Ajker Patrika

মিয়ানমারে সংঘাত: ফেরার আশা দেখছে না রোহিঙ্গারা

আমানুর রহমান রনি, টেকনাফ, কক্সবাজার ও মাঈনুদ্দীন খালেদ, নাইক্ষ্যংছড়ি, বান্দরবান
মিয়ানমারে সংঘাত: ফেরার আশা দেখছে না রোহিঙ্গারা

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের একটি বড় অংশের দখল নিয়েছে বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠী। তবে এরপরও কোনো আশা দেখছে না বাংলাদেশের আশ্রয়শিবিরে থাকা রোহিঙ্গারা। তারা মনে করছে, মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের সংঘাতের জেরে সেখানে বসবাসরত আরও সাধারণ মানুষ বাস্তুচ্যুত হবে।

এদিকে গত কয়েক দিনে মিয়ানমারের রাখাইনে সংঘাতের তীব্রতা কমে এলেও বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোয় এখনো স্বাভাবিক হচ্ছে না জনজীবন। এরই মধ্যে সীমান্তবর্তী একটি বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষা নেওয়ার তোড়জোড় চলছে।

এক সপ্তাহের বেশি সময় মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোয় বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ) ও রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) সঙ্গে সরকারি বাহিনীর লড়াই চলছে। সূত্র বলছে, রাখাইন রাজ্যের অন্তত ৩৫ শতাংশ এলাকা দখল করেছে আরাকান আর্মি। এ নিয়ে কথা হয় কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা নূর মোহাম্মদের সঙ্গে। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, মিয়ানমার সরকারি বাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির এই যুদ্ধ একধরনের নাটক। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের কথা আসায় তারা এই নাটক করছে; যাতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন না হয়। তাঁর মতে, আরাকান আর্মি রাখাইনের নিয়ন্ত্রণ নিলেও তাঁদের কোনো উপকার হবে না। কারণ, এই আরাকান আর্মি ২০১৭ সালে তাঁদের ওপরে নির্যাতন করেছে।

আরাকান আর্মিকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা ‘মগি’ বলে ডাকে। মূলত রাখাইনের মগ সম্প্রদায়ের একটি সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী; যারা রাখাইনের স্বায়ত্তশাসিত রাজ্যের দাবিতে যুদ্ধ করছে। রোহিঙ্গাদের অভিযোগ, এই মগ সম্প্রদায়ের লোকজন তাদের ওপর নির্যাতন করেছে।

মিয়ানমার বাস্তুচ্যুত নাগরিক কমিটির অন্যতম সদস্য মং লা মিং ওরফে মোহাম্মদ মুসা আজকের পত্রিকাকে বলেন, বর্তমানে মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্যে প্রায় পাঁচ লাখের মতো রোহিঙ্গা রয়েছে। এই রোহিঙ্গাদের সামনে রেখে সরকারি বাহিনী ও আরাকান আর্মি যুদ্ধ করছে। রোহিঙ্গাদের যুদ্ধের ময়দানে ব্যবহার করা হচ্ছে। 

পরীক্ষা নিতে তোড়জোড়
তমব্রু ও ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে সংঘাতের জেরে সেখানকার পাঁচটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে জেলা প্রশাসন। পাশাপাশি সেখানকার সাতটি মাদ্রাসাও বন্ধ করে দেওয়া হয়। এগুলো এখনো বন্ধ রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের একটি নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম উচ্চবিদ্যালয়। এটি এসএসসির পরীক্ষাকেন্দ্র। এই কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষা নেওয়ার তোড়জোড় করছে স্থানীয় প্রশাসন।

ঘুমধুম উচ্চবিদ্যালয়ের দক্ষিণ পাশে এশিয়া হাইওয়ে এবং মিয়ানমার সীমান্ত। বিদ্যালয়টি মিয়ানমার সীমান্তের মাত্র কয়েক শ গজের মধ্যে অবস্থিত। মিয়ানমার বিদ্রোহী-জান্তা সরকারের মধ্যকার গোলাগুলি হলেই কেঁপে ওঠে এই স্কুল। বিদ্যালয় সূত্র বলছে, গত সোমবার ১টি রকেট লঞ্চার পড়ে ঘুমধুম উচ্চবিদ্যালয়ের আধা কিলোমিটার দূরের জলপাইতলীতে। সেখানে দুজনের মৃত্যু হয়। তবে গত মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে গোলাগুলি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বান্দরবান জেলা জানিয়ে দেয়, এই বিদ্যালয়েই পরীক্ষা হবে। 

সীমান্তে লাশ
মিয়ানমারে সংঘাত শুরু হওয়ার পর সীমান্তে এত দিন গুলি, গোলা পাওয়া গেছে। এবার সেখানে লাশ পাওয়া যাচ্ছে। উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের রহমতেরবিল সীমান্তে অজ্ঞাতনামা একজনের মরদেহ পাওয়া গেছে। তবে সংঘাতপূর্ণ ওই এলাকায় গিয়ে লাশটি উদ্ধার করা যায়নি। উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শামীম হোসেন বলেন, বিষয়টি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) জানানো হয়েছে।

এদিকে গতকাল বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি তমব্রু সীমান্ত এলাকার ধানখেতে পাওয়া একটি অবিস্ফোরিত রকেট লঞ্চার পাওয়া গেছে।সেটি তুলে রাস্তার পাশে ফেলে রাখা হয়েছে। পরে বিজিবি সেটিকে নিরাপদে সরিয়ে নিয়েছে। আর ঘুমধুম সীমান্ত এলাকায় অবিস্ফোরিত একটি গ্রেনেডের নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে বিজিবি ও সেনাবাহিনী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত