মৃত্যুঞ্জয় রায়
সম্প্রতি দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকায় একটি প্রতিবেদনের ওপর চোখ পড়তেই চমকে উঠেছি। বলে কী! পৃথিবীতে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য নাকি মূলত অভিজাত শ্রেণির ধনীরাই দায়ী! তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে ‘অভিজাত দূষণকারী’ (দ্য পলিউটার এলিট) হিসেবে। অক্সফামের একটি গবেষণা রিপোর্ট পর্যালোচনা করে সেই পত্রিকা লিখেছে, পৃথিবীর বুকে বসবাসকারী মোট জনগোষ্ঠীর মাত্র ১ শতাংশ অতিধনী শ্রেণির। এসব লোকের অতিবিলাসী জীবনযাপন, যেমন—যানবাহন ও শীতাতপ যন্ত্রের ব্যবহারে বিগত ২০১৯ সালে বায়ুমণ্ডলে মোট ৫.৯ বিলিয়ন টন কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস নিঃসারণ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের এনভায়রনমেন্ট প্রোটেকশন এজেন্সি একটি সূত্র বা ফর্মুলা ব্যবহার করে হিসাব কষে দেখেছে যে প্রতিবছর প্রতি মিলিয়ন টন কার্বন নিঃসারণের জন্য বিশ্বে অতিরিক্ত ২২৬ জন মানুষ মারা যাচ্ছে। এতে কত মানুষ যে অসুস্থ হচ্ছে, তার কোনো হিসাব নেই। এভাবে অতিরিক্ত কার্বন নিঃসারিত না হলে সেই সব মানুষের হয়তো মৃত্যু হতো না।
তাদের অনুমান, এই ১ শতাংশ মানুষের ভোগবিলাসী জীবনযাপনের কারণে হয়তো এই দশকে পৃথিবীতে ১.৩ মিলিয়ন লোক মারা যাবে তাপের আধিক্য বা গরমের কারণে।
গবেষকেরা বলছেন, এই অতিধনীরা বিগত ১৯৯০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত মোট যে পরিমাণ কার্বন নিঃসারণ করেছে, তার পরিমাণ গত বছর বিশ্বের ৬৬ শতাংশ গরিব মানুষ যে পরিমাণ জ্বালানি পুড়িয়েছে তার সমান। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের মোট গম উৎপাদন, ইউরোপে মোট ভুট্টা উৎপাদন ও বাংলাদেশে ধান উৎপাদন করতে যে পরিমাণ কার্বন নিঃসারিত হয়েছে, এর পরিমাণ প্রায় তার সমতুল্য। জাতিসংঘ বলছে, প্রতিবছর চরম বৈরী আবহাওয়ার কারণে যত মানুষের মৃত্যু হয়, তার ৯১ শতাংশ মৃত্যুর জন্য দায়ী উন্নত দেশগুলো।
ধনী কারা, তারও একটা মাপকাঠি গবেষকেরা ঠিক করে নিয়েছেন। তাঁদের মতে, বছরে যাঁরা মাথাপিছু ১ লাখ ৪০ হাজার ডলার বা ১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ ইউরো খরচ করে, তারা হলো অভিজাত ধনিক শ্রেণি। এই অভিজাত দলে বিশ্বব্যাপী রয়েছে প্রায় ৭৭ মিলিয়ন মানুষ, যাদের মধ্যে বহু মিলিয়নিয়ার- বিলিয়নিয়ার রয়েছে। তারাই ২০১৯ সালে বিশ্বব্যাপী মোট কার্বন নিঃসারণের মধ্যে ১৬ শতাংশ নিঃসারণের জন্য দায়ী বলে প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এরূপ একজন অভিজাত ধনী লোক এক বছরে যে পরিমাণ দূষণ ও কার্বন নিঃসারণ করছে, যেসব মানুষ একেবারে নিচের দিকে আছে, অর্থাৎ অবশিষ্ট ৯৯ শতাংশ মানুষের মধ্যে একজনের জন্য সেই পরিমাণ কার্বন নিঃসারণ করতে প্রায় ১ হাজর ৫০০ বছর সময় লাগবে। জলবায়ু ও ধনী-দরিদ্রের আচরণের এই অসমতা একে অপরের পরিপূরক। পৃথিবীতে ধনীদের সংখ্যা বাড়লে জলবায়ু পরিবর্তন আরও দ্রুত হবে, জলবায়ুর সংকট বাড়বে। এতে ২০৩০ সালের মধ্যে আমরা কল্পিতভাবে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে প্রত্যাশিত মাত্রায় বেঁধে রাখার যে সীমা নির্ধারণ করেছি, বাস্তবে সেভাবে তা ঘটবে না। কোনোভাবেই আমরা হয়তো এই সময়ের মধ্যে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে প্রাকশিল্প যুগের চেয়ে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ধরে রাখতে পারব না। এটা অনেকটা গাণিতিক সূত্রের মতো অবধারিত সত্য।
