বহু বছর ধরে বিরামহীনভাবে এই হয়ে আসছে। এই গোষ্ঠীর নিবাস প্রকৃতির মধ্যে, সংখ্যা গণনার অতি প্রত্যুষ থেকে। তাই তার পরিচয় ‘আদিবাসী’।
তাদের বিবেচনায় এই ধরিত্রীই তাদের মা। তারা যেমন ধরিত্রীর সন্তান, তেমনি প্রাণিজগৎও তাদের আত্মীয়। বসবাসের জন্য তারা ছোট্ট এক টুকরো ভূমি আর আহারের জন্য বিস্তীর্ণ বনানীকে আবাসযোগ্য করেছিল এই পৃথিবীতে। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় একসময় ‘এল ওরা লোহার হাতকড়ি নিয়ে, নখ যাদের তীক্ষ্ণ তোমার নেকড়ের চেয়ে, এল মানুষ-ধরার দল, গর্বে যারা অন্ধ তোমার সূর্যহারা অরণ্যের চেয়ে...’। সে এক ভয়ংকর অভিজ্ঞতা।
কিন্তু এই মানুষগুলো অনন্তকাল ধরেই হিংস্র জন্তু, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে মিলেমিশে থেকেছে। ওদের সাহস তুলনাহীন। তাই এবার প্রয়োজন হলো অন্য কৌশলের। ধর্ম এবং কানুনকে ব্যবহার করে তাদের করায়ত্ত করা হলো। ওরা হারাল অনেক কিছু, বিশেষ করে জমি, বাসস্থান, বন, পাহাড়, নদীসহ প্রকৃতির ওপর অধিকার। জমির মালিকানায় শত সহস্র বছরের অধিকার টিকল না। তার স্থলাভিষিক্ত হলো নানা ধরনের আইন। এই সরল প্রাকৃতিক মানুষদের কাছে কাগজ খুবই দুর্বোধ্য। তাই সহজেই বারবার বাস্তুচ্যুত হলো এই মানুষগুলো।
বহু লড়াই-সংগ্রামের পর মাত্র কিছুদিন আগে জাতিসংঘ বিষয়টিকে নিয়ে একটু নাড়াচাড়া শুরু করেছে, যার ফলে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ৯ আগস্ট বিশ্বব্যাপী পালিত হয় ‘বিশ্ব আদিবাসী দিবস’। আইএলও কনভেনশনের আওতায় কাস্টমারি ল্যান্ড রাইটস মানা হলেও বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রই তা মানছে না। আর বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বন আইন দিয়ে বন উজাড় করে বিশেষ নৃ-গোষ্ঠীর মানুষদের স্থানচ্যুত করা হচ্ছে। বন তার অভিভাবক হারাচ্ছে। ধরিত্রী তার সন্তানদের রক্ষা করতে পারছে না। যেমন পারছে না নদী, পাহাড়, সমুদ্র রক্ষা করতে।
৬০-৭০ বছর আগেও যে গভীর বনানী এবং প্রাণিসম্পদ দেখা যেত, আজ তা নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে। প্রাকৃতিক বনায়ন ধ্বংস করে এখন সামাজিক বনায়নের চেষ্টা চলছে। তবুও মানুষ নতুন বার্তা চায়। তার অপেক্ষায় দিনাবসান হয়। জাতিসংঘ একটা সুযোগ এনে দিয়েছে, যেখানে ‘আদিবাসী’রা তাদের দাবি-দাওয়া প্রকাশ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এই দিনেও তারা উৎসবে মেতে ওঠে এবং প্রকৃতির কাছে নিজেদের সমর্পণ করে বেদনার কথা, আক্ষেপের কথা প্রকাশ করার চেষ্টা করে।
বাংলাদেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়, পর্বত, নদী, বনানী মিলিয়ে প্রকৃতির এক অপরূপ লীলাভূমি। সেখানকার বেশ কিছু জাতিসত্তা নিজস্ব সংস্কৃতি নিয়ে হাজার বছর ধরে বসবাস করে আসছে। অতর্কিতে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশাল অংশ প্লাবিত করে দেয়। মানুষ, গবাদিপশুসহ ঘরবাড়ি সবকিছু এক রাতের মধ্যে তলিয়ে যায়। অসহায় মানুষগুলোর কান্না সেদিন শাসকগোষ্ঠী শোনেনি। নিরীহ মানুষগুলো তাদের ন্যায্য ক্ষতিপূরণও পায়নি।
