রাবি প্রতিনিধি
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ইসলামী ছাত্রশিবির প্রায় এক যুগ পর প্রকাশ্যে বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে মিছিলটি বের করা হয়। ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ঘুরে প্রশাসন ভবনের সামনে গিয়ে মিছিলটি শেষ হয়। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন তাঁরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতটি আবাসিক হল ও কেন্দ্রীয় মসজিদে পবিত্র কোরআন পোড়ানোর ঘটনা তদন্তের দৃশ্যমান অগ্রগতি না হওয়ার প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
সমাবেশে রাবি শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ বলেন, ‘কোরআন আমাদের হৃদয়ের স্পন্দন। কোরআন পুড়িয়ে আমাদের হৃদয়ে যে আঘাত দেওয়া হয়েছে, সেটার আঘাত মৃত্যু দিয়েও দেওয়া যায় না। যারা চুপি চুপি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করছে, তারা আমাদের সামনে প্রকাশ্যে এসে কোরআন পোড়াক। তাহলে শুধু ছাত্রশিবির নয়, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থী তাদের শাস্তি নিশ্চিত করবে। পবিত্র কোরআন সবার মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে তাদের এই ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে আমরা আমাদের কোরআনের বিপ্লব ঘটাব।’
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে কোরআন পোড়ানোর সঙ্গে জড়িতদের শহীদ শামসুজ্জোহা চত্বরে প্রকাশ্যে ফাঁসির দাবি জানানো হয়। ছাত্রশিবিরের দপ্তর সম্পাদক মেহেদী হাসান বলেন, ‘গত ১২ জানুয়ারি কিছু দুর্বৃত্ত আমাদের কলিজার স্পন্দন কোরআনে আগুন দিয়েছে। আমরা তাদের বলে দিতে চাই, তোমরা ঘুঘু দেখেছ, ঘুঘুর ফাঁদ দেখনি। কোরআন পোড়ানোর আগুনের স্ফুলিঙ্গে তোমরা ধ্বংস হয়ে যাবে। কিছুদিন আগে ইরানে কোরআন অবমাননার কারণে এক খ্রিষ্টান পোপকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। যারা এই কোরআন পোড়ানোর সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের জোহা চত্বরে প্রকাশ্যে ফাঁসি দিতে হবে। এর জন্য যদি ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীকে আন্দোলনের মাঠে শহীদ হতে হয়, আমরা সেটার জন্যও প্রস্তুত।’
সমাবেশ সঞ্চালনা করেন রাবি ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মুজাহিদ ফয়সাল। এ সময় আরও বক্তব্য দেন রাবি শাখা বায়তুল মাল সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম, প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক নওসাজ্জামান, এইচআরডি সম্পাদক সাহিদ ইমরান। সমাবেশে সহস্রাধিক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
রাবি শিবির সূত্রে জানা গেছে, প্রায় এক যুগ ধরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবির প্রকাশ্যে কার্যক্রম চালাতে পারেনি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন বিনোদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় তাদের কার্যক্রম চলমান ছিল। এ ছাড়া পবিত্র ঈদুল আজহায় আবাসিক হলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে গোপনে মাংস বিতরণ এবং ভর্তি পরীক্ষা চলাকালে দেয়াললিখন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সেপ্টেম্বরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি ও সেক্রেটারির নাম প্রকাশ্যে আসে। এরপর গত ৭ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নতুন কমিটি গঠন করা হয়।
প্রসঙ্গত, গত ১২ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ আমীর আলী হল, শহীদ হবিবুর রহমান হল, মতিহার হল, মাদার বখ্শ হল ও শহীদ জিয়াউর রহমান হলে কোরআন শরীফ পুড়িয়ে রেখে যায় দুর্বৃত্তরা। ওই দিন শহীদ জিয়াউর রহমান হলের দেয়ালে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) লোগো আঁকা পাওয়া যায়। এরপর ঘটনা তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খানকে আহ্বায়ক করে ৯ সদস্যের কমিটি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিবেদন ও সাত কার্যদিবসের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। তবে নির্ধারিত সময় পার হলেও তদন্তের কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি।