পঞ্চগড় প্রতিনিধি
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম। তিনি বলেন, মানুষ এখন চায় আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া তরুণেরা তাদের প্রতিনিধি হয়ে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করুক।
আজ শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) দুপুরে নিজ জেলা পঞ্চগড়ের মকবুলার রহমান সরকারি কলেজ মাঠে অসহায় দরিদ্র মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ শেষে এ কথা সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে সারজিস আলম বলেন, ‘আমরা মানুষের চাওয়া নিয়েই কাজ করেছি। সব কর্মসূচি ছিল মানুষের পালস বুঝেই। মানুষ এখন চায় আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া তরুণেরা তাদের প্রতিনিধি হয়ে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করুক। পঞ্চগড়ের মানুষ যদি মনে করে আমি কিংবা তরুণ অন্য কেউ সংসদে তাদের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে, তাহলে মনে করি তার এই দায়িত্ব নেওয়া উচিত। এটি আমানত।’
সারজিস আলম আরও বলেন, ‘আমরা যেখানেই গেছি জুলাই ঘোষণাপত্র নিয়ে বারবার বলেছি, এই যে এত বড় একটা অভ্যুত্থান তার একটি লিখিত স্বীকৃতি থাকা উচিত। যারা রক্ত দিয়েছে, জীবন দিয়েছে—তাদের একটা স্বীকৃতি থাকা উচিত। সেই উদ্দেশ্যে প্রধান উপদেষ্টা গতকাল সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের ডেকেছিলেন। তাদের সমন্বয়ে আমরা মনে করি একটি ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। যার ফলে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি যাঁরা ছিলেন এই বিষয়ে সম্মত হয়েছে যে অবশ্যই একটি ঘোষণাপত্র থাকা উচিত। আমরা বিশ্বাস করি, খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যেই এই ঘোষণাপত্রটি বাংলাদেশের মানুষের সামনে আসবে।’
সারজিস আলম বলেন, ‘আমরা মনে করি, এত বড় অভ্যুত্থান, এত রক্ত, এত জীবন, সামগ্রিক সবকিছুর যে চাওয়া তা কেবল একটি নির্বাচনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না। দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন হয়ে জনগণের যারা প্রতিনিধি হবে, স্বচ্ছ নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের কাছে ক্ষমতা যাবে—এতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু ছয় মাসের মধ্যে নতুন একটি ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা, নির্বাচন কমিশনকে ঠিক করা, বিচারব্যবস্থাকে ঠিক করা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তাদের মূল দায়িত্বে ফিরিয়ে আনা প্রায় অবাস্তব ও অসম্ভব।’
নির্বাচন বিষয়ে সারজিস আলম বলেন, ‘একটা স্বচ্ছ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার প্রয়োজন। সংস্কার হওয়ার পরপরই যদি আমরা নির্বাচনের দিকে যাই, তাহলে জনগণের আশা–আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে বলে আমরা মনে করি। যারা সংস্কার নিয়ে কাজ করছে, তারা সংস্কার নিয়ে কাজ করবে এবং যারা নির্বাচন নিয়ে কাজ করছে, তারা তাদের কাজ এগিয়ে নেবে। স্বচ্ছ একটা নির্বাচনের জন্য যতটুকু সময় দরকার সেই সময়টুকু দিতে হবে। আগামী ছয় মাস কোনো যৌক্তিক সময় হতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘অন্যায়–অনিয়ম ঠেকাতে প্রত্যেক জেলা–উপজেলার মানুষকে নিয়ে গ্রুপ তৈরি করা হবে। কেউ অন্যায়–অনিয়ম করলে এই গ্রুপের মাধ্যমে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। বিগত ১৬ বছরে রংপুর বিভাগসহ পঞ্চগড় অনেক বৈষম্যের শিকার হয়েছে। কয়েকটি রাস্তা ছাড়া কিছুই হয়নি। একটা শিল্প কারখানা হয়নি। আমাদের বেশি কিছু দরকার নেই। যেটুকু পঞ্চগড়ের মানুষের পাওনা বা হক, সেটা কীভাবে আদায় করা যায় আমরা প্রাণপণ চেষ্টা করব।’
এ সময় তিনি পঞ্চগড় পৌরসভার প্রায় দুই হাজার মানুষের হাতে শীতবস্ত্র তুলে দেন। অনুষ্ঠানে বিএনপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা–কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।