বাংলাদেশ স্বাধীন ভূখণ্ড হিসেবে জন্ম নেওয়ার পরও সংবিধানে তাদের অধিকার স্বীকৃত হলো না। পরবর্তীকালে সামরিক শাসনের সময় নতুন করে ওই এলাকাগুলোতে জনবসতি স্থাপন করা হয়। এ নিয়ে শুরু হয় পাল্টাপাল্টি অভিযান। পার্বত্য চট্টগ্রাম হয়ে ওঠে এক বড় সংকটের ক্ষেত্র। এই সংকট নিরসনের উদ্যোগ খুঁজতে গিয়ে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তি চুক্তি সম্পাদন করে।
আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামের অশান্তি নিরসনে এই শান্তি চুক্তিকে অভিনন্দন জানিয়েছিলাম এবং ভেবেছিলাম যে এই শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন হলে একদিকে যেমন পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত হবে, অন্যদিকে মূলধারার জনগোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের নতুন করে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের সূচনা হবে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করা যাচ্ছে, বিষয়টির তেমন কোনো অগ্রগতি হলো না; বরং পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বাঙালি জনগোষ্ঠীর সঙ্গে পাহাড়িদের সংঘাত বেড়েই চলল। শুধু তা-ই নয়, পাহাড়িদের মধ্যে যে দলগুলো তাদের অধিকারের জন্য লড়াই করছিল, সেখানেও বিভক্তির সৃষ্টি করা হলো। প্রায়ই সেখান থেকে নানা ধরনের সহিংসতার সংবাদ পাওয়া যায়। এর অর্থ দাঁড়ায়, পার্বত্য চট্টগ্রাম উপদ্রুতই থেকে গেল।
এদিকে সমতলের বিশেষ নৃ-গোষ্ঠীর মানুষদেরও সংকটের শেষ নেই। অবশ্যই সব সংকটের মূলে রয়েছে ভূমি। সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর সেই চিরন্তন কাগজের সমস্যা রয়েছে। কৃষিনির্ভর এই জাতি ইতিহাসের দীর্ঘ সময় ধরে এই অঞ্চলে বন-জঙ্গল পরিষ্কার করে আবাদি জমি তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। কিন্তু বাংলাদেশের জোতদারদের লোভ-লালসার প্রধান কেন্দ্র হচ্ছে দখল। যেখানেই জমির কাগজপত্রের সামান্য ত্রুটি আছে অথবা নেই, সেখানেই গায়ের জোরে দখল করে নিয়ে নিজেদের কর্তৃত্ব স্থাপন করেছে।
উত্তরবঙ্গে এই চিত্র হরহামেশাই দেখা যায়। ভূমির অধিকারের জন্য যুবক নেতা আলফ্রেড সরেন নওগাঁয় এক আন্দোলন রচনা করেছিলেন। কিন্তু সেখানকার ভূমিদস্যুদের সঙ্গে এক অসম সংগ্রামে নিহত হন তিনি। তাঁকে অগ্নিদগ্ধ করে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। আজও এর কোনো বিচার হয়নি। দিনাজপুর অঞ্চলে বিশেষ জাতিসত্তার মানুষদের অবস্থা আরও করুণ। গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের আওতায় এনে একদা তাদের ভূমি থেকে উচ্ছেদের চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু প্রবল প্রতিরোধের কারণে সেটি সম্ভব হয়নি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে গারো, সাঁওতাল, ওরাওঁ, মাল পাহাড়িয়া, কোচসহ অন্যান্য জাতিসত্তার মানুষ বীরত্বপূর্ণ লড়াই করেছিল। সেখানেও তারা যথোপযুক্ত স্বীকৃতি পায়নি। টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর এসব জেলায় বিপুলসংখ্যক গারো জনগোষ্ঠীর বসবাস। পাকিস্তানি শাসনকালে ষাটের দশক থেকেই মুসলিম লীগ সরকারের নিপীড়নে বহু পরিবার দেশত্যাগ করে মেঘালয় রাজ্যে চলে গিয়েছিল। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও তারা ফিরে আসতে পারেনি।