বিশ্বব্যাপী যেভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রসার ঘটছে, মানুষের আয় বাড়ছে, মানুষ তাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সীমারেখাকে একের পর এক ডিঙিয়ে চলেছে, তাতে বিশ্বব্যাপী ধনীদের সংখ্যা কমার কোনো সম্ভাবনা আপাতত দেখা যাচ্ছে না। ধনী লোকের সংখ্যাবৃদ্ধি মানেই তারা তাদের টাকা বিনিয়োগ করবে শিল্প কলকারখানা স্থাপনে, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রতিষ্ঠান খোলায়, গাড়ি চালানোয়, অধিক হারে এসি ব্যবহার করায় ইত্যাদিতে। এর প্রতিটি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে জ্বালানি ব্যবহারের।
মজার বিষয় হলো, দিনে দিনে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় সামর্থ্যবান লোকেরা তাদের সুরক্ষিত করার চেষ্টা করছে গ্রিনহাউসের মতো তাপনিয়ন্ত্রিত কক্ষে, যানবাহনে, এমনকি ব্যক্তিগত বিমান ও জেট ব্যবহারেরও হিড়িক পড়ে গেছে।
এ বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ হলেও জলবায়ু ন্যায্যতার হিসাব গরিব রাষ্ট্রগুলো কখনো পায়নি, পেয়েছে উল্টো জলবায়ুর দুর্ভোগ। যারা জলবায়ু বদলে দেওয়ার জন্য মূলত দায়ী, তারাও তা ঠিক করতে সেভাবে কখনো এগিয়ে আসেনি। পৃথিবীর এই ১ শতাংশ ধনী শিগগির গরিব হবে না। তাদের কেউ কেউ হলেও তার চেয়ে বেশি লোক আবার ধনীতে রূপান্তরিত হবে গরিব থেকে। আবার ধনীদের ধনসম্পদ কেড়ে নেওয়ারও কোনো আইনি ব্যবস্থা নেই। সামর্থ্যবান কাউকে তার জীবনযাপনের ধরন বদলাতেও বলা যাবে না। তাহলে এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের আসলে উপায়টা কী? অক্সফাম খুব ভদ্রভাবে বলেছে, ধনীদের বার্ষিক আয়ের ৬০ শতাংশ ট্যাক্স হিসেবে কেটে নিলে এই ১ শতাংশ ধনীদের কাছ থেকে বছরে আসবে প্রায় ৬.৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই অর্থ জলবায়ু পরিবর্তন হ্রাসে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে ব্যয় করলে তার দ্বারা প্রায় ৬৯৫ মিলিয়ন টন কার্বন নিঃসারণ কমতে পারে।
বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। এই ঝুঁকি কমানোর জন্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে ‘মুজিব জলবায়ু ও সমৃদ্ধি পরিকল্পনা ২০২২-২০৪১ প্রণয়ন করেছে। এই পরিকল্পনায় উল্লেখ করা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের বর্তমান ধারা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনে চরম অবস্থার শিকার হবে এবং ধারণা করা হচ্ছে, আগামী ২০৩০ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর দেশের জিডিপি প্রায় ৬.৮ শতাংশ হারে কমবে।
