অরুণ কর্মকার
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, গত জুলাই-আগস্টের অভূতপূর্ব ছাত্র-গণ-অভ্যুত্থান আমাদের জনমানসে বিপুল এক তরঙ্গমালা সৃষ্টি করেছে। সেই তরঙ্গমালার অভিঘাতে রাষ্ট্র ও সমাজের সব স্তরে একটি মৌলিক পরিবর্তনের ধারা সূচিত হয়েছে। এই পরিবর্তন-ধারার বহুবিচিত্র গতি-প্রকৃতি গণমানুষের ভাবনাগুলোকে এখনো সুস্থির হতে দেয়নি।
পরিবর্তনের তালিকায় অসংখ্য বিষয়। সব বিষয় নিয়েই সকলের ভাবা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আছে। বর্তমান মুক্ত পরিবেশে প্রত্যেকেই যে যার অবস্থান থেকে সেই স্বাধীনতা ভোগ কিংবা উপভোগ করছেন। তাতে ভাবনার অস্থিরতা যেমন প্রকাশ পাচ্ছে, তেমনি প্রত্যেকের ভাবনা আলাদা হলেও লক্ষ্য যে অভিন্ন, তারও স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। সবারই আকাঙ্ক্ষা একটি গণতান্ত্রিক, মানবিক ও উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণ। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও সেই লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে।
আমাদের দেশে যেকোনো পরিস্থিতিতেই জনমানসে ভাবনার প্রধান বিষয় থাকে রাজনীতি। এবার স্বাভাবিকভাবেই রাজনীতির ভাবনাটি আরও প্রকট। এই ভাবনার একদিকে আছে নির্বাচন। কবে হবে নির্বাচন? কত দিন থাকবে অন্তর্বর্তী সরকার? কোন দল যাবে পরবর্তী ক্ষমতায়? নতুন কোনো রাজনৈতিক দল কি গঠিত হবে? আওয়ামী লীগ কি নির্বাচন করবে কিংবা করতে পারবে ইত্যাকার অনেক বিষয় নিয়ে হচ্ছে ভাবনা ও আলোচনার বিষয়বস্তু।
এর মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার যে ছয়টি বিষয়ভিত্তিক সংস্কার কমিশন গঠন করেছে, তার মধ্যে দুটি কমিশনের প্রধান রাজনৈতিক বিষয়ে মন্তব্য করে কিছুটা বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন। তাঁদের একজন নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে আগামী নির্বাচন অগ্রহণযোগ্য হবে না। আর দুর্নীতি দমনবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের উদ্যোগে একটি নতুন ধারার রাজনৈতিক দল গঠিত হওয়া প্রয়োজন বলে মতপ্রকাশ করেছেন।
যদিও দুজনের কেউই সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে মন্তব্য করেননি। কিন্তু তা বললে তো হয় না। পদের তো একটা বিপদও আছে। তাই তাঁদের ওই মত বা মন্তব্য যথেষ্ট আলোচনা-সমালোচনার সুযোগ তৈরি করেছে। এর মধ্যে বদিউল আলম মজুমদারের মন্তব্যের বিষয়ে আলোচনার মূল বিষয় দুটি। প্রথমত, আওয়ামী লীগ সব সময়ই নির্বাচনমুখী দল। কাজেই আইন-কানুনের বেড়াজালে আটকে দেওয়া না হলে আওয়ামী লীগ যেকোনো পরিস্থিতিতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। হয়তো সে কারণেই সংবিধান সংশোধন এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-সংক্রান্ত আলোচনায় দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণার বিষয়াদি সামনে আনা হচ্ছে।
দ্বিতীয়ত, আওয়ামী লীগ ১৫ বছর ধরে নানা রকম কূটকৌশল করে বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রেখে প্রায় একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় থেকেছে। ফলে ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনগুলো দেশে কিংবা বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। আওয়ামী লীগ সরকারের অভাবনীয় করুণ পরিণতির জন্য সেটাই প্রধানত দায়ী। সুতরাং আগামীতে আওয়ামী লীগকে আইনের প্যাঁচে ফেলে নির্বাচনের বাইরে রেখে তাঁদের দেখানো পথ অনুসরণের ফল শেষ পর্যন্ত ভালো হবে কি না সেটা গভীরভাবে ভেবে দেখতে হবে।