অত্যন্ত উঁচু সাংস্কৃতিক মান, নিজস্ব উৎপাদনব্যবস্থা এবং মূল্যবোধ নিয়ে এসব জাতিসত্তার মানুষেরা শান্তিপূর্ণভাবে জীবন যাবন করে থাকে। কিন্তু বারবার নানা ধরনের হস্তক্ষেপে এই জাতিসত্তাগুলো কখনো কখনো চরম হতাশায় নিমজ্জিত হয়।
এ তো গেল সমস্যার কথা। সন্দেহ নেই সমস্যাগুলো দুঃসহ। আরও দুঃসহ মূলধারার জনগোষ্ঠীর সঙ্গে ওই সব জনগোষ্ঠীর সম্পর্ক জটিল থেকে জটিলতর হয়েছে। এ ধরনের এক পরিস্থিতিতে বিশেষ জাতিসত্তার মানুষদের পক্ষে অবিশ্বাস, সন্দেহ ঘনীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। কারণ তারা সব সময়ই একধরনের স্নায়বিক চাপ এবং অনিশ্চয়তার মধ্যে দিনযাপন করে থাকে। দিনে দিনে সংকটগুলো বড় হতে শুরু করেছে। যদি আমরা অন্যান্য জাতিসত্তার অধিকার এবং জীবনযাপন নিরাপদ ও শঙ্কাহীন করতে না পারি, তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম একধরনের সংকটে পড়ে যাবে। এই সংকট নিরসনে মূল জনগোষ্ঠীকেই উদ্যোগ নিতে হবে। ইতিমধ্যে অন্যান্য জাতিসত্তায় অনেক প্রতিশ্রুতিশীল নেতৃত্বের সৃষ্টি হয়েছে। প্রবীণ এবং প্রতিশ্রুতিশীল নেতৃত্বের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটা সহনশীল পরিবেশ সৃষ্টি করা অত্যন্ত জরুরি।
মানুষ যেকোনো সূর্যোদয় থেকে দিবাবসান পর্যন্ত একটি বার্তার জন্য অপেক্ষা করে। কখনো সেই বার্তা বেদনায় বিষাদময় অথবা কোনো সুসংবাদ। যদিও পৃথিবীতে এমন কিছু মানবগোষ্ঠী থাকে, যাদের কাছে নিত্যদিনের বার্তাই একটা অশনিসংকেত। প্রতিদিনই ভূমি থেকে উচ্ছেদের সংবাদ, জমি হারানোর সংবাদ, প্রিয়জনের দেশত্যাগের সংবাদ। বহু বছর ধরে বিরামহীনভাবে এই হয়ে আসছে। এই গোষ্ঠীর নিবাস প্রকৃতির মধ্যে, সংখ্যা গণনার অতি প্রত্যুষ থেকে। তাই তার পরিচয় ‘আদিবাসী’।
তাদের বিবেচনায় এই ধরিত্রীই তাদের মা। তারা যেমন ধরিত্রীর সন্তান, তেমনি প্রাণিজগৎও তাদের আত্মীয়। বসবাসের জন্য তারা ছোট্ট এক টুকরো ভূমি আর আহারের জন্য বিস্তীর্ণ বনানীকে আবাসযোগ্য করেছিল এই পৃথিবীতে। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় একসময় ‘এল ওরা লোহার হাতকড়ি নিয়ে, নখ যাদের তীক্ষ্ণ তোমার নেকড়ের চেয়ে, এল মানুষ-ধরার দল, গর্বে যারা অন্ধ তোমার সূর্যহারা অরণ্যের চেয়ে...’। সে এক ভয়ংকর অভিজ্ঞতা।
কিন্তু এই মানুষগুলো অনন্তকাল ধরেই হিংস্র জন্তু, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে মিলেমিশে থেকেছে। ওদের সাহস তুলনাহীন। তাই এবার প্রয়োজন হলো অন্য কৌশলের। ধর্ম এবং কানুনকে ব্যবহার করে তাদের করায়ত্ত করা হলো। ওরা হারাল অনেক কিছু, বিশেষ করে জমি, বাসস্থান, বন, পাহাড়, নদীসহ প্রকৃতির ওপর অধিকার। জমির মালিকানায় শত সহস্র বছরের অধিকার টিকল না। তার স্থলাভিষিক্ত হলো নানা ধরনের আইন। এই সরল প্রাকৃতিক মানুষদের কাছে কাগজ খুবই দুর্বোধ্য। তাই সহজেই বারবার বাস্তুচ্যুত হলো এই মানুষগুলো।
বহু লড়াই-সংগ্রামের পর মাত্র কিছুদিন আগে জাতিসংঘ বিষয়টিকে নিয়ে একটু নাড়াচাড়া শুরু করেছে, যার ফলে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ৯ আগস্ট বিশ্বব্যাপী পালিত হয় ‘বিশ্ব আদিবাসী দিবস’। আইএলও কনভেনশনের আওতায় কাস্টমারি ল্যান্ড রাইটস মানা হলেও বিশ্বের অনেক রাষ্ট্রই তা মানছে না। আর বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বন আইন দিয়ে বন উজাড় করে বিশেষ নৃ-গোষ্ঠীর মানুষদের স্থানচ্যুত করা হচ্ছে। বন তার অভিভাবক হারাচ্ছে। ধরিত্রী তার সন্তানদের রক্ষা করতে পারছে না। যেমন পারছে না নদী, পাহাড়, সমুদ্র রক্ষা করতে।
