নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
ক্যানসার চিকিৎসায় সরকারি পর্যায়ে দেশের একমাত্র বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের (এনআইসিআরএইচ) ছয়টি রেডিওথেরাপি যন্ত্রই নষ্ট। ফলে তিন সপ্তাহ ধরে এই প্রতিষ্ঠানে রেডিওথেরাপি সেবা বন্ধ রয়েছে। এতে প্রতিদিন সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন দুই শতাধিক রোগী।
হাসপাতাল সূত্র বলছে, এই বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বহির্বিভাগ ও অন্তবিভাগে বছরে অন্তত আড়াই লাখ মানুষ চিকিৎসা নেন। সারা দেশের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল থেকে ক্যানসার রোগীদের এখানে পাঠানো হয়। এই হাসপাতালে সব মিলিয়ে ছয়টি রেডিওথেরাপি মেশিন রয়েছে। কিন্তু গত দুই বছরে এর সবকটি নষ্ট হয়েছে। এতে রেডিওথেরাপি দেওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মেশিন নষ্ট জানিয়ে একটি বিজ্ঞপ্তিও ঝুলিয়েছে।
হাসপাতালটির ছয়টি রেডিওথেরাপি মেশিনের মধ্যে দুটি লিনিয়ার অ্যাক্সিলারেটর দুই বছর আগে এবং দুটি কোবাল্ট এক বছর আগে অকার্যকর হয়ে পড়ে। বাকি দুটি লিনিয়ার অ্যাক্সিলারেটর দিনে গড়ে ২০০-৩০০ রোগীকে থেরাপি দিতে সক্ষম ছিল। কিন্তু গত ২১ ডিসেম্বর একটি এবং পরদিন অন্যটি নষ্ট হয়ে গেছে। এর পর থেকে এই হাসপাতালে সব ধরনের রেডিওথেরাপি বন্ধ। এ নিয়ে রেডিয়েশন অনকোলজি বিভাগে কর্তৃপক্ষের ঝোলানো বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে লিনিয়ার ৩ ও লিনিয়ার ৪ মেশিনে রেডিওথেরাপি চিকিৎসাসেবা দেওয়া সম্ভব নয়। মেশিন মেরামত হলে হাসপাতালে সংরক্ষিত রোগীদের ফোন নম্বরে জানানো হবে।
রেডিওথেরাপি যন্ত্র ঠিক করে কবে চালু হবে, তা নিশ্চিত করে জানাতে পারেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গত শনিবার জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. জাহাঙ্গীর কবির বলেন, হাসপাতালে দুটি রেডিওথেরাপি মেশিন চালু ছিল। চারটি আগেই অকেজো ঘোষণা করা হয়েছিল। বর্তমানে কেউ রেডিওথেরাপি পাচ্ছে না। আগামী ফেব্রুয়ারি ও মার্চে নতুন দুটি মেশিন চালু করার কথা রয়েছে। আরও চারটি মেশিন সংযুক্ত করা গেলে প্রতিদিন ছয় শর বেশি রোগীকে থেরাপি দেওয়া যাবে।
হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, পূর্বনির্ধারিত দিন থাকায় রেডিওথেরাপির জন্য আসা কয়েকজন রোগী অপেক্ষা করছেন। মেশিন নষ্ট থাকার বিষয়টি তাঁদের জানা ছিল না। দীর্ঘ অপেক্ষার পর তাঁরা বাড়ি ফেরেন। তাঁদের মধ্যে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত পঞ্চাশোর্ধ্ব এক নারী জানান, তিনি ইতিমধ্যে চারবার রেডিওথেরাপি নিয়েছেন। গতকাল তাঁর পঞ্চম দফা থেরাপির দিন নির্ধারিত ছিল। কিন্তু সিলেট থেকে এসে জানলেন, মেশিন নষ্ট। তাঁকে আরও পাঁচটি থেরাপি নিতে হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ক্যানসার রোগীদের প্রায় ৫০ শতাংশের চিকিৎসার অংশ হিসেবে রেডিওথেরাপির প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে স্তন, জরায়ু, কোলোরেক্টাল (পায়ুপথ ও বৃহদন্ত্র) ও ফুসফুসের ক্যানসারের জন্য রেডিওথেরাপি গুরুত্বপূর্ণ। সারা বিশ্বেই রেডিওথেরাপি যন্ত্র প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। তবে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে এই যন্ত্রের সংকট বেশি।
ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটোমিক এনার্জি এজেন্সি (আইএইএ) বলছে, প্রতি ১০ লাখ জনসংখ্যার বিপরীতে রেডিওথেরাপির মেশিন প্রয়োজন শূন্য দশমিক ১৬টি। সে হিসাবে বাংলাদেশে এই মেশিন প্রয়োজন ১৭০টি। ২০৩০ সালে ২৪০টি মেশিনের প্রয়োজন পড়বে। অবশ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে বাংলাদেশে প্রয়োজনের পরিমাণ আরও বেশি। তবে বর্তমানে সারা দেশে ৩০ থেকে ৪০টি রেডিওথেরাপি মেশিন সচল থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।