ড. ইফতেখারুজ্জামান নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠনের বিষযে যে মত প্রকাশ করেছেন, সেটিকে অযৌক্তিক বলা যায় কীভাবে! এ কথা তো সবাই মানেন যে রাষ্ট্রকে যতভাবে যত দিক দিয়েই সংস্কার করা হোক না কেন, শেষ পর্যন্ত সেই রাষ্ট্র পরিচালনা করবে যে রাজনৈতিক দল, তাদের যদি সংস্কার না হয় তাহলে রাষ্ট্রের সংস্কার টেকসই হওয়ার কথা নয়। কিন্তু প্রচলিত ধারার বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কার হবে কীভাবে? নিশ্চয়ই সে দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোরই।
কিন্তু অভিজ্ঞতা থেকে আমরা এ কথাও বলতে পারি যে ঠিকঠাক সংস্কারের পথে তাঁরা হাঁটবেন বলে বিশ্বাস করা কঠিন। দেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের একটিও যেখানে তাঁদের দলীয় গঠনতন্ত্র পর্যন্ত অনুসরণ করে না, সেখানে তারা দলের যুগোপযোগী সংস্কার করে দেশের নতুন রাজনৈতিক ধারার সঙ্গে সাজুয্য আনবেন সেটা বিশ্বাস করা কঠিন। কিন্তু নতুন বাস্তবতায় দরকার নতুন ধারার রাজনৈতিক শক্তি। সুতরাং প্রয়োজন মেটানোর জন্য অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের উদ্যোগে যদি নতুন রাজনৈতিক দল গঠিত হয়, সেটাই হতে পারে সবচেয়ে বাস্তবসম্মত। প্রচলিত ধারার রাজনৈতিক দলগুলো তখন বাধ্য হবে নতুন ধারার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চলার জন্য নিজেদের সংস্কার সাধন করতে।
রাজনীতির পাশাপাশি সবচেয়ে বড় ভাবনার বিষয় হচ্ছে অর্থনীতি, দেশের আর্থিক পরিস্থিতি। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর, বিশেষ করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অনেকের কাছ থেকে এবং এর আগে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাছ থেকেও যে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি পেয়েছেন তা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। দেশের ভেতরেও ব্যাংক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতাসহ আর্থিক খাত সংস্কারের কার্যক্রম বেশ জোরেশোরেই দৃশ্যমান। তবে এসব প্রতিশ্রুতি ও কাজের ফল পাওয়া সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।
পাশাপাশি এডিবি তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে (অ্যানুয়াল আউটলুক) যে পূর্বাভাস দিয়েছে তাও যথেষ্ট চিন্তার উদ্রেক করে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সরকার প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করেছিল সাড়ে ৭ শতাংশ। এডিবি অবশ্য বলেছিল ৬ দশমিক ৬ শতাংশের কথা। এখন বার্ষিক প্রতিবেদনে এডিবি বলছে ৫ দশমিক এক শতাংশ প্রবৃদ্ধির কথা। গত ১৫ বছর প্রবৃদ্ধি যথেষ্ট বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের ওপরেই ছিল। এবারের অবস্থা সেই তুলনায় যথেষ্ট খারাপ। চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এডিবির বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের নিচে নামার আশঙ্কা নেই।
বিদায়ী আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে এন্তার অভিযোগ ছিল দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, সিন্ডিকেট তৈরি করে দ্রব্যমূল্য সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে নিয়ে যাওয়ার। সে দিক থেকে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ছিল অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর অবস্থার পরিবর্তন হবে এবং দ্রব্যমূল্যের দাম কমবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। প্রকৃতপক্ষে অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। এরপর এডিবির পূর্বাভাস যদি সঠিক হয়, মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের নিচে না নামে তাহলে অন্তর্বর্তী সরকার সাধারণ মানুষের কিছুটা হলেও আস্থা হারাবে। বিগত সরকারের সময় বড় বড় কিছু দুর্নীতি এবং দুর্নীতিবাজদের (যেমন বেনজীর, মতিউর) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর সেগুলো আর শোনা যাচ্ছে না।
প্রশ্ন রয়েছে ধর্মীয় ও ধর্মভিত্তিক রাজনীতি সম্পর্কে। দেশে সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি কেমন হবে, মানবাধিকার সবার ক্ষেত্রে সমানভাবে কার্যকর থাকবে কি না। সর্বোপরি রাজনীতি, অর্থনীতি, দুর্নীতি প্রতিরোধসহ কোনো ক্ষেত্রে পুরোনো ধারার পুনরাবৃত্তি হবে, নাকি নতুন বাস্তবতায় ভালো কিছু করে অতীতের মন্দকে সাধারণ মানুষের মনে চিরদিনের মতো মন্দ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার ব্যতিক্রমী পথে আমরা হাঁটব, সেই প্রশ্নও মানুষের মধ্যে রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে কাজের মাধ্যমে এসব প্রশ্নের জবাব দিতে হবে।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, গত জুলাই-আগস্টের অভূতপূর্ব ছাত্র-গণ-অভ্যুত্থান আমাদের জনমানসে বিপুল এক তরঙ্গমালা সৃষ্টি করেছে। সেই তরঙ্গমালার অভিঘাতে রাষ্ট্র ও সমাজের সব স্তরে একটি মৌলিক পরিবর্তনের ধারা সূচিত হয়েছে। এই পরিবর্তন-ধারার বহুবিচিত্র গতি-প্রকৃতি গণমানুষের ভাবনাগুলোকে এখনো সুস্থির হতে দেয়নি।
পরিবর্তনের তালিকায় অসংখ্য বিষয়। সব বিষয় নিয়েই সকলের ভাবা এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা আছে। বর্তমান মুক্ত পরিবেশে প্রত্যেকেই যে যার অবস্থান থেকে সেই স্বাধীনতা ভোগ কিংবা উপভোগ করছেন। তাতে ভাবনার অস্থিরতা যেমন প্রকাশ পাচ্ছে, তেমনি প্রত্যেকের ভাবনা আলাদা হলেও লক্ষ্য যে অভিন্ন, তারও স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। সবারই আকাঙ্ক্ষা একটি গণতান্ত্রিক, মানবিক ও উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণ। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও সেই লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে।
আমাদের দেশে যেকোনো পরিস্থিতিতেই জনমানসে ভাবনার প্রধান বিষয় থাকে রাজনীতি। এবার স্বাভাবিকভাবেই রাজনীতির ভাবনাটি আরও প্রকট। এই ভাবনার একদিকে আছে নির্বাচন। কবে হবে নির্বাচন? কত দিন থাকবে অন্তর্বর্তী সরকার? কোন দল যাবে পরবর্তী ক্ষমতায়? নতুন কোনো রাজনৈতিক দল কি গঠিত হবে? আওয়ামী লীগ কি নির্বাচন করবে কিংবা করতে পারবে ইত্যাকার অনেক বিষয় নিয়ে হচ্ছে ভাবনা ও আলোচনার বিষয়বস্তু।
এর মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার যে ছয়টি বিষয়ভিত্তিক সংস্কার কমিশন গঠন করেছে, তার মধ্যে দুটি কমিশনের প্রধান রাজনৈতিক বিষয়ে মন্তব্য করে কিছুটা বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন। তাঁদের একজন নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে আগামী নির্বাচন অগ্রহণযোগ্য হবে না। আর দুর্নীতি দমনবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের উদ্যোগে একটি নতুন ধারার রাজনৈতিক দল গঠিত হওয়া প্রয়োজন বলে মতপ্রকাশ করেছেন।
যদিও দুজনের কেউই সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে মন্তব্য করেননি। কিন্তু তা বললে তো হয় না। পদের তো একটা বিপদও আছে। তাই তাঁদের ওই মত বা মন্তব্য যথেষ্ট আলোচনা-সমালোচনার সুযোগ তৈরি করেছে। এর মধ্যে বদিউল আলম মজুমদারের মন্তব্যের বিষয়ে আলোচনার মূল বিষয় দুটি। প্রথমত, আওয়ামী লীগ সব সময়ই নির্বাচনমুখী দল। কাজেই আইন-কানুনের বেড়াজালে আটকে দেওয়া না হলে আওয়ামী লীগ যেকোনো পরিস্থিতিতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। হয়তো সে কারণেই সংবিধান সংশোধন এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-সংক্রান্ত আলোচনায় দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণার বিষয়াদি সামনে আনা হচ্ছে।
দ্বিতীয়ত, আওয়ামী লীগ ১৫ বছর ধরে নানা রকম কূটকৌশল করে বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রেখে প্রায় একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় থেকেছে। ফলে ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনগুলো দেশে কিংবা বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। আওয়ামী লীগ সরকারের অভাবনীয় করুণ পরিণতির জন্য সেটাই প্রধানত দায়ী। সুতরাং আগামীতে আওয়ামী লীগকে আইনের প্যাঁচে ফেলে নির্বাচনের বাইরে রেখে তাঁদের দেখানো পথ অনুসরণের ফল শেষ পর্যন্ত ভালো হবে কি না সেটা গভীরভাবে ভেবে দেখতে হবে।
ড. ইফতেখারুজ্জামান নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠনের বিষযে যে মত প্রকাশ করেছেন, সেটিকে অযৌক্তিক বলা যায় কীভাবে! এ কথা তো সবাই মানেন যে রাষ্ট্রকে যতভাবে যত দিক দিয়েই সংস্কার করা হোক না কেন, শেষ পর্যন্ত সেই রাষ্ট্র পরিচালনা করবে যে রাজনৈতিক দল, তাদের যদি সংস্কার না হয় তাহলে রাষ্ট্রের সংস্কার টেকসই হওয়ার কথা নয়। কিন্তু প্রচলিত ধারার বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কার হবে কীভাবে? নিশ্চয়ই সে দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোরই।
কিন্তু অভিজ্ঞতা থেকে আমরা এ কথাও বলতে পারি যে ঠিকঠাক সংস্কারের পথে তাঁরা হাঁটবেন বলে বিশ্বাস করা কঠিন। দেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের একটিও যেখানে তাঁদের দলীয় গঠনতন্ত্র পর্যন্ত অনুসরণ করে না, সেখানে তারা দলের যুগোপযোগী সংস্কার করে দেশের নতুন রাজনৈতিক ধারার সঙ্গে সাজুয্য আনবেন সেটা বিশ্বাস করা কঠিন। কিন্তু নতুন বাস্তবতায় দরকার নতুন ধারার রাজনৈতিক শক্তি। সুতরাং প্রয়োজন মেটানোর জন্য অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের উদ্যোগে যদি নতুন রাজনৈতিক দল গঠিত হয়, সেটাই হতে পারে সবচেয়ে বাস্তবসম্মত। প্রচলিত ধারার রাজনৈতিক দলগুলো তখন বাধ্য হবে নতুন ধারার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চলার জন্য নিজেদের সংস্কার সাধন করতে।
রাজনীতির পাশাপাশি সবচেয়ে বড় ভাবনার বিষয় হচ্ছে অর্থনীতি, দেশের আর্থিক পরিস্থিতি। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর, বিশেষ করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অনেকের কাছ থেকে এবং এর আগে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) কাছ থেকেও যে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি পেয়েছেন তা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। দেশের ভেতরেও ব্যাংক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতাসহ আর্থিক খাত সংস্কারের কার্যক্রম বেশ জোরেশোরেই দৃশ্যমান। তবে এসব প্রতিশ্রুতি ও কাজের ফল পাওয়া সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।
পাশাপাশি এডিবি তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে (অ্যানুয়াল আউটলুক) যে পূর্বাভাস দিয়েছে তাও যথেষ্ট চিন্তার উদ্রেক করে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সরকার প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করেছিল সাড়ে ৭ শতাংশ। এডিবি অবশ্য বলেছিল ৬ দশমিক ৬ শতাংশের কথা। এখন বার্ষিক প্রতিবেদনে এডিবি বলছে ৫ দশমিক এক শতাংশ প্রবৃদ্ধির কথা। গত ১৫ বছর প্রবৃদ্ধি যথেষ্ট বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের ওপরেই ছিল। এবারের অবস্থা সেই তুলনায় যথেষ্ট খারাপ। চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এডিবির বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের নিচে নামার আশঙ্কা নেই।
বিদায়ী আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে এন্তার অভিযোগ ছিল দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, সিন্ডিকেট তৈরি করে দ্রব্যমূল্য সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে নিয়ে যাওয়ার। সে দিক থেকে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ছিল অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর অবস্থার পরিবর্তন হবে এবং দ্রব্যমূল্যের দাম কমবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। প্রকৃতপক্ষে অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। এরপর এডিবির পূর্বাভাস যদি সঠিক হয়, মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের নিচে না নামে তাহলে অন্তর্বর্তী সরকার সাধারণ মানুষের কিছুটা হলেও আস্থা হারাবে। বিগত সরকারের সময় বড় বড় কিছু দুর্নীতি এবং দুর্নীতিবাজদের (যেমন বেনজীর, মতিউর) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর সেগুলো আর শোনা যাচ্ছে না।
প্রশ্ন রয়েছে ধর্মীয় ও ধর্মভিত্তিক রাজনীতি সম্পর্কে। দেশে সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি কেমন হবে, মানবাধিকার সবার ক্ষেত্রে সমানভাবে কার্যকর থাকবে কি না। সর্বোপরি রাজনীতি, অর্থনীতি, দুর্নীতি প্রতিরোধসহ কোনো ক্ষেত্রে পুরোনো ধারার পুনরাবৃত্তি হবে, নাকি নতুন বাস্তবতায় ভালো কিছু করে অতীতের মন্দকে সাধারণ মানুষের মনে চিরদিনের মতো মন্দ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার ব্যতিক্রমী পথে আমরা হাঁটব, সেই প্রশ্নও মানুষের মধ্যে রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে কাজের মাধ্যমে এসব প্রশ্নের জবাব দিতে হবে।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি বেড়েই চলছে। এ কারণে চালক ও যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছে এই সড়ক। ডাকাতির শিকার বেশি হচ্ছেন প্রবাসফেরত লোকজন। ডাকাতেরা অস্ত্র ঠেকিয়ে লুট করে নিচ্ছে সর্বস্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও ঘটছে ডাকাতির ঘটনা।
০২ মার্চ ২০২৫বিআরটিসির বাস দিয়ে চালু করা বিশেষায়িত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) লেনে অনুমতি না নিয়েই চলছে বেসরকারি কোম্পানির কিছু বাস। ঢুকে পড়ছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। উল্টো পথে চলছে মোটরসাইকেল। অন্যদিকে বিআরটিসির মাত্র ১০টি বাস চলাচল করায় সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্প থেকে...
১৬ জানুয়ারি ২০২৫গাজীপুর মহানগরের বোর্ডবাজার এলাকার ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা পিকনিকে যাচ্ছিলেন শ্রীপুরের মাটির মায়া ইকো রিসোর্টে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে বাসগুলো গ্রামের সরু সড়কে ঢোকার পর বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে যায় বিআরটিসির একটি দোতলা বাস...
২৪ নভেম্বর ২০২৪ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
২০ নভেম্বর ২০২৪