বিগত ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত ‘কপ ২৬’ জলবায়ু সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে চারটি বিশেষ বিষয়ের উল্লেখ করেছিলেন, তার একটি ছিল ধনী রাষ্ট্রগুলো জলবায়ু পরিবর্তন, অভিযোজন ও প্রশমনের জন্য বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার প্রদানের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তারা সে কথা রাখবে। তবে শুধু টাকা দিয়ে খালাস পাওয়া চলবে না, ধনী রাষ্ট্রগুলোকেও পরিবেশবান্ধব সবুজ শক্তি ও প্রযুক্তি ব্যবহারে এগিয়ে আসতে হবে। এ বছরের জলবায়ু সম্মেলনেও (কপ-২৮, ৩০ নভেম্বর থেকে ১২ ডিসেম্বর ২০২৩, দুবাই, সংযুক্ত আমিরাত) আশা করি সেসব কথার পুনরাবৃত্তি করা হবে, স্মরণ করিয়ে দেওয়া হবে তাদের, যারা সেই প্রতিশ্রুতি রাখেনি। কিন্তু এসব রাষ্ট্রের বাইরেও যেসব ধনী রয়েছে, তাদের ব্যাপারে কি কোনো প্রস্তাব করা হবে? যদি সম্মিলিতভাবে ধনী রাষ্ট্র ও ধনী ব্যক্তিরা এগিয়ে আসে, তাহলেই জলবায়ু তহবিল গঠন ও তা সঠিকভাবে ব্যবহারের রাস্তা প্রসারিত হবে।
বাংলাদেশসহ যেসব দেশ জলবায়ু পরিবর্তনে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে, সেই সব দেশকে রক্ষা করতে হবে, বাঁচাতে হবে সেই সব দেশের মানুষকে।
আমরা আশা করব, জলবায়ু পরিবর্তন-প্রশমনে যারা জলবায়ুর খুব কম ক্ষতি করছে, তাদের সহায়তায় এগিয়ে আসবে তারা, যারা জলবায়ুর বেশি ক্ষতি করছে। তাদের পাপে কেন আমরা মরব? বাঁচতে হবে সবাই মিলে, সবার সহযোগিতায় রক্ষা করতে হবে আমাদের এই প্রিয় সবুজ পৃথিবীকে।
মৃত্যুঞ্জয় রায়, কৃষিবিদ ও প্রকৃতিবিষয়ক লেখক
সম্প্রতি দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকায় একটি প্রতিবেদনের ওপর চোখ পড়তেই চমকে উঠেছি। বলে কী! পৃথিবীতে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য নাকি মূলত অভিজাত শ্রেণির ধনীরাই দায়ী! তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে ‘অভিজাত দূষণকারী’ (দ্য পলিউটার এলিট) হিসেবে। অক্সফামের একটি গবেষণা রিপোর্ট পর্যালোচনা করে সেই পত্রিকা লিখেছে, পৃথিবীর বুকে বসবাসকারী মোট জনগোষ্ঠীর মাত্র ১ শতাংশ অতিধনী শ্রেণির। এসব লোকের অতিবিলাসী জীবনযাপন, যেমন—যানবাহন ও শীতাতপ যন্ত্রের ব্যবহারে বিগত ২০১৯ সালে বায়ুমণ্ডলে মোট ৫.৯ বিলিয়ন টন কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্যাস নিঃসারণ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের এনভায়রনমেন্ট প্রোটেকশন এজেন্সি একটি সূত্র বা ফর্মুলা ব্যবহার করে হিসাব কষে দেখেছে যে প্রতিবছর প্রতি মিলিয়ন টন কার্বন নিঃসারণের জন্য বিশ্বে অতিরিক্ত ২২৬ জন মানুষ মারা যাচ্ছে। এতে কত মানুষ যে অসুস্থ হচ্ছে, তার কোনো হিসাব নেই। এভাবে অতিরিক্ত কার্বন নিঃসারিত না হলে সেই সব মানুষের হয়তো মৃত্যু হতো না।
তাদের অনুমান, এই ১ শতাংশ মানুষের ভোগবিলাসী জীবনযাপনের কারণে হয়তো এই দশকে পৃথিবীতে ১.৩ মিলিয়ন লোক মারা যাবে তাপের আধিক্য বা গরমের কারণে।
গবেষকেরা বলছেন, এই অতিধনীরা বিগত ১৯৯০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত মোট যে পরিমাণ কার্বন নিঃসারণ করেছে, তার পরিমাণ গত বছর বিশ্বের ৬৬ শতাংশ গরিব মানুষ যে পরিমাণ জ্বালানি পুড়িয়েছে তার সমান। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের মোট গম উৎপাদন, ইউরোপে মোট ভুট্টা উৎপাদন ও বাংলাদেশে ধান উৎপাদন করতে যে পরিমাণ কার্বন নিঃসারিত হয়েছে, এর পরিমাণ প্রায় তার সমতুল্য। জাতিসংঘ বলছে, প্রতিবছর চরম বৈরী আবহাওয়ার কারণে যত মানুষের মৃত্যু হয়, তার ৯১ শতাংশ মৃত্যুর জন্য দায়ী উন্নত দেশগুলো।
