দিনাজপুর প্রতিনিধি
দিনাজপুরে পুলিশের বাৎসরিক প্রশিক্ষণ চলাকালীন একটি গুলি প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে এক কিশোরীর পায়ে আঘাত করেছে। আজ শনিবার সকাল আনুমানিক সাড়ে ১০টায় সদর উপজেলায় আনসার ও ভিডিপি কার্যালয়ের পার্শ্ববর্তী পশ্চিম শিবরামপুর কোম্পানি মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আহত কিশোরী দিনাজপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরেছে। এ ঘটনায় পুলিশ সুপারসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
আহত ওই কিশোরীর নাম শাহনাজ পারভীন (১৫)। সে শিবরামপুর এলাকার জালাল উদ্দিনের মেয়ে ও দিনাজপুর টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
গত ১২ জানুয়ারি থেকে দিনাজপুর আনসার ও ভিডিপি ফায়ারিং স্কোয়াডে পুলিশ সদস্যদের বাৎসরিক ফায়ারিং রিহার্সাল (প্রশিক্ষণ) চলছে। এটি চলবে ২২ জানুয়ারি পর্যন্ত।
আহত শাহনাজ পারভীনের পরিবারের দাবি, প্রশিক্ষণ চলাকালীন পুলিশের বন্দুক থেকে ছোড়া একটি গুলি শাহনাজ পারভীনের পায়ে লাগে।
আহত শাহনাজ পারভীন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বাড়ির উঠানে চেয়ারে বসে রোদ পোহাচ্ছিলাম। হঠাৎ ডান পায়ের হাঁটুর ওপরে কী জানি এসে লাগলে আমি চেয়ার থেকে পড়ে যাই। ব্যথায় চিৎকার করে উঠি। পরে পায়জামা তুলে দেখি রক্ত বের হচ্ছে। পায়জামার টান পেয়ে গুলিটা মাটিতে পড়ে যায়। ওই সময় ধরধরায় (তীব্র ধারায়) রক্ত বের হতে শুরু করে। জায়গাটা অনেক খাল (গর্ত) হয়ে গেছে।’
শাহনাজ পারভীনের বাবা জালালউদ্দিন বলেন, ‘মেয়েকে নিয়ে আনসার–ভিডিপিতে যাই। সেখানে অফিসারদের গুলিটা দেখাই এবং সেখান থেকে মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে যাওয়া হয়। পরে পুলিশ ও আনসারের বড় অফিসাররা আমার বাসায় আসেন। তাঁরা গুলিটার ছবি তুলে নেন। পরে পুলিশের বড় স্যার হাসপাতালে যান।’
এ ধরনের অসাবধানতার কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করে জালালউদ্দিন বলেন, ‘আজকে না হয় আমার মেয়ের পায়ে লাগছে, আরেক দিন তো কারও গায়ে পেটেও লাগতে পারে! ওরা বলতেছে মাইকিং করছে, কিন্তু কই, আমরা তো কোনো মাইকিং শুনিনি।’
শাহনাজের মা সাবেকুন নেহার বলেন, ‘মেয়ের আমার পুলিশে দাঁড়ানোর স্বপ্ন ছিল। আজকে সেই মেয়ে পুলিশের গুলিতে আহত হইল। এখন তো আর লাইনে দাঁড়াইতেও পারবে না। ওর সামনে পরীক্ষা, প্রতিদিন সকালে কোচিংয়ে যায়। এখন সুস্থ হইতে যে কয়দিন লাগবে কে জানে!’
এ বিষয়ে দিনাজপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার রাকিবল ইসলাম বলেন, ‘আঘাত নিয়ে আমাদের কাছে এলে আনুমানিক এক সেন্টিমিটারের মতো গর্ত দেখতে পাই। ওখানে গুলি ছিল না। তবে রোগীর কথা অনুযায়ী ওরকম একটা কিছুর আঘাত হতে পারে। পরে আমরা চিকিৎসা দিয়ে ব্যান্ডেজ করে রোগীকে ছেড়ে দেই।’
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে দিনাজপুর পুলিশ সুপার (এসপি) নাজমুল হাসান বলেন, ‘আমরা তো প্রতিবছর ফায়ারিং প্র্যাকটিস করি। ওখানকারই একটা গুলি হবে, সম্ভবত ঘটনাস্থল থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে গিয়ে একটা মেয়ের পায়ে আঘাত করে। এটা একটা অ্যাক্সিডেন্টাল ঘটনা। তবে, এ সমস্ত বিষয়ে আমাদের আরও সাবধান হওয়া উচিত।’