বরিশালে নৌকার মেয়র পদপ্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলার জেরে বর্তমান সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর ‘খলিফা’ খ্যাত নগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রইজ আহমেদ মান্নাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ সোমবার তাঁর হাজতে থাকা অবস্থার একটি ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। আর এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পর গা ঢাকা দিয়েছেন সাদিকের ঘনিষ্ঠ অন্য সব ‘খলিফা’।
এদিকে গারদখানায় রাখা আসামিদের ছবি ভাইরাল হওয়ার ঘটনায় কাউনিয়া থানার এসআই সাইদুল ইসলামকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। কাউনিয়া থানার ওসি আব্দুর রহমান মুকুল আজ বিকেলে এ তথ্যের সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন, ‘আপনি যা শুনেছেন তা ঠিক।’ সকালে মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুল ইসলামের নির্দেশে এসআই সাইদুলকে পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানান ওসি।
এ নিয়ে মোট ১৩ জনকে আজ দুপুরে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। গুঞ্জন রয়েছে, মান্নাসহ তাঁর ১০ সহযোগী গ্রেপ্তার হয় মেয়র সাদিকের বাসভবন থেকে।
তবে আজ দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মান্নার পক্ষে সাফই গেয়েছে নগর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। তবে নৌকার প্রধান নির্বাচনী এজেন্টের দাবি, নগর আওয়ামী লীগ নৌকা বিরোধীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, রোববার সন্ধ্যায় নগরের মড়কখোলার পুলে ছাত্রলীগ আহ্বায়ক মান্নার হামলায় আহত হন নৌকার মেয়র প্রার্থী খোকনের সমর্থক হালিম শাহ, মনা আহমেদ ও জাহিদ ভূঁইয়া। তাদের শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করা হলে মেয়র প্রার্থী খোকন ঘটনাস্থলে গিয়ে সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানান।
এর আগে, গত ৬ মে নৌকার দুই কর্মীকে পিস্তল উঁচিয়ে হুমকি দেওয়ায় মান্নার বিরুদ্ধে কাউনিয়া থানায় জিডি হয়।
এ বিষয়ে নৌকার মেয়র প্রার্থী খোকন অনুসারী ছাত্রলীগ নেতা মঈন তুষার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মহানগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রইজ আহম্মেদ মান্না মেয়রের আশীর্বাদে নগরের নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ, ইউএনওর বাসায় হামলা, থানা ঘেরাও এবং সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে প্ল্যানের নামে মানুষের বাসা, দোকানপাট বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়ার নেতৃত্ব দিত। তাদের প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছে নেতা-কর্মীরা।’
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সাদিকের অপর খলিফা, নগর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক নীরব হোসেন টুটুল, কাউন্সিলর শেখ সাঈদ আহমেদ মান্না, জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আতিকুল্লাহ মুনিম, সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত এবং কাউন্সিলর রাজিব হোসেন গ্রেপ্তার আতঙ্কে গা ঢাকা দিয়েছেন।
দুপুরে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম জাহাঙ্গীর দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে বলেন, ‘যে ঘটনায় মান্নাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, ওই ঘটনার সময় দুই কিলোমিটারের মধ্যেও মান্না ছিল না। এলাকাটি সিসি ক্যামেরার আওতাভুক্ত। ভিডিও ফুটেজ যাচাই করলেই ঘটনার সত্যতা পাওয়া যাবে। ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।’ এ সময় সাদিকের ‘খলিফাদের’ দেখা যায়নি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এ ব্যাপারে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নির্বাচনী কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। অথচ এসব কর্মকাণ্ড ঘটছে। এতে যারাই জড়িত থাকুক কঠোর হস্তে দমন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
গারদখানার ছবি ভাইরাল
নগর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রইজ আহমেদ মান্নাকে গ্রেপ্তারের পর কাউনিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সাইদুল মান্নার সঙ্গে সেলফি তোলেন। সেই ছবিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া রোববার রাতে মান্না গ্রেপ্তারের পর ভোরে কাউনিয়া থানার গারদখানায় শুয়ে থাকা অবস্থায় মান্না ও তাঁর অনুসারীদের ছবিও ভাইরাল হয়।
এ প্রসঙ্গে কাউনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুকুল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের থানার সামনে মনিটরে কেউ এসে হয়তো গারদখানার ছবি তুলছে। তবে আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।’ তবে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ পিকআপে থানার এসআই মান্নার সঙ্গে হেসে যে সেলফি তুলেছেন, সে বিষয়ে কোনো জবাব দেননি ওসি মুকুল।
তবে বিকেলের দিকে ওসি স্বীকার করেন গারদখানায় রাখা আসামিদের ছবি ভাইরাল হওয়ায় এসআই সাইদুল ইসলামকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।