ধনী কারা, তারও একটা মাপকাঠি গবেষকেরা ঠিক করে নিয়েছেন। তাঁদের মতে, বছরে যাঁরা মাথাপিছু ১ লাখ ৪০ হাজার ডলার বা ১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ ইউরো খরচ করে, তারা হলো অভিজাত ধনিক শ্রেণি। এই অভিজাত দলে বিশ্বব্যাপী রয়েছে প্রায় ৭৭ মিলিয়ন মানুষ, যাদের মধ্যে বহু মিলিয়নিয়ার- বিলিয়নিয়ার রয়েছে। তারাই ২০১৯ সালে বিশ্বব্যাপী মোট কার্বন নিঃসারণের মধ্যে ১৬ শতাংশ নিঃসারণের জন্য দায়ী বলে প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এরূপ একজন অভিজাত ধনী লোক এক বছরে যে পরিমাণ দূষণ ও কার্বন নিঃসারণ করছে, যেসব মানুষ একেবারে নিচের দিকে আছে, অর্থাৎ অবশিষ্ট ৯৯ শতাংশ মানুষের মধ্যে একজনের জন্য সেই পরিমাণ কার্বন নিঃসারণ করতে প্রায় ১ হাজর ৫০০ বছর সময় লাগবে। জলবায়ু ও ধনী-দরিদ্রের আচরণের এই অসমতা একে অপরের পরিপূরক। পৃথিবীতে ধনীদের সংখ্যা বাড়লে জলবায়ু পরিবর্তন আরও দ্রুত হবে, জলবায়ুর সংকট বাড়বে। এতে ২০৩০ সালের মধ্যে আমরা কল্পিতভাবে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে প্রত্যাশিত মাত্রায় বেঁধে রাখার যে সীমা নির্ধারণ করেছি, বাস্তবে সেভাবে তা ঘটবে না। কোনোভাবেই আমরা হয়তো এই সময়ের মধ্যে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে প্রাকশিল্প যুগের চেয়ে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ধরে রাখতে পারব না। এটা অনেকটা গাণিতিক সূত্রের মতো অবধারিত সত্য।
বিশ্বব্যাপী যেভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রসার ঘটছে, মানুষের আয় বাড়ছে, মানুষ তাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সীমারেখাকে একের পর এক ডিঙিয়ে চলেছে, তাতে বিশ্বব্যাপী ধনীদের সংখ্যা কমার কোনো সম্ভাবনা আপাতত দেখা যাচ্ছে না। ধনী লোকের সংখ্যাবৃদ্ধি মানেই তারা তাদের টাকা বিনিয়োগ করবে শিল্প কলকারখানা স্থাপনে, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রতিষ্ঠান খোলায়, গাড়ি চালানোয়, অধিক হারে এসি ব্যবহার করায় ইত্যাদিতে। এর প্রতিটি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে জ্বালানি ব্যবহারের।
মজার বিষয় হলো, দিনে দিনে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় সামর্থ্যবান লোকেরা তাদের সুরক্ষিত করার চেষ্টা করছে গ্রিনহাউসের মতো তাপনিয়ন্ত্রিত কক্ষে, যানবাহনে, এমনকি ব্যক্তিগত বিমান ও জেট ব্যবহারেরও হিড়িক পড়ে গেছে।
এ বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ হলেও জলবায়ু ন্যায্যতার হিসাব গরিব রাষ্ট্রগুলো কখনো পায়নি, পেয়েছে উল্টো জলবায়ুর দুর্ভোগ। যারা জলবায়ু বদলে দেওয়ার জন্য মূলত দায়ী, তারাও তা ঠিক করতে সেভাবে কখনো এগিয়ে আসেনি। পৃথিবীর এই ১ শতাংশ ধনী শিগগির গরিব হবে না। তাদের কেউ কেউ হলেও তার চেয়ে বেশি লোক আবার ধনীতে রূপান্তরিত হবে গরিব থেকে। আবার ধনীদের ধনসম্পদ কেড়ে নেওয়ারও কোনো আইনি ব্যবস্থা নেই। সামর্থ্যবান কাউকে তার জীবনযাপনের ধরন বদলাতেও বলা যাবে না। তাহলে এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের আসলে উপায়টা কী? অক্সফাম খুব ভদ্রভাবে বলেছে, ধনীদের বার্ষিক আয়ের ৬০ শতাংশ ট্যাক্স হিসেবে কেটে নিলে এই ১ শতাংশ ধনীদের কাছ থেকে বছরে আসবে প্রায় ৬.৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই অর্থ জলবায়ু পরিবর্তন হ্রাসে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে ব্যয় করলে তার দ্বারা প্রায় ৬৯৫ মিলিয়ন টন কার্বন নিঃসারণ কমতে পারে।
বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। এই ঝুঁকি কমানোর জন্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে ‘মুজিব জলবায়ু ও সমৃদ্ধি পরিকল্পনা ২০২২-২০৪১ প্রণয়ন করেছে। এই পরিকল্পনায় উল্লেখ করা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের বর্তমান ধারা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনে চরম অবস্থার শিকার হবে এবং ধারণা করা হচ্ছে, আগামী ২০৩০ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর দেশের জিডিপি প্রায় ৬.৮ শতাংশ হারে কমবে।
বিগত ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত ‘কপ ২৬’ জলবায়ু সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে চারটি বিশেষ বিষয়ের উল্লেখ করেছিলেন, তার একটি ছিল ধনী রাষ্ট্রগুলো জলবায়ু পরিবর্তন, অভিযোজন ও প্রশমনের জন্য বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার প্রদানের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তারা সে কথা রাখবে। তবে শুধু টাকা দিয়ে খালাস পাওয়া চলবে না, ধনী রাষ্ট্রগুলোকেও পরিবেশবান্ধব সবুজ শক্তি ও প্রযুক্তি ব্যবহারে এগিয়ে আসতে হবে। এ বছরের জলবায়ু সম্মেলনেও (কপ-২৮, ৩০ নভেম্বর থেকে ১২ ডিসেম্বর ২০২৩, দুবাই, সংযুক্ত আমিরাত) আশা করি সেসব কথার পুনরাবৃত্তি করা হবে, স্মরণ করিয়ে দেওয়া হবে তাদের, যারা সেই প্রতিশ্রুতি রাখেনি। কিন্তু এসব রাষ্ট্রের বাইরেও যেসব ধনী রয়েছে, তাদের ব্যাপারে কি কোনো প্রস্তাব করা হবে? যদি সম্মিলিতভাবে ধনী রাষ্ট্র ও ধনী ব্যক্তিরা এগিয়ে আসে, তাহলেই জলবায়ু তহবিল গঠন ও তা সঠিকভাবে ব্যবহারের রাস্তা প্রসারিত হবে।
বাংলাদেশসহ যেসব দেশ জলবায়ু পরিবর্তনে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে, সেই সব দেশকে রক্ষা করতে হবে, বাঁচাতে হবে সেই সব দেশের মানুষকে।
আমরা আশা করব, জলবায়ু পরিবর্তন-প্রশমনে যারা জলবায়ুর খুব কম ক্ষতি করছে, তাদের সহায়তায় এগিয়ে আসবে তারা, যারা জলবায়ুর বেশি ক্ষতি করছে। তাদের পাপে কেন আমরা মরব? বাঁচতে হবে সবাই মিলে, সবার সহযোগিতায় রক্ষা করতে হবে আমাদের এই প্রিয় সবুজ পৃথিবীকে।
মৃত্যুঞ্জয় রায়, কৃষিবিদ ও প্রকৃতিবিষয়ক লেখক
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি বেড়েই চলছে। এ কারণে চালক ও যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছে এই সড়ক। ডাকাতির শিকার বেশি হচ্ছেন প্রবাসফেরত লোকজন। ডাকাতেরা অস্ত্র ঠেকিয়ে লুট করে নিচ্ছে সর্বস্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও ঘটছে ডাকাতির ঘটনা।
০২ মার্চ ২০২৫বিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
১৬ জানুয়ারি ২০২৫গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