৬০-৭০ বছর আগেও যে গভীর বনানী এবং প্রাণিসম্পদ দেখা যেত, আজ তা নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে। প্রাকৃতিক বনায়ন ধ্বংস করে এখন সামাজিক বনায়নের চেষ্টা চলছে। তবুও মানুষ নতুন বার্তা চায়। তার অপেক্ষায় দিনাবসান হয়। জাতিসংঘ একটা সুযোগ এনে দিয়েছে, যেখানে ‘আদিবাসী’রা তাদের দাবি-দাওয়া প্রকাশ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এই দিনেও তারা উৎসবে মেতে ওঠে এবং প্রকৃতির কাছে নিজেদের সমর্পণ করে বেদনার কথা, আক্ষেপের কথা প্রকাশ করার চেষ্টা করে।
বাংলাদেশে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়, পর্বত, নদী, বনানী মিলিয়ে প্রকৃতির এক অপরূপ লীলাভূমি। সেখানকার বেশ কিছু জাতিসত্তা নিজস্ব সংস্কৃতি নিয়ে হাজার বছর ধরে বসবাস করে আসছে। অতর্কিতে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামের বিশাল অংশ প্লাবিত করে দেয়। মানুষ, গবাদিপশুসহ ঘরবাড়ি সবকিছু এক রাতের মধ্যে তলিয়ে যায়। অসহায় মানুষগুলোর কান্না সেদিন শাসকগোষ্ঠী শোনেনি। নিরীহ মানুষগুলো তাদের ন্যায্য ক্ষতিপূরণও পায়নি।
বাংলাদেশ স্বাধীন ভূখণ্ড হিসেবে জন্ম নেওয়ার পরও সংবিধানে তাদের অধিকার স্বীকৃত হলো না। পরবর্তীকালে সামরিক শাসনের সময় নতুন করে ওই এলাকাগুলোতে জনবসতি স্থাপন করা হয়। এ নিয়ে শুরু হয় পাল্টাপাল্টি অভিযান। পার্বত্য চট্টগ্রাম হয়ে ওঠে এক বড় সংকটের ক্ষেত্র। এই সংকট নিরসনের উদ্যোগ খুঁজতে গিয়ে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তি চুক্তি সম্পাদন করে।
আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামের অশান্তি নিরসনে এই শান্তি চুক্তিকে অভিনন্দন জানিয়েছিলাম এবং ভেবেছিলাম যে এই শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন হলে একদিকে যেমন পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত হবে, অন্যদিকে মূলধারার জনগোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের নতুন করে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের সূচনা হবে। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করা যাচ্ছে, বিষয়টির তেমন কোনো অগ্রগতি হলো না; বরং পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বাঙালি জনগোষ্ঠীর সঙ্গে পাহাড়িদের সংঘাত বেড়েই চলল। শুধু তা-ই নয়, পাহাড়িদের মধ্যে যে দলগুলো তাদের অধিকারের জন্য লড়াই করছিল, সেখানেও বিভক্তির সৃষ্টি করা হলো। প্রায়ই সেখান থেকে নানা ধরনের সহিংসতার সংবাদ পাওয়া যায়। এর অর্থ দাঁড়ায়, পার্বত্য চট্টগ্রাম উপদ্রুতই থেকে গেল।
এদিকে সমতলের বিশেষ নৃ-গোষ্ঠীর মানুষদেরও সংকটের শেষ নেই। অবশ্যই সব সংকটের মূলে রয়েছে ভূমি। সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর সেই চিরন্তন কাগজের সমস্যা রয়েছে। কৃষিনির্ভর এই জাতি ইতিহাসের দীর্ঘ সময় ধরে এই অঞ্চলে বন-জঙ্গল পরিষ্কার করে আবাদি জমি তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। কিন্তু বাংলাদেশের জোতদারদের লোভ-লালসার প্রধান কেন্দ্র হচ্ছে দখল। যেখানেই জমির কাগজপত্রের সামান্য ত্রুটি আছে অথবা নেই, সেখানেই গায়ের জোরে দখল করে নিয়ে নিজেদের কর্তৃত্ব স্থাপন করেছে।
