নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল
বাসচাপায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) ছাত্রী মাইশা ফৌজিয়া মিম নিহতের ঘটনাকে হত্যা হিসেবে অবহিত করে এক কোটি ৪৭ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের দাবি জানায় শিক্ষার্থীরা। তবে মিমের পরিবারকে ২০ লাখ টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে ঘাতক বাসের মালিক ১০ লাখ, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পাঁচ লাখ এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) পাঁচ লাখ টাকা করে দেবে।
জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে গতকাল শুক্রবার রাতে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, জেলা প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমঝোতা বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।
ওই সভায় উপস্থিত অন্তত তিনজন শিক্ষার্থী এবং এক শিক্ষক জানিয়েছেন, তাঁরা ক্ষতিপূরণের টাকার অঙ্কে হতাশ। বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রশাসনের চাপাচাপিতে ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের সিদ্ধান্তের পর হত্যার বিচার হবে কি না তা নিয়ে শঙ্কা তাঁদের। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিনের উপস্থিতিতেই সভায় ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানা গেছে।
গত ৩১ অক্টোবর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বাসের ধাক্কায় নিহত হন পরিসংখ্যান বিভাগের ছাত্রী মাইশা ফৌজিয়া মিম। ওই ঘটনায় শিক্ষার্থীরা দফায় দফায় মহাসড়ক অবরোধ করলে দক্ষিণাঞ্চলে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এ নিয়ে শুক্রবারও দিনভর উত্তপ্ত ছিল ববি। মিমকে হত্যার অভিযোগ তুলে কর্মসূচিতে নানা দাবি তুলে ধরেন ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। অবশেষে শুক্রবার রাতে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রশাসনের দীর্ঘ সমঝোতা বৈঠক হয়।
সভায় উপস্থিত পরিসংখ্যান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র আওলাদ হোসেন বলেন, ‘সমঝোতা সভায় আমরা ক্ষতিপূরণ বাবদ এক কোটি ৪৭ লাখ টাকা দাবি করেছি। কিন্তু বাসমালিক কর্তৃপক্ষের কথায় আমরা আশাহত হয়েছি। অবশেষে ১০ লাখ টাকা দেওয়ার সম্মতি জানায় বাসমালিক কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া ববি প্রশাসন ও বিআরটিএ পাঁচ লাখ টাকা করে দেবে।’
ববির প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক ড. রাহাত হোসাইন ফয়সাল বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যে এক কোটি ৪৭ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেছিল তা দেওয়ার সক্ষমতা নেই বাসমালিকের। এ জন্য বাস মালিক ১০ লাখ, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পাঁচ লাখ এবং বিআরটিএ পাঁচ লাখ করে টাকা দেবে।’
উপাচার্য ড. সুচিতা শরমিন বলেন, ‘অর্থ তো মানুষের ক্ষতিপূরণ হতে পারে না। তারপরও ট্রান্সপোর্ট মালিক ১০ লাখ টাকা দিতে চেয়েছে। শিক্ষার্থীরা মানবিক কারণে এই অর্থ নিতে সম্মত হয়েছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় ও বিআরটিএ পাঁচ লাখ করে টাকা দেবে। এ ঘটনায় ঘাতক চালকের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিকিউরিটি ইনচার্জ মামলা করবেন।’
তিনি স্বীকার করেন শিক্ষার্থীরা মীমের মৃত্যুতে ক্ষতিপূরণ বাবদ ১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা দাবি করেছিল। ২০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণে আপনিও সম্মতি দিয়েছিলেন কি না, এ প্রসঙ্গে উপাচার্য ড. শরমিন বলেন, ‘আমি ছাত্রদের একটা কথাই বলেছি যে এই হত্যার বিচার চাই।’