হোম > সারা দেশ > বরিশাল

‘অশনি’র অশনিসংকেত, উপকূলে বাড়ছে উদ্বেগ

খান রফিক, বরিশাল

দুর্যোগ মৌসুম এলেই চিন্তায় পড়েন উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ। এর মধ্যে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় অশনি। চোখ রাঙাচ্ছে নদী তীরবর্তী বাসিন্দাদের প্রতি।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বুলেটিনে তথ্য অনুযায়ী, আজ রোববার দুপুর ১২টায় ঘূর্ণিঝড় অশনি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রায় ১ হাজার ২০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার বন্দর থেকে ১ হাজার ১২৫ কিলোমিটার, মোংলা বন্দর থেকে ১ হাজার ১১৮ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা বন্দর থেকে ১ হাজার ১৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। উত্তর-পশ্চিমে অগ্রসর হওয়ার সময় ঘূর্ণিঝড়টি আরও শক্তি সঞ্চয় করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার। 

ভারতের আবহাওয়া দপ্তর জানাচ্ছে, আগামী মঙ্গল থেকে বৃহস্পতিবার দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টির পাশাপাশি ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে। ১০ মে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দক্ষিণবঙ্গের সব জেলাতে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হবে। সঙ্গে ৩০-৪০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে। 

আশ্রয়কেন্দ্রের সংকট এখনই উপকূলের মানুষদের ভাবাচ্ছে। বরিশালের মেঘনা ঘেরা হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জের মতো প্রত্যন্ত উপজেলার অনেক আশ্রয়কেন্দ্র নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বেশ কয়েকটি ঝুঁকিতে। এ ধরনের চরবেষ্টিত নতুন বসতিতে ঝড়ঝঞ্ঝা থেকে রক্ষায় আশ্রয়ের কোনো ব্যবস্থাই নেই। 

ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি বরিশালের উপপরিচালকের কার্যালয়ের তথ্যমতে, জেলায় ২২৯টি আশ্রয় কেন্দ্র এবং ৬টি মাটির কেল্লা রয়েছে। কিন্তু আশ্রয় কেন্দ্রের এই সংখ্যা পর্যাপ্ত নয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। 

হিজলা উপজেলার দক্ষিণ বাউশিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টার যে কোনো সময় মেঘনায় হারিয়ে যেতে পারে। এমন অনেক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টারই নদী ভাঙনের মুখে রয়েছে হিজলার। আসন্ন ঘূর্ণিঝড়ে এখানে সাধারণ মানুষের আশ্রয় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। অপরদিকে এখানকার চারটি বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টার আগেই নদীগর্ভে চলে যাওয়ায় সেখানে ঝড়ঝঞ্ঝায় আশ্রয়স্থলের সংকট দেখা দিয়েছে। এ চারটি হচ্ছে—উপজেলার হরিনাথপুর ইউনিয়নের চর আবুপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টার, বড়জালিয়া ইউনিয়নের হিজলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টার, একই ইউনিয়নের মধ্য বড়জালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টার এবং ধুলখোলা ইউপির হোগোলটুরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টার। 

হিজলা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল গফফার বলেন, তাঁর উপজেলায় ২৬টি বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টার রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের খবরে স্কুলগুলোর তালিকা করে প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে এরই মধ্যে যেসব ভবন নদীতে চলে গেছে সেখানে বিকল্প ব্যবস্থা হয়নি। ঝুঁকিপূর্ণ স্কুলেও আশ্রয় নেওয়া সম্ভব নয়। 

একই অবস্থা মেহেন্দীগঞ্জর। সেখানকার অনেক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টার নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘গত বছরের শেষে মধ্য দড়িরচর খাজুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টার নদী গর্ভে চলে গেছে। কিছু কিছু ঝুঁকির মুখে রয়েছে।’ 

উপজেলার চরগোপালপুর ইউপি চেয়ারম্যান সামশুল আলম মনির বলেন, ‘কাজিরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টার এবং পশ্চিম কাজীরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টার এক বছর আগে তেঁতুলিয়া নদীতে তলিয়ে গেছে। নদীর পূর্বপারের ৪টি ওয়ার্ড ভেঙে নতুন বসতি হয়েছে। সেখানে ৪ থেকে ৫ হাজার মানুষের বসতি। কিন্তু কোন পাকা বিদ্যালয় কিংবা সাইক্লোন শেল্টার নেই। ওই বসতিতে থাকা একমাত্র উত্তর পশ্চিম কাজিরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি টিনের ঘর। এখানে ঝড় এলে আশ্রয় নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’ 

এ ব্যাপারে মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নুরুন্নবী বলেন, ‘গোটা মেহেন্দীগঞ্জ নদীভাঙন প্রবণ। আগামী তিন মাস দুর্যোগ মৌসুমে যে কোনো ওয়ার্ড বিলীন হয়ে যেতে পারে। ঘূর্ণিঝড় অশনি থেকে জনগণকে রক্ষায় বুলেটিন জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সাইক্লোন শেল্টারগুলোতে চলছে প্রস্তুতি।’ ইউএনও বলেন, ‘কোনো কোনো সাইক্লোন শেল্টার নদীতে ঝুঁকিপূর্ণ। রুকন্দিতে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদী ভাঙনের কবলে পড়লে দ্রুত টেন্ডার দিয়ে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। কিন্তু গোপালপুরের মতো যেখানে নেই সেখানে রাতারাতি সাইক্লোন শেল্টার করা সম্ভব নয়।’ 

একইভাবে নদী ভাঙন কিংবা জরাজীর্ণ পড়ে আছে জেলার মুলাদী, বাবুগঞ্জ, বাকেরগঞ্জ, বানারীপাড়া, উজিরপুরের অনেক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টার। ঈদের ছুটিতে স্কুল বন্ধ থাকায় সাইক্লোন শেল্টারগুলো ব্যবহার উপযোগী করার জন্য স্থানীয় প্রশাসন সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছে। 

ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি বরিশালের মাস্ট ক্লাইম্বার (টাওয়ার কর্মী) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, বরিশাল জেলায় ২২৯টি আশ্রয় কেন্দ্র এবং ছয়টি মাটির কেল্লা রয়েছে। এর মধ্যে বাকেরগঞ্জে আশ্রয় কেন্দ্র সর্বোচ্চ ৬৪ টি, মেহেন্দীগঞ্জে ৪৩ টি, হিজলায় ২৬ টি, সদর উপজেলায় ১১ টি, উজিরপুর ১২ টি, বানারীপাড়ায় ১৮ টি, বাবুগঞ্জ ১৩ টি, মুলাদী ১১ টি, গৌরনদী ১৫টি এবং আগৈলঝাড়ায় ১৬টি আশ্রয়কেন্দ্র রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সিটি এলাকায় তাঁদের ৬০ জন স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে। তবে জেলার ১০ উপজেলায় কোনো স্বেচ্ছাসেবক নেই। 

বরিশাল আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে পায়রাসহ অন্যান্য সমুদ্রবন্দরকে ২ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এটি পায়রা থেকে ১ হাজার ১৪৫ কিলোমিটার দূরে রয়েছে। আগামী ১১ মে রাতে ঘূর্ণিঝড় অশনি উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এর প্রভাবে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।’

এই সম্পর্কিত আরও পড়ুন:

নিষিদ্ধ বেহুন্দি জালে দেদার পোনা নিধন

বরিশালে সড়কে ঝরল সেনাসদস্যের স্ত্রীসহ ২ জনের প্রাণ

মির্জাগঞ্জে ৫ বছরেও শেষ হয়নি স্কুল ভবনের নির্মাণকাজ, ভোগান্তিতে শিক্ষার্থীরা

হলের নাম দেড় মাসেও বদল না করায় ক্ষোভ

বরিশালে বাস-ট্রাক মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ১

বিএনপি নেতার হাত-পা বেঁধে বাড়ি লুট

বরিশাল নগরে মহাসড়ক দখল করে নির্মিত পার্ক উচ্ছেদের উদ্যোগ

আসামি ধরতে গিয়ে আগুনে দগ্ধ এসআই মেহেদী মারা গেছেন

বিএনপি-জামায়াতকে বিরোধ মিটিয়ে ফেলার পরামর্শ মামুনুল হকের

দখল-চাঁদাবাজি-হামলায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা

সেকশন