উত্তরবঙ্গে এই চিত্র হরহামেশাই দেখা যায়। ভূমির অধিকারের জন্য যুবক নেতা আলফ্রেড সরেন নওগাঁয় এক আন্দোলন রচনা করেছিলেন। কিন্তু সেখানকার ভূমিদস্যুদের সঙ্গে এক অসম সংগ্রামে নিহত হন তিনি। তাঁকে অগ্নিদগ্ধ করে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। আজও এর কোনো বিচার হয়নি। দিনাজপুর অঞ্চলে বিশেষ জাতিসত্তার মানুষদের অবস্থা আরও করুণ। গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের আওতায় এনে একদা তাদের ভূমি থেকে উচ্ছেদের চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু প্রবল প্রতিরোধের কারণে সেটি সম্ভব হয়নি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে গারো, সাঁওতাল, ওরাওঁ, মাল পাহাড়িয়া, কোচসহ অন্যান্য জাতিসত্তার মানুষ বীরত্বপূর্ণ লড়াই করেছিল। সেখানেও তারা যথোপযুক্ত স্বীকৃতি পায়নি। টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর এসব জেলায় বিপুলসংখ্যক গারো জনগোষ্ঠীর বসবাস। পাকিস্তানি শাসনকালে ষাটের দশক থেকেই মুসলিম লীগ সরকারের নিপীড়নে বহু পরিবার দেশত্যাগ করে মেঘালয় রাজ্যে চলে গিয়েছিল। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও তারা ফিরে আসতে পারেনি।
অত্যন্ত উঁচু সাংস্কৃতিক মান, নিজস্ব উৎপাদনব্যবস্থা এবং মূল্যবোধ নিয়ে এসব জাতিসত্তার মানুষেরা শান্তিপূর্ণভাবে জীবন যাবন করে থাকে। কিন্তু বারবার নানা ধরনের হস্তক্ষেপে এই জাতিসত্তাগুলো কখনো কখনো চরম হতাশায় নিমজ্জিত হয়।
এ তো গেল সমস্যার কথা। সন্দেহ নেই সমস্যাগুলো দুঃসহ। আরও দুঃসহ মূলধারার জনগোষ্ঠীর সঙ্গে ওই সব জনগোষ্ঠীর সম্পর্ক জটিল থেকে জটিলতর হয়েছে। এ ধরনের এক পরিস্থিতিতে বিশেষ জাতিসত্তার মানুষদের পক্ষে অবিশ্বাস, সন্দেহ ঘনীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। কারণ তারা সব সময়ই একধরনের স্নায়বিক চাপ এবং অনিশ্চয়তার মধ্যে দিনযাপন করে থাকে। দিনে দিনে সংকটগুলো বড় হতে শুরু করেছে। যদি আমরা অন্যান্য জাতিসত্তার অধিকার এবং জীবনযাপন নিরাপদ ও শঙ্কাহীন করতে না পারি, তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম একধরনের সংকটে পড়ে যাবে। এই সংকট নিরসনে মূল জনগোষ্ঠীকেই উদ্যোগ নিতে হবে। ইতিমধ্যে অন্যান্য জাতিসত্তায় অনেক প্রতিশ্রুতিশীল নেতৃত্বের সৃষ্টি হয়েছে। প্রবীণ এবং প্রতিশ্রুতিশীল নেতৃত্বের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটা সহনশীল পরিবেশ সৃষ্টি করা অত্যন্ত জরুরি।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি বেড়েই চলছে। এ কারণে চালক ও যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছে এই সড়ক। ডাকাতির শিকার বেশি হচ্ছেন প্রবাসফেরত লোকজন। ডাকাতেরা অস্ত্র ঠেকিয়ে লুট করে নিচ্ছে সর্বস্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও ঘটছে ডাকাতির ঘটনা।
০২ মার্চ ২০২৫বিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
১৬ জানুয়ারি ২০২